রনক মুহম্মদ রফিক
মেঘবরিষণ ঢালে স্নিগ্ধ অধ্যাপিকার শাড়ি
আমার তাবৎ প্রেম ভেসে যাচ্ছে মেঘবতী জলে; মহাকাশে অভিশাপ তিলশর্তে খুলে পড়ে পাখিদের ডানা।
তুমিরূপ মহামায়া করতোয়া নদী বুকে মেঘ ভেসে ভেসে; ঘ্রাণ ঢেলে দেয় স্নিগ্ধ অধ্যাপিকার শাড়ি ...
শাড়িটায় মহাকাশ,Ñ
নীলাকাশে যতেœ মোড়া সলমা জরিতে দীপ্ত মাধুরী বুনন
হাতঘড়ি মৈথুনে যান অধ্যাপিকা; দেখেন চুম্বক চোখে সহোদর তিন কাঁটা
গোলক কাচের ঘরে বাস করে শূন্য বিন্দুতে ... কাজে কর্মে স্বাতন্ত্রে উজ্জ্বল:
জঙ্গী কাচের মেঘ, সারাক্ষণ বৃষ্টিপাত মাথার ওপর
শূন্যে ভেসে যান প্রিয় অধ্যাপিকা ...
তাঁকে যত ভালবাসি, ছুঁতে গিয়ে স্পর্শ-রোদে পুড়ি
প্রাণপঙ্কে হানা দেয় দ্বিধালগ্ন এসে। তিনিও বাড়িয়ে দেন হাত
প্রোটন ঘূর্ণনে তার আরো এক সঙ্গী আছে প্রহরী চেতনে! ধ্র“ব ভার্নিয়ারে তিনি দূরে
অবস্থিত ... হঠাৎ শিরায় রক্ত, স্পর্শে কেঁপে ওঠে, স্পর্শমোহে টের পাই ফণিমনসার কাঁটা
বিস্ফারিত তীর, উঁকি মারে চুম্বনের ডালিম কর্নারে! রঙ ও রঙ্গে সর্বকাল মহৎ সজারু যেন
ফিরে পেল গৃহ ব্যালিন ...
ডালিম ফাটে না তবে রসদানা ফাটে : ছিনতাই হলে ভ্রƒণ মাতৃত্বেই বাড়ে : এই যে আমি তপ্তক্ষত
রেণুÑ বিচ্ছেদ বিন্দুভেদী ব্যাস ভিন্ন ব্যাসার্ধকে গিলেÑ একাই এঁকেছি আমি রমণ জ্যামিতি!
: এই যে অধ্যাপিকা, (?) তোমার ত্রিভুজ কানন বায়োটেক বিক্রিয়া বোঝে না
: এই যে স্নিগ্ধশাড়ি, (?) বরিষণ ঢেলে দিলে প্রেমিকের যে কোন ফাল্গুনে
তার গড়া বনানীতে করাতের ছিন্নশব্দে, Ñ প্রেমিক মিস্তিরি বাবু ওমেগা পাখির ডাক
করাতেই কাটে ...
অধ্যাপিকা রেগে গেলে অথৈ বর্ষা নামে তালদিঘি পাড়ে! শাড়িতে শাড়ির মর্মে সুতো মুখে
ঝগড়া করে পিয়াসী চাতক! চাতক চায় না কোন অন্ন পানি, অন্য রাঙা জল; Ñ
পিপাসিত ডানা ঠোঁট কালিক বিরহী ...
মেঘ আছে দূত নেই, অধ্যাপিকা শাড়ি তলে রূপরেখা বুনে যায় বর্ষা মঙ্গল।
পাহাড়ের চূড়া ধরে যখন হাসেন অধ্যাপিকা, আমি অন্ধ চাই নিতে শাড়িমেঘ বরষা
সুষমা : হিমালয় থেকে আসা গতরের ঘ্রাণ ...
মহাকাশে উড়ে উড়ে সকালিক মেঘমালা অধ্যাপিকা জড়িয়ে নিলে গায়,
মেঘবুকে আমি হই ক্ষুধাতুর প্রণয়ী পাইলট ...
..........
আমার অধ্যাপিকা থাকে দূর শহর পাড়ায়
স্বপ্নচোখে দেখি তার শাড়ি ওড়ে সুতোর আড়ায়
বারান্দায় দোল খায়, কোনো সুতো শোভাশূন্য নয়
সলমা জরির কাজ পাড়চিহ্নে তারকাখচিত মনে হয় ...
আমার অধ্যাপিকা শাড়িরূপ মেঘবক্ষেÑ একটুকরা আলোকিত চাঁদ
ভ্রƒবিলাসী চোখ আর নয়ন পটলচেরা, সুহাসিনী ফাঁদ
সে ফাঁদেই নিবেদিত সৌন্দর্যকে অধ্যয়ন করি
যে রূপের পাঠ্যসূচি ভুবনের বিদ্যালয়ে পড়ি
সুবোধ ছাত্র আমি
আমাদের শ্রেণিকক্ষ নেই
পঠনপাঠন সব
একাগ্র চিত্তে থাকে, থাকে অন্তরেই ...
তাবৎ বর্ষণগীত, শাড়ির সুষমা আমি প্রতিদিনই পড়ি
হয়তো ঘুমের ঘোরে, শাড়ি বক্ষ তুলি দিয়ে ভরি
আমার অধ্যাপিকা হেঁটে গেলে বর্ষণের রাত
ভর করে শাড়িশুদ্ধ, সীমাহীন ছন্দ বারিপাত
কী রঙে সাজাতে পারি, শুধু ঐ রঙধনু জানে
যখন বাসন্তী-ধারাÑ তাকে আর শাড়ি ধরে টানে
আমি তার দেহ, রং, শাড়ি, সুতো মুখস্তের মত
একা মগ্ন পড়ি বসে; যেন ঋষি ধ্যানে অবিরত
তার জোড়া পামসু-খানা যদি তোলে শব্দ অলঙ্কার
বর্ষামাস শেষ হয়, খুলে যায় বসন্তের দ্বার
প্রতিপাদ্য অধ্যাপিকাÑ আমি তাকি সুরে, তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে
সকল রাগের স্বরে মিলে মিশে একাকার, গায়কী ভঙ্গিতে
কে তার মুগ্ধ শ্রোতা, শুধু জানি বুকের কৈলাসে
আসে আর ফিরে যায়, জানাজানি হয় না তো উতল উচ্ছাসে
যখন তুমি প্রথম দৃষ্টি হানো
অবলোকন ছিল প্রথম থেকে
আমার ছিল এক পক্ষ টান
হৃদয় ছিল অন্য দিকে বেঁকে
প্রথম দেখা প্রথম শাড়ির ঘ্রাণে
চোখ ফিরিয়ে খেয়েছিলাম খাবি
মাছের মত ভয় ছিল খুব প্রাণে
তাই তুলিনি জড়িয়ে পড়ার দাবি
এখন আমি মড়া নদীর ঘাট
ভাঙা ডিঙি এপার ওপার করি
বুকের ভেতর সমস্ত তল্লাটে
বালিয়াড়ি, যায় না বাওয়া তরী ...
এষণাপক্ষ
চাইলেই পারো Ñনদী : আমি দেশ প্রজন্মে গৃহমুখি,
খনন করতে পারো নীলসীমা বঙ্গোপসাগরÑ
তুমিই যেখানে একা আঙুলে কাটতে পারো জলের উল্লাস
চাতক সখ্য ঋণ পরিশোধ করে ...
চাইলেই পারো প্রেম : তাবৎ মেঘের তুলো, আর্দ্র সামিয়ানা
মাথার ওপরে পারি গুটাতে বর্ষণ,
সকল বৃষ্টিপাত : বর্ষার আশ্রয় অন্য রাজ্যপাটে
প্রশ্নই ওঠে না ...
চাইলেই পারো মন : তারাপুঞ্জ পাটসারে
গুটিয়ে প্রভাত আগে, গুণে গুণে গেঁথে দেব
অলকা তিলকা ক’রে ব্যক্তিগত মনোহারি টিপ...
চাইলেই পারো গৃহস্থালি : চালচুলো হেসে উঠবে
আমাদের রান্নাঘরে ...
সূর্যোদয়ের আগে ফোঁটা-চোঁয়া জল ছেড়ে
অনার্য শাড়িখানি বায়ুমন্ত্রে উড়বে বারান্দায়,
প্রতিবেশি টিটকারি, লাজ পদাবলিÑ ছড়িয়ে গড়িয়ে তবে;
জানাজানি হয়ে যাবে কলঙ্ক বাজারে ...
চাইলেই পারো শস্যকণা : নিষ্পাপ এক ঝাঁক পায়ের আঙুল
পোতনে-উঠোন ধারে
ঘুরপাক কাবে ক্ষুদ্র, আলতা সঙ্গীতে
মুঠো মুঠো মাটি চুষে দাঁতহীন জিহ্বা আড়ালেÑ
চাইলেই পারো প্রার্থনা :
হাদিসের কালো স্বর ব্যঞ্জনধ্বনি, তসবি পাহারা আর
তোমাকে রাখবে ঘিরে বোরকাহীন তনু
উদার প্রকাশ্য ধ্যানে, অধরা আলোক এষণায় Ñ
সুদূরের মাদুরীয় ওম, প্রার্থিত সুরের প্রথমা
ছুটে আসে এই বোধিদ্রুমে; প্রেমিক উন্মত্ত ক’রে যাবে
রাবেয়া বসরীর অনুরাগে ...
বিহঙ্গ বৃক্ষকীট : পতঙ্গ পাখিরা
দেখবে সুবর্ণ বীথি, জন্তু মনিব যত, যত হিংস্র হাতি
গাছেরা সরিয়ে নিয়ে ছায়াÑ ঢালবে আলেয়া ঝর্না সুখ
দূরে শুধু আমি দেখবো : মেঝেয় গড়িয়ে আর্দ্র আলেয়া ঝলকানি ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন