দুধগাছ
দুধগাছ আমার মা;
না হলে বাবা কি করে আমাদের
এই বনের ভেতর পেলে-পুষে মানুষ করলেন
নাঙ্গা সময়ের নিচে শিশুদের ভাতের যোগাড় ছিল না;
জন্মেছি রোগা-পটকা আমরা ন’ভাই-বোন
মা ছিল হাড়-জিরজিরে কিন্তু বুকভরা দুধ
আমরা ন’ভাই-বোন স্তন চুষে স্তন খেয়ে;
দুধের ফেনায় পুড়ে পুড়ে মা আমার ধনুক আর
শস্যের দেবী হয়ে গমক্ষেতে সূর্যালোক হয়ে জ্বলে
ফলবতী মাটিতে বিষন্ন লাল ফুল হয়ে ঝরে;
মা আমার চিরহরিৎ, বাবা বিষগাছ--বড্ড হারামি!
সভ্যতা
মানুষের সফলতা অনেক
যেমন, মানুষ গম দিয়ে রুটি বানাতে পেরেছে।
মানুষ আগুনে সেঁকে রুটি খেতে শিখেছে
এমনকি সে বসে বসে হিসি করতেও পারে;
মানুষ অস্ত্র বানাতে ও চালাতে পারে এটাও তার
একটা সফলতা-- এটা মানতেই হবে।
বেহুলা
গাঙ্গুড়ের ঢেউয়ে ঢেউয়ে কলার মান্দাসে
চম্পাই নগরের কুলবধূ;
সঙ্গী তার মৃত-গলিত লখা; হতভাগ্য পুরুষ
উজানি নদীতে প্রমত্ত স্রোত, ভাঁড় ও বৃষভকুল
ব্রীড়ায় আনত দেহ, শোণিমা মুখ
হিন্তাল কাঠের লাঠি হাতে জেদী চম্পাই-নাগরী
ইন্দ্রের সভাতে;
নৃত্য-গীতে কাল কেউটের ফণায় প্রেম
কিরীট হয়ে জ্বলে
ভাসে সপ্তডিঙা মধুকর কালীদহে, গাঙ্গুড়ের জলে।
মন্দার
সমুদ্রমন্থন-জাত
হে কল্পতরু, তোমাকে নিয়েও
দেব-দানবে যুদ্ধ ;
পুরুষের প্রেমের প্রথম উপাচার হয়ে
স্বর্গ থেকে মর্ত্যে বিস্তার ;
কাঁটাতেও থাকে ফুল ও ফল
ক্ষুধা ও সৌন্দর্যে কে জানে
তোমার গহ্বর ?
দেবতারা মানুষ, তাদের কান্নার পাশে
মূঢ়-শবের রক্তও অমৃত নীল হয়ে ওঠে।
কর্কট
স্তন থেকে দুধ ছলকে পড়ছে
এই দুধ অনাগত শিশুর জন্য;
পদ্মযোনি থেকে রক্তপাপড়ি ঝরছে
এই আর্দ্রবীজ উন্মাদ পৃথিবীর জন্য;
মানুষের জন্য আমার এই শেষ চিরকুট।
প্রাকৃত
সাপ ও ময়ূরের মাঝখানে এক খঞ্জ নাচছে
এই দৃশ্যে এক শূদ্রের কন্যা হেসে ওঠে;
নাচের মুদ্রায় লোকটার নাভির ভেতর নাভি পদ্ম হয়ে ফোটে;
শূদ্রের কন্যা খঞ্জের প্রেমে পড়ে খুন হয়ে যায়
তারা দুইজন দৃশ্যত সাপ ও ময়ূরের মাঝখানে।
হেমন্ত
ধানের দুধের গন্ধে ছেয়ে গেছে মাঠ
হলুদ সর্ষের ফুলে বনের শেষ মধু;
ষাঁড় ও শালিকের পাশে বিমুগ্ধ আমি
হেমন্তের ছুরি দিয়ে বিঁধি সুপক্ব ফল
তার উজ্জ্বল-বর্ণ আঁশ, সুমিষ্ট ঘ্রাণ;
সবিস্ময়ে লক্ষ করি এই দেহ কবে
যেন ছিল রসালো শস্যের দানা, দুধগাছ।
মৃত্যু
মৃত্যু হচ্ছে বাদাম গাছ;
ঝুরা মাটির গহ্বর থেকে কিছু দুষ্ট বালক
তাকে উপড়ে ফেলে দিয়েছে শূন্যের ভেতর;
মৃত্যুর বাদামগাছ বালির ভেতর আবার
তরুণীর জলদ ঘ্রাণ হতে চাইছে।
গরম হাত
প্রতিটি গরম হাতে লুকিয়ে আছে একটি কবর;
সন্ধ্যেবেলা উষ্ণ রুটির সাথে মোরগের ফ্রাই
আর নারীর নাভির ভেতর রক্তের ক্ষিপ্ত যে-আয়ু
ঘুম ও ভুট্টার দেহের পাশে এই উদ্গম, লড়াই
মাংসল বেদনার মতো সংক্রামক বটে;
মানুষের দেহে চূড়ায় আঘাতদায়ী যে-মুগ্ধউষ্ণ ঋতু
তারও ভেতর এক গরম হাতের কবর শুয়ে আছে।
তোমাকে জিগাই
মা নিষাদ আমাকে জিজ্ঞেস করেছে
প্রতিটি পঙ্ক্তি রচনার আগে
তুমি হত্যাদৃশ্য দেখ কি-না
তোমার হাঁটুর নিচে রক্ত লেগে আছে কি-না
তোমার উরুর মাংসে যজ্ঞ দাও কি-না
আমি বোকার মতো নীরব থেকেছি আর
মা নিষাদ আমাকে আবার অন্ধকার জঠরে টেনে নিয়েছে;
তোমাকে জিগাই--
মা নিষাদ তোমাকে আর কী কী জিজ্ঞেস করেছে?
দুধগাছ আমার মা;
না হলে বাবা কি করে আমাদের
এই বনের ভেতর পেলে-পুষে মানুষ করলেন
নাঙ্গা সময়ের নিচে শিশুদের ভাতের যোগাড় ছিল না;
জন্মেছি রোগা-পটকা আমরা ন’ভাই-বোন
মা ছিল হাড়-জিরজিরে কিন্তু বুকভরা দুধ
আমরা ন’ভাই-বোন স্তন চুষে স্তন খেয়ে;
দুধের ফেনায় পুড়ে পুড়ে মা আমার ধনুক আর
শস্যের দেবী হয়ে গমক্ষেতে সূর্যালোক হয়ে জ্বলে
ফলবতী মাটিতে বিষন্ন লাল ফুল হয়ে ঝরে;
মা আমার চিরহরিৎ, বাবা বিষগাছ--বড্ড হারামি!
সভ্যতা
মানুষের সফলতা অনেক
যেমন, মানুষ গম দিয়ে রুটি বানাতে পেরেছে।
মানুষ আগুনে সেঁকে রুটি খেতে শিখেছে
এমনকি সে বসে বসে হিসি করতেও পারে;
মানুষ অস্ত্র বানাতে ও চালাতে পারে এটাও তার
একটা সফলতা-- এটা মানতেই হবে।
বেহুলা
গাঙ্গুড়ের ঢেউয়ে ঢেউয়ে কলার মান্দাসে
চম্পাই নগরের কুলবধূ;
সঙ্গী তার মৃত-গলিত লখা; হতভাগ্য পুরুষ
উজানি নদীতে প্রমত্ত স্রোত, ভাঁড় ও বৃষভকুল
ব্রীড়ায় আনত দেহ, শোণিমা মুখ
হিন্তাল কাঠের লাঠি হাতে জেদী চম্পাই-নাগরী
ইন্দ্রের সভাতে;
নৃত্য-গীতে কাল কেউটের ফণায় প্রেম
কিরীট হয়ে জ্বলে
ভাসে সপ্তডিঙা মধুকর কালীদহে, গাঙ্গুড়ের জলে।
মন্দার
সমুদ্রমন্থন-জাত
হে কল্পতরু, তোমাকে নিয়েও
দেব-দানবে যুদ্ধ ;
পুরুষের প্রেমের প্রথম উপাচার হয়ে
স্বর্গ থেকে মর্ত্যে বিস্তার ;
কাঁটাতেও থাকে ফুল ও ফল
ক্ষুধা ও সৌন্দর্যে কে জানে
তোমার গহ্বর ?
দেবতারা মানুষ, তাদের কান্নার পাশে
মূঢ়-শবের রক্তও অমৃত নীল হয়ে ওঠে।
কর্কট
স্তন থেকে দুধ ছলকে পড়ছে
এই দুধ অনাগত শিশুর জন্য;
পদ্মযোনি থেকে রক্তপাপড়ি ঝরছে
এই আর্দ্রবীজ উন্মাদ পৃথিবীর জন্য;
মানুষের জন্য আমার এই শেষ চিরকুট।
প্রাকৃত
সাপ ও ময়ূরের মাঝখানে এক খঞ্জ নাচছে
এই দৃশ্যে এক শূদ্রের কন্যা হেসে ওঠে;
নাচের মুদ্রায় লোকটার নাভির ভেতর নাভি পদ্ম হয়ে ফোটে;
শূদ্রের কন্যা খঞ্জের প্রেমে পড়ে খুন হয়ে যায়
তারা দুইজন দৃশ্যত সাপ ও ময়ূরের মাঝখানে।
হেমন্ত
ধানের দুধের গন্ধে ছেয়ে গেছে মাঠ
হলুদ সর্ষের ফুলে বনের শেষ মধু;
ষাঁড় ও শালিকের পাশে বিমুগ্ধ আমি
হেমন্তের ছুরি দিয়ে বিঁধি সুপক্ব ফল
তার উজ্জ্বল-বর্ণ আঁশ, সুমিষ্ট ঘ্রাণ;
সবিস্ময়ে লক্ষ করি এই দেহ কবে
যেন ছিল রসালো শস্যের দানা, দুধগাছ।
মৃত্যু
মৃত্যু হচ্ছে বাদাম গাছ;
ঝুরা মাটির গহ্বর থেকে কিছু দুষ্ট বালক
তাকে উপড়ে ফেলে দিয়েছে শূন্যের ভেতর;
মৃত্যুর বাদামগাছ বালির ভেতর আবার
তরুণীর জলদ ঘ্রাণ হতে চাইছে।
গরম হাত
প্রতিটি গরম হাতে লুকিয়ে আছে একটি কবর;
সন্ধ্যেবেলা উষ্ণ রুটির সাথে মোরগের ফ্রাই
আর নারীর নাভির ভেতর রক্তের ক্ষিপ্ত যে-আয়ু
ঘুম ও ভুট্টার দেহের পাশে এই উদ্গম, লড়াই
মাংসল বেদনার মতো সংক্রামক বটে;
মানুষের দেহে চূড়ায় আঘাতদায়ী যে-মুগ্ধউষ্ণ ঋতু
তারও ভেতর এক গরম হাতের কবর শুয়ে আছে।
তোমাকে জিগাই
মা নিষাদ আমাকে জিজ্ঞেস করেছে
প্রতিটি পঙ্ক্তি রচনার আগে
তুমি হত্যাদৃশ্য দেখ কি-না
তোমার হাঁটুর নিচে রক্ত লেগে আছে কি-না
তোমার উরুর মাংসে যজ্ঞ দাও কি-না
আমি বোকার মতো নীরব থেকেছি আর
মা নিষাদ আমাকে আবার অন্ধকার জঠরে টেনে নিয়েছে;
তোমাকে জিগাই--
মা নিষাদ তোমাকে আর কী কী জিজ্ঞেস করেছে?
দুধগাছ কবিতাটা আমার খুবই পছন্দের একটি কবিতা। জফির সেতুর কবিতা প্রায় আট নয় বছর আগে কবি রিফাত চৌধুরীর মাধ্যমে পড়েছিলাম, উনার কবিতা খুবই ভাল লাগে।
উত্তরমুছুনমুক্তি মণ্ডল,
ঢাকা।