কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়
স্বেদবিন্দু
১.
ক্ষুদ্রকায় লিরিক লেখায়
নেই যে কোনো ক্ষান্তি,
তবুও সে এক দুর্বলতা,
তবুও সে এক ক্লান্তি!
২.
দেখেই বুঝি
অকার্যতার সকলরকম লক্ষণ;
লেখালেখিও কতো বেশি
যাদুমন্ত্রের মতন!
৩.
দুর্বল বলেই লিখছি।
লাভ কি কিছু পাচ্ছি?
ক্ষয়ে আর ক্ষরণে
সময়-ব্যয়ের এ রণে
আমিতো আরও দুর্বলই হচ্ছি!
৪.
বাস্তব নির্বিকার নিরেট,
কবির কেন যে তবু
অধীর আবেগ?
বাস্তবের বেলা কাজ করে প্রয়োজন,
তবে কবির বেলায় কেন
এতো বেশি আবেগী নিয়ম?
৫.
আকাক্সক্ষায় ছিলাম এতোই আলোড়িত,
পথে পথে হলো শুধু ভুল যতো!
গন্তব্য অপমৃত্যু, হাত কেবলই লক্ষ্য”্যুত
৬.
তোমার অনিচ্ছায় আসা,
তাই, অকাতরে যাওয়া।
আমার কষ্টার্জিত ধন,
অন্য কারো অনায়াস অর্জন।
৭.
আমি কি তোমার প্রয়োজনের সেই পানপাত্র শুধু;
ভরে ভরে তুমি তরুণতরকে বিলাবে মধু?
৮.
বস্তু ও ভাবের নয় বুঝি খুব সহজ কিংবা নিকট বাঁধন,
অন্যথায় কী করে সম্ভব তোমার এ ঘনিষ্ঠ বসবাস,
Ñ আর এতোবেশী দূরাশ্রয়ী মন!
৯.
মানুষের নীতিবোধ নয়,
বস্তুর চলার নীতিই মূল;
বস্তু এতোই মৌলিক, প্রধান প্রয়োজন,
বাস্তবে শক্ত স্নায়ুর অধিকারী দুর্জনও
সৃষ্টি করে প্রবল আকর্ষণ!
১০.
মনোযোগ আকর্ষণে
তার পরিত্রাহী কাজ
আরো/শুধু ধিক্কারই আনে!?
১১.
অভিমান কি অযোগ্যের অনুভূতি?
যোগ্য তো পায় অম্লান, এমন কি স্ততি!
আমার অভিমানও
কি মজুরদের আন্দোলনের মতন,
তাতে বেড়েই যায় আরো নির্যাতন?
১২.
কাঁটা খুঁজে হাতড়ে ফিরি বায়ু,
উদ্বায়ুতে রক্ত ঝরায় কে?
স্নায়ু, ক্ষিপ্ত এবং অসমর্থ স্নায়ু?
১৩.
সাহসী ও স্বাভাবিক উচ্চারণেই কি
পরকীয় আবেগের দুর্বলতাকে লুকোতে চাও?
না-কি, আমার অক্ষমতার শূন্যতায়ই
তোমার কন্ঠকে নিরাপদে সুউচ্চে পাঠাও
১৪.
আমাকে কি বারবার নত
হয়েই হতে হবে মিলিত?
তোমার সবই, সকল অঙ্গই কি?
তোমার যোনীদ্বারের মতো,
যে সহজে ভেজে না,
মোচন হয় না?
১৫.
দ্বন্দ্বের যে নেই অবসান,
প্রেমেও মেলে তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
রুদ্ধভাবের চাপে হয়ে একমুখী,
অদ্বান্দ্বিক সে হয় আরো বেশী দুঃখী।
১৬.
পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে
আমি অন্তত কৃতজ্ঞ,
প্রিয়ার আচরণের আগুন
নেভাতে তো কলের জলে
অন্তত পাততে পারছি
এই মাথা সদাতপ্ত!
১৭.
যুঝতে যুঝতে শিথিল হলে মুঠি,
প্রাপ্তি তবু কম কি?
বোধই তোমার নিচ্ছে যখন ছুুটি!
হা: হা: ছুটি, আরামদায়ক ছুটি,
মরণশ্যামের জুটি
১৮.
আমার কবিতা
এ-কারণেও দুর্বোধ্য ঠেকবে,
যে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি তো
আমার পরিস্থিতির নিমর্মতাকে
কল্পনা করতেও ব্যর্থ হবে।
১৯.
(ক)
বাস্তবের প্রতিফলন বলেই যেমন ধর্মকে মানি না,
আমার শত অযোগ্যতার প্রতিক্রিয়া হলেও
মানি না তেমনি তোমার অপ্রণয়কে;
হানি বরং ঘৃণা
(খ)
নেবো কি রাজ্যের তুলনায়-ঢাকা
তোমার লোভকে, অপ্রণয়ের সব ব্যাখ্যাকে?
না, আমার স্বাভাবিক কামনাকে?
২০.
খুব বেশী সুন্দরের, কুৎসিতের কীই থাকে করবার,
পেতে-পেতে আগ্রহ-অনাগ্রহ অন্তহীন,
বিপরীত দুই পথে হয় তাদের একই উপক্রম-
মরবার, মারবার।
২১.
শুধু কুরূপারই চাই মন?
সুরূপার মনোযোগ নিশ্চিত প্রান্তি;
অতএব, মনের মূল্য খুব নেই,
অতিরিক্ত তার চাই ধন।
২২.
অন্তত আবেগাধিক্যজনিত ব্যর্থতায়
তো কবি চিরকাল
দুঃখীরই পাশে রয়ে যায়
২৩.
‘ঈশ্বর’-এর ধারণায়
তো অন্তত নিস্তেজনা-প্রতিক্রিয়ার ফল হয়,
মানুষ না হোক,
তার মস্তিস্ক তো রক্ষা পায়!
২৪.
আপন দেহযন্ত্রকে বুঝেছো তো কি হয়েছে?
সেখানে কি পরিবর্তন
কিংবা উন্নতি কিছু ঘটেছে?
অক্ষম শরীরে জ্ঞানার্জন হয়তো হয়, অনেক,
তা বলে কি তার যন্ত্রণারা যায়, যন্ত্রণার উৎসরা?
২৫.
অক্ষম অন্ধকে যে তাড়াবেই, সে তো জানি।
অথচ তোমার নজর না পেলেই কেবল
হই আমি তখন অন্ধ।
তোমাকে ছাড়া আর কাকে
আমার চক্ষুষ্মানতার যুক্তি বলে মানি?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন