শুক্রবার, ৯ এপ্রিল, ২০১০

দীর্ঘ কবিতা : জওয়াহের হোসেন

জওয়াহের হোসেন

কাব্যাশ্রয়ী ও নিশাচরগণ

১.

রাত্রি হাওয়ায় যেতে-যেতে ভাল লাগে ― এ বিস্তৃত তামুক ধোঁয়ায়

কী এক ব্যবস্থাপনাপত্রে একা-একা ঘুরেছি,

অন্ধকার গলিপথ আর মর্মে জেগে থাকা

ব্যর্থ গণিত

কখনো অগ্নিস্মৃত চুম্বনে ভরে থাকে মগ্ন কুসুম, এই কি

তোমার নিভৃত মতিভ্রম ? নাকি অন্ধকারে কেউ-কেউ আমার মত

রাত্রি চেনা নগর থেকে শ্মশানে ফিরেছিল একা ― তবু জানিনি

ওই ক্ষত দাগ ছুঁয়ে আজও আমি করুণার ঝড়ে পিছুৃ নেয়া

পুরোহিত

২.

শীতের অভিসারে তুমিও চিনে রাখ রোদ

তাই প্রকাশ করতে জানো রাতপুরাণ

আমাদের চাষাবাদ সব লুট করে নিয়ে গেল প্রবাসে

তাই পরাভূত সূর্য সমুদ্র আর মেঘলোক

এমন বাসনায় ঘৃনা করেছি শুধু

শরীরে শরীরে।

৩.

তোমার স্মৃতিকে ফের করেছি সাধন ― অমৃত তৃষ্ণায়

সে সত্য এসে আমারে ভাসালো দূরে ―ঘোর মাতালের মত চিরযায়ী

আমি ওই আয়ুষ্কালে আজ রক্তাক্ত, পরাজিত মৌন

আর ওরা দ্বিধায় জড়ানো ভিন্ন-ভিন্ন তাড়নায়

অথচ আমি শুয়ে-শুয়ে দেখি নিদ্রার ভিতরে গুপ্ত গোরস্তান

চারদিকে অবশিষ্ট পোড়া-হাড় আর উষ্ণ অতল মেঘ

নির্জন মিশে আছে বিরহ-বিষাদ

এই কলিকালে কেউ না কেউ আধাশোয়া বরফের ভিতর বিস্তৃত

কেটে-কেটে কমাতে চেয়েছিলাম আয়ু ― কালো-কালো হয়ে উঠে মাটি

আমি তখনও চোখ বন্ধ করে দেখি দ্বৈততায় পৃথিবীর বয়স সত্যিই কমে যাচ্ছে।

৪.

আমার নিদ্রাপাঠ করে যাচ্ছে কুয়াশা-কুয়াশা ভোর

এই নগর যাত্রার পথে মর্মরিত পৌরাণিক দৃশ্য

ভুলে যাওয়া ইলিয়াড ও ওডিসি আরো কতোশত কাহিনীগুলো

বাতাসের সাথে দাবমান

আমার ধীরে-ধীরে অন্ধ হয়ে যাওয়ার ভেতরে ভেসে থাকে মেঘ ―

সেও বিদগ্ধ কাঁপতে-কাঁপতে চুপচাপ দীর্ঘকায়

ভেসে যাচ্ছে অতিশয় গ্রন্থপৃষ্টায়

৫.

নিন্দা মেখেছি গায়ে এ কাঙালে কি পাইবে তোমায়

যদিও চোখে এখনো উম্মাদনা

ধুকে ধুকে নির্মম বেহাগ বিভোর আমি

বুকে কেঁপে কেঁপে ওঠে মরুঝড়

জ্বলে ওঠে গান

প্রশ্ন হাঁকি খরতাপে আজ

আমি শত অপরাধী।

৬.

কোন উজানে যাবে ? বরং ঝাপ দাও―

গহীন জলের প্রপাতে উড়ে উড়ে কতোদূর আর যাবে

উষ্ণ শরীরে ধুয়ে দাও পাস্তরিত আবরণ

সন্ধায় দগ্ধ হয়ে যাওয়া অতীতের জ্বরগ্রস্তচোখ থেকে খোলে ফেলো ধূলিরাত্রি―

আনন্দের জন্য যত বিশুদ্ধ সরোবর গ্রহণ করো

পৃথিবীতে অন্ধকার বলে কিছু নেই, অক্ষয় বলে কিছু নেই।

৭.

দেহের লোমে ও রক্তে ঋণ ― বুকে জ্বলে উঠে আগুন

আর জেগে থাকা নিদ্রার ভিতরে শরীর ধরে লতিয়ে ওঠে আয়ু

আমাদের সমস্ত অনুভূতি কেমন যেন

অচেনা-অচেনা মনে হয়,

তবু তোমাদের ভেজাডানায় কান্না শুনতে পাই।

৮.

মর্মাপ্লুত, বড় অসহায় তাই উর্ধŸমূখী বিনোদিনী

তোমাকে ভেবেই এতো অবিশ্রাম হাড়ের মর্মর আসে

হায় ! অজানিত অভিন্নতা হেতু

দারুণ অবহেলায় ফুটে আছো স্মৃতিরেণুমাখা নৈঃশব্দ্য বাগানে

তবু শরীর দ্বিধা হলুদাভ

কী করে ভুলি যে কালো চিতা অন্ধকারে যেতে-যেতে একাকার

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন