শুক্রবার, ৯ এপ্রিল, ২০১০

কামরুল ইসলাম

কামরুল ইসলাম


আমাদের কিছু ঘাস ছিল


আমাদের উঠোনের কোণে কিছু ঘাস ছিল

আমাদের নিঃশ্বাসে ছিল নির্ভার নদীর কলতান;

ঘরে ঘরে ঘোড়াদের কাল শেষে ফিরে আসে আস্তাবল

তাদের স্মরণে আসে অন্ধকার-- স্মৃতির ঘাসে নূপুর বাজে শোন:

আমাদের কিছু ঘাস ছিল-- ঘোড়ারা ঘাস খেত

ঘোড়ারা ঘাসহীন দলে দলে

ঘাসের পরানে বাজে শূন্যতা

ও ঘাস, ও শূন্যতা, তোমরা আমাদের উঠোনে আজো

বিবিধ তৈজস--



র‌্যাশনাল গরুকাবেলায় কালেভদ্রে আমরা ঘুমোই

অতঃপর পান্থজনে বিড়ি টানে

নুনে-ভাতে নিকোটিনে কাটে দিন

আমাদের উঠোনের কোণে কিছু ঘাস ছিল

সতেজ সবুজ ঘাসে ফড়িংএর গল্পগুলো ঘুমের স্রোতে--

করাতির নস্টালজিয়া
চোখের মধ্যে সে এক অদ্বৈত কর্নিয়া ভিন্নতর পোশাকে

মেঘ কিংবা গাছপালার ক্রন্দন, নীল-শাড়ী-ঢেউ;

বাতাসে আলতার রঙ, ব্যাকুলতা, করাতির নিঝুম সৈকত।

শক্ত পেশির লাবণ্য থেকে জেগে ওঠা জোনাক-ভরা রাত

জীবনের অন্যতর বিস্তার;

কাবাডি-চত্বরে,স্মৃতিগুল্মে হাত-বদলের খুনসুটি।

কাঠ-চেরাইয়ের বৈভবে আলো আসে হলুদক্ষেতের আড়ালে

যখন পলাতক হাঁসগুলো প্রাচীন রোদের কাঁসর বাজিয়ে

ঘোষণা করে সেইসব টইট¤ু^র নাচ

আর সাদা মনের গাভীগুলো ডুবো নৌকোয় দেখতে থাকে

অপয়া হাঁসের সাঁতার ও কান্না যে কখনো বিহঙ্গ হবে না





বৃষ্টি,শব্দ এবং ধ্বনিবিন্যাসের গড্ডল

তুমুল বৃষ্টির মধ্যে সেই শবটি বাঁশের কোড়ল হয়ে দাঁড়িয়ে গেল পথে
মাছরাঙা পাখি এলো সাথে-- নদীর জলে নেমে পড়লো বৃষ্টির

মধ্যযুগীয় সংলাপগুলো-- আমরা আহত চোখে বিদ্যাবিষয়ক

প্রস্তুতিগুলো ছুঁড়ে দিলাম মেঘের ঝুলিতে-- বিদ্যাবৃষ্টির আয়োজন

হলো পথে শবটি মানুষের অন্যরকম মেটামরফসিস। খাদ্যনালীতে

ধ্বনিবিন্যাসের হাহাকার-- আমাদের পথগুলো শূন্যতায় ঝুলে রইল

আর পাপস্মৃতির কনুই-এ গুঁতো খেতে খেতে শবটি নিঃশব্দে জানিয়ে

গেল মানুষের ভ্রমণবিলাসী করোটির দায়-- এখন বৃষ্টি, শব্দ কিংবা

আলাদা ধ্বনিবিন্যাসের গড্ডলে শ্রাবণের গদ্যগুলো অঝোর

পদ্যের দিকে বেঁকে যাবে নিরিবিলি--


পাতা নড়ছে টোলের কিনারে


পাঠশালা নিঃস্ব হলো-- স্মৃতি আজ টোলের ছাত্র।

অরূপ নন্দী চলে যায় বিপুল আঁধারে

জলের শূন্যতায় জাল বোনে বিপন্ন শব

পাতা নড়ছে বৈরাগ্যে কিছুটা

পাঠশালগুলো শীতপ্রহরের লুণ্ঠণ।

আমরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখতে থাকি ঘাসের নদী

গাভীদের বাঁটের ক্যানভাসে চাঁদের কিরণ।

পাতা নড়ছে টোলের কিনারে আর পাথরে ঘুমন্ত

জলে জেগে উঠছে অন্য কোনো সতেজ ডটকম--


মনে পড়ে যে-হাওয়ায় দোলে মন


... ধ ষড়ঃ ড়ভ ফবধঃযং ও যধাব পৎড়ংংবফ

রহ ঃযব নষধপশ ধহফ যিরঃব ফৎবধসং


কফিন থেকে বেরিয়ে যাওয়া শবটি

দাঁড়িয়ে রইল কদম গাছের তলায়

মনে পড়ে যে-হাওয়ায় দোলে মন

অতঃপর শিশিরপ্রান্তের কড়িকাঠ হয়ে

লিখে দিলাম ছেঁড়া পাতার জবানবন্দী


অনেক মৃত্যুর অগ্নিগোলক দিয়ে বেরিয়ে

যাওয়া সার্কাসের কৌশলে শুকিয়ে গেল খাল-বিল

আজ দুপুরে চৈতন্যের গলিতে একটি শবের দিকে

হাত বাড়ালো আকাশ

আর পাখিরা কিচির-মিচির শব্দে

প্রকৃতির অণ্ডকোষে ঢুকে গেল নিঃসঙ্গ সত্তায়--


নিষিদ্ধ মন্ত্রের গুপ্ত নির্মাণ


তার রাঁধুনি চোখ খুঁজে ফেরে নিষিদ্ধ মন্ত্রের গুপ্ত নির্মাণ কিংবা যা হতো একদিন সেইসব না হওয়া ধ্বনিদের বাড়ি, শস্যকেন্দ্র, জলের সঙ্গীত; সে আর যাবে না কোনো রাজসভায় নতুন সংলাপে, সে এখন থিতু হবে দ্রোহে। তার পথে অনিদ্র পাতার শপথ, প্রজাপতির লুম্পেন উড়াল, ভুলের পেরেকে গাঁথা রক্তাক্ত সবুজ, স্রোতের ফাটল এবং জীবাশ্মের জ্যা ও ব্যাসার্ধের ভগ্ন কুটিরÑ সে ঐ করমচা গাছের তলে আর সাজবে না অন্ধ বিবেক, অনুভবের সুতো ধরে সে এখন থিতু হবে দ্রোহেÑ

২.

এসিড বৃষ্টিতে ভিজে যে পাখিগুলো হারিয়ে ফেলেছে উড়ার ছন্দ তাদের ডানায় ঝুলানো নীলরঙের এপিটাফ; বেরসিক হাওয়ায় কৃষকের ঘুমের পলেস্তারা খসে পড়ে; উদ্বায়ু জননির্মিতিÑ মুনাফার পর্যটন টানে মৃত্তিকার মৌল স্বভাবে জ্বলে উঠছে দিগম্বর স্বর্ণ-প্রহর। ...ই-বর্জ্যরে ছায়ায় পড়ে আছে রঙতুলি এলোমেলো স্বরে, চলে যাচ্ছে বাতাস অবাধ নৃত্যে , এদিকে মার্কিনি গো-শালায় ফুঁসে উঠছে যুদ্ধপ্রহর পুরনো খোলসে। মৌলবাদ পথে পথে প্রগতির চোখেÑ ভাঙে জল মৃত্তিকা তল ঘুম নেই স্বজাতির ঘরে


৩.

উৎসমুখে নিরেট সন্ত্রাস তবু খুলে যায় অন্তহীন সৎকার পিচ্ছিল পথে অচিকিৎস্য কাহিনিগুলো দাঁড়িয়ে আছে আইবুড়ো মেঘের সিঁড়িতে; জানা আছে পালকের খড়-পোড়ানো মন্ত্র, নির্বিঘেœ ঘরে ফেরার ক্রেজ কিংবা ধর্ষকামী সময় ধরে বেড়ে ওঠা অশান্ত ধুলোয়; ফেরা যাক ছুতারের ঘরে লৌকিক জ্ঞানে, সারস্বত সমাজের মুখে জেগে উঠুক পবিত্র আগুন; মৃত সব ঢোলের বোল কুড়িয়ে এনে ভেঙে ভেঙে দেখে নাও প্রাচীন করোটির ক্যারিশমাÑ সাত জন্মের পাপ ধরে যে নিশাচর আমাদের কিচেন গার্ডেনে উড়াল গোধূলি তাকে বলি এসো হে সখা, নীল হই


৪.

জিঘাংসায় মুক্তি নেই ভেবে আমি আমার জামার আস্তিনে লুকিয়ে রাখি রাত জেগে জমানো কিছু শোকÑ জানি খুনির আস্তানায়ও ঘাসফুল ফোটে পরিচিত মানুষেরা খুনির পোশাকে রঙিন পাথর ছুড়ে মারছে আকাশেÑ পাখিরা পাথর হয়ে ফিরে আসছে ওদের হাতের মুঠোয় আর নিকারি কিশোরী বাঁশতলে পুঁতে রাখে রতিক্লান্ত মন; গোবাল ওয়ার্মিং কিংবা অস্থির গেসিয়ার হয়ে ফিরে যাচ্ছে অভিন্ন ধর্ষকেরা প্রভাতের জগিং-এ । এদিকে কাদায় আটকানো গরুর গাড়ির বিনীত ছায়ায় আমাদের পুরনো পোশাকগুলো মুখস্থ করে বিবিধ স্রোতের গল্প...অসংখ্য শ্যাডোলাইন ধরে পরিণত বীরগণ আজো সব রমণীয় ঝুলন্ত পথে...


৫.

আজ ভাবি কেন যেতে যেতে থেমে গেছি পুরনো বৃক্ষটির কাছে। এই সকালের রোদে নদী যখন রোদের বাইকে চড়ে তীর্থে যায় আমি সমস্ত দুপুর বেমালুম ভুলে থাকি ক্ষতগুলো। যে বিশ্ব^াস নিয়ে একদিন উঠে পড়ি নৌকোয় সেখানে দাঁড়ানো আছে ছাগল উন্নয়নের প্রকল্পগুলো হাফপ্যান্ট পরে, কখনো কখনো অনুভূতিগুলো ছাগল-বিয়ানো সন্ধ্যার ফিউশন; তেভাগার কথা ভুলে গিয়ে শুধু নিজের ভাগের দিকে তাকাচ্ছে যে মহান বিপ্লবী তাকে আজও বিড়ালমুখী নদীর জলে ভোরস্নানে দেখি তাহলে মাটিই বলুক আমাদের রাত কিংবা দিনের কোনখানে সত্তার অবাধ সাঁতারে জেগে উঠবে কুমোরের আর্দ্র শৈশব ?


৬.

সার্কাসতাঁবু উড়ে গেলে বকুল গাছে নেমে পড়ে একঝাঁক রোদের সন্ত্রাস চিন্তার চড়–ই-সঙ্গম তালগাছে ওঠেÑ নদী ও মাছ আমাদের দুঃখবিলাস; আবগারি আফিসের বারান্দায় দাঁড়াচ্ছে না সময় কিংবা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলাপচারিতা, ছুঁয়ে যায় মহলায় মহলায় ট্রেনের হুইসেল রাত বারোটায় রিবনে জড়ানো প্রেম শেষতক চন্দ্রযানে চড়ে হাওয়া খেতে খেতে বাসা বাঁধে আকন্দার ঝোপেÑ মানবকল্যাণে আজ ভণিতাও টেকসই মূলধনÑ চমস্কির চেয়ে কে আর ভালো বোঝে একথা!


আমার ঘরভর্তি আলোতে ফিতা-কৃমির অদ্ভুত খেল শুরু হলে কাশ্মিরী শালে চড়ে শীত নামে সশব্দে শরীরেÑ বন্ধু গো, এই সন্ধ্যায় আমাকে নিয়ে চলো বিশুদ্ধ স্নানে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন