শুক্রবার, ৯ এপ্রিল, ২০১০

দীর্ঘকবিতা : আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ

আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ

স্বাধীনতাবিষয়ক গুচ্ছ

স্বাধীনতা, সরলতা: ঘুড়ি

ঘুড়ি চলে গেলো সীমানার বাইরে

কুড়িয়ে পাওয়া বাতাস রঙধনুর চিহ্নে

বিকালের বিরহে- দেশ দেশান্তর।

বিবাহ বিচ্ছেদ ভাটি অঞ্চলে

কোথাও কারো মেহদি লাগে না

কালো লাল সামিয়ানা দোল খায়

যাদুঘরের জানালায়।

ছাদ অতিক্রম করে যাবে ছেলেদের দল

অতীব ভালোবাসা লালরঙ

মেয়েদের সবুজে

সীমানার বাইরেও থাকে যদি গুপ্তধন!

ঝোপজঙ্গলে বাকাট্টা ঘুড্ডি

ছেলেধরাদেরও মন কেড়ে নেয়।

নাম জানা না জানা এই পথ পরিচিতিকরণ

আলো হয়ে জ্বলে উঠে কারাগারে

ভবিষ্যতের সাঁকো উন্মুক্ত

ঘুড়িহারাদের জন্য।


স্বাধীনতা, সরলতা: সকাল

ধরে আছো আর গান লিখে দাও

দূরে যায় খুনের চিহ্ন

শত্র“ বহনের স্মৃতি।

রাতে ছিলো জাতিভেদ ভাসমান শ্যাওলায়

গান ধরতেই কেঁদে উঠে পাখি

শিকার শেষে শহর উপকূলে

আগুনের আয়োজন - লাল তরকারি।


আহা সাধারণে অভিষিক্ত সকালবেলা

শুধু গাছ খুলে সূর্যগ্রহণের মায়া

তোমাকে যদি না-ই ডাকি

এই বেহালা বাজানোর কালে

নদীভুক্ত পাখিগুলো স্বরলিপি লেখে

ছলাকলার এই জটিল বর্তমান ভেসে যায়

সকালের বাতাসে।


স্বাধীনতা, সরলতা: যুদ্ধক্ষেত্র

ফেলে গেছো রক্তকম্বলে-

পাশে কাঁটাতারের সীমানা

তোমাকে অধিকার অথবা হরণ করি কোন সাহসে।

ভূমিদখলের অভিশাপ নিয়েছি মাথায়

আর কাছে আসে দূরে যায় শত্র“-ছাউনি।

আশেপাশে জাতিপ্রথা ক্যামোফ্লেজ রীতি

সেহেতু অতিসাবধানতা

সদা মন বাঘ বাঘদাস।

দেশ অপহরণের মন্ত্র জপি

ট্রেঞ্চের পাশে বন্ধু রাইফেল

উড়ে যায় বোমারু বিমান গুলি খাওয়া পাখি।

কখন শেষ হয় এই ধর্মযুদ্ধ

কখন সরে যায়

হামজার বুক থেকে আবু সুফিয়ানের বল্লম।

কখন ঘন্টা বাজে স্কুলে

কাঁটাতারের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন আম্মা

কবর খোঁড়া শেষ হলে

শাদা পতাকা উত্তোলন।


স্বাধীনতা, সরলতা: গাছ

আয় গাছ আয় দেখি রাস্তায় প্রতিপক্ষ পালন

ঝরে যাচ্ছে পাতা

ময়ুরের পালক কলহবাতাসে।

দূর দেশে তুমি হেসে খেলে থাকো

আর গাছ দেখে নির্বাচন করো

বাঁশখালিপথে গোত্রভিভক্তি

আত্মহনন বাঁচামরা খেলা।


দিয়েছি যে ঘুম তাতে আম পড়ে জাম পড়ে

মাটির নীচে ঘর আর বিবাহ বাসনা।

যদি দেহ বিনাশ হয় সমর হিংসায়

একটি গাছ উঠে দালানের পাশে

চির সবুজ তোমার আমন্ত্রণ আশ্রম

আর পাখি তুমি গান ধরো

প্রিয় গ্রামাঞ্চল, হেমন্ত বাতাসে।


স্বাধীনতা, সরলতা: মনপাগল

যেভাবে প্রকাশিত হতে চাই সেভাবে

হয়না, শুধু ভাষার মায়ায় আটকে থাকে মন

গরু দেখা হয় না কৃষিকাজ হয় না

ফুলে উঠা দস্যু-জগত অচেনা দুর্গে।

যদি খুলে দিই তাকে মায়ার আবেশে

তখন মরুপথে হারায় সে

যেমন পাতার বাঁশি

কবর থেকে উঠে আসা ফুলÑ পাথর প্রদেশে।

তাই গোলাপের চিহ্ন দুল মেয়েদের কানে

তেমন করে সরলতায়

এমন একটি বাতাস দুপা ছড়িয়ে আর একলা

ঘোড়া চলে যায়

মাঠ অতিক্রম করে উপত্যকা বেয়ে

ঝর্নাপথে উপকন্ঠে জনশূন্যে আড়ালে।

শোভা পাওয়া পয়সা প্রতিপক্ষে

আর মন থাকে অনায়াসে

কিরকম ব্যাকুল গোপনেÑ আকাশ আহরণে।


স্বাধীনতা, সরলতা: খুন

একটা কাক আর একটাকে কিভাবে মারে

কবর দেয় পাথরের নিচে

আর আমার ঈর্ষা কাছাকাছি আসে।

রূপ হয়ে বোন সেজে আমাকে ডাকে

দেই জ্বেলে দাবানল দাবদাহ ঘাসের মর্মরে।


ভাই হাবেল তুমি পিতৃপ্রেম চুরি করো

আর আমি দ্বিধাবিভক্ত, বঞ্চিত

যতোটুকু পারি ঘৃণা করি

আমার কোরবানি উপেক্ষিত।

যে ঋণ গ্রহণ করি ভালোবাসা প্রতিশোধেÑ তাই ভার

কাঁধের ভূভাগে পাথরের ভাণ্ড

তুমি নাও আমি নিই

বাকীটুকু প্রায়শ্চিত্ত আসমান থেকে নামে

আর লেখা থাকে ফসলের মাঠে।


স্বাধীনতা, সরলতা: ঈশ

কিসব বাতেনি জ্ঞান দয়াল

তাই ব্যবধান পরিচয়করণ

দিয়েছো জ্বেলে জগত সংসারেÑ

জাতিভেদ প্রথা

মাছে ঠোকরায় হাঙরে খায়।


যতোটুকু পারি অঙ্গীকারবদ্ধ

আর অস্বীকার করি তোমাকে

তোমার মতো সদা বিভাজনে।

যেহেতু ভালোবাসি যথা শ্বাস আর উচ্চারণে

তাই দাঁড়িয়ে রেখেছো চিকন দড়ির উপরে

নিচে দাউ দাউ আগুন

পড়ে যাবো পুড়ে যাবো

দিয়ে যাই শত পরীক্ষা।

জনযুদ্ধে জনসংঘে প্রাণ খোঁজে বান্দাগণ

সমুদ্রজঙ্গল দূরে সরে যায়

ভাগ আর বাঘ থাকে গণপৌরহিত্যে

বসবাস কেমনে করি।




স্বাধীনতা, সরলতা: সন্ন্যাসসত্য

মৃত্যু পরপারের বেদনা

সিংহাসনে যায় রাজাপ্রজা সমভাবে খায়

ঘোড়া করে আসে আর ভাষা ভরে দেয়।

আশা করে থাকি মৃত্যু হবে

তাই মনোরম বীচে আপেল গড়ানোর ভঙ্গিমা।

যে ঘর বাঁধিয়াছি তরুতলে মেহগনি বিভোরে

তাহাই সহমরণ ব্যথা

তাতে মুগ্ধ তুমি সিপাহসালার

বিনিময়ে আমাকে তরবারি দেবে না

উপহার, জানি।


স্বাধীনতা, সরলতা: নারীযাদু

বিগলিত আদিমতা তাই নতজানু সভ্যতায়

খুলে যাচ্ছো তাসের ভঙ্গিমায়

দেখা হয় আর মন কিরকম স্পর্শকাতর :

খুলে যায় এক এক করে বিবাহরাত্রি

আলট্রাসাউন্ড, পেটের পাতাল মরুঝর্না ।

ধরে আছো আঙুর ফলের মতো

মুখে দিই আর কি গন্ধবেদনা!

আমি প্রতিবন্ধী রূপঅরূপের কালে

জানি ধরা দেবে না আমাকে

হয়েছি তো ধনুকের ছিলা

টান টান করে চলে গেছি শিকার অভিমুখে

কোন শিকারি এসে আবার ব্যবহার করে

বনপর্বেÑ মাইজভাণ্ডারী।


স্বাধীনতা, সরলতা: পয়সা

পয়সা আমাকে নির্বিচার বাণিজ্য করো

তুমি কি মনোহর কুকুর আমাকে কামড় দিয়ে

সিটি কর্পোরেশনের মাঠে ফেলে দাও

সেথায় শিক্ষানিবিশি, দস্যু ঠিকাদার

আর সুলতানি দালানপর্ব।

সরলতা ভুলে যাই কাছে এসে তুলে নিই

সতত টেণ্ডারদণ্ড।


আহা বিনিময় প্রথা-

যতোটুকু নেয় সরাসরি নগ্ন করে

বাকী থাকে হাড্ডিসার কংকাল।

রপসীর বাণিজ্যে দেশে দেশে তাকাই

আর পরিশ্রম করি

আজো পাথর খুলে প্রতিশয্যা আম্রকাননে

আসো যদি এই দিকে খালি পায়ে এসো

রাবারের জুতো হারিয়েছি হতভাগ্য

রেলস্টেশনে।


স্বাধীনতা, সরলতা: অভিবাসন

ধূ ধূ দেশ বদলের দায়

কার কাছে খবর দিই

কাকে সৎমনোরূপে অভিযোগ করি।

শুধু জলপাংশু যোগাযোগ রেখা

আর হতবাক নিবন্ধকরণ

পথে পথে নিুরূপ ছদ্মবেশ

প্রজা জনসভায়

ঘটে ঋষিবেশ অপরিচিতিকরণ।

আহা বিদেশি বাতাস

আর এক ভূভাগের আকাশ

আর ভালোবাসা দূরে থাকে

পড়ে যাওয়া নৌকা সমুদ্রে

ঘুম আর ভ্রমণের কালে।


স্বাধীনতা, সরলতা: ঘর

আমিই আমার ঘর

একজনে থাকে অন্যজনে যায়

ভেতরে সদা ভাষা পরিবর্তনের ছায়া

কাছে আসে দূরসংঘ শত গ্রাম শহর পরিণাম।

ঘুরে ঘুরে আসে

ছেলেমেয়ে স্ত্রী পরিবার

আলগোছে অন্যরূপ বহুরূপ ধরে

একজন আসে অন্যজন যায়

সুরারূপে ভূগোলবিদারি আকাক্সক্ষার পা

বাহির থেকে দরোজা জানালা বন্ধÑ নিরন্তর

ঘর আমার কিভাবে হয়।


স্বাধীনতা, সরলতা: কৃষিকাজ

ছড়িয়ে পড়েছে পোকামাকড়

গণিতের ভাষায়

প্রতিহিংসা করো সরকার আমাকে।

ভর্তুকি দিয়ে ধান চাও-

মনতো আর চাও না।

মাথা থেকে পা পর্যন্ত এই ঘাম নদীসম্রুদ্র মেলে

সেখানে পুরনোকালের গতি পারাপার

আর দৌড়ে আসে মাঝি।

এই ধারণাই প্রবল

ফসল এনেছি রাক্ষসের ঘরেÑ

ওরা আগুনে ফেলে দেবে আমার সন্তান।


স্বাধীনতা, সরলতা: মনোরম বীচে

মনোরম বীচে ব’সে একটি সুমহান কাঁকড়া

আর পাশে জলপড়া-

কাপড়খোলার কাহিনী।

বাৎসায়ন আমি তোমার ছাত্র জানি

আর নিবিড় ধর্ম সর্ম্পকে ভাবি।

ভাসতে ভাসতে এই দেহ দেহের ভেতর

মাটি মাছ প্রবণতা

তাই সমুদ্রে করো নির্বাচন ধ্বনি।

বহন করেছো যে কোমল পানীয় তার ভেতরেও

পানিফল ইচ্ছাÑ

যদিও গন্ধমের স্মৃতি নাই থাকলো মনে।

যেহেতু এখানে মহিলাদের দল

জলপড়া আর কাপড়খোলার কাহিনী

মন সরোবর

প্রতি দেশে দেশে গোসলের বেশে।


স্বাধীনতা, সরলতা: ভাষাদেশ

ভাষা ব্যবহার করে তোমাকে না পাই

সরলতা বাঁচায় নিত্য ভাষাঅত্যাচার

যখন ভাষা দাও

মূক আর বধির এই গাঢ় ময়দানের দেশ।

তোমার শব্দহুলো ফুলে ফেপে

পঁচা আপেল ফল

ঝুলে আছেÑ দোকানের দড়িতে

খাওয়ার ইচ্ছা করে কোনো মৃত ঘোড়াদের।।

মোরগের পাখায় ফোটে থাকা লাল

অতিকাছে মাঝিমাল্লার সংকেতÑ

সবকিছু মনোহর আন্দোলনে

যোগাযোগ ব্যথা, দূরভিসন্ধি।

আপেল কাটার মুহূর্তেÑ হত্যাকাণ্ডের ভাষা

বন্দী থাকে দস্যুদের দলে

সবুজ দেহ আবরণে রক্তপাত।


স্বাধীনতা, সরলতা: সৃষ্টিবাজনা

অতিব্যবহার ইস্পাত আর ক্যামেরা

ভুলে যাই কাঠবিড়াল পাহাড়ের ঝর্না

সারি সারি আমগাছ

মিলন কাতরতার কালে

খুলে দিচ্ছে সীমান্ত কাঁটাতারের প্রকৌশল।

ঢল ঢল গলিপথে উপচে পড়ছে পানি

আর শিকারি আসছে উপত্যকা বেয়ে

যদি আজ প্রাণকাতরতা দিলে

প্রকাশিত হওয়ার ঝোপঝাড় দাও

হায়েনাদের পাতায়।

যেনো দেহ বদল করে এই নীল সবুজ পাজামা জামা

এই মাঠে ময়দানে থাকে

কালো চাপকল থেকে উঠে আসুক মাটি

লিখে যাওয়ার বার্তা মনোরমÑ এই রাত্রি অবসানে

জল সরোবরে ভাসে কলাগাছের পাতা

চিরদিন অপেক্ষায় থাকি।


স্বাধীনতা, সরলতা: শিশুরূপ

তরবারি দিই নাও খেলনা দিই নাও

ভুলে যাও ছলনার ভেদ-অভেদ।

দৌড়াচ্ছ আর খুলে পড়ছে জায়গাবদলের গীতলতা

আর আমি তুমি হয়ে যাই তুমি আমি হয়ে যাও

এই দেহ ব্যবধান দেহ বিচ্ছেদের ভার

আমার জন্মকালীন গান।

ঘটে দেশে দেশে খাদ্য বিতরণ

ঢেউটিন স্কুলের সমাহার

আর বাল্য বলিদান

তুমি আশা হয়ে আছো কার কাছে

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন।


স্বাধীনতা, সরলতা: প্রতিষ্ঠান

হিংসা করো, জ্বালিয়ে দাও কাছে থাকার বীজ

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আজ সন্দেহ শিক্ষায়।

পরপারে যাবে

শান্তি মাঠে ময়দানে নিরাপদ আহার

আর চোখে চোখে পরিহারপ্রবণতা।

সেনাদল ডালভাত খায় কতো আয়োজনে

আর জনসাধারণে থাকো

ভেড়ার পালে লুকোনো শত্র“ ছাউনিÑ দেখাই যায়না

কামড় দেবে নিশ্চিতÑ প্রিয় ভাইবোন

পোশাক বদলের এই ইতিহাস

কবে শেষ হয়।

স্বাধীনতা, সরলতা: ভ্রাম্যমাণতায়

উঠামাত্র সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে

লোহাকাঠ জাতবিচার আর থাকেনা পায়ে পায়ে

চুপিসারে দল হারানোর স্মৃতিচিহ্ন মনে রাখি

দিই অধিকারচর্চা বুক ভরে

কাপালিকের ভয়ালদর্শন ভুলে যাবোÑ

এই জলসরলতায়।

নিরাকার ভালোবাসার আনন্দÑ তুমি নাইবা দিলে

ভূমিআক্রমণ কাঁটাতার ভেঙ্গে চলে যাবোÑ চোখে চোখে

যারা মমতায় সিংহ অপহরণে যায়

তারাও মিনার বানায় দলবদ্ধ শ্রমিকের দেশে।

দেশে দেশে বুঝি মাটি কাতরতা

জেগে উঠেছে যে গাছ ভোর আর বাদলে

তারাও জ্যোৎøাপ্রেমিক পাহারের নিচে।


স্বাধীনতা, সরলতা: বিচ্ছিন্নতাবাদ

আমিও বেঁচে থাকবো আমগাছতলে

অগ্ন্যুৎপাতের পর রাশি রাশি মৃতবন্ধু নিয়ে

শূন্যে তাকাবোÑ

আহা পরিত্রাণ, জলভাষা ভূমি উচ্ছেদে।

শুধু যে দোদুল্যমানতা পাতার কাঁপুনি

ঘরে ঘরে বিচ্ছিন্নতাবাদ ভ্রাতৃহিংসা অমরতা

এটুকু স্বাধীনতাবোধ না দিলেÑ মরে যাবো।

শিকারির কথা কিভাবে বলি

এই বোতলভর্তি সংবাদ কাকে দেবো

আমাকে যে মেরেই চলেছো তুমি কলহকাল।

প্রশ্ন ক’রে ক’রে তোমাকে ম্লান করি

তাই তুমি আগুনে ফেলে দিয়ে দেখো

তোমাকে চাই কি না

শত শত বাঁশঝাড় পুড়ে যায় তোমার বিষাদে।

ইশারাই যথেষ্ট নয় কাছে এসে প্রাণ দাও

আকুলতা সারাক্ষণ যেন বাঘমুক্তি, সঙ্গি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন