শুক্রবার, ৯ এপ্রিল, ২০১০

জহির হাসান

জহির হাসান


মরিয়ম বিষয়ে পদাবলী


বাজারের ব্যাগ কোথা গেল, বৃষ্টি হচ্ছে, বাইরে যাবো,

মরিয়ম কই, তজবিদানার মত বৃষ্টি ঝরে, মনে, যথাতথা,

উনুনে বসানো ঠান্ডা বেগুন তরকারী, বেড়ালে কি মুখ দিয়েছিল ওতে?

আমি নাহি গো কোথাও প্রতিসরণের মধ্য দিয়ে পৌঁছে যাবো

বাউলা চুলা তেমাথার গাছের নিকটে, দেখি তাকে কিছু বলা সাজে কি না,

যদি চলে যাইতাম তাহার চিরহেফাজতে, তার ছায়াটি হইতাম মন চায়!


পানডুবি সাথে ছানাপোনা দেখিছি বর্ষায়, তার কাছে যাবো, যদি ভাসতাম,

যদি অনায়াসে একবেলা সঙ্গী হই সরপুটির মতন খোকার, হাতে রৌপ্যবালা, বড় হাউসের,

আজ আমার কী হলো কত হাউ হাউ বোতল মাতাল সমীরণ কোন দেশে ছুটে যাচ্ছে,

মেঘের কিনারে ঠাঁই পাওয়া রোহিনী তারার মতো কেউ পাহারাদার ডাকিছে

লিচ্ছবি বংশের মেয়ে, হূণ আক্রমণ থেকে বেঁচে গিয়ে

পালিয়েছে স্বাতী বিশাখার আশেপাশে,

এতসব প্রশ্নকর্তা কোথায় থাকেন?

হাওয়া সরে যায় লেবুবনের নিকট দিয়ে পুকুরপাড়ের তুলা গাছের ওপর দিয়ে

দ্বৈত সত্তা উড়ে যায় বুদ্ধি ও বিবেকসহ ছন্নছাড়া

আর অন্ধকার বৃদ্ধ দিন বৃষ্টি পড়ে গুপ্ত যুগ থেকে অনিবার্য রয়নার বনে,

মরি, হায়, বাজারের ব্যাগ কই থুইলা!


আম্মার চৌকির নিচে মশার কয়েল জ্বলে কেন, তেলচিটে বালিশ বিছানা মাতা-মাথা শুয়ে আছে,

আঙুল ফাড়ায় নুনপানি ঢালো, বলি, যেন আজ দূর্বার উপর

মরে পড়ে আছে বিষহারা ঢোঁড়াসাপ, বলি আম্মা, পান, সুপারি, মিঠাই

আর কিছু, ইনি স্বামীহারা, ইনি যজ্ঞির ডুমুর খাওয়ায়ে দুপুরের চাল বাঁচায়েছে,

সেই প্রহসন করে নাই পুরোপুরি দিশাহারা, আজ তবে বাহিরে আহারে নিমন্ত্রণ,

পরমায়ু বাড়ে ছাগলের দুধ খেলে কী কী রোগে সেরে যায়, কেন জানিনি জড়ায়ে জিওলগাছে ওঠে আলকুশি লতা প্রেরণা বাৎসল্যে বিড়াল যেভাবে নিজ বিষ্ঠা ঢেকে তাড়হুড়া চলে যায়,

যেতে হবে,

বাজার বহিয়া যায়, দেরি হয়ে যায়, ঠেকে গেছি, বখে গেছি,

আজ টাকা নাই কাল টাকা হবে অর্থের হায় রে স্থির অর্থ নাই ক্যানে,

কে মুছায়ে দেবে বাছুরের মুখে দুধফেনা লেগে আছে,

মরিয়ম, ঘুম থেকে ওঠো, বাজারের ব্যাগ আনি দাও!


#

মানকচু ছেঁড়া কলাপাতা, শরীফের ছাতা, কিবা কাজে লাগে, এই ঘোরলাগা গৃহবন্দী ধন্দলাগা

কিছুকাল এই বাদলায় না গো তোতলায় মোর জিহ্বা,

কোন উছিলায় কমে যাচ্ছে উবে যাচ্ছে কাকে বলি নিজ উতলা ভাবনা,

সংশয় সান্ত্বনা জ্বরো রোগী দেখে জানালার থেকে দূরে আমের আঁটির গায়ে মৃদু গন্ধবহ আঁশ,

নরম হলুদ

কৃষকের হস্তচ্যুত শস্য পণ্য নামে বাজারে ও হাটে ভয় দেখায় কঠিন দোকানে দোকানে প্রাণ

শুকায় শুটকির মতো, নাই খানাপিনা, ঠেলিয়া দিয়াছো নানা রং

দজ্জাল, আকাল, মনের ভেতরে তবু কত ঘুড়ি ইন্তেকাল ক’রে বেঁচে আছি,

দূর থেকে খেলা দেখো আজ যার যার তার তার সেই সে টানাপোড়েন

অম্বর কহিছে, হায়, তোমাকে আসতে হবেই

জামরুল গাছের তলায় পোতা আছে অগাধ এলেম,

মরিয়ম, তুমি কোথা, চলে গেছো রাত্রির কবলে,

ওঠো ন’লে প্যাঁচ বেঁধে চুকা হইয়া যাবে মোগো লেনদেন,

বাজার তোমারে ডাকে, নমাজ তোমাকে ডাকে, বাজারের ব্যাগ রাখিছি কোথায়?


গোয়ালের পিছে বিদেহী বনবিড়াল আছে খোয়াড়ে কাঁপছে মুরগির মন গরম শরীর

চোখ লাল, ওগো আমি তোমাদের নিকৃষ্ট মনিব, ওগো আজ আতরের শিশি থেকে

কেরোসিনের গন্ধ আসে, অবলা নির্বোধ আকৃতির প্রশ্ন আসে মনে,

যেন কূটবাক্য প্রসব করিব আজ এইক্ষণে জেদী লিঙ্গ পুঁজিপিতা আপনি থামেন,

দারিদ্ররেখার নিচে ঘুমায়ে পড়েছি ঠুনকো সম্বলহীনা ব্রাত্যজন,

যদি ভাবো মাকড়শা জালে শিশির কণার মতো ঝুলে আছি,

কেউ খাবে কেউ খাবে না তা হবে তো না,

পাবনার পাগল মিলন বলে, ডাল নয়, এইডা তো ঘাটের পানি,

পাগলা গারদে যাবো, বেঁচে যাবো, উৎকণ্ঠায় পাগল দেখাবো পাছা

ফটোতোলাদের দিকে, নিরক্ষর হবো এ-জীবনে একদিন জানি সানকিতে ফ্যান নাকি পানি

নাকি কুড়া বুঝিব না কেন আজ মনোসন্ধ্যা, কেন মন দরুদ শরীফ পড়ে

মরিয়ম, জানি না বুঝি না আমি কোন্ বাজারে যাবো?


সবাই নমাজে গেছে আমার কি হবে, ঝরে নষ্ট ছবেদার ফল,

অন্তরে যে আশা করে বাসা,

অন্তরে তা নেচে-কুঁদে ধসে পড়ে,

জীবন চরমে ওঠে ফলে কতবার গেছি হরিতকি বনে

তবু পাই নাই সেই অগাধ প্রশান্তি, ছায়াতলে কান পেতে শুনি, গাছ মোরে বলে,

‘নিরাশ্রয় রতা, কোনোভাবে প্রাপ্য তোমার এ ডাল তোমাকে দেবো না।’

রাগে ক্ষোভে কান ধ’রে বলি,

এর বীজ পোড়াও ক’তেছি, পরে

কঠিন বঙ্কিম বিষবৃক্ষ হবে, তার ফল

ভুলে অকারণে হিলে ফেলবানে,

ফলে শুয়ে থাকি যেইরূপ চরম ঘাপান খেয়ে পালোয়ান

শুয়ে থাকে গাবতলে, কি কবো হয়নি তাতে নিবিড় বিশ্রাম,

মনে হয় পড়ে থাকি সেই রূপ থেমে পড়া বিকশিত লেনদেন,

মোরব্বার কোনো চাঙ যেন,

ওশে ভেজাপেঁচা তেতুঁলের ডালে বসে দেখে এই সব,

এবার মন চায় বিষুবরেখাটা ধরে চলে যাবো মধ্যাহ্ন সকালে

দিশেহারা বাঁকা পথে জাহাজে টাহাজে করে গাভীন গরু চরা মাঠে,

জ্ঞান ফেরে যেই মনে আসে,

মরিয়ম, বাজারের ব্যাগ কনে গেল হায়!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন