মুজিব ইরম
ঝর্নাবলী ও অন্যান্য
গাছশূন্য পাহাড়কেই মনে ধরে আজ
তার গায়ে যতো সব মেঘ আসে ভেড়াপালক রমণী হয়ে
তাদের কথায় আমি পুলকিত হই ...
তোমাকে বৃক্ষের গল্প শোনাবো বলে সেই ছিপছিপে স্রোত হতে চাই ...
চলো, ওই জলের কাছে রেখে আসি আমাদের বেদনা, যাতনা ...
Ñতুমি কি চিরটাকাল পাতাঝরা উইলো বৃক্ষ হয়ে রবে?
তুমি আছো
যেভাবে রোদেরা আছে মেঘ হয়ে নিঃসঙ্গ টিলায় ...
Ñপাহাড়যাত্রীর দল আমাকে কি সঙ্গে নেবে আজ?
আমি সেই একাকী পথের কাছে মন খুলে ঘাস হয়ে রবো ...
ভালো লাগে এই গাছ
এই ভেড়ার খামার
একটু একটু নিঃসঙ্গ চেরির ডাল
বনমোরগের ডাক
একাকী পূর্ণিমা
ফর্সা তরুণীর মতো পাহাড়িয়া রোদ ...
বলে তারাÑ নুয়ে-নামা শিলাখণ্ড হও ...
কাল যে পাথর জলে ভিজেছিলো, আজ তাকে দেখে আসি উষ্ণ হয়ে আছে
কাল যে গম্ভীর মেঘ ভিড়েছিলো ভিড়ে
আজ তাকে নিজস্ব চাঞ্চল্যে দেখে ঝরা-রোদে রাঙা হয়ে আসি
Ñও উজানিকন্যা, তোমাকে দেখার সাধ ফুটে থাকে পাহাড়চূড়ায়...
আজ এই টিলা থেকে অভিমানে নেমে-আসা
চিকন পানির মাঝে মন ঢেলে ছুটে যাবো সমুদ্র বিহারে ...
তুমি দূরে নও, কাছে আছো
পথের ধারের জলে-আঁটা পাথরের মতো নিরাপদ মনপ্রান্তে আটকে রাখি ...
তুমি ঘাসফুল Ñ শিশির ডেকেছো
Ñএতো নিলুয়া-দৃশ্য কোথায় রাখি? কোথায় বসতে দেই?
গ্রীক তরুণীর চোখে ঘুম দিতে রাত নামে পাহাড়ের গায় ...
মেয়েটির হাতে আইরিশ কফির মগ এগিয়ে দিয়ে জরিপ করি তার শীতল
চোখের রঙÑ তাকে কেনো চেনা চেনা লাগে? কেনো সে এমন করে শীতলতা
চোখ ভরে রাখে?
তুমি ডাক দিলে মধ্যরাত্রি বিছানা গুটায় ...
তুমি গান
তুমি গানের অধিক
যেরূপ ওই মাঠের পাশে শান্ত লেক
মায়া-মায়া লাগে, বন্ধু-বন্ধু লাগে
কফিল ভাই গাইছে মন
আমার নিঃসঙ্গতা কেমন করে ওঠে
Ñতোমাকে কি একবার ডাক দেবো, ঘাসফুল?
তোমার সুরে সকল কিছু রাঙা হলো আজ ...
দূর থেকে তোমাকে জাগিয়ে রাখি
আমার বেদনা যতো ধুয়েমুছে যায় ...
মধ্যরাত ভোর হলে সমস্ত উচ্ছলতা ফেরি করে রৌদ্রমগ্ন হই
Ñতুমি কেনো এতসব ভোর এনে দাও?
পর্বত আরোহী রমণীর পেটের চিকন ভাঁজ হয়ে ভোর নামে পাথুরে জলায় ...
উ™£ান্ত স্রোত নিয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছি দুপুরিয়া ছায়া দলহারা ভেড়া শাবকের মতো ...
পায়ে হাঁটা পথ পড়ে আছে মৃত ঘাস বুকে নিয়ে Ñ সেই রূপ একাকী গান
এই জলমগ্ন বক পাখিটির মতো ...
Ñ তুমি কতো দূরে থাকো ঘাসফুল?
খুঁজতে খুঁজতে একটা জীবন গেলো
ভেবেছি কোথাও আছো
ঘরে এনে বোঝা গেলোÑ নিঃসঙ্গ পাহাড়ে আজো তুমি বনে থাকো ...
যে গেছে পাহাড় কুড়াতে
যে গেছে শিশির ঝরাতে
Ñতাকে তুমি বনতিতিরের পালক দেখাবে?
তোমাকে দেখি না
জপ করি
তোমাকে বাজাই না
নিজেই আমি বাজতে বাজতে গীতের অধিক গীত হয়ে আছি ...
মৃত খামারের পাশে
এতো ঘাস
এতো প্রাণ
Ñ তোমার কেনো রে দুঃখ থাকে মনে?
পাথরের গল্প অনেক হয়েছে
তবু এই আধভেজা পাথরের গায়ে লিখে যাই তোমার বিলাপ ...
যতোদিন এই কান্না আমাকে জাগাবে
তোমার দূরের ধ্বনি ঘুম এনে দেবেÑ
ততোদিন বালির ওপর ভাঙা ডাল হয়ে রবো ...
Ñতুমি কি অবাধ্য রাত্রির গল্প শোনাবে না আজ?
তোমাকে জঙ্গল মাঝে মাথা-উঁচু শিলাখণ্ডের গর্বিত উপস্থিতি ভাবি...
Ñকী হবে আমার
পুনরায় যদি হারিয়ে ফেলি গন্তব্যের সাঁকো?
একবার ছুঁতে গিয়ে হারিয়েছি স্থিতি
Ñতুমি কি পুনর্বার অগ্নিভেজা নদী হতে বলো?
তোমার চুলের মতো ঝর্নার রোদন, রঙ তার কনিআঙুলের মতো ফর্সা ...
তার কাছে ফতুর হয়েছি ... তুমি হাসো সেই পতিত জলের মতো, যার উৎসস্থল দেখা
হয়নি এখনো ... ভেড়াশাবকের মতো মেঘগুলো আলস্য ঝাড়ছে পর্বতচূড়ায় ...
বুঝি না কিসের তুলনা দেবো Ñ ও আমার জৈন্তাপাহাড় থেকে উড়ে-আসা বক,
তুমি কি মন্ত্রগুণে বেভুল করেছো?
এই বনেলা হাওয়া সাক্ষীÑ
সমুদ্রে তোমাকে কাল ভুলিনি কখনো!
তোমাকে অনন্ত বলি
বাসনা জানাই
Ñকাজের মাঝে তোমার হাসি একবার পাঠাবে?
দরোজায় ফেরি করি মন
আজ রাত দীর্ঘতর হোক
তুমি একবার ডাক দিলে
দেখো, কতোবার আমি উচ্চারণ করি নাম ...
তোমার মনের মাঝে যতো গান থাকে, তোমার চোখের মাঝে ঢেউ
সকলি জাগিয়ে দিলেÑ রাত্রি কেনো শেষ হয়ে যায়?
এতো এতা নীল ঘাস ফুটে রয় টিলায় টিলায় ...
হু হু করা বিঁধেছিলো বুকে
তুমি কোথা থেকে ভেসে এলে
আমিও যে কেনো ঝর্নাবাসী হলাম ...
ও পাহাড়িকন্যা, মধ্যরাতে এভাবে হেসো না তো আর
আমার ক্ষতের ভার বহন করতে পারছি না।
তোমাকে জাগিয়ে রাখি
বন্ধু হতে ভয় হয়
তোমার প্রেমিক হবোÑ তুমি কি নেবে না?
ঘোড়াপালক তরুণীর হাতে ওয়াইনের বোতল তুলে দিলে তার চোখে খেলে যায়
ঘোড়াকেশরের ঢেউ, সৌজন্য বিলাপ ...
যতো হাওয়া দেখে আসি বনে
যতো বনময়ূরের নাচ
সকলি তোমার চোখে বান্ধা পড়ে থাকেÑ আমি কি আবার তবে গুহাবাসী হবো?
যদি ভুলে যাই জৈতুনের বন
যদি একবার ইশারা করো
দেখো ফের জেগে উঠি
ফের তোমাকেই দেবী করে ভাসাই সাম্পান ...
Ñতুমি কি বলবে না সেই কুহকী ইঙ্গিত?
দেখো, একটাও বাতি জ্বলেনি কোথাও
তবু ঘরময় ফুটে রয় হলদে ফুলের রঙ ...
ওই গন্ধটাকে কী বলবো
বলবো কি ব্যাখ্যাতীত
যেরূপ আদর পেয়ে বদলে যায় তোমার গাত্রবর্ণ?
তুমি একবার খুলে গেলে
ভাঁজ করে নিতে রাত্রি কেনো এতো ছোট হয়ে যায়?
তুমি কথা বলোÑ
যেন বনেলা মোরগ আলগোছে ঝাড়ে তার দুপুর-আলস্য
এসব কথারা, জানো তুমি, ভেসে আসে অলৌকিক ছায়ারথে ...
সেই যে বেনামী গাছে চড়ে জীবন রাঙিয়েছিলাম
সেই থেকে তার মাঝে জমা রাখি মন
Ñতুমি কি বলবে না সেইসব বিকেল কী রূপে হাঁস হয়ে যায়?
এইসব ঘাসের ওপর শুলে আকাশকে তোমার চোখের মতো দেখায় ...
তোমাকে বলেছি Ñ এ যাত্রা আলোর অধিক ...
যা কিছু হাঁটু ভেঙে পথে পড়েছিলো
আজ তারা তোমার স্পর্শের গুণে দেহাতীত ঢেউ ...
তোমাকে কি সেই হারিয়ে-যাওয়া আধুলির কথা এখনো বলিনি?
বলিনি কি ভেঙে-পড়া পাথরখণ্ডের নাম Ñ আমরা যেখানে একদিন
স্তব্ধ হয়েছিলাম?
Ñআলো কতোদূর, পাখি?
ছেড়ে যাচ্ছি এই পাহাড়-লাবণ্য ...
এ-যাত্রা তোমার দিকে, ও পাহাড়ি মেয়েÑ তুমি কি সেই ঝুলন্ত সেতু, যার পায়ে
উইলো বৃক্ষের ডাল কান্না হয়ে ঝরে? তুমি কি সেই সুউচ্চ পর্বত-চূড়ায় আটকে পড়া
দেউলা পাথর, যার গায়ে মেঘেরা সব রৌদ্র হয়ে নাচে?
আমি তো এসছিলাম এসব ঝর্নার নামে জপ করবো একাকীত্বের দিন ... এসব
নদীর কাছে ধুয়ে দেবো দেহের গেওইর ... তুমি এভাবে ডাক দিলে কি আর
আলো-শিকারি হবো না?
Ñআমি মনবাসী ছিলাম, তুমি কেনো আবার আমায় গৃহবাসী করো?!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন