শুক্রবার, ৯ এপ্রিল, ২০১০

এডওয়ার্ড সাইদ ও উত্তর-ঔপনিবেশিক কাউন্টার-ডিস্কোর্স

ফকরুল আলম
এডওয়ার্ড সাইদ ও উত্তর-ঔপনিবেশিক কাউন্টার-ডিস্কোর্স
১.
ঔপনিবেশিকতার যে কোন ছাত্রের কাছে ঙৎরবহঃধষরংস গ্রন্থটির প্রাসঙ্গিকতা স্পষ্ট। এ বইতে সাইদ তত্ত্ব উপস্থাপন করেন যে, পশ্চিমা পণ্ডিতরা বহুকাল ধরে তাঁদের জ্ঞানকে ভাড়া খাটাচ্ছেন শক্তিধর পাশ্চাত্যপ্রভুদের কাছে; তারা এমন একটি ডিসকোর্সে নিয়োজিত যার উদ্দেশ্য ‘ফড়সরহধঃরহম, ৎবংঃৎঁপঃঁৎরহম, ধহফ যধারহম ধঁঃযড়ৎরঃু ড়াবৎ ঃযব ঙৎরবহঃ’ (ঙৎরবহঃধষরংস, ৩) পাণ্ডিত্য প্রাচ্যের, ঔপনিবেশিকরণের হাতিয়ার হয়েছে, আর ডিফো থেকে ডিসরেলি-তক সকল পাশ্চাত্য শিল্পী-বুদ্ধিজীবী স্বেচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক, শোষণ-সংদমনের প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। তদুপরি তারা এমন একটি প্রাচ্যের ধারণা গড়ে তুলেছেন যা হচ্ছে ‘ড়ঃযবৎ’, এবং এভাবে প্রাচ্যের মানুষ সম্পর্কে কিছু আপ্ত বিরূপ ধারণার স্থায়ীকরণের সহায়তা করেছেন। সাহিত্যতত্ত্বে সাইদের সাম্প্রতিক কাজ থেকে বোঝা যায় যে, তাঁর মতে প্রাচ্যবিদদের অধীত এবং নিয়োজিত জ্ঞান ছিল আধিপত্যবাদী (যবমবসড়হরপ) এবং তাঁরা যেসব সত্য (ঃৎঁঃযং) ফেরী করে বেড়িয়েছেন তা তাঁদের ইচ্ছাপূরণের বাগাড়ম্বর ছাড়া বেশি কিছু নয়।
সাইদের বিখ্যাত বই ঙৎরবহঃধষরংস প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে। সাইদ পাশ্চাত্য অরিয়েন্টালিস্টদের প্রাচ্যবিদ্যাচর্চার ইতিহাস, তাঁদের উদ্ভাবনকৃত ‘প্রাচ্য’’ সম্পর্কিত ধারণা, বিভিন্ন প্রতীচ্য পণ্ডিত ও সাহিত্যিকের রচনায় প্রাচ্যসম্পর্কিত ধারণাÑ যাদের ভিতর দান্তে থেকে ফ্লবেয়ার রয়েছেনÑ ইত্যাদি নিয়ে সবিস্তার আলোচনা করেছেন। তিন অধ্যায়ে ্িবভক্ত বইটির প্রথম দুই অ্যধায়ের নাম : ঞযব ঝপড়ঢ়ব ড়ভ ঙৎরবহঃধষরংস এবং ঙৎরবহঃধষ ঝঃৎঁপঃঁৎবং ধহফ জবংঃৎঁপঃঁৎবং. সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং প্রাসঙ্গিক অংশ তৃতীয় অধ্যায় : ঙৎরবহঃধষরংস ঘড়.ি এর প্রতিপাদ্য হলো, অরিয়েন্টালিজম শুধু অতীতের একটি চিন্তাপ্রপঞ্চ নয়, বরং বিশশতকে এসে প্রাচ্যবিদ্যা একটি প্রভাবশালী ডিসিপ্লিনে পরিণত। এমনকি বর্তমানেও পাশ্চাত্য শক্তিগুলোর নীতি এবং প্রাচ্যদেশ সম্পর্কে তাদের সামগ্রিক মনোভাবকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে চলেছে এই বিদ্যা। আর কিছু না হোক, অন্তত দুই বিশ্বদুদ্ধের মধ্যকালীন সময়ে সাম্রাজ্যবাদকে কল্কে যুগিয়েছে প্রাচ্যবিদ্যা, এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে এ্যাংলো-মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যপ্রাচ্যতত্ত্ব পাঠক্রমের মধ্য দিয়ে পুনরাবির্ভূত হয়েছে। সারা পৃথিবী যখন ঔপনিবেশিক যাঁতাকল থেকে স্বাধীন হচ্ছিল তখনও প্রাচ্যবিদ্যক ডিসকোর্স সাম্রাজ্যবাদী ভাবধারাগুলো প্রচারে ছিল ক্লান্তিহীন। অথবা, সাইদ যেমন বলেছেন তাঁর বইয়ের শেষ দিকে, “সত্য হলো এই যে, অরিয়েন্টালিজম নব্য সাম্রাজ্যবাদের মধ্যে সফলভাবে আত্তীকৃত হয়েছে, যেখানে এর প্রধান প্রপঞ্চগুলো এশিয়াকে পদানত রাখার সাম্রাজ্যবাদী অভিসন্ধি বাধা দেয় না, বরং তাকে নিশ্চিত করে।” (অরিয়েন্টালিজম, ৩২২)
২.
এডওয়ার্ড সাইদ তাঁর অরেয়েন্টালিজম-এর ভূমিকায় বলেছেন যে, তিনি প্রাচ্যবিদ্যাকে বিবেচনা করেছেন একটি ডিসকোর্স হিসাবে। মিশেল ফুকো (গরপযবষ ঋড়ঁপধঁষঃ) তাঁর ঞযব অৎপযবধষড়মু ড়ভ কহড়ষিবফমব এবং উরংপরঢ়ষরহব ধহফ চঁহরংয গ্রন্থে যে-ধরনের ডিসকোর্সের ধারণা ব্যবহার করেছেন তা সাইদের কাছে উপযোগী বলে মনে হয়েছে। সাইদের ভাষায় “গু পড়হঃবহঃরড়হ রং ঃযধঃ রিঃযড়ঁঃ বীধসরহরহম ঙৎরবহঃধষরংস ধং ধ ফরংপড়ঁৎংব ড়হব পড়হহড়ঃ ঢ়ড়ংংরনষু ঁহফবৎংঃধহফ ঃযব বহড়ৎসড়ঁংষু ংুংঃবসধঃরপ ফরংপরঢ়ষরহব নু যিরপয ঊঁৎড়ঢ়বধহ পঁষঃঁৎব ধিং ধনষব ঃড় সধহধমব--ধহফ বাবহ ঃড় ঢ়ৎড়ফঁপব--ঃযব ঙৎরবহঃ ঢ়ড়ষরঃরপধষষু, ংড়পরড়ষড়মরপধষষু, সরষরঃধৎরষু, রফবড়ষড়মরপধষষু, ংপরবহঃরভরপধষষু ধহফ রসধমরহধঃরাবষু ফঁৎরহম ঃযব ঢ়ড়ংঃ-ঊহষরমযঃবহসবহঃ ঢ়বৎরড়ফ.” (ঙৎরবহঃধষরংস, ৩) পাশ্চাত্যের প্রয়োজন ছিল এমন একটি প্রাচ্যের ধারণাকে গড়ে তোলা যা তাদের আধিপত্যবাদী স্বার্থের জন্য অনুকূল হবে। পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদীরা গড়ে তুলেছেন অরিয়েন্টাল স্টাডিজ নামের বিদ্যা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সৃষ্টি হয়েছে প্রাচ্যভাষা যথা আরবী কিংবা সংস্কৃত-র প্রফেসর পদ। সাইদের মতে অরিয়েন্টালিজম হলো “ধ ংঃুষব ড়ভ ঃযড়ঁমযঃ নধংবফ ঁঢ়ড়হ ধহ ড়হঃড়ষড়মরপধষ ধহফ বঢ়রংঃবসড়ষড়মরপষ ফরংঃরহপঃরড়হ সধফব নবঃবিবহ ‘ঞযব ঙৎরবহঃ’ ধহফ (সড়ংঃ ড়ভ ঃযব ঃরসব) ‘ঃযব ড়পপরফবহঃ’. “প্রাচ্য ও প্রতীচ্য-দুটি স্বজ্ঞাগত ও সংজ্ঞাগত ভাবে বিপ্রতীপ ধারণা একটি বিশাল ডিসকোর্স সৃষ্টি করেছে যায় ভেতরে লিখেছেন বহুসংখ্যক লেখক, কবি, দার্শনিক, রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, অর্থনীতিবিদ এবং সাম্রাজ্য পরিচালকবৃন্দ। এই লেখকদের সবাই যে সজ্ঞানে সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থে কলম ধরেছেন তা নয়,তবে অরিয়েন্টালিজম নামক বৃহৎ চিন্তনপ্রকল্পের পুষ্টি সাধিত হয়েছে তাঁদের লেখার কল্যাণে। এই বৃহৎ-চিন্তন প্রকল্প তথা অরিয়েন্টালিজমের চাদরের নীচে ঠাঁই পেয়েছেন যেমন ইস্কিলাস, তেমনি ভিক্টর হুগো কিংবা কার্ল মার্কস-ও। প্রাচ্যবিদ্যার সবটাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল তা বলার উদ্দেশ্যও সম্ভবত সাইদের নয়। কারণ তাঁর বইটির মধ্যেই সাইদ বিখ্যাত ফরাসী প্রাচ্যবিদ লুই মাসিগ্ন (খড়ঁরং গধংংরমড়হ) এর উদাহরণ দিয়েছেন যিনি মানবতাবাদী প্রেষণা দ্বারাই এই বিদ্যাচর্চায় উৎসাহী হয়েছিলেন। এ থেকে বোঝা যায় যে, মানবিক অনুভূতির প্রতি অন্ধ এবং শক্তিমানের সেবা করার উদ্দেশ্যঅলা প্রাচ্যবিদ্যার বিকল্প একটি জ্ঞানশাখার অস্তিত্ব অসম্ভব নয়। সাইদ কি তাহলে তাত্ত্বিক দিক থেকে স্ববিরোধিতার শিকার? এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পরম দাপটের কালেও প্রতিরোধের যেসব ন্যারেটিভ রচিত হচ্ছিল সে সম্পর্কে উদাসীন?
প্রথম প্রশ্নটি নিয়ে সাইদ সরাসরি বলেছেন অরিয়েন্টালিজম প্রকাশের কয়েক বছর পর দেয়া এক সাক্ষাৎকারে। তিনি সেখানে ঘোষণা করেছেন, ঐ বইটি তিনি লিখেছেন ইচ্ছা করেই এমনভাবে যাতে প্রাচ্যবিদ্যক ডিসকোর্সের ফবঃবৎসরহরংঃরপ প্রকৃতিটি স্পষ্ট হয়, যদিও একইসাথে এটাও তিনি ইঙ্গিত করেছেন যে এ-থেকে পালাবার রাস্তাও আছে। “একধরনের জবরদস্তিহীন জ্ঞান” সম্ভব যা ফুকো-ও, সাইদ তাঁর অরিয়েন্টালিজম এর তিন বছর আগে প্রকাশিত ইবমরহহরহমং বইতে দেখিয়েছেন, বুদ্ধিজীবীর ভূমিকাকে “ক্ষমতার বিভিন্নরূপের বিরুদ্ধে” সংগ্রাম বলে বর্ণনা করেছেন এবং “সংগ্রামের ডিসকোর্স” এর সম্ভাবনা ইঙ্গিত করেছেন। (ইবমরহহরহমং, ৩৭৮-৭৯)। যদিও শেষপর্যন্ত এবং অনিবার্যভাবে ফুকো নিজেকে স্মরণযোগ্য করেছেন “আধিপত্যের লিপিকার” (ঞযব ংপৎরনব ড়ভ ফড়সরহধঃরড়হ”) হিসেবেই। (ঝঢ়ৎরহশবৎ, ২৮০)।
অরিয়েন্টালিজম প্রকাশের পরবর্তী বছরগুলোতো সাইদ ফুকোর বিরুদ্ধে তাঁর আক্রমণকে আরো শাণিত করেছেন। তিনি ক্রমাগত অধিকতর প্রত্যয়ের সঙ্গে এ মত ব্যক্ত করেছেন যে প্রতিরোধ সব সময় ছিল এবং সব সময় সম্ভব। উত্তর-সংগঠনবাদের উপর লেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি প্রবন্ধ “ঈৎরঃরপরংস ইবঃবিবহ ঈঁষঃঁৎব ধহফফ’ুংঃবস”-এ সাইদ ফুকোকে সমালোচনা করেছেন এই বলে যে, ফুকো “আধুনিক সমাজের অন্তর্নিহিত বিরুদ্ধশক্তিগুলির কেন্দ্রীয় ডায়ালেকটিককে কমবেশি বিলুপ্ত করে দিয়েছেন।” (ঞযব ডড়ৎষফ, ঃযব ঞবীঃ, ধহফ ঃযব ঈৎরঃরপ, ২২১) আরো একটি বহুলপ্রশংসিত প্রবন্ধে (“ঞৎধাবষষরহম ঃযবড়ৎু”) সাইদ একহাত নিয়েছেন ফুকোকেÑ ফুকো এই আপ্তবাক্যে ঈমান এনেছেন যে, “শক্তি সর্বত্র বিরাজমান” এবং তিনি “তাঁর আলোচ্য সমাজে শ্রেণীর ভূমিকা, অর্থনীতির ভূমিকা, দ্রোহ-বিপ্লবের ভূমিকা”-কে উপেক্ষা করেছেন। (ঞযব ডড়ৎষফ, ২৮৮) ১৯৮৬-তে রচিত “ঋড়ঁপধঁষঃ ধহফ ঃযব ওসধমরহধঃরড়হ ড়ভ চড়বিৎ” প্রবন্ধে সাইদ আরো খাপ্পা হয়েছেন ফুকোর উপর; তুলোধুনা করেছেন এই ফরাসী তাত্ত্বিককে, “শক্তিমত্তার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধের প্রতি তাঁর অনন্য অনাগ্রহের” জন্য (ঋড়ঁপধঁষঃ ধহফ. ১৫১)।
সাইদ ফুকো থেকে সরে গিয়েছেন ফানন, গ্রামসি এবং উইলিয়ামসের মতো বুদ্ধিজীবীদের দিকে, আফ্রিকা এবং এশিয়ার সাম্রাজ্যবাদ প্রতিরোধের ইতিহাসকে গণনায় এনেছেন এবং পৃথিবীর সর্বত্র থেকে প্রকাশিত প্রতিরোধ-সাহিত্যের বন্দনা করেছেন। এসব করার মধ্য দিয়ে সাইদ এমন একটি পথে যাত্রা করেছেন যে পথ তাঁকে শুধু ঔপনিবেশিক-এনকাউন্টারের একজন প্রধান প্রবক্তা করবে না, তাঁকে উত্তর-ঔপনিবেশিক বিদ্বৎসমাজের কাউন্টার-ডিসকোর্সের একজন অগ্রসৈনিকও করে তুলবে। কিন্তু ফুকো থেকে ফাননে যাত্রার পথটি চিহ্নিত করার আগে আমি স্বয়ং সাইদের উপর দৃষ্টিক্ষেপ করতে চাই, যাতে বোঝা যায় কেন তিনি ভাবলেন যে তাঁকে সক্রিয়বাদ ও রাজনৈতিক প্রতিরোধের পথটিই বেছে নিতে হবে, এবং সরে যেতে ফবঃবৎসরহরংঃরপ বিশ্ববীক্ষা থেকে ক্রমশ দূরে।
৩.
এডওয়ার্ড সাইদের জীবনকাহিনীর সারাংশে লেখার প্রয়োজন এখানে নেই, তবু একথা মনে রাখার দরকার যে, তাঁর জন্ম ১৯৩৫ সালে, জেরুজালেমে। ইজরায়েল কর্তৃক প্যালেস্টাইন দখল করে নেয়ার পর সাইদের পরিবার ১৯৪৮ সালে দেশত্যাগে বাধ্য হয়। তাঁরা আসেন কায়রোতে। কিছুদিন পর সাইদ আমেরিকার ম্যাসাচুসেট্সে গড়ঁহঃ ঐবৎসড়হ ংপযড়ড়ষ এ পড়তে যান। পরবর্তীতে, প্রিন্সটন ও হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। হার্ভার্ড থেকে গ্রাজুয়েশনের পর সাইদ কলাম্বিয়ায় শিক্ষকতার চাকুরী নেন। ১৯৬৬ সালে এডওয়ার্ড সাইদের প্রথম এই বেরোয়-ঔড়ংবঢ়য ঈড়হৎধফ ধহফ ঃযব ঋঁহপঃরড়হং ড়ভ অঁঃড়নরড়মৎধঢ়যু এই বই থেকে অবশ্য সাইদের পরবর্তী রচনাসম্ভাবরের তেমন কোন সূত্র পাওয়া যাবে না। শুধু একটি সূত্র ছাড়া। সেটি হলো লেখক হিসাবে জোসেফ কনরাড সম্পর্কে তার বিরতিহীন আগ্রহ। বহির্বাসী বহির্দেশীয় লেখক হিসাবে কনরাডের অবস্থানটি চমৎকার লেগেছে সাইদের কাছেÑতিনি কনরাডের চিঠিপত্র খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন তাঁর উপন্যাসগুলো সংগে সংযোগ খোঁজার জন্যে। তবে কৌতুকজনক ঘটনা হলো, এই বইয়ে সাইদ কনরাডকে ঔপনিবেশিক অভিজ্ঞতার কথাশিল্পী হিসাবে মোটেই দেখেননি।
কনরাডের ওপর লেখা বইটি এবং ইবমরহহরহমং (১৯৭৫) নামে তাঁর দ্বিতীয় বইটির মধ্যে ফারাক নয় বছরের। এর ভেতরে সাইদের জীবন পাল্টে গেছে অনেকটাই। কলাম্বিয়ায় তার আসন পোক্ত এবং কসমোপলিটন নিউইয়র্কেও তিনি খাপ খাইয়ে নিয়েছেন নিজেকে। কিন্তু তা-সত্ত্বেও তিনি তাঁর জন্মভূমি প্যালেস্টাইনের সাথে সম্পর্কে পুনঃস্থাপন করলেন। সাইদের জীবনের মোড় ঘুরলো ১৯৭৬ সালের আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের সময়। ইজরায়েল-এর যুদ্ধে গাজা উপত্যকা, সিনাই উপদ্বীপ এবং পুরোনো জেরুজালেম শহর ও গোলান মালভূমি কব্জা করে নেয়। প্যালেস্টাইনবাসীরা এই বিপুল পরাজয়ের মধ্যেও কিছু একটা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন। সাইদ তাঁর সাম্প্রতিকতম ঞযব চড়ষরঃরপং ড়ভ উরংঢ়ড়ংংবংংরড়হ (১৯৯৪) গ্রন্থের ভূমিকায় লেখেন-“ইবমরহহরহম রহ ১৯৬৮ ও ংঃধৎঃবফ ঃড় ঃযরহশ, ৎিরঃব, ধহফ ঃৎধাবষ ধং ংড়সবড়হব যিড় ভবষঃ যরসংবষভ ঃড় নব ফরৎবপঃষু রহাড়ষাবফ রহ ঃযব ৎবহধরংংধহপব ড়ভ চধষবংঃরহব ষরভব ধহফ ঢ়ড়ষরঃরপং.” প্রবাসী ফিলিস্তিনীদের সাথে যোগাযোগ হলো; সাইদ ১৯৬৯ ও ১৯৭০ সালে আম্মান ভ্রমণে গেলেন এবং ১৯৭২-৭৩ সালে দীর্ঘ অবস্থান করলেন বৈরুতে। সাইদের সম্ভবত সবচেয়ে ব্যক্তিগত কথনের বই, অভঃবৎ ঃযব খধংঃ ঝশু-তে তিনি বলেছেন ঐ বছরব্যপী বৈরুতপ্রবাস কেমন জরুরী পরিবর্তন ঘটিয়েছিল তার মধ্যে। তিনি নিজেকে পুনঃদীক্ষিত করতে পেরেছিলেন আরব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মন্ত্রেÑ
“ধঃ ঃযব ঃরসব ড়ভ চধষবংঃরহরধহ ৎবহধরহংংধহপব রহ ঢ়ড়ষরঃরপং ধহফ পঁষঃঁৎব.” ইবমরহহরহমং গ্রন্থেই বোঝা গেল সাইদ বুদ্ধিবৃত্তিক লেখনীকে রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের মাধ্যমে হিসাবে দেখতে চান, কিন্তু তবু এই বইতে তেমন কিছু নেই যাতে একে একই সাথে একজন প্যালেস্টাইনী আরব ও একজন মার্কিনী সমালোচকের রচনা মনে হতে পারে। তিনি যে একজন হৃতস্বদেশ আরব, এবং তিনি যে তার স্বদেশ-হরণকারী সাম্রাজ্যবাদী কিংবা নব্য-সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে যুঝতে চান, এই বই পড়ে তেমনটা মনে হয় না।
এই গ্রন্থটি প্রকাশের বছরখানেক পরে উরধপৎরঃরপং পত্রিকিাকে দেয়া এই সাক্ষাৎকারে প্রথম বোঝা গেল যে সাইদের মধ্যে একটি দ্বিধাবোধ এসেছে। এই সাক্ষাৎকারে সাইদ নিজের সম্পর্কে বললেন, “ঁহঃরষ ভধরৎষু ৎবপবহঃষু” তিনি একটি দ্বৈত জীবন যাপন করছিলেন : একটি হলো একজন অ্যাকাডেমিক তাত্ত্বিকের জীবনযাপন অন্যটি হলো এমন একজন মানুষের যে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত, এমন একজন যে ক্রমাগত আরো বেশি জড়াচ্ছে “রাজনীতি, ক্ষমতা, আধিপত্য এবং সংগ্রাম”-এর সাথে। এই দ্বিতীয় সত্তাটি তাঁর প্রথম সত্তা অর্থাৎ তার অ্যাকাডেমিক এবং তাত্ত্বিক সাহিত্যসমালোচনার গজদন্তমিনারবাসী সত্তার উপর দখলদারি কায়েম করছে। (উরধপৎরঃরপং পৃ. ৩৫)। এ সাক্ষাৎকারেই সাইদ কবুল করলেন যে তাঁর ব্যক্তিগত ইতিহাস এবং সেই সাথে তাঁর জাতির ইতিহাস “ফবঃধপযবফ ভৎড়স ঃযব রসঢ়বৎরধষরংস” নয় বরং এমন একটি সত্য যা অসহনীয়ভাবে মূর্ত এবং বাস্তব। ঙৎরবহঃধষরংস হলো সেই বই যেখানে সাইদ তাঁর প্যালোস্টাইনী জীবনকে তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত করলেন এবং তাঁর তাত্ত্বিক র‌্যাডিকালিজমের সাথে মিশিয়ে নিলেন তাঁর রাজনৈতিক কর্মিষ্ঠতাকে। ‘অরিয়েন্টালিজমের’ ভেতরেই সাইদ ব্যাখ্যা করেছেন কেন তিনি এই বই লিখতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তিনি এই বই লিখেছেন কেননা তিনি নিজেকে মনে করেন ঔপনিবেশিক এনকাউন্টারের ফসল। তাঁর নিজের ভাষায় : “রহ সধহু ধিুং সু ংঃঁফু ড়ভ ঙৎরবহঃধষরংস যধং নববহ ধহ ধঃঃবসঢ়ঃ ঃড় রহাবহঃড়ৎু ঃযব ঃৎধপবং ঁঢ়ড়হ সব, ঃযব ঙৎরবহঃধষ ংঁনলবপঃ, ড়ভ ঃযব পঁষঃঁৎব যিড়ংব ফড়সরহধঃরড়হ যধং নববহ ংড় ঢ়ড়বিৎভঁষ ধ ভধপঃড়ৎ রহ ঃযব ষরভব ড়ভ ধষষ ঙৎরবহঃধষং” (পৃ. ২৫) সন্দেহ নেই যে, তিনি প্যালেস্টাইনী প্রতিরোধ আন্দোলনের সংম্পর্শে এসে ‘অরিয়েন্টালিজম’ লিখলেন যার উদ্দেশ্য হলো উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে প্রথম কার্যকর পদক্ষেপটি নেয়া যায় ভিত্তিতে ঔপনিবেশিকতা-পীড়িত মানুষরা বিশ্বনাট্যমঞ্চে তাদের হারানো কণ্ঠস্বরটি আবার ধ্বনিত করতে পারে, আওয়াজ তুলতে পারে প্রতিরোধের।
৪.
এডওয়ার্ড সাইদের উত্তর-ঔপনিবেশিক কাউন্টার-ডিসর্কোর্সের মূলকথা হলো, একজন বুদ্ধিজীবীকে নীচের স্তরগুলোর ভেতর দিয়ে যেতে হবে: (১) নিজের শেকড় এবং ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্তি; (২) ঔপনিবেশিক সংগঠনসমূহ আমাদের চেতনার কী ধরনের ছাপ রেখে গেছে এবং আমাদের চিন্তন-প্রপঞ্চে তাদের ভূমিকা কীরূপ সে সম্পর্কে উচ্চতর সচেতনতা অর্জন; (৩) উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগে বেঁচে থাকা সাম্রাজ্যবাদী যুগের রেশসমূহ সম্পর্কে সচেতনতা; (৪) এ-ধরনের ঐপনিবেশিক-উত্তর ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার আধিপত্য অপ্রতিরোধ্যÑএমন ধারণা পরিহার; (৫) ডৎরঃরহম-ধং-ধপঃরড়হ অর্থাৎ লেখনীকে সংগ্রামের হাতিয়ার হিসাবে ভাবা এবং ক্লাসিক টেক্সটগুলোকে এমনভাবে পুনর্পঠন করা যাতে ঔপনিবেশিক শক্তিসমূহের সাথে তাদের দালাল-সহযোগিতার দিকটি পরিস্ফুট হয়; (৬) উত্তর-ঔপনিবেশিক শোষণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লেখার মাধ্যমে প্রতি-আক্রমণ এবং অরিয়েন্টালিজমের মতো ভণ্ড-দরদী জ্ঞানশাখার অসারতা উন্মোচন।
অরিয়েন্টালিজম-প্রকাশের পরবর্তী সময়ে সাইদ তাঁর কাউন্টার-রীডিং এর তত্ত্ব সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং তত্ত্বালোচনার আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক লিখলেন ধারণাকে আরো স্পষ্ট করেছেন। আগেই অবশ্য সাইদ উরধপৎরঃরপং এর সাক্ষাৎকারে নিজেকে ঘোষণা করেছিলেন “ধং ধহ ঙৎরবহঃধষ ৎিরঃরহম নধপশ ধঃ ঙৎরবহঃধষরংঃং যিড় ভড়ৎ ংড় ষড়হম যধাব ঃযৎড়াবফ ঁঢ়ড়হ ড়ঁৎ ংরষবহপব.” তিনি আরো ঘোষণা করেন: “ও ধস ধষংড় ৎিরঃরহম ঃড় ঃযবস, নু ফরংসধহঃষরহম ঃযব ংঃৎঁপঃঁৎব ড়ভ ঃযবরৎ ফরংপরঢ়ষরহব ংযড়রিহম রঃং সবঃধ-যরংঃড়ৎরপধষ, রহংঃরঃঁঃরড়হধষ, ধহঃরবসঢ়রৎরপধষ, ধহফ রফবড়ষড়মরপধষ নরধংবং.” (পৃ. ৪৭)
উত্তর-ঔপনিবেশিক লেখক কীভাবে এই অরিয়েন্টালিজমের বিরুদ্ধে ‘ৎিরঃব নধপশ’ করবে? সাইদের মত হলো- তথাকথিত ‘অঞ্চল-বিশেষজ্ঞ’দের প্রকল্পগুলোর অন্তসারশূন্যতাকে তুলে ধরতে হবে, খুলে দিতে হবে এই সব প্রাচ্যবিশেষজ্ঞদের মুখোশ। ‘ডৎরঃব নধপশ’ এর আরেকটি অ-নঞর্থক অর্ধ-ঔপনিবেশিক সমাজসমূহে চলমান উপনিবেশ-প্রতিরোধের ঐতিহ্যকে শক্তিশালী করতে হবে। সাইদ মনে করেন যে, ঙৎরবহঃধষরংস লেখার আগ পর্যন্ত তিনি এই দ্বিতীয়োক্ত ব্যাপারটি উপেক্ষা করেছিলেন। বৃটেনের চ্যানেল ফোর টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে (১৯৯২) সাইদ বলেছেন “পড়সঢ়বঃরহম পড়হপবঢ়ঃরড়হ ড়ভ মবড়মৎধঢ়যু” নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত সবসময়ই ছিল, যার প্রমাণ আফ্রিকা, আয়ারল্যাণ্ড, ক্যারিবিয়ান এবং ভারতের জাতীয়তাবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামগুলো। (ঞধষশরহম ষরনবৎঃরবং, ১২) সুতরাং এই ঐপনিবেশিকতা-বিরোধিতার কথা আমাদের বলা দরকার। একারণেই আশির দশক জুড়ে সাইদ বরাবর ঈ.খ.জ ঔধসবং কৃত ইষধপশ লধপড়নরহং দের ইতিহাসের কথা উল্লেখ করেছেন : জেমসের এই কাজটি সাইদকে মনে করিয়ে দেয় পৃথিবীর সর্বত্র প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তার কথা। একই কারণে সাইদ ঝঁনধষঃবৎহ যরংঃড়ৎরড়মৎধঢ়যু-এর অন্যতম প্রধান প্রবক্তা। এর প্রমাণ, গায়ত্রী স্পিভাক-কৃত, ১৯৮৮ সালে আমেরিকার প্রকাশিত, ঝঁনধষঃবৎহ ঝঃঁফরবং সংকলনের ভূমিকাটি লিখেছেন এডওয়ার্ড সাইদ।
ঙৎরবহঃধষরংস গ্রন্থটির পরপর সাইদ আরো কয়েকটি বই লেখেন যার উদ্দেশ্য এমন একটি প্যালেস্টাইনীয় কাউন্টার-ন্যারেটিভ তৈরি করা যা আরবদের জন্মভূমিতে ইজরায়েলী আবাসনের মিথকে প্রতিহতও করবে। এই ধরনের কাউন্টার-ন্যারেটিভের একটি ভালো নমুনা ঞযব ছঁবংঃরড়হ ড়ভ চধষবংঃরহব (১৯৭৯)। সাইদ এই গ্রন্থের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন-“সু ঃধংশ রং ঃড় ঢ়ৎবংবহঃ ঃযব চধষবংঃরহরধহ ংঃড়ৎু; ঃযব তরড়হরংঃ ড়হব রং সঁপয নবঃঃবৎ শহড়হি ধহফ ধঢ়ঢ়ৎবপরধঃবফ” এরকম আরেকটি প্রচেষ্টা অভঃবৎ ঃযব খধংঃ ঝশু। এ বইয়ে ঔবধহ গড়ষবৎ-এর তোলা প্যালেস্টাইনী জীবনের আলোকচিত্রমালা এবং সাইদ-কৃত তাদের ভাষ্য সন্নিবেশিত। এই চিত্র-ভাষ্য থেকে প্যালেষ্টাইনীদের জীবন মূর্ত হয়ে ধরা দেয় পাঠকের কাছে।
ঈঁষঃঁৎব ধহফ ওসঢ়বৎরধষরংস পরবর্তী গ্রন্থ। সাইদ আর এখন শুধু “ধ মবহবৎধষ ড়িৎষফ-রিফব ঢ়ধঃঃবৎহ ড়ভ রসঢ়বৎরধষ পঁষঃঁৎব” কে তিরস্কার করেই তৃপ্ত নন, তিনি এখন চান ঔপনিবেশিকীকরণের প্রতি ঘটনাকে আরেকটি “হধৎৎধঃরাব ড়ভ যরংঃড়ৎরপধষ ৎবংরংঃবহপব ধমধরহংঃ বসঢ়রৎব” দিয়ে প্রতিহত করতে। যদিও নব্য-সাম্রাজ্যবাদী চন্ত্রান্ত আজকেও ক্রিয়াশীল, সাইদ দেখছেন যে, “পৃথিবীর বিভিন্ন উত্তর-ঔপনিবেশিক অঞ্চলে এখন মেট্রপলিটন পৃথিবীর সাথে ভীষণ উদ্দীপ্ত তর্কযুদ্ধে নামবার চেষ্টা চলছে।” একটা কথা সত্য, সাইদ এই যুদ্ধের প্রকৃতিকে মোটেই সরলভাবে দেখছেন না। তিনি জানেন যে যুদ্ধটি হবে সর্বাত্মক, “ধ নধঃঃষব... ভড়ঁমযঃ ড়ঁঃ ড়হ ঃযব ঃবৎৎধরহ ড়ভ রহভড়ৎসধঃরড়হ, াড়পধনঁষধৎু ড়ৎ রসধমবং. “প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য উভয় জায়গাতেই মিডিয়ার পরাক্রমশালী আক্রমণকে ঠেকাতে হবে, যে মিডিয়া ক্রমাগত নব-ঔপনিবেশিকতার তত্ত্বকে শক্তিশালী করছে, প্রাচ্য সম্পর্কে ভুল মিথ ও মিথ্যা ধারণা ছড়াচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী আদর্শের পালে হাওয়া লাগানোর জন্য। সাইদ চইঝ টেলিভিশনে কেনীয় মুসলিম পণ্ডিত আলী মাজরুই’ বক্তৃতা সিরিজ ঞযব অভৎরপধহং সম্পর্কে দারুন উদ্বেল হয়েছেন। “ঐবৎব ধঃষবধংঃ ধিং ধহ অভৎরপধহ ড়হ ঢ়ৎরসব ঃরসব ঃবষবারংরড়হ রহ ঃযব নবংঃ, ফধৎরহম ঃড় ধপপঁংব ঃযব বিংঃ ড়ভ যিধঃ রঃ যধং ফড়হব, ঃযঁং ৎবড়ঢ়বহরহম ধ ভরষব পড়হংরফবৎবফ পষড়ংবফ.” (ঈঁষঃঁৎব ধহফ রসঢ়বৎরধষরংস পৃ, ৩৯)
৫.
সত্তরের দশকের শেষ ভাগে, এবং ইবমরহহরহমং ও ঙৎরবহঃধষরংস এর ব্যাপকজ সাফল্যের পর, সাইদ তাঁর মতামত প্রকাশের প্রচুর সুযোগ পেতে থাকলেন। প্রিন্ট-মিডিয়া এবং প্রাইম-টাইম টেলিভিশনে তিনি প্যালেস্টাইনীদের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের নীতির প্রতিবাদ করতে থাকলেন। সেই সঙ্গে আরব জনগণ ও ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমাজগতের ভুল ধারণা ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে চালাতে লাগলেন তাঁর প্রতিরোধ। মিডিয়াতে অনুপ্রবেশের এই সাফল্য সাহসী করে তুলল সাইদকে। তিনি এরকম ঘোষণাও করলেন একটি সাক্ষাৎকারে : “ঞযবৎব ধৎব বহফষবংং ড়ঢ়ঢ়ড়ৎঃঁহরঃরবং ভড়ৎ রহঃবৎাবহঃরড়হ ... ধহফ ঃৎধহংভড়ৎসধঃরড়হ .... ুড়ঁ পড়ঁষফ ঃধশব ধহফাধহঃধমব ড়ভ ঃযব ড়াবৎফবাবষড়ঢ়সবহঃ ড়ভ ঃযব ফড়সরহধঃবফ ধঢ়ঢ়ধৎধঃঁংবং ধহফ রহঃবৎাবহব ংঃৎধঃবমরপধষষু ধঃ পবৎঃধরহ ঢ়ড়রহঃং” (ঝঢ়ৎরহশবৎ. ২৪১) এই সাক্ষাৎকারে সাইদ আরো বলেছেন যে, তাঁর শিক্ষা, তাঁর এলিটেস্ট যোগাযোগ এবং নিউইয়র্কে অবস্থান, সব কিছু তাঁকে সাহায্য যুগিয়েছে : পশ্চিমা জগতে একজন উত্তর-ঔপনিবেশিক লেখক হিসাবে তাঁর অবস্থিতির পেছনে রয়েছে প্যালেস্টিনিজম এর প্রতি তাঁর প্রশ্নহীন অনুগত্য। এই প্যালেস্টিনিজমের মোদ্দাকথা হলো প্যালেস্টাইনী ভূখণ্ডের সঁষঃরৎধপরধষ এবং সঁষঃরৎবষরমরড়ঁং ইতিহাসের পুনরুদ্ধার। সেই সাথে ভূমির সাথে প্যালেস্টাইনীদের পূর্ণ সংহতি স্থাপন। বোঝাই যাচ্ছে, সাইদের ক্ষেত্রে ‘ৎিরঃরহম নধপশ ঃড় ঃযব বিংঃ’-এর অর্থ হচ্ছে আধিপত্যবাদী বৃদ্ধিবৃত্তিকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং সেই সাথে ঔপনিবেশিকতাবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা, উভয়ই। সাইদের জন্য দু’টো প্রক্রিয়াই একটি বৃহত্তর প্রকল্পের অংশ: প্যালেস্টাইনের মুক্তি। এর অর্থ, উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবীদের কাউন্টার-ডিসকোর্স শুধু একটি তাত্ত্বিক ব্যায়ামমাত্র নয়, বরং এটি একটি চলন্ত রাজনৈতিক সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ। উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবী হিসাবে এডওয়ার্ড সাইদের আবির্ভাবলগ্নটি সম্ভবত ১৯৬৮-এর ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধ। বিশেষত কধৎধসবষ-এর যুদ্ধ যেখানে জায়নবাদী শক্তি সংপ্রথম একটি গেরিলাগ্রাপের প্রস্তরকঠিন প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। এবং এটাও কাকতালীর নয় মোটেই যে, ঙৎরবহঃধষরংস বেরোয় এমন সময় যখন পিএলও প্রতিরোধ সংগ্রামের সংগঠন হিসাবে প্রাথমিক সাফল্য পেতে শুরু করেছে। সাইদ নিজেই বলেছেন, ঙৎরবহঃধষরংস এর পরবর্তী তাঁর সবগুলো কাজের পেছনে রয়েছে এই বোধটি ক্রিয়াশীল, যে তিনি একটি চলমান সংগ্রামের অংশ। একথাটি শুধু তাঁর সরাসরি রাজনৈতিক গ্রন্থাবলি, ঞযব ছঁবংঃরড়হ ড়ভ চধষবংঃরহব, ঈড়াবৎরহম ওংষধস. ইষধসরহম ঃযব ঠরপঃরসং এবং ঞযব চড়ষরঃরপং ড়ভ উরংঢ়ড়ংংবংংরড়হ সম্পর্কে সত্য নয়, তাঁর লিটারারি ক্রিটিকাল টেক্সটগুলো (ঞযব ডড়ৎষফ, ঃযব ঞবীঃ, ধহফ ঃযব ঈৎরঃরপ এবং ঈঁষঃঁৎব ধহফ ওসঢ়বৎরধষরংস) সম্পর্কেও সত্য। ঈঁষঃঁৎব ধহফ ওসঢ়বৎরধষরংস-এ সাইদ জোর দিয়ে ঘোষণা করেছেন যে প্যালেস্টাইনী প্রতিরোধ দৃঢ়তর হবেই যদিও ইসরাইলী দখলদাররা ভাবছে যে তাঁরা অনন্তকালের জন্য প্যালেস্টাইনকে ধরে রাখবে। এ ধরনের প্রেরণা সাইদ সম্ভবত পেয়েছেন ইন্তিফাদাহ সম্পর্কিত একটি বইয়ের উপর কাজ করার সময়, যে-বইয়ে ইসরাইলী প্রভু এবং তাদের মার্কিনী মদদাতাদেরকে বলা হয়েছে-ণড়ঁৎ ষড়মরপ, নু যিরপয ুড়ঁ ভড়ৎবপধংঃ ধহ বহফষবংং ংরবমব, রং ফড়ড়সবফ, ঃযব ধিুং ধষষ পড়ষড়হরধষ ধফাবহঃঁৎবং যধাব নববহ ফড়ড়সবফ”. (ঞযব চড়ষরঃরপং ড়ভ উরংঢ়ড়ংংবংংরড়হ, পৃ. ১৪৩)
৬.
ইতিহাসের যুগে যুগে পাশ্চাত্য আধিপত্যবাদীদের মাননিক প্রভূত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম হয়েছে। এই সংগ্রাম উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবীদের জন্য অনুপ্রেরণার স্থল। আরেকটি অনুপ্রেরণা হচ্ছে কিছু ব্যক্তি-বুদ্ধিজীবীর দৃষ্টান্তমূলক রচনাপঞ্জী। তৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, ডিসকোর্স-পদ্ধতি সম্পর্কে ফুকোর ধারণাগুলোকে প্রশ্ন করতে শুরু করার পরপরই সাইদ অধিকতর মনোযোগী হলেন ফ্রান্ৎস্ ফাননের রচনার দিকে : ফানন এরকম ডিসকোর্স-প্রতিরোধ সম্পর্কে ধারণা ব্যক্ত করেছিলেন। ঈঁষঃঁৎব ধহফ রসঢ়বৎরধষরংস গ্রন্থে সাইদ এই দু’জন বুদ্ধিজীবীর তুলনামূলক আলোচনা করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত বাতিল করেছেন ফুকো-কে, কেননা ফুকো “ংববসং ধপঃঁধষষু ঃড় ৎবঢ়ৎবংবহঃ ধহ রৎৎবংরংঃরনষব পড়ষড়হরুরহম সড়াবসবহঃ ঃযধঃ ঢ়ধৎড়ফড়ীরপধষষু ভড়ৎঃরভরবং ঃযব ঢ়ৎবংঃরমব ড়ভ নড়ঃয ঃযব ষড়হবষু রহফরারফঁধষ ংপযড়ষধৎ ধহফ ঃযব ংুংঃবস ঃযধঃ পড়হঃধরহং যরস.” অন্যদিকে ফানন সাইদকে আকর্ষণ করেছেন কেননা ফাননের গতি “ভৎড়স পড়হভরহবসবহঃ ঃড় ষরনবৎধঃরড়হ.” যদিও ফুকো এবং ফানন-দুজনের উপরই গঠনমূলক প্রভাব পড়েছে ফ্রয়েড, নীট্শে এবং সার্ত্র-র, তবু সাইদের মতে, ফানন হচ্ছেন আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে শক্তিশলী অস্ত্রের ধারক। ফানন আরো একটি কারণে সাইদের কাছে মূল্যবান। ফানন অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বুঝেছেন যে, উপনিবেশ-উত্তর পৃথিবীতেও ঔপনিবেশিক স্বার্থ থেকেই যাবে। ফাননের যে-কথাটি সবচেয়ে সাইদের মনে ধরেছে তা হলো, জাতীয়তাবাদী চেতনা যদি সাফল্যের মুহূর্তে কোনো-না-কোনোভাবে সামাজিক চেতনায় রূপান্তরিত না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে জাতীয় স্বাধীনতা থাকবে না, থাকবে সাম্রাজ্যবাদেরই সম্প্রসারিত অবস্থা। ফানন শেখালেন উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবিদের এই কথাটি : জাতীয়তাবাদী বুর্জোয়াদের সম্পর্কে, বিশেষত এদের টোটাল জাতীয় মুক্তির শ্লোগান সম্পর্কে, সতর্ক হও, কেননা ঐসব চিৎকার মূলত এক ধরনের হধঃরড়হধষরংঃ ভরপঃরড়হ বৈ কিছু নয় এবং তা একধরনের স্বৈরতন্ত্র হটিয়ে অন্যধরনের স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র মাত্র।
ঈঁষঃঁৎব ধহফ ওসঢ়বৎরধষরংস-এর তৃতীয় অধ্যায়ে (“জবংরংঃধহপব ধহফ ঙঢ়ঢ়ড়ংরঃরড়হ”) সাইদ আরো কয়েকজন বুদ্দিজীবীর নাম করেছেন যারা পূর্বতন উপনিবেশিক দেশগুলোতে জন্মেছেন এবং যাঁদের রচনা, ফাননের রচনার মতই, উত্তর-ঔপনিবেশিক লেখকদের উৎসাহ দিতে পারে। এঁরা হলেন, ক্যারিবীয় পণ্ডিত ঈ.খ.জ. ঔধসবং; আরব পণ্ডিত এবড়ৎমব অহঃড়হরঁং, ‘সার্ব-অলটার্ন স্টাডিজ’ গ্র“পের ভারতীয় প্রতিষ্ঠাতা রণজিৎ গুহ এবং মালয়েশীয় ইতিহাসবিদ ঝ.ঐ. অষধঃধং. এই চতুষ্টয় নমুনা দেখিয়েছেন কীভাবে অব্যাহত সাম্রাজ্যবাদী সংগঠনের যুগে আন্তর্জাতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব। জেম্স লিখেছেন ক্যারিবিয়ানে ফরাসি সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের সংগ্রামের কথা; আন্টনিয়াস বিকল্প ইতিহাস লিখেছেন বৃটিশ পতাকার নীচে কীভাবে আরব জাতীয়তাবাদ তৈরী হলো। রণজিৎ গুহ ভারতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রেক্ষিতে ঔপনিবেশিকতার ইতিহাস লিখেন; এবং আলাটাস্ তাঁর লেখায় সাম্রাজ্যবাদীদের তৈরী ষধুু হধঃরাব-এর ধারণার মিথ্যা মিথকে ফাটালেন। চার ভূখণ্ডের চার সময়ের এই বুদ্ধিজীবীচতুষ্টয় একটি ঐক্যসূত্রে বাঁধা। সূত্রটি হলো, তারা সবাই উপনিবেশিত তথা প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ, “যিড় ৎিড়ঃব রহ ধহ রসঢ়বৎরধষ ষধহমঁধমব, যিড় ভবষঃ ঃযবসংবষাবং ড়ৎমধহরপধষষু ৎবষধঃবফ ঃড় ঃযব সধংং ৎবংরংঃধহপব ঃড় বসঢ়রৎব.” তাঁরা সবাই সাম্রাজ্যবাদীদের ভাষায় সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছেন বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিরোধ। অন্যকথায়, এরা হলেন সেইসব পণ্ডিত যাঁরা পাশ্চাত্য পাণ্ডিত্যের হাতিয়ারগুলো দিয়েই “ৎিরঃব নধপশ” করেছেন পাশ্চাত্যের প্রতি। আর সেইজন্যই, উত্তর-উপনিবেশিক বুদ্ধিজীবীদের জন্য এই চারজন দৃষ্টান্তমূলক ব্যক্তিত্ব।
এডওয়ার্ড সাইদ যে-ধরনের উত্তর-ঔপনিবেশিকতার কথা বলছেন সেখানে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্ররোচনা আছে। বস্তু, ফানন-ও “নিষ্কুলষ জাতীয়তা’-র বিপদের কথা জানিয়েছেন। সাইদ বলেছেন, উত্তর-ঔপনিবেশিক ডিসকোর্স হবে জাতীয়তাবাদের নির্দ্দিষ্ট সীমানার বাইরে একটি স্পেস-এ, যদিও এর উৎসমুখ থাকতে পারে জাতীয়তাবাদী কোনো ইস্যু বা ঘটনার মধ্যে। এই বহির্জাতিক স্পেস-এই জন্ম হয়েছে সলমন রুশদীর গরফহরমযঃ’ং ঈযরষফৎবহ-এর মতে সংকর গ্রন্থ। সাইদ ওকালতি করছেন এমন একটি আন্তর্জাতিক কাউন্টার-ডিসকোর্সের যা জাতিগত সীমানাকে পেরিয়ে একটি সাধারণ জায়গায় মিলিত হতে উৎসাহ যোগাবে বুদ্ধিজীবীদের। সাইদের ভাষায়, “ঞযব ভধপঃ রং, বি ধৎব সরীবফ রিঃয ড়হব ধহড়ঃযবৎ রহ ধিুং ঃযধঃ সড়ংঃ ংুংঃবসং ড়ভ বফঁপধঃরড়হ যধাব হড়ঃ ফৎবধসবফ ড়ভ” (পৃ, ৩৩১)। সাইদের মতে, উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবীদের কর্তব্য হলো বৈশ্বিক পরিসরে চিন্তা করা, জাতীয়, বর্ণগত, শ্রেণীগত সীমানাগুলো পেরিয়ে গিয়ে পিছিয়ে-পড়া সংখ্যালঘু এবং প্রতিনিধিত্বহীন জনসমাজ (তা বিশ্বের যেখানকারই হোক) সম্পর্কে সোচ্চার হাওয়া।
সাইদের এই কসমোপলিটানিজম খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক তাঁর চিন্তার। কিনউত এ- সত্ত্বেও ভি.এস. নাইপলের মতো শেকড়হীন লেখককে আবার তিনি থোড়াই মূল্যবান মনে করেন। নাইপল তাঁর জীবনের একপর্বে জাতীয়তাবাদকে ভর্ৎসনা করেছেন কিন্তু কখনও কোথাও কোনো প্রতিরোধ আন্দোলনের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেননি।
পাশ্চাত্যের লেখকদের মধ্যেও দু’ধরনের নমুনা-মডেল লক্ষ্য করেছেন সাইদ। একধরনের লেখকরা সাম্রাজ্যবাদকে পুষ্ট করেছেন অবলীলায়, অন্য কিছু লেখক পাশ্চাত্যের হয়ে দেশকালগণ্ডীর বাইরে গিয়ে স্বাধীনতাকামী উপনিবেশিত-মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন। ঞযব ঙঁঃংরফবৎ গ্রন্থের জন্য আলব্যের কাম্যুর সমালোচনা করেছেন সাইদ, কারণ এ-বইয়ে ক্যামু আলজেরীয়দের প্রতি বন্ধসুলভ আচরণ করেছেন। অন্যদিকে তুলনা করেছেন জাঁ জেনে-র সঙ্গে, যিনি তাঁর ফরাসি পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে তাঁর স্বদেশকর্তৃক পদানত মানৃুষ ও দেশের দুর্দশার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। তবে এডওয়ার্য সাইদ সবচাইতে বেশি নির্ভরতা পেয়েছেন গ্রামসির মধ্যে এবং বন্ধু হিসেবে পেয়েছেন রেমন্ড উইলিয়ামস এবং নোয়াম চমস্কিকে। শেষোক্ত দু’জন অরিয়েন্টালিজম-সিস্টেমের বিরুদ্ধে একটি দুর্দান্ত কাউন্টার ডিসকোর্স চালানোর জন্য সাইদের সমরসঙ্গী। গ্রাম্সি এবং উইলিয়ামস উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ কেননা তাঁরা ধারণ করেন “বসবৎমবহঃ ড়ৎ ংঁনধষঃবৎহ মৎড়ঁঢ়ং রিঃযরহ ঃযব ফড়সরহধহঃ ফরংপঁৎংরাব ংড়পরবঃু” (ঋড়ঁপধঁষঃ ধহফ .... পৃ. ১৫২) অন্যদিকে চম্স্কি হলেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধ ইজরায়েল তোষণনীতির এবং প্যালেস্টাইনীদের উপর ইজরায়েলের নিষ্ঠুর নির্যাতনের তীব্র সমালোচক। এ কারণে চম্স্কি সাইদের কাছে খুব প্রিয়। সাইদের মতে, উত্তর-ঔপনিবেশিক পৃথিবীর নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতে এইসব পাশ্চাত্য বুদ্ধিজীবীর আধিপত্যবিরোধী রচনাপুঞ্জ নতুন মনোযোগ ও নিষ্ঠাবান অনুসরণের দাবি রাখে।
উপনিবেশন বলতে এখন শুধু পাশ্চাত্যদেশকর্তৃক অ-ইউরোপীয় দেশ দখল বোঝায় না। উপনিবেশিতের (পড়ষড়হরুবফ) সংজ্ঞার মধ্যে চলে এসেছে আরো অনেক কিছু: “ঞযব ‘পড়ষড়হরুবফ’ যধং ংরহপব বীঢ়ধহফবফ পড়হংরফবৎধনষু ঃড় রহপষঁফব ড়িসবহ, ংঁনলঁমধঃবফ ধহফ ড়ঢ়ঢ়ৎবংংবফ পষধংংবং, হধঃরড়হধষ সরহড়ৎঃরবং, ধহফ বাবহ সধৎমরহধষরুবফ ড়ৎ রহপড়ৎঢ়ড়ৎধঃবফ ংঁনংঢ়বপরধষরঃবং,” নারী, শোষিত-অবদমিত শ্রেণীসমূহ, জাতিগত সংখ্যালঘু, প্রান্তিক জনগোষ্ঠি, সবাইকে এই নব-ঔপনিবেশিকতার স্তরে গণ্য করা চলে। উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বহু দেশে একটি নব্য ক্ষমতাকারবারী এলিট শ্রেণী গড়ে উঠেছে যারা স্থান দখল করেছে শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের। এই দালাল এলিট শ্রেণী নব্য-সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের সাথে গড়েছে নতুন আঁতাত ও দোস্তি। “জাতীয়তাবাদী শাক্তি”-এ ধরনের দ্বিঘাত সমীকরণের পূর্বতন ধারণা পাল্টে ফেলে। এখন চিনে নিতে হবে রাজনৈতিক সীমানা, জাতিসত্তা ইত্যাদি-পেরিয়ে যাওয়া, নতুন ঔপনিবেশিক শোষণ-সংদমনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা নতুন ঐক্যবোধকে। এই নতুন আন্তর্জাতিক-ঐক্যবোধ, এই “হবি ধষরমহসবহঃং সধফব ধপৎড়ংং নড়ৎফবৎং, ঃুঢ়বং, হধঃরড়হং ধহফ বংংবহপবং” চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে সনাতনী রফবহঃরঃু-এর ধারণাকে, যে ধারণা সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতার যুগে সাংস্কৃতিক চিন্তার মূলবস্তু ছিল। সাইদ যেন বলতে চাইছেন যে, সংকীর্ণ জাতীয় ‘পরিচয়’ উত্তর-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রযন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদী এলিটদের মধ্যে একটি অশুভ আঁতাতের জন্ম দিয়ে চলেছে। সাইদ উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবীর সম্ভাব্য ভূমিকা সম্পর্কে তাই বলছেন- তাঁকে জাতীয়তাবাদী উগ্র চেতনাকে প্রতিহত করতে হবে এবং অবলম্বন করতে হবে “ধ সড়ৎব রহঃবমৎধঃরাব ারবি ড়ভ যঁসধহ পড়সসঁহরঃু ধহফ যঁসধহ ষরনবৎধঃরড়হ,” (ঈঁষঃঁৎব ধহফ ওসঢ়বৎরধষরংস, পৃ. ২১৬)।
উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগের বৃদ্ধিজীবীর কাউন্টার-ডিসকোর্সের অংশ হিসাবে সাইদ গবঃযড়ফড়ষড়মু-এর চেতনাকেও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাবছেন। তিনি এখন আর কোন একরৈখিক থিয়োরি-র পরহেজগার থাকতে চান নাÑ তিনি যা চান তা হলো “ধ ৎবষধঃরাবষু সড়ৎব ঁহনড়ঃঃড়সবফ, ঁহভরীবফ, ধহফ সড়নরষব ধিু ড়ভ ঢ়ৎড়পববফরহম” তাঁর মতে কাউন্টচার-ডিসকোর্সের পদ্ধতি হবে তুলনামূলক এবং আন্ত:ডিসিপ্লিনমূলক। একসময় সাইদ লিটারারি থিয়োরির একনিষ্ঠতায় মগ্ন ছিলেন। এখন তাঁর ইচ্ছা হলো “ঃড় ফড় ংড়সবঃযরহম ভৎড়স ধহ যরংঃড়ৎরপধষ ঢ়ড়রহঃ ড়ভ ারব,ি ধপৎড়ংং ফরংপঁৎংরাব ষরহবং রহ ড়ভঃবহ ঃৎধহংমৎবংংরাব ধিুং, রহ ধিুং ঃযধঃ ঃৎু ঃড় পড়হহবপঃ ঢ়ড়ষরঃরপধষষু ধহফ রহঃবষষবপঃঁধষষু রিঃয ড়ঃযবৎ রহঃবৎাবহঃরড়হং.”(ঝঢ়ৎরহশবৎ, পৃ. ২৪৮). এ ধরনের কাজের একটি উদাহরণ, গৌরী বিশ্বনাথনের বই ঞযব গধংশ ড়ভ ঈড়হয়ঁবংঃ : এই বইয়ে গৌরী উত্তর-ঔপনিবেশিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইংলিশ স্টাডিজের উত্থান এবং সাম্রাজ্যবাদের সাথে এর সম্পর্কে সন্ধান করেছেন। সাইদ আরো প্রশংসা করেছেন অন্যান্য থিয়োরিস্টদের-একবাল আহমেদ, হোমি ভাভা এবং সারা সুলেরি। এবং পোস্ট মডার্নিজম তথা উত্তরাধুনিকতাবাদ দু’চোখের বিষ সাইদের কাছে, যদি চড়ংঃ গড়ফবৎহরংস অর্থ হয় লেখকের নিজেকে রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে ধূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং জীবনের বিচূর্ণীভবন ও হতাশাকে ধ্র“বসত্য বলে মনে নেয়া। চড়ংঃ গড়ফবৎহরংস হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক সংগ্রাম, ক্ষমতার বৈশ্বিক রাজনীতিকে সমালোচনা ইত্যাদি জরুরি কর্ম থেকে পিঠটান দেয়ার গুরুমন্ত্র। সাইদ চান “এইসব চোয়াল-ভেঙ্গে-ফেলা কঠিন সব লধৎমড়হ-এ কন্টকিত উত্তর-আধুনিকতা, যা এখন থিয়োরিটিক্যাল সমালোচনা জগতকে ঘিরে ধরেছে” তাকে বিস্ফারিত করা হোক্, কারণ এই উত্তর-আধুনিকতাবাদগুলোর “অর্থ হচ্ছে ধনফরপধঃরহম ৎবংঢ়ড়হংরনরষরঃু ভড়ৎ ঢ়ড়ষরঃরপধষ ধপঃরড়হ ড়ৎ পৎরঃরয়ঁরহম ঢ়ড়বিৎ” (ঞযব চড়ষরঃরপং ড়ভ উরংঢ়ড়ংংবংংরড়হ পৃ. ৩১৬)।
মৌলবাদ সম্পর্কেও সাইদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার। মুসলিম দেশগুলোতে মৌলবাদীরা এমন প্রচার করে থাকে যে, এমন একগুচ্ছ অপরিবর্তনীয় আচার রয়েছে যা নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি ‘পবিত্র ও পূর্ণাঙ্গ’ জীবনব্যবস্থা। সাইদের মতে, ঐসব দেশের বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব হলো এই মতের বিরোধিতা করা। মৌলবাদী একরৈখিকতার বিপরীতে সাইদ স্মরণ করতে চান ইসলামী জাবনাচরণের “জটিল ও বহুদিকসম্পন্ন ইতিহাস” এবং বুদ্ধিজীবীদের কাছে আবেদন করেন “ঃড় ভধপব ঃযব পযধষষবহমবং ড়ভ হড়হ-ওংষধসরপ সরহড়ৎরঃরবং, ড়িসবহ’ং ৎরমযঃং, ভড়ৎ সড়ফবৎহরঃু রঃংবষভ, রিঃয যঁসধহ ধঃঃবহঃরাবহবংং ধহফ যড়হবংঃ ৎবধঢ়ঢ়ৎরংধষং, হড়ঃ ফড়মসধঃরপ ড়ৎ ঢ়ংবঁফড়- ঢ়ড়ঢ়ঁষরংঃ পযধহঃং.” সাইদ স্মরণ করিয়ে দেন ইসলামের ইতিহাসে ইজহিতাদের ঐতিহ্যের কথা, যখন ধর্মীয় সূত্রগুলির ব্যক্তিগত ব্যাখ্যাকে উৎসাহিত করা হতো।
এডওয়ার্ড সাইদের মতে আদর্শ উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবী তিনিই যিনি ংঃধঃঁং য়ঁড় কে প্রশ্ন করেন, যিনি সংস্কৃতিকে অর্থডক্স চিন্তা, বিচারহীন অন্ধবিশ্বাস এবং যুক্তিনির্ভর প্রথাবিরুদ্ধ চিন্তার দ্বন্দ্ব হিসাবে দেখেন। এমন একজন বিরুদ্ধবাদী বুদ্ধিজীবী হলেন নসর হামিদ আবু জায়েদ (কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবীসাহিত্যের অধ্যাপক) মিশরীয় মৌলবাদীদের ইসলামী ডিসকোর্সের ডগমেটিজম এবং তাদের ধর্মব্যাখ্যার অনৈতিহাসিকতা স্পষ্ট করেছেন তাঁর লেখায়।
৮.
এডওয়ার্ড সাইদ সমসাময়িককালের দৃষ্টান্তমূলক ব্যক্তিত্ব। তিনি তাঁর বাহ্যজীবন এবং লেখায় এমন কিছু নীতি অনুসরণ করেছেন যা উত্তর-ঔপনিবেশিক কাউন্টার- ডিসকোর্সকে করেছে একটি শক্তিমান চিন্তন-মাধ্যম। বহির্বাসী পণ্ডিতের জীবনযাপনে বাধ্য হলেও সাইদ কখনও তাঁর প্যালেস্টাইনী শেকড় ভুলে যাননি; ফিরে গিয়েছেন তাঁর নিজ দেশ এবং দেশবাসীর মধ্যে যখনই সময় পেয়েছেন। আজ তিনি পাশ্চাত্য দুনিয়ায় প্যালেস্টাইনী অধিকারের সবচেয়ে সোচ্চার প্রবক্তা। বহুবার খুনের হুমকি দেয়া হয়েছে তাঁকে, কিন্তু স্তব্ধ করা যায়নি তাঁর কণ্ঠস্বর। কয়েকবছর আগের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় তিনি খোলাখুলিভাবে, আমেরিকায় বসে, ইরাকের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের নীতিকে “ীবহড়ঢ়যড়নরধ ধহফ ংযববৎ নষড়ড়ফু-সরহফবফহবংং” বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন। অপারেশন-ডেজার্ট স্টর্মের বিরুদ্ধে সামান্যতম সমালোচনা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না আমেরিকার জনমত; কিন্তু তবু এডওয়ার্ড সাইদ তাঁর বিরুদ্ধমত প্রকাশের ঝুঁকি নিয়েছিলেন অবলীলায়। প্যালেস্টাইন জাতীয় কাউন্সিলের সদস্য হিসাবে এর কার্যক্রমেও অংশ নিয়েছেন সাইদ। অ্যাকাডেমিক জার্নালে, মার্কিনী মিডিয়ায় তাঁকে গালি দেয়া হয়েছে চৎড়ভবংংড়ৎ ড়ভ ঞবৎৎড়ৎ বলে। অন্য দিকে, একথাও সত্য যে, পিএলও-র উচ্চতম স্তরে গতায়াত এবং ইয়াসের আরফাতের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ থাকা সত্ত্বেও পিএলও-র সকল কার্যক্রম তিনি বিনাপ্রশ্নে সমর্থন করেননি। গত বছর আরাফত যখন নরওয়ের অসলো-তে একটি অন্যায় ও অসম শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, সাইদ তাঁর সমালোচনা করতে দ্বিধা করেননি। সাইদ আরবী ভাষাতেও নিয়মিত লিখেন; ফলে সারা আরব দুনিয়ায় তার লেখনীর প্রভাব পড়ছে বিপুলভাবে।
সংক্ষেপে বলা যায় সাইদের অর্জনগুলো এরকম: (ক) উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগের কাউন্টার-ডিসকোর্স নির্মাণের জন্য যা যা ক’রা প্রয়োজন বলে তিনি লিখেছেন, ব্যক্তি জীবনে সে সব অবলম্বন করেছেন পূর্ণভাবে। (খ) শক্তিপ্রয়োগকারী ক্ষমতাচক্র এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জাগেিয় তুলেছেন; (গ) তাঁর নিজ জাতি-গোষ্ঠি তথা বাস্তুচ্যুত প্যালেস্টাইনীদের সপক্ষে যুদ্ধ চালিয়েছেন পাশ্চাত্য মিডিয়ায়; (ঘ) জাতীয় মুক্তির চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়েছেন, (ঙ) পাণ্ডিত্যপূর্ণ রচনাবলীর মাধ্যমে পশ্চিমা সংস্কৃতি ও সাম্রাজ্যবাদের মধ্যকার আঁতাতকে তুলে ধরেছেন; (চ) এমন একটি জ্ঞানশাখা ও সৃজনমূলকতার পৃষ্ঠপোষণা করছেন যা দৈশিক সীমানাকে অতিক্রম করে এবং জ্ঞানের ক্ষেত্রে বহুবর্ণিল সংকরতা উৎপন্ন করে; এবং সর্বোপরি, (ছ) পূর্বাপর থেকেছেন ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং কসমোপলিটানিজমের নিষ্ঠাবান প্রবক্তা ও প্রচারক।
(অনুবাদ : খোন্দকার আশরাফ হোসেন)
উল্লেখপঞ্জি
ঈযধহহবষ ৪. “ঊফধিৎফ ংধরফ” রহ ঞধষশরহম খরনবৎঃরবং. খড়হফড়হ: অ ঈযধহহবষ ৪ চঁনষরপধঃরড়হং, ১৯৯২: ১০-১৪.
ঈযধঃঃবৎলবব, চধৎঃযধ, “ঞযবরৎ ঙহি ডড়ৎফং? অহ ঊংংধু ভড়ৎ ঊফধিৎফ ঝধরফ.” ঊফধিৎফ ঝধরফ: অ ঈৎরঃরপধষ জবধফবৎ. ঊফ. গরপযধবষ ঝঢ়ৎরশবৎ. ঙীভড়ৎফ টক: ইষধপশবিষষ চঁনষরংযবৎং ১৯৯২: ১৯৪-২২০.
ঝধরফ, ঊফধিৎফ. অভঃবৎ ঃযব খধংঃ ঝশু: চধষবংঃরহরধহ খরাবং. খড়হফড়হ: ঋধনবৎ ধহফ ঋধনবৎ, ১৯৮৬.
....... ইবমরহহরহমং : ওহঃবহঃরড়হ ্ গবঃযড়ফ. ঘবি ণড়ৎশ: ইধংরপ ইড়ড়শং, ১৯৭৫.
..... ঈঁষঃঁৎব ধহফ ওসঢ়বৎরধষরংস. ঘবি ণড়ৎশ: অষভৎবফ অ. কহড়ঢ়ভ, ১৯৯৩.
..... “ঋড়ঁপধঁষঃ ধহফ ঃযব ওসধমরহধঃরড়হ ড়ভ চড়বিৎ.” ঋড়ঁপধঁষঃ: অ ঈৎরপধষ জবধফবৎ. ঊফ. উধারফ ঈড়ুঁবহং ঐড়ু. ঙীভড়ৎফ টক : ইষধপশবিষষ চঁনষরংযবৎং, ১২৯৮৬ : ১৪৯-১৫৬
..... “ওহঃবৎারবি রহ উরধপৎরঃরপং ৬ (১৯৭৬): ৩০-৪৭.
..... “ওহঃবৎারবি রিঃয ঊফধিৎফ ঝধরফ নু ঔবহহরভবৎ ডরপশব ধহফ গরপযধবষ ঝঢ়ৎরহশবৎ.” ঊফধিৎফ ঝধরফ: অ ঈৎরঃরপধষ জবধফবৎ. ঊফ. গরপযধবষ ঝঢ়ৎরহশবৎ. ড়ীভড়ৎফ টক: ইষধপশবিষষ চঁনষরংযবৎ, ১৯৯২:২২১-২৬৪.
...... ঙৎরবহঃধষরংস. ঘবি ণড়ৎশ : চধহঃযবড়হ, ১৯৭৮.
..... ঞযব চড়ষরঃরপং ড়ভ উরংঢ়ড়ংংবংংরড়হ: ঘবি ণড়ৎশ ঞরসবং ইড়ড়শং, ১৯৭৯
..... “জবঢ়ৎবংবহঃরহম ঃযব ঈড়ষড়হরুবফ: অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু’ং ওহঃবৎষড়পঁঃড়ৎং.” ঈৎরঃরপধষ ওহয়ঁরৎু ১৫:২ (১৯৮৯): ২০৫-২৫.
..... ঞযব ডড়ৎষফ, ঞযব ঞবীঃ, ধহফ ঃযব ঈৎরঃরপ. ঈধসনৎরফমব, গধংং : ঐধৎাধৎফ টচ, ১৯৮৩.
ঝধষঁংরহংুশু, ওসৎব. “ঊফধিৎফ ঝধরফ.” ঈৎরঃরপরংস রহ ঝড়পরবঃু : ওহঃবৎারবংি, খড়হফড়হ : গবঃযঁবহ. ১৯৮৭:১২৩-১৪৮.

(একবিংশ ১৫/নভেম্বর ১৯৯৫ সংখ্যা থেকে পুনর্মুদ্রিত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন