কামরুল হাসান
একবিংশের সাথে আমার প্রথম যোগাযোগ ৯০-এর দশকের প্রথম ভাগ থেকে। এর সেপ্টেম্বর ’৯১ সংখ্যায় আমার পাঁচটি কবিতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে। এর সম্পাদক খোন্দকার আশরাফ হোসেনকে তখন আমিই স্বল্পই চিনতাম, দূর থেকে তাঁকে দেখেছি তেমন কোন কথাবার্তা হয়নি, একুশের বই মেলায় শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়া। তাঁকে প্রথম দর্শনে আমার কাছে এক অনতিক্রম্য দূরের মানুষ বলে মনে হয়েছিল, যার কাছাকাছি যাওয়া দূরূহ বিশেষ করে যখন জানতাম তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালর্য়ে ইংরেজী বিভাগের একজন শিক্ষক এবং ইতিমধ্যেই কবি ও প্রাবন্ধিক হিসাবে তুমুল পরিচিত। মেধাবী ও উন্নাসিকÑ এই চিত্রটিই আমার কাছে প্রতিভাত হত। তার সম্পর্কে আমার কলেজ জীবনের সহপাঠী আজফার হোসেনের কাছে জেনেছি এবং বন্ধুর মতই তার শিক্ষককে দূর থেকে সমীহ করতাম।
১৯৯১-এর আগেই একবিংশ লিটল ম্যাগাজিন পরিমণ্ডলে বিখ্যাত ও সমীহ আদায়কারী এক পত্রিকা হয়ে উঠেছিল। তখনকার তরুণ কবিরা প্রায় সবাই এ পত্রিকায় লেখা দিতে উন্মুখ ছিল। সে সময়ে ‘গাণ্ডীব’, ‘নদী’ প্রভৃতি পত্রিকার যৌবনকাল, সে সব যদিও কোন কোন গোষ্ঠির পত্রিকা, একবিংশ কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব করত না, এটি ছিল এর সম্পাদকের নিজস্ব কাগজ। খোন্দকার আশরাফ হোসেন লেখা ছাপতেন নিজস্ব মানদণ্ডেই, লেখকের সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয়ের সূত্রে তেমন প্রকাশিত হয়েছে বলে শুনিনি, যদিও লেখালেখির সূত্রে ব্যক্তিগত পরিচয় গড়ে উঠতে পারে। তিনি সচেতনভাবেই পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের সিনিয়র কবিদের, বিশেষ করে যারা বহুল প্রচারিত, তাদের লেখা (কবিতা) না ছাপানোর একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এছাড়া সত্তর দশক তাকে টানেনি বলেই সে দশকের কবিদের কবিতা তিনি আগ্রহ নিয়ে মুদ্রিত করেননি। যে দশকটিতে তিনি নিজে লেখালেখি শুরু করেছিলেন সেই আশির দশককে ঘিরে ছিল তার প্রাথমিক আয়োজন, পরে যা প্রবলভাবে নব্বই দশককে তুলে ধরে, আর এখন শতাব্দী পেরিয়ে প্রতিশ্র“তিশীল নবাগতদের লেখাকে আশ্রয় দিচ্ছেন তার পত্রিকার পাতায়।
একবিংশ-র সেপ্টেম্বর ১৯৯১ সংখ্যায় আমার পাঁচটি কবিতা ছাঁপা হয়। ঐ পাঁচটি কবিতা মুদ্রণের মাধ্যমে একবিংশের সাথে আমার সম্পৃক্ততা। মনে আছে সে সময়ে ঐ প্রকাশনা আমাকে খুব আনন্দিত ও গর্বিত করেছিল। কেননা যদিও আমি ৮০র প্রথম দিক থেকেই লেখালেখি করছি, দীর্ঘ চার বছর ভারতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশুনা করতে গিয়ে আমি এখানকার পত্র-পত্রিকা ও লেখক গোষ্ঠি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলাম। যদিও আমার লেখা ইতোমধ্যে কলকাতার ‘দেশ’ ও শিবনারায়ণ রায় সম্পাদিত ‘জিজ্ঞাসা’ পত্রিকায় একাধিকবার প্রকাশিত হয়েছিল, তবুও বাংলাদেশের কাব্যপরিমণ্ডলে আমি স্বল্পই পরিচিত বা অপরিচিত ছিলাম। ফিরে এসেও যদিও লিখেছি, তেমন কোথাও আমার লেখা ছাপতে দেইনি।
সেই বিচারে একবিংশে ঐ প্রকাশনা ছিল অভূতপূর্ব। ইতোমধ্যে ঐ বছর বইমেলায় আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সহস্্র কোকিলের গ্রীবা’ বেরিয়ে গেছে। তবুও এখানকার পাঠক দূরে থাক, বিজ্ঞ কবিসমাজ বিশেষ করে লিটল ম্যাগের আঁতেল কবিরা প্রায় কেউই আমাকে চেনে না, পাত্তাও দেয় না। এমনি এক সময়ে আমাকে তাঁর ঈর্ষণীয় পত্রিকাটিতে খোন্দকার আশরাফ হোসেন তুলে নিলেন। আশ্চর্য যে, এর পর থেকে একবিংশের একটি বা দুটি সংখ্যা বাদ দিলে আমি এর নিয়মিত লেখক হয়ে উঠি। সে সময়ে একবিংশে কবিতা মুদ্রণ ছিল স্বপ্নের মতো এবং তা যে-কোন তরুণ কবির জন্য স্বীকৃতি পাওয়ার মতো মর্যাদাপূর্ণ। আশ্চর্য যে, তরুণ কবিদের জগতে এখনও এই যাদুটি খোন্দকার আশরাফ হোসেন ধরে রাখতে পেরেছেন। প্রতি সংখ্যাতেই তিনি এক গুচ্ছ নবীন কবিকে কাব্যপরিমণ্ডলে পরিচয় করিয়ে দেন এবং দেখা যায় তার সনাক্তকরণ প্রায়শই ভুল হয় না। একবিংশের পাতায় প্রথম আত্মপ্রকাশ করেছে এবং পরবর্তীতে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে এমন কবির সংখ্যাই বেশি। বাংলাদেশের যে কোন লিটল ম্যাগের তুলনায় এই প্রতিভা সনাক্তকরণের কাজটি খোন্দকার আশরাফ হোসেন সবচেয়ে সফলভাবে করেছেন।
পত্রিকাটির সুনাম ছড়িয়ে পড়ছিল বাংলাদেশ ছাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গেও; সেখানে যে দু-একটি বাংলাদেশী লিটল ম্যাগাজিন নিয়মিত পৌঁছাত এবং কলেজ ষ্ট্রিট-এর পাতিরাম বুক ষ্টল থেকে বিক্রি হত, একবিংশ ছিল তাদের অন্যতম। এর উন্নত মান ও সম্পাদনা আকৃষ্ট করেছিল কলকাতাকেন্দ্রিক কবিগোষ্ঠিকে। বাংলাদেশের কবিতা সম্পর্কে তাদের ধারণাও পাল্টাতে শুরু করেছিল। এরই স্বীকৃতি হিসেবে একবিংশ লিটল ম্যাগাজিন পশ্চিমবঙ্গ থেকে সম্মাননা লাভ করে।
একবিংশ শুরু থেকেই কবিতাকেন্দ্রিক সাহিত্য পত্রিকা। সেপ্টেম্বর ৯১ মে সংখ্যায় এর স্লোগান ছিল ‘কবিতা ত্রৈমাসিক’। এতে লিখেছিলেন আশির দশকের মঈন চৌধুরী, মাসুদ খান, সরকার মাসুদ; নব্বইয়ের বায়তুল্লাহ্ কাদেরী, আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ, সরকার আমিন, শাহানাজ মুন্নী প্রমুখ। ঠিক এক বছর পর ঐ সেপ্টেম্বর মাসেই এর পরবর্তী সংখ্যা বেরোয়। তারপরে কি করে যেন কবিক্রমের তালিকায় আমার নামটি প্রথমেই উঠে আসে। পরে আরও কিছু সংখ্যায় একই ব্যাপার ঘটে। পরে খোন্দকার আশরাফ হোসেনের সাথে আলাপ করে জেনেছি এই কবিক্রম তিনি ঠিক করেন লটারীর মাধ্যমে। ঐ সংখ্যায় আমার টানা গদ্যে লেখা পরবাস্তব কবিতার একটি সিরিজ ‘বিনিদ্র রাতের এন্টেনা’ প্রকাশিত হয়। আমার জন্য এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা। এতে মোট ১৪টি কবিতা ছিল। সে সময় অনেক তরুণ কবিকে তা মুগ্ধ ও প্রভাবিত করেছিল। এ সংখ্যাতেও আশির সরকার মাসুদ, সুব্রত অগাষ্টিন গোমেজ ছাড়াও নব্বই দশকের রনক মোহাম্মদ রফিক, বায়তুল্লাহ কাদেরী প্রমুখের কবিতা ছাপা হয়, আর ছাপা হয় বেশ কিছু বিদেশী কবির ভূমিকা সহ কবিতার অনুবাদ। নাজিম হিকমত, এমিলি ডিকসন, ওক্তাবিয়ো পাসের কবিতার অনুবাদ করেছিলেন যথাক্রমে দাউদ আল হাফিজ ও সুব্রত অগাষ্টিন গোমেজ। প্রবন্ধ লিখেছিলেন তপোধীর ভট্টাচার্য, খোন্দকার আশরাফ হোসেন ও মঈন চৌধুরী।
১৯৯৩ সনের মে মাসে প্রকাশিত সংখ্যায় আমার তিনটি কবিতা মুদ্রিত হয়। এ সংখ্যার আকর্ষণ ছিল বায়তুল্লাহ কাদেরীর ‘শীতাভ সনেটগুচ্ছ’র প্রকাশ, যা পরে বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্প থেকে বই আকারে প্রকাশিত হয় ও পুরস্কৃত হয়। একবিংশের একটি নিয়মিত বিভাগ হচ্ছে কবিতাবিশ্ব। এ সংখ্যার কবিতাবিশ্বে পাউল সেলানের কবিতার অনুবাদ করেন সম্পাদক নিজেই। প্রায় প্রতি সংখ্যাতেই বিদেশী সাহিত্যের (মূলত কবিতা ও কবিতাবিষয়ক গদ্য) অনুবাদ করতে থাকেন খোন্দকার আশরাফ হোসেন। বস্তুত আজ বিদেশী কবিদের কবিতা অনুবাদের যে ঢল নেমেছে তা বহু বছর পূর্বে নিভৃতে এবং ধারাবাহিকভাবে একবিংশের পাতায় শুরু করেছিলেন খোন্দকার আশরাফ হোসেন। মঞ্জুভাষ মিত্র ও সালাহউদ্দিন আইয়ুবের প্রবন্ধ এবং আরও কিছু প্রবন্ধ নিয়ে সংখ্যাটি সমৃদ্ধ। কবিতা লিখেন আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, সরকার মাসুদ, খোন্দকার আশরাফ হোসেন, পাবলো শাহী প্রমুখ।
প্রচ্ছদের আঙ্গিকের দিক থেকে সেপ্টেম্বর ’৯১ ও সেপ্টেম্বর ’৯২ সংখ্যার মধ্যে যথেষ্ট মিল দেখা যায়, তেমনি ১১ ও ১৩ সংখ্যার ভেতর সাযুজ্য চোখে পড়ে। ১১তম সংখ্যা থেকেই একবিংশের কলেবর বেড়ে যায়্, প্রকাশিত হতে থাকে আরো আরো কবির কবিতা। এ সংখ্যায় আত্মপ্রকাশ করেন নব্বই দশকের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য কবিÑ তুষার গায়েন, খলিল মজিদ, পাশু প্রাপণ। খোন্দকার আশরাফ হোসেনের টেরি ঈগলটনের ‘সাহিত্যতত্ত্ব’-র প্রবন্ধের ধারাবাহিক অনুবাদ, অঞ্জন সেনের কবিতার ভাষা নিয়ে প্রবন্ধ, সালাহউদ্দিন আইউবের পোষ্টমর্ডানিজম নিয়ে লেখা সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছিল। কবিতা ছাড়াও নিবন্ধ লিখলেন সরকার মাসুদ, আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ ও বায়তুল্লাহ কাদেরী। এ সংখ্যাতেও ঐ লটারীর সংখ্যা সৌভাগ্যে আমার কবিতা সবার প্রথমে মুদ্রিত হয়। এ সংখ্যায় প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন রায়হান রাইন। পাউল সেলানের আরো কবিতা অনুবাদ করেন খোন্দকার আশরাফ হোসেন। পশ্চিমবঙ্গের শক্তিমান কবি রণজিৎ দাশের কবিতা নিয়ে প্রবন্ধ লিখেন সমরেশ দেবনাথ।
১৪তম সংখ্যা থেকেই খোন্দকার আশরাফ হোসেন একবিংশের পাতায় একগুচ্ছ নতুন কবিকে আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দিলেন। এ সংখ্যায় কবিতা লিখেন মোট ১৯ জন কবি, যা থেকে একবিংশে কবিদের পদচারণা বা তাদের জন্য বরাদ্দ স্পেস যে বাড়ছে তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। বস্তুত সে সময়টায় একবিংশ হয়ে উঠেছিল সকল মেধাসম্পন্ন নবীন কবির পদচারণার ক্ষেত্র। একবিংশে ইতোমধ্যে যাদের লেখা মুদ্রিত হয়েছে সে সকল কবিরা ছাড়াও নতুন কবিতা লিখেন কুমার চক্রবর্তী, সৌভিক রেজা, তাপস গায়েন, রোকনুজ্জামান রবার্ট প্রমুখ কবিগণ। এ সংখ্যায় একবিংশে নবাগত কবি হলেন মুজিব মেহেদী, হামিদ রায়হান, এবরার হোসেন ও সাজ্জাদ আহমেদ।
১৫তম সংখ্যায় নবাগত কবিরা হলেন জাহাঙ্গীর কবির, মেহেদী মাহবুব, মঈনুল আবেদীন ও আশরাফ রোকন। এ সংখ্যায় নব্বই দশকের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কবি কবিতা লিখেন। এরা হলেন টোকন ঠাকুর, খলিল মজিদ, আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ। আমার তিনটি কবিতা মুদ্রিত হয় এই সংখ্যাটিতে। তিন জন বিদেশী কবিকে স্মরণ করেন সম্পাদক : এঁরা হলেন জন কীট্স, সের্গেই ইয়েসেনিন ও স্টিফেন স্পেদ্তার। এছাড়াও স্মৃত হন শক্তিমান কবি শক্তি চট্টোপাধায়। এডওয়ার্ড সাঈদ ও উত্তর উপনিবেশিক কাউন্টার ডিসকোর্স এর উপরে প্রবন্ধ লিখেন ফকরুল আলম, রোমান্টিক কবিতার স্বরূপ নিয়ে প্রবন্ধ লিখেন খোন্দকার আশরাফ হোসেন। এ সংখ্যায় গুচ্ছ কবিতা লিখেছেন একগুচ্ছ কবি। কবিতাবিশ্বে সিলভিয়া প্লাথ, শেমাস হীনির কবিতার ভূমিকাসহ অনুবাদ প্রকাশিত হয়। বায়তুল্লাহ কাদেরীর ‘বর্ষালী চতুর্দশপদী’ এ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
নভেম্বর, ১৯৯৬ সালের সংখ্যাটি একবিংশের ১০ বছর পূর্তি সংখ্যা। একবিংশে নবাগত নব্বই দশকের কামরুজ্জামান কামু, মোস্তাক আহমদ দীন, মামুন নেসার মাহমুদ, লিটন ওয়ারেস প্রমুখ এ সংখ্যায় কবিতা লিখেন। ‘আসমানী কবিতাগুচ্ছ’ শিরোনামে মাসুদ খান, তুষার গায়েন ও রণক মুহম্মদ রফিক এর তিনটি র্দীঘ কবিতা প্রকাশিত হয়। আসামের বরাক উপত্যকার কবিতা নিয়ে একটি ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয় এ সংখ্যায় যেখানে আসামের বসবাসরত বাঙালী কবিদের কবিতা মুদ্রিত হয়। এ সংখ্যায় প্রবন্ধ লিখেন তপোধীর ভট্টাচার্য ও তুষার গায়েন। এছাড়া গত দশ বছরে একবিংশে প্রকাশিত লেখা সমূহের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হয় রেফারেন্স হিসেবে যা চমৎকার। এ সংখ্যায় আমার চারটি কবিতা মুদ্রিত হয়। আমার একটি ব্যর্থতা হল একবিংশের প্রায় দুই যুগ ধরে প্রকাশিত সংখ্যাগুলোতে নিয়মিত ভাবে গুচ্ছ কবিতা মুদ্রিত করলেও কোন গদ্য লিখতে পারিনি।
জুলাই, ১৯৯৭ সংখ্যায় অন্য আরও অনেক কবির সাথে আমার চারটি কবিতা মুদ্রিত হয়। প্রবন্ধ, কবিতা, অনুবাদ, গ্রন্থ সমালোচনা মিলিয়ে এক অনুপম সংখ্যা এটি। তপোধীর ভট্টাচার্যের ‘চেতনার নবধ্বনি’, মঈন চৌধুরীর ‘ফুকোর মানব’ উল্লেখযোগ্য। ‘অনঘ এন্টেনায়’ ত্রিপুরার আগরতলার পাঁচ জন কবির কবিতা মুদ্রিত হয়। কবিতাবিষয়ক প্রবন্ধ লিখেন খলিল মজিদ, সালমা আজিজ, আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ প্রমুখ। গ্রন্থানুচিন্তনে দুজন তরুণ কবি চঞ্চল আশরাফ ও জেনিস মাহমুনের বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থদ্বয়ের উপর আলোচনা লিখেন খোন্দকার আশরাফ হোসেন।
আঠারতম সংখ্যাটি ষাটের দশকের অত্যন্ত প্রতিভাবান, অকালপ্রয়াত কবি আবুল হাসানের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত। এ সংখ্যায় আমার ’রুমা সিরিজ’ শীর্ষক সিরিজ কবিতা মুদ্রিত হয়, যা পরে আমার সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ ’রূপচৈত্রের অরণ্যটিলায়’ প্রকাশিত হয়।
২০তম সংখ্যাটি ত্রিশের পঞ্চপাণ্ডবের একজন অমিয় চক্রবর্তীর জন্মশতবার্ষিকী স্মরণে নিবেদিত। এ সংখ্যায় আমার ‘রূপচৈত্রের অরণ্যটিলায়’ সিরিজ কবিতা মুদ্রিত হয়। এতে কবিতা ছিল মোট আটটি তবে সবই সংখ্যানুক্রমিক, সব মিলিয়ে এটি একটি দীর্ঘ কবিতা। অনেক দিন পর একবিংশে প্রকাশিত নিজের লেখার দিকে যখন তাকাই তখন দেখতে পাই আমার সেরা লেখাগুলোই আমি একবিংশে পাঠিয়েছি। আগে যেখানে বিচ্ছিন্ন কবিতা লিখতাম পরে সিরিজ কবিতার দিকে ঝুঁকে পড়ি। এ সংখ্যা থেকে একবিংশের অবয়ব পাল্টে যেতে থাকেÑ প্রচ্ছদে জুড়ে দেয়া হয় ভারতের চিত্রশিল্পী অপর্ণা কাউর এর চিত্রকর্ম। একবিংশের শরীরও একটু পৃথ্বুল হয়ে উঠে। আটজন নবাগত কবির কবিতা মুদ্রিত হয় এতে। এ সংখ্যায় ইংরেজ কবি টেড হিউজের ‘কাক’ নিয়ে একটি অসামান্য প্রবন্ধ লিখেন খোন্দকার আশরাফ হোসেন। কাকের স্কেচগুলো আঁকেন শিল্পী আবদুস সালাম।
বিংশ শতাব্দী পেরিয়ে একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ত্রিশ দশকের কল্লোল-পরবর্তী যুগের পাঁচ মহারথীর জন্মশতবার্ষিকীর দেখা মিলতে থাকে। বাংলা কবিতার ঐ মহান কবিদের এক এক করে স্মরণ করে একবিংশ। অমিয় চক্রবর্তীর পর মে, ২০০১ এর সংখ্যাটি নিবেদিত হয় সুধীন্দ্রনাথ দত্তকে । এ সংখ্যায় আমার ‘জলেস্থলে ঈশ্বর’ সিরিজ কবিতাটি মুদ্রিত হয়। এ সংখ্যা থেকে একবিংশের প্রিন্টার্স লাইনে আমার নাম সহকারী সম্পাদক হিসেবে মুদ্রিত হতে থাকে। আমি একবিংশের সাথে আরো ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়ে পড়ি।
কেবল নিজের লেখা দিয়ে নয়, লেখা সংগ্রহের ধৈর্যশীল কাজ, সে সবের সম্পাদনা, তাদের প্র“ফ রিডিংয়ের মত বিরক্তিকর কাজ প্রভৃতি ছাড়াও কখনো কখনো একাধিক ছদ্মনামে প্রবন্ধ লিখেছেন, গ্রন্থ সমালোচনা করেছেন এর সম্পাদক খোন্দকার আশরাফ হোসেন। সবচেয়ে আশ্চর্যকর যে কেবল লেখালেখিই নয় একবিংশের অনেক সংখ্যার প্রচ্ছদশিল্পীও তিনি নিজেই, যদিও তিনি নিজেকে ছদ্মনামের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছেন। এ থেকে বোঝা যায় খোন্দকার আশরাফ হোসেন একবিংশের সাথে কতখানি মানসিক, সৃজনশীল ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সম্পৃক্ত। মূলত এটি তারই আত্মজ। এর সাফল্যের শতভাগ কৃতিত্ব খোন্দকার আশরাফ হোসেনেরই।
নব্বই দশকের একগুচ্ছ মেধাবী কবির আত্মপ্রকাশ ও বিকাশ ঘটেছে একবিংশের পাতায়। এরা হলেন তুষার গায়েন, আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ, বায়তুল্লাহ কাদেরী, খলিল মজিদ। যেমন আশির দশকের প্রতিভাবান কবি মাসুদ খান, সরকার মাসুদ, সৈয়দ তারিক বারংবার লিখেছেন এ কাগজে। একবিংশে লিখেই অনেক নতুন কবিমুখ যতখানি মনোযোগ ও পরিচিতি পেয়েছেন অন্য কোন কিছুতে তা পাননি।
কবিতা প্রকাশের হাত ধরেই পরিচিত হতে থাকি এর সম্পাদকের সাথে, পরে সেই পরিচিতি ঘনিষ্ঠতায় রূপলাভ করে। দেখেছি খোন্দকার আশরাফ হোসেনকে দূর হতে যতখানি দুর্বোধ্য বা অনতিক্রম্য মানুষ বলে মনে হয়, তিনি তেমন নন, বরং অপরিচয়ের পর্দা উঠে গেলে ঐ নিকটজনদের কাছে তিনি বেশ আন্তরিক ও খোলামেলা, তবে সহজপ্রবেশ্য কখনোই নন। নিজস্ব মতামত তিনি স্পষ্ট ও খোলাখুলিই প্রকাশ করেন, তাতে অনেকেই আহত হন, তবে এটা ঠিক খোন্দকার আশরাফ হোসেন ভণিতা পছন্দ করেন না। অনেক বুদ্ধিজীবির ভেতর যেমন একটি মেকী ভদ্রতার মুখোশ দেখা যায়, তেমন কোন মুখোশ বা পরিশীলন খোন্দকার আশরাফ হোসেনের নেই। তাঁর ব্যক্তিত্বের এই দিকটিকে রূঢ় বা ’রাষ্টিক’ বলে প্রতিভাত হতে পারে। তিনি কোদালকে কোদাল বলতেই পছন্দ করেন, অর্থাৎ ভণিতাবিহীন। অসম্ভব মেধাবী ও সৃষ্টিশীল হওয়া সত্ত্বেও তিনি তেমন অহঙ্কারী নন; যদিও পুরোনো দিনের নায়কদের মত উঁচু করে বাধাঁ ঝাঁকড়া চুলের এবং বিশিষ্ট মুখাবয়বের কবি মানুষটিকে অস্পর্শিত পাহাড়ের মত মনে হয়, তবে ব্যক্তিমানুষটি সরল।
প্রথমদিকে একবিংশের শ্লোগান ‘কবিতা ত্রৈমাসিক’ থাকলেও পত্রিকাটি কখনোই ত্রৈমাসিক হতে পারেনি, হওয়া বোধকরি সম্ভবও ছিল না, কেননা খোন্দকার আশরাফ হোসেন লেখালেখি এবং অধ্যাপনার যুগল ও জটিল কাজ ছাড়াও একটি বৃহদাকার পরিবারের কর্তা ছিলেন, তাকে সে সময়ে প্রাণপাত পরিশ্রম করতে হত সংসার চালাবার ক্রমবর্ধমান খরচ যোগাতে। পরে ঐ ব্যর্থতার তিলক অপসারণ করতেই একবিংশের শ্লোগান বদলে রাখা হয় ‘বর্তমান সময়ের কবিতার কাগজ’। এরও পরে একসময় আসে নতুন স্লোগান ‘কবিতা ও নন্দনভাবনার কাগজ’। প্রকাশের পর হতে ইতোমধ্যে পঁচিশ বছর পার হয়ে গেছে, লিটল ম্যাগাজিনের স্বল্পায়ু জগতে এ এক বড় সাফল্য। বিংশ শতাব্দীর শেষ ধাপে দাঁড়িয়ে আগামী শতককে সম্মুখে রেখে তিনি এর নামকরণ করেছিলেন একবিংশ। সে নামকরণে ছিল নতুন যুগের নতুন কবিতার আশাবাদ। একবিংশ কেবল একটি শতকই নয়, একটি সহস্রাব্দের শুরুও। নিরলস পরিশ্রম, মেধাদীপ্ত সম্পাদনা ও একাগ্রতার এক উজ্জল নিদর্শন একবিংশ। জয়তু একবিংশ!
শুক্রবার, ৯ এপ্রিল, ২০১০
একবিংশ ও নব্বইয়ের দশকের কবিতা : খলিল মজিদ
খলিল মজিদ
বিশ শতকের আয়ু ফুরিয়ে যাওয়ার মৃত্যুযন্ত্রণা বোধ করি আশির দশকের মধ্যভাগেই অনুভব করতে পেরেছিলেন খোন্দকার আশরাফ হোসেন। নইলে ১৯৮৫ সালেই কেন তার কাগজের নাম রাখবেন ‘একবিংশ’? এবং অচিরেই ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতন্ত্রের পতনের মাধ্যমে বিশ্বে স্নায়ুযুদ্ধের তাড়না-নিস্তারে একক মার্কিন কর্তৃত্বাধীন বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রবর্তনে এবং তথ্যপ্রযুক্তির বিপুল বিস্তারে ইন্টারনেটের মায়াজালে গ্লোবালাইজেশনের আধুনিক-উত্তর ধারণাপ্রবাহ নিয়ে এগিয়ে আসে একবিংশ শতাব্দী। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ এরিক হবসবাম কথিত ‘শর্ট টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি’র (১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে অনেক দেরিতে সুচনা এবং ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে আগাম সমাপ্তি) ধারণা কবি হিসেবে খোন্দকার আশরাফ হোসেন আগাম উপলব্ধি করেছিলেন; তাই তাঁর কর্মযাত্রাটি শুরু করেন ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবাহী নামাঙ্কনে। এবং ভবিষ্যতের কবিদের অর্থাৎ যারা কিনা একবিংশ শতকে কবিতা চর্চায় ও কবিখ্যাতিতে সময় আলোকিত করবেন তাদের কবিতাকে সনাক্ত করার জন্য অনেকটা জ্যোতিষবিদের মতো নাক্ষত্র গণনা করতে ব্যাপৃত হন।
প্রথম সংখ্যার সূচনাতেই ঘোষণা করা হয়, ‘একবিংশ শতাব্দীর দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছি আমরা; .. নতুন শতাব্দী, নতুন সময় এবং নতুন অভিজ্ঞতার বোধন ঘটবে। আমরা এবং কবিতা তখনো থাকবো; উন্মার্গগামী রকেট নয়, কবিতাই আমাদের পৌঁছে দেবে সে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে। আমরা কেবল প্রস্তুতি নিতে পারি, প্রস্তুত হতে পারি আমরা যারা নতুন, যারা মারী ও যুদ্ধের মধ্যে শৈশব কাটিয়েছি, যারা দুঃশাসনের তমসার মধ্যে পঞ্জরাস্থি জ্বালিয়ে নিজেদের করেছি অন্য নাবিকের জন্য বাতিঘর, আমরা যারা আগামী শতকেরও বেশ কিছুকাল বেঁচে থাকবো। নতুন সময় আমাদের, একমাত্র আমাদের। আর একবিংশ নতুনদেরই পত্রিকা। .... যারা অপ্রতিষ্ঠিত, যৌবনাবেগে টলমল, প্রতিভাবান, উদার, অভিনিবিষ্ট, শ্রমী এবং নির্ভয়, আমরা তাদের জন্য পাটাতন নির্মান করতে চাই...’। হ্যাঁ, একবিংশ’র পঁচিশ বছরের যাত্রাপথটিকে সময়ের তরুণ কবিদের জন্য একটি সুদৃশ্য মজবুত ও ভবিষ্যত-অভিমুখী পাটাতন বলেই মনে হচ্ছে। প্রথম সংখ্যার ঘোষণা তবে কোন কাব্যিক স্বপ্ন-কল্পনা মাত্র ছিল না; ছিল সামর্থবান কর্মীপুরুষের সুচারু কর্মপরিকল্পনা।
সার্ধদশক আগে ‘একবিংশ’ নাম ধারণ করে যেহেতু ভবিষ্যতের কাব্যক্ষেত্রকে সনাক্ত করতে ও চাষাবাদ করে সোনালী ফসল ফলাতে উদ্যোগী ছিলেন সম্পাদক, সেজন্যে তিনি কবিতা নির্বাচনে প্রথমাবধি ছিলেন উত্তর-সা¤প্রতিক। তখন অর্থাৎ আশির দশকে কবিতা চর্চা ও প্রকাশের মূল ক্ষেত্রে ছিলেন ষাটের ও সত্তরের দশকের কবিগণ, এমনকি পঞ্চাশের শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, আল মাহমুদ প্রমুখের কবিতা ও কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছিল সমানতালে। কিন্তু একবিংশ ঘোষণা করলো, প্রতিষ্ঠিতদের নয় বরং অপ্রতিষ্ঠিত প্রতিভাবান, নতুন চিন্তাধারী, নতুন সময়ের নির্মানে নিষ্ঠাবান যারা তাদের লেখার জন্য উন্মুক্ত এ কাগজ।
এই নতুন সময়ের নির্মানে নিষ্ঠাবান কবিতা কর্মীদের উন্মেষ ঘটে মূলত আশির দশকের প্রান্তিক কালে এবং তা বিস্তৃতি ও পরিণতি লাভ করে নব্বইয়ের দশকে। পাশাপাশি বাংলাদেশের কাব্যক্ষেত্রে একবিংশ শতাব্দীর নয়া ডিসকোর্স (উত্তর-আধুনিকবাদ, উত্তর-ঔপনিবেশিকতা, ঐতিহ্যের পুনঃনির্মান এবং জ্ঞান ও বিজ্ঞানের সকল শাখার সমন্বিত চিন্তনপ্রক্রিয়া) বিকশিত হয় বিশ্ববাস্তবতার অনিবার্য অভিঘাতে, বিশ শতকের নব্বইয়ের দশকেই। ফলে একবিংশ কীভাবে বাংলাদেশের তথা বাংলা ভাষার নব্বইয়ের দশকের কবিতাকে সনাক্ত করেছে তা খুঁজে দেখার প্রয়োজন আছে বৈকি।
স¤প্রতি শূন্য দশকের কয়েকটি কবিতাগ্রন্থের আলোচনা গিয়ে বলেছিলাম যে, ‘সময়ের তরঙ্গে বাঁকবদলের নিরীক্ষার মধ্যেই নব্বইয়ের কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য নিহিত। বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তনের দোলায় দোদূল্যমান বাঙালির মানসচেতনায় দ্রুত পরিবর্তন চিহ্নিত হতে থাকে এ সময়। বাংলাদেশের কবিতার ভাববলয়ে এবং শিল্প-সংগঠনে নতুন এক হাওয়ার বেগ সঞ্চারিত হয়। শিল্প নির্মানের নয়া ডিসকোর্সে প্রভাবিত হতে থাকে বাংলা ভাষার কবিতা; তার জন্য নতুন চিন্তা-কল্পনা এবং বাক্যের নয়া বিন্যস্ততা চিহ্নিত হতে থাকে। ঐতিহ্যের পুনঃনির্মানের সচেতন চর্চা এর আগে এত বড় আয়োজনে আর দেখা যায়নি।’
রাশেদ মিনহাজ নামের আড়ালে খোন্দকার আশরাফ হোসেনও এক আলোচনায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশের কবিতা যখন নব্বইয়ের দশকে প্রবেশ করছিল, তখন চারিদিকে একটি সাজ-সাজ রব। তরুণ কবিদের কোলাহল শোনা যাচ্ছিল চারিদিকে, বেরোচ্ছিল বহু ক্ষুদ্র কাগজ ... এই কাগজগুলোতে এবং একবিংশ-এ একঝাঁক নতুন কবির কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে’- যারা ক্রমে নব্বইয়ের দশকের কবি হিসেবে পরিচিতি পায়।
এই নতুন কবিদের অধিকাংশই নিয়মিত অথবা অনিয়মিতভাবে একবিংশ’র কোন না কোন সংখ্যায় উপস্থিত হয়েছেন। এই উপস্থিতি এ জন্যে উল্লেখযোগ্য যে, ঐ সময়ের তাদের শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলোই একবিংশ-এ পত্রস্থ হয়েছে।
সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের যাত্রা শুরু হয় একবিংশ-এর মাধ্যমেই ফেব্র“য়ারি ১৯৮৯ সংখ্যা থেকে; তবে ১৯৯২ পর্যন্ত মাত্র চারটি সংখ্যায় লিখেছেন তিনি। নানা ভঙ্গির বাক-বিন্যাসের মাধ্যমে জাতিসত্তার যাত্রাপ্রবাহকে উপলব্ধি করার সচেতন আয়োজন দেখা যায় তার কবিতায়। তিনপর্বের সমন্বয়ে তাঁর দীর্ঘ কবিতা 'তনুমধ্যা’ নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বাংলাদেশের তরুণ কবিতাকর্মীদের আলোড়িত করেছিল। ভাষার ঐতিহাসিক ও কালানুক্রমিক ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বের শব্দবোধ ও বাক্যবিন্যাস, বাংলা কবিতার ইতিহাসের ধারাবহিকতায় ব্যবহৃত ছন্দ, লোকসাহিত্য ও ছড়ার গীতলতা এবং নৃতাত্ত্বিক নানা অনুসঙ্গের সম্মিলন ঘটিয়েছেন কবিতায়। কিন্তু নিজের কাব্যচেতনায় যথেষ্ট আস্থা রাখতে পারেননি শেষাবধি; প্রভাবিত হয়ে পড়েন সমকালীন কবি-বান্ধবদের চর্চিত ব্যঙ্গরসাত্মক পরিহাসপ্রবণ হালকা মেজাজের কবিতাপ্রকল্পে। তিনি লিখছেন প্রচুর এবং এরই মধ্যে তাঁর নিজস্ব একটি কাব্যভঙ্গি সনাক্ত করা যাচ্ছে।
‘আমার গলায় তুমি কে গো কথা কও অহোরাত্র?
কে গো দেখ আমার নয়নে, শোনো শ্রবণে আমার?
এই দেহের ভিতর দিয়ে দ্বিতীয় সে কোন পথ
চলে গেছে কোন্ দিকে , কোন আলোয়, কোন আলেয়ায়?
শত-পিতা-শত-পুত্র-পরম্পরা বংশলতিকায়
দোল খায়, অন্ধকারে সুরভি ছড়ায়! ধমনিতে..’
(জাগরণপালা: সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ)
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ যদিও ফেব্র“য়ারি ১৯৮৮ সংখ্যা থেকে লিখছেন তবু কবিতার ভাষা ও চিন্তাপ্রক্রিয়ার স্বভাবে তিনি নব্বইয়ের দশকের প্রতিনিধি। ব্যক্তি-অভিজ্ঞতাকে রূপকের ই¤েপ্রশনে চিত্রিত করা তার কবিতাকর্ম। ছন্দ ও ভাষার ব্যাঞ্জনা নিয়ে তেমন চর্চা নেই তার কবিতায়। অব্যাহতভাবে একবিংশ-এ কবিতা প্রকাশ করছেন প্রথমাবধি। প্রথম গ্রন্থ 'শীতমৃত্যু ও জলতরঙ্গ’, এরপর 'বাল্মিকীর মৌনকথন’, 'পলাশি ও পানিপথ’ এবং এবছর প্রকাশিত 'গানের বাহিরে কবিতাগুচ্ছ’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ তাকে কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।
'শব্দে শব্দে পাথর সভ্যতা আমাদের পাঠ্য
স্কুল ব্যাগে পুষ্ট রাস্তাগুলো মাংসের আড়ালে।’
(শৈশব ও রাস্তা: আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ)
শরীফ শাহরিয়ার-এর কবিতা ১৯৯০ সালে প্রথম ছাপা হয় এবং এখনও পর্যন্ত অন্যান্য ছোট কাগজের পাশাপশি তিনি অনিয়মিতভাবে একবিংশ-এ সংশ্লিষ্ট আছেন। শরীফ কবিতা নির্মানে ও বিষয়ের মেজাজে যদিও আশির দশকের প্রতিনিধিত্ব করেন তথাপি নব্বইয়ের দশকে তিনি কবিতা লেখা ও প্রকাশে অক্লান্তভাবে ধারাবাহিক। স্বনির্দিষ্ট জীবনবোধকে অনাড়ম্বর বাক্যপ্রবাহে ফুটিয়ে তোলা সাধনা তাঁর।
'
এই শহরের শোকগাথা ঠোঁটে তুলে দাঁড়িয়ে আছি ব্যথিত নাগর
আর তুমি কোন জানালায় চোখ রেখে খুঁজতে থাকো সুদূর সাগর।’
(নগর প্রতিমা: শরীফ শাহরিয়ার)
দাউদ আল হাফিজ ডিসেম্বর ১৯৯০ সংখ্যায় দুর্দান্ত তিনটি কবিতা নিয়ে হাজির হন বাংলা কবিতার সবুজ মাঠে। তাঁর ‘পাতাঝরার গান এবং ঝরাপাতার সঙ্গীত’, ‘আলো, আরো আলো’ ও ‘জেরুজালেমে একদিন তিনহাজার বছর আগে’ কবিতাত্রয় দুই দশক পর আজও সমান আলো ছড়াচেছ। পরবর্তীতে প্রকাশিত তাঁর ‘আনাবাস’ কবিতাটি আধ্যাত্মিক চেতনাপ্রবাহে সত্তার শূন্যভ্রমণের এক ভাষিক চক্রাবর্ত। তিনি স্বল্পপ্রজ; কোন কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি তাঁর।
‘এইসব নাজুক শব্দাবলী ভীষণ ভালোবেসে পোশাক প্রকাশে অনীহা
প্রবল
যতখানি লোকালয়ে প্রকাশ, যতখানি মূর্ত - তারো অধিক বিমূর্ত
লীলা।
এইসব শব্দাবলী, অভিধান ছেড়ে ছুঁড়ে আমি নিঃসীম আঁধারে ডুবি
ডুবে যায়
সংসার সময় ভুত ভবিষ্যত বর্তমান।....’
(আলো, আরো আলো: দাউদ আল হাফিজ)
বায়তুল্লাহ কাদেরী মূলত একবিংশ’রই কবি। সেপ্টেম্বর ১৯৯১ সংখ্যা থেকে লিখলেও ১৯৯৩-এ শীতাভ সনেটগুচ্ছ প্রকাশের মাধ্যমে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ‘শীত’ কে জ্ঞান ও বোধির প্রতীক রূপে আবর্তমান একটি রূপকের প্রবাহে তেরটি চতুর্দশপদী নির্মান করেন। পরে বর্ষালি চতুর্দশী নামে আরও একটি সনেটগুচ্ছের মাধ্যমে সা¤প্রতিক সময়ে সনেট চর্চায় তার পারদর্শিতার স্বাক্ষর রাখেন। সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে বায়তুল্লাহ পঠিত কবিতার ইতিহাসের ধারায় প্রভাবিত। শব্দপ্রতীকের প্রবাহে ইতিহাস, মিথ ও লোকজীবনের বিভিন্ন চিহ্নায়ক ব্যবহার করেন কবিতায়।
‘শব্দে শব্দে খেলি আমি শীত নিয়ে, শীতের প্রয়াত
বন্ধু, যাকে মাঝে মধ্যে চিঠি লিখে বিরক্ত করার
প্রবণতা জাগে, উঠাই প্রসঙ্গ তার, গর্ভজাত
বৃষ্টিকে লালন করি সত্তাময়, যেনোবা মরার
আগে একবার শীত হবো; তবে আত্মপ্রবঞ্চনা
আমাকে শাসন করে রোদের মতোন, শাহরিক..’
(শীতাভ সনেটগুচ্ছ: বায়তুল্লাহ কাদেরী)
কামরুল হাসান নব্বইয়ের দশকের প্রথম থেকেই নিয়মিত লিখছেন একবিংশ-এ। তিনি বহুপ্রজ লেখক। বিভিন্ন ছোট কাগজ ও দৈনিকের সাহিত্যপাতায় তার উপস্থিতি অবিরল। হৃদয়াবেগকে ইন্দ্রিয়-সংবেদনে উপলব্ধি করতে চান তিনি। কবিতা নির্মান প্রকৌশলে তিনি বাকসংযমী, স্কেচধর্মী, ইঙ্গিতবাহী এবং প্রচল ধারার প্রতিনিধি।
'আমাদের উদ্ভট পাঠশালে তোমরা কে কে বলে নতুন
বসেছে ভুল এলামেলো বেঞ্চিতে, রোল নাম্বারহীন
তোমাদের নেই বুঝি ক্রমিক পতন?’
(আমাদের উদ্ভট পাঠশালে: কামরুল হাসান)
শাহনাজ মুন্নী’র কবি পরিচয়বাহী দু’টি কবিতা ‘ক্ষমঃ গো শ্বেত দুগ্ধ’ ও ‘চাষী বউ এর সাথে যখন বদলায় কবির জীবন’ একবিংশ-৮ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। একই সংখ্যায় সরকার আমিনও উপস্থিত হন। তাদের উদ্যোগে পরিচালিত ও প্রকাশিত ‘মঙ্গলসন্ধ্যা’ নব্বইয়ের কবিতার আলোচনায় অনিবার্য একটি অধ্যায়।
হাফিজ রশিদ খান আশির দশকের কবি। কিন্তু তাঁর আদিবাসী কবিতাগুচ্ছ নব্বইয়ের দশকের শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলোর অন্যতম। অবশ্য তাঁর কবিতা বৈশিষ্ট্যের দিক থেকেও নব্বইয়ের সমধর্মী।
‘হৃদয় সলতে পাপড়ি মেলো
এখন আলো আসবে অমল হাতের ছোঁয়ায়
লুসাই-পাড়ার তন্বী উঠোনে
মাদুর পাতো
আজকে শীতের
হালকা আমেজ হাওয়ায়’
(আদিবাসী কবিতাগুচ্ছ: হাফিজ রশিদ খান)
তুষার গায়েন নব্বইয়ের কবিদের তালিকার পুরোভাগের একজন। প্রথমত একবিংশ’র মাধ্যমেই তাঁর কবিতা পরিচিতি লাভ করে। সত্তার আন্তর্প্রবাহ তাঁর কবিতার প্রধান উপজীব্য। প্রতœস্মৃতি, দর্শন ও বিজ্ঞানের সমন্বিত বোধনে তাঁর কবিতা বিশিষ্ট। পদার্থ ও প্রাণের মধ্যকার সম্পর্কের মহাজাগতিক ঐকতান ভাষায় ফুঁটিয়ে তোলার অভিপ্রায় আছে তাঁর। টোটেম ও তন্দ্রা, নীলভবহ্রদ, আদিদর্শন, ফুরামন পাহাড়ের গান, উড়ে যাই একবিংশকালে প্রভৃতি সময়ের উল্লেখযোগ্য কবিতা হিসেবে চিহ্নিত।
‘গতকাল স্নায়ুযুদ্ধ না কি শেষ হয়ে গেছে
একটি সমষ্টিবাদ বুঝি ডুবে গেল অতল গহ্বরে
একটি কফিন মাটি থেকে তুলে নিলে
না কি সোনা এসে ভরে যাবে দেশে
একটি দেয়াল ভেঙে ফেলে দুটো দেশ
এক হয়ে যায়, একদেশ ভেঙে গিয়ে বহু
বহুদেশ এক হবে আরো কোন বাণিজ্য আশায়’
(উড়ে যাই একবিংশকালে: তুষার গায়েন)
মুজিব মেহদী অন্যান্য কাগজে হামেশা প্রকাশিত হতে থাকলেও একবিংশ-১৪ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘নারী মাছের বিবিধ কানকো অন্যান্য আনাজ ও উচ্ছিষ্টভোগীরা’ শিরোনামের পরিহাসপ্রবণ কবিতাটি তাঁকে পাঠকমহলে আলোচিত করে। প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতাকে অভিনব ইমেজে রূপান্তর করা তাঁর বিশিষ্টতা।
'আরোগ্য থেকে দুই মাত্রা দূরে বেড়ে ওঠি
যেখানের জল সেখানে থাকে যেখানের হাওয়া সেখানে
বিষাক্ত ধোঁয়ার কুন্ডুলিতে নাসিকা কুঞ্চিত করি
আর ধেয়ে আসি পর্বতে ঘাসে’
(তার নামে স¥ৃতিঘর: মুজিব মেহদী)
টোকন ঠাকুরও ১৯৯৫ সালে ১৫তম সংখ্যায় প্রকাশিত ‘শত সপ্তাহের পদাবলী’ শিরোনামে শেক্সপিয়রীয় রীতির সাতটি সনেটের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেন। পরবর্তীতে অব্যাহতভাবে কবিতা প্রকাশ করে বাক্যবিন্যাসের ব্যাপক নিরীক্ষা ও ছন্দ প্রয়োগে স্বাচ্ছন্দ্য তাঁকে পাঠকপ্রিয় করে তোলে।
‘অধিরূঢ় এমন রোদ্দুর! কতো মেঘ জমে ওঠে!
আজ পূর্ণদৈর্ঘ্য দিন! ক্রুশকল্প...ঘন্টাধ্বনি-আর
বিসদৃশে কিছু কথা... কথাগুলো নির্লিপ্ত... প্রস্ফুটে
তবু যা উদ্ভূত-অতিক্রান্ত অর্থে আসে রবিবার!’
(শত সপ্তাহের পদাবলী: টোকন ঠাকুর)
একই সংখ্যায় ‘ধানসত্য’ শিরোনামে আমারও সাতটি কবিতার একটি সিরিজ ছাপা হয় যা পাঠকদের প্রশ্রয় পায়। আগে পরে প্রকাশিত আরো কিছু কবিতা যেমন- নিদালি, প্রিয় সর্পিনী, একটি আলবাট্্রস-তার গান প্রভৃতি একবিংশের মাধ্যমে পাঠকদের নজরে আসে। এবং এখনও শিহরিত হই ছাত্রাবস্থার সেই সময়ের অনুভূতি স্মরণ করে যে একেকটি কবিতা প্রকাশের পর আমাকে ক্যাম্পাসে ও শাহবাগে পরিচিতজনেরা কবিতার নাম ধরে ডাকতো। যেমন পালকাপ্য প্রকাশের পর এখনও পর্যন্ত কেউ কেউ আমাকে ‘পালকাপ্য’ বলে ডাকে।
নভেম্বর ১৯৯৬ সংখ্যায় একসাথে যোগ দেন মোশতাক আহমাদ দীন ও কামরুজ্জামান কামু। রূপকধমী নিরাভরণ ভাষার মাধ্যমে মোশতাক ইতোমধ্যে একটি নিজস্ব কাব্যজগৎ সৃষ্টি করতে পেরেছেন বলে মনে হয়। কামু পরবর্তীতে নিজের কাব্যভাষায় নিষ্ঠাবান থাকেননি। তিনিও, অসাবধানতার বশেই হয়তো, ব্যঙ্গকবিতার চোরাবালিতে পড়ে গেছেন। কিন্তু তাঁর প্রথমগ্রন্থ ‘কবি মুখপত্রহীন’ পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
‘কায় ভাসিলো পথের ধূলায়
আমি ভুলে থাকি আজ গৃহে ফিরিবার দিন
কে গো ভাসালে বোলো
উড়ো মন্তরের ছায়া ঘোরের বয়ার’
(ধূলোপাঠ: মোশতাক আহমাদ দীন)
‘আজ স্মৃতি-বিধুরতা জেগে ওঠে, আজ মধ্যরাতে
বন্ধুর বোনের কাছে বলে ফেলি: রাজনীতি মানে
হলো পরাজয়
আজ মাতৃক্রোড়ে মুখ রেখে
অনন্ত ক্ষমার জন্য অশ্র“পাত করি’
(স্ত্রীলোকের জন্য উঠে আসে গান: কামরুজ্জামান কামু)
নব্বইয়ের অন্যান্য অনেক কবি যেমন- রহমান হেনরী, শামীম সিদ্দিকী, রণক মুহম্মদ রফিক, আকমল হোসেন নিপু, পাবলো শাহী, শোয়াইব জিবরান, কুমার চক্রবর্তী, পাঁশু প্রাপণ, জহির হাসান, রায়হান রাইন, তাপস গায়েন, আশরাফ রোকন, মিহির মুসাকী, শাহীন শওকত, শামসুল আরেফিন প্রমুখের কবিতা একবিংশ-এ পত্রস্থ হয়।
‘এখন নি:শব্দে অন্তর্গত, এখন মুদ্রিত আছি মেঘে
তোমাদের বাড়ির উঠোনে ছিলাম বর্ষার জল
শরতের মেঘ ছিন্ন করেছে সকল গ্রন্থি
তার শুভ্র ডানা আমাকে উড়িয়ে নেয় দূরে
তুমি কি ভুলে গেছ ঘন বাদলের দিন’
(বর্ষামগ্ন: শাহীন শওকত)
‘শাহরিক শূন্যতা বেশ্যার মতো পড়ে থাকে
একদিন যে শরীর তার ছুঁয়েছে মখমল।
সে শরীর ক্ষত হয়, বিক্ষত উত্তাপে
লালসায়। এই নারী
বহু ভোগ্যা লোলচর্মা হয়ে ওঠে।’
(সেই ঘুমঘুম ভিখারি আপেলগুলো: পাবলো শাহী)
‘ভেজানো দুয়ারখান খিলছাড়া কাঁপিতেছি আমি,
আমার অন্তরে থাকো টলোমলো সুবর্ণের খাটে।
কৃত্রিম অনন্ত শব্দে দু’হাতে মেলাতে কাব্যখানি,
বাহিরে দূত-পাখি শুক এসে শক্ত মোরে আঁটে।’
(কৃত্রিম, কৃত্রিম: রণক মুহম্মদ রফিক)
‘জয়তু বন্দনা করি, সমূহ সমীহ হতে প্রমুখ আমাকে
যে-আমি প্রবহ অহে সহ থেকে সহযোজী সকল আভাকে-
এইভাবে বা ও-ভাবে অংশ কেলাসন রূপে করেছি কেলাস;
এজন্যই আতশীর পদার্থবিজ্ঞান বোঝে কাঁচের গেলাস।’
( অহম্: পাঁশু প্রাপণ )
‘শালিখের ডানায় উঠেছে নেচে রোদ... আমি এইদৃশ্যটুকু
লিখে রেখে প্রচ্ছন্ন হওয়ায়, বাংলা কবিতাকে বলি, ও জননী,
আমি তোরে প্রেয়সীর আদরে সাজাবো... আহা’
(সাঁতারের স্বরলিপি: রহমান হেনরী)
‘আমাদের মৃত নদী ঘিরে আজ হাহাকার ওঠে। আরো কতো কৃশ,
ধবল মেঘের দী -র্ঘ নদী ছিলো, কবে তারা বাতাসের ঘর ভেঙে
গোলকের খোঁজে ঢুকে গেছে। ক্রমাগত উড্ডয়নে ক্লান্ত ডরিমার
ন্যুব্জ ডানায় ভর করে সময়ের চক্রে পড়ে, আহা!..’
(সময়: বাতাসের ভেতর উড়ে আসা বিবর্ণ ধূলো: রায়হান রাইন)
‘মহাগুরু বাষ্পীকরণ বন্ধ রেখেছেন। পত্ররন্ধ্রগুলি হাওয়ায় আবৃত,
উত্তপ্ত বালুর মর্মে মর্মে মর্মর হাওয়ায় প্লাবন, শীতল চামরে।’
(হাওয়া: কুমার চক্রবর্তী)
একবিংশ-এ লেখেননি এমন যারা নব্বইয়ের দশকের কবি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তাদের মধ্যে শিবলী মোক্তাদীর (বগুড়ার নিসর্গ’র মাধ্যমে); চঞ্চল আশরাফ, কবির হুমায়ূন, মুজিব ইরম (মঙ্গলসন্ধ্যা’র আড্ডা থেকে); শামীম কবীর ও মজনু শাহ (দ্রষ্টব্য’র মাধ্যমে); জিল্লুর রহমান, আহমেদ রায়হান, পুলক পাল (চট্টগ্রামের লিরিক’র আড্ডা থেকে); ওবায়েদ আকাশ (শালুক-এর সম্পাদক), শামীম রেজা (দৈনিক আজকের কাগজের সাহিত্যপাতা সুবর্ণরেখা’র সম্পাদক), বদরে মুনির, সাখাওয়াত টিপু (নাটোরের উটপাখির সংশ্লিষ্টতায়); ব্রাত্য রাইসু, হেনরী স্বপন, আলফ্রেড খোকন, আয়শা ঝর্না, জাফর আহমেদ রাশেদ প্রমুখ উল্লেখযোগ্যতা অর্জন করেছেন। চঞ্চল আশরাফ বিভিন্ন ছোট কাগজ ও দৈনিকের সাহিত্য পাতায় নিয়মিত লিখেও কেন যে একবিংশ-এ অনুপস্থিত থাকলেন তা বোধগম্য নয়। ব্যক্তিক সম্পর্ক ও শিল্পচেতনায় তাঁর সাথে একবিংশ’র বিরোধ আছে বলে মনে হয় না।
এছাড়া কেউ কেউ এমন আছেন যারা নব্বইয়ের দশকে তেমন উল্লেখযোগ্যতা অর্জন না করলেও পরবর্তী শূন্যের দশকে নিয়মিত কবিতা প্রকাশ করে আলোচনায় এসেছেন তাদের অনেকেই একবিংশ-এ স্থান পেয়েছেন।
নব্বইয়ের দশকে আশির কয়েকজন কবি নিয়মিত ছিলেন একবিংশ-এ। খোন্দকার আশরাফ হোসেন, মঈন চৌধুরী, সরকার মাসুদ, মাসুদ খান ও সুহিতা সুলতানা নব্বইয়ের নতুন কবিদের পাশে সমানুপাতে নতুনভঙ্গিতে তাদের কবিতা অব্যাহত রাখেন।
এছাড়া একবিংশ-এ নিয়মিতভাবে প্রকাশিত কবিতা ও শিল্পতত্ত্ব বিষয়ক সমসাময়িক প্রবন্ধ, উত্তর-আধুনিকতা নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক এবং অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার কবিতা ও সাহিত্যভাবনা তরুণ কবিতাকর্মীদের কাব্যচর্চায় দিক নির্দেশনা দিয়েছে। বিশেষ করে তপোধীর ভট্টাচার্যের প্রবন্ধসমূহ, খোন্দকার আশরাফ হোসেনের সাহিত্যতত্ত্ব ও আন্দোলন বিষয়ক প্রবন্ধাদি, দাউদ আল হাফিজ অনুদিত টিএস এলিয়টের 'ঐতিহ্য ও ব্যক্তিপ্রতিভা’ এবং অক্টাভিও পাজ’র 'কবিতা ও মুক্তবাজার’ প্রবন্ধ দুটির প্রভাব অস্বীকার করা যায় না।
বিশ শতকের আয়ু ফুরিয়ে যাওয়ার মৃত্যুযন্ত্রণা বোধ করি আশির দশকের মধ্যভাগেই অনুভব করতে পেরেছিলেন খোন্দকার আশরাফ হোসেন। নইলে ১৯৮৫ সালেই কেন তার কাগজের নাম রাখবেন ‘একবিংশ’? এবং অচিরেই ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতন্ত্রের পতনের মাধ্যমে বিশ্বে স্নায়ুযুদ্ধের তাড়না-নিস্তারে একক মার্কিন কর্তৃত্বাধীন বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রবর্তনে এবং তথ্যপ্রযুক্তির বিপুল বিস্তারে ইন্টারনেটের মায়াজালে গ্লোবালাইজেশনের আধুনিক-উত্তর ধারণাপ্রবাহ নিয়ে এগিয়ে আসে একবিংশ শতাব্দী। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ এরিক হবসবাম কথিত ‘শর্ট টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি’র (১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে অনেক দেরিতে সুচনা এবং ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে আগাম সমাপ্তি) ধারণা কবি হিসেবে খোন্দকার আশরাফ হোসেন আগাম উপলব্ধি করেছিলেন; তাই তাঁর কর্মযাত্রাটি শুরু করেন ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবাহী নামাঙ্কনে। এবং ভবিষ্যতের কবিদের অর্থাৎ যারা কিনা একবিংশ শতকে কবিতা চর্চায় ও কবিখ্যাতিতে সময় আলোকিত করবেন তাদের কবিতাকে সনাক্ত করার জন্য অনেকটা জ্যোতিষবিদের মতো নাক্ষত্র গণনা করতে ব্যাপৃত হন।
প্রথম সংখ্যার সূচনাতেই ঘোষণা করা হয়, ‘একবিংশ শতাব্দীর দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছি আমরা; .. নতুন শতাব্দী, নতুন সময় এবং নতুন অভিজ্ঞতার বোধন ঘটবে। আমরা এবং কবিতা তখনো থাকবো; উন্মার্গগামী রকেট নয়, কবিতাই আমাদের পৌঁছে দেবে সে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে। আমরা কেবল প্রস্তুতি নিতে পারি, প্রস্তুত হতে পারি আমরা যারা নতুন, যারা মারী ও যুদ্ধের মধ্যে শৈশব কাটিয়েছি, যারা দুঃশাসনের তমসার মধ্যে পঞ্জরাস্থি জ্বালিয়ে নিজেদের করেছি অন্য নাবিকের জন্য বাতিঘর, আমরা যারা আগামী শতকেরও বেশ কিছুকাল বেঁচে থাকবো। নতুন সময় আমাদের, একমাত্র আমাদের। আর একবিংশ নতুনদেরই পত্রিকা। .... যারা অপ্রতিষ্ঠিত, যৌবনাবেগে টলমল, প্রতিভাবান, উদার, অভিনিবিষ্ট, শ্রমী এবং নির্ভয়, আমরা তাদের জন্য পাটাতন নির্মান করতে চাই...’। হ্যাঁ, একবিংশ’র পঁচিশ বছরের যাত্রাপথটিকে সময়ের তরুণ কবিদের জন্য একটি সুদৃশ্য মজবুত ও ভবিষ্যত-অভিমুখী পাটাতন বলেই মনে হচ্ছে। প্রথম সংখ্যার ঘোষণা তবে কোন কাব্যিক স্বপ্ন-কল্পনা মাত্র ছিল না; ছিল সামর্থবান কর্মীপুরুষের সুচারু কর্মপরিকল্পনা।
সার্ধদশক আগে ‘একবিংশ’ নাম ধারণ করে যেহেতু ভবিষ্যতের কাব্যক্ষেত্রকে সনাক্ত করতে ও চাষাবাদ করে সোনালী ফসল ফলাতে উদ্যোগী ছিলেন সম্পাদক, সেজন্যে তিনি কবিতা নির্বাচনে প্রথমাবধি ছিলেন উত্তর-সা¤প্রতিক। তখন অর্থাৎ আশির দশকে কবিতা চর্চা ও প্রকাশের মূল ক্ষেত্রে ছিলেন ষাটের ও সত্তরের দশকের কবিগণ, এমনকি পঞ্চাশের শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, আল মাহমুদ প্রমুখের কবিতা ও কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছিল সমানতালে। কিন্তু একবিংশ ঘোষণা করলো, প্রতিষ্ঠিতদের নয় বরং অপ্রতিষ্ঠিত প্রতিভাবান, নতুন চিন্তাধারী, নতুন সময়ের নির্মানে নিষ্ঠাবান যারা তাদের লেখার জন্য উন্মুক্ত এ কাগজ।
এই নতুন সময়ের নির্মানে নিষ্ঠাবান কবিতা কর্মীদের উন্মেষ ঘটে মূলত আশির দশকের প্রান্তিক কালে এবং তা বিস্তৃতি ও পরিণতি লাভ করে নব্বইয়ের দশকে। পাশাপাশি বাংলাদেশের কাব্যক্ষেত্রে একবিংশ শতাব্দীর নয়া ডিসকোর্স (উত্তর-আধুনিকবাদ, উত্তর-ঔপনিবেশিকতা, ঐতিহ্যের পুনঃনির্মান এবং জ্ঞান ও বিজ্ঞানের সকল শাখার সমন্বিত চিন্তনপ্রক্রিয়া) বিকশিত হয় বিশ্ববাস্তবতার অনিবার্য অভিঘাতে, বিশ শতকের নব্বইয়ের দশকেই। ফলে একবিংশ কীভাবে বাংলাদেশের তথা বাংলা ভাষার নব্বইয়ের দশকের কবিতাকে সনাক্ত করেছে তা খুঁজে দেখার প্রয়োজন আছে বৈকি।
স¤প্রতি শূন্য দশকের কয়েকটি কবিতাগ্রন্থের আলোচনা গিয়ে বলেছিলাম যে, ‘সময়ের তরঙ্গে বাঁকবদলের নিরীক্ষার মধ্যেই নব্বইয়ের কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য নিহিত। বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তনের দোলায় দোদূল্যমান বাঙালির মানসচেতনায় দ্রুত পরিবর্তন চিহ্নিত হতে থাকে এ সময়। বাংলাদেশের কবিতার ভাববলয়ে এবং শিল্প-সংগঠনে নতুন এক হাওয়ার বেগ সঞ্চারিত হয়। শিল্প নির্মানের নয়া ডিসকোর্সে প্রভাবিত হতে থাকে বাংলা ভাষার কবিতা; তার জন্য নতুন চিন্তা-কল্পনা এবং বাক্যের নয়া বিন্যস্ততা চিহ্নিত হতে থাকে। ঐতিহ্যের পুনঃনির্মানের সচেতন চর্চা এর আগে এত বড় আয়োজনে আর দেখা যায়নি।’
রাশেদ মিনহাজ নামের আড়ালে খোন্দকার আশরাফ হোসেনও এক আলোচনায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশের কবিতা যখন নব্বইয়ের দশকে প্রবেশ করছিল, তখন চারিদিকে একটি সাজ-সাজ রব। তরুণ কবিদের কোলাহল শোনা যাচ্ছিল চারিদিকে, বেরোচ্ছিল বহু ক্ষুদ্র কাগজ ... এই কাগজগুলোতে এবং একবিংশ-এ একঝাঁক নতুন কবির কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে’- যারা ক্রমে নব্বইয়ের দশকের কবি হিসেবে পরিচিতি পায়।
এই নতুন কবিদের অধিকাংশই নিয়মিত অথবা অনিয়মিতভাবে একবিংশ’র কোন না কোন সংখ্যায় উপস্থিত হয়েছেন। এই উপস্থিতি এ জন্যে উল্লেখযোগ্য যে, ঐ সময়ের তাদের শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলোই একবিংশ-এ পত্রস্থ হয়েছে।
সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের যাত্রা শুরু হয় একবিংশ-এর মাধ্যমেই ফেব্র“য়ারি ১৯৮৯ সংখ্যা থেকে; তবে ১৯৯২ পর্যন্ত মাত্র চারটি সংখ্যায় লিখেছেন তিনি। নানা ভঙ্গির বাক-বিন্যাসের মাধ্যমে জাতিসত্তার যাত্রাপ্রবাহকে উপলব্ধি করার সচেতন আয়োজন দেখা যায় তার কবিতায়। তিনপর্বের সমন্বয়ে তাঁর দীর্ঘ কবিতা 'তনুমধ্যা’ নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বাংলাদেশের তরুণ কবিতাকর্মীদের আলোড়িত করেছিল। ভাষার ঐতিহাসিক ও কালানুক্রমিক ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বের শব্দবোধ ও বাক্যবিন্যাস, বাংলা কবিতার ইতিহাসের ধারাবহিকতায় ব্যবহৃত ছন্দ, লোকসাহিত্য ও ছড়ার গীতলতা এবং নৃতাত্ত্বিক নানা অনুসঙ্গের সম্মিলন ঘটিয়েছেন কবিতায়। কিন্তু নিজের কাব্যচেতনায় যথেষ্ট আস্থা রাখতে পারেননি শেষাবধি; প্রভাবিত হয়ে পড়েন সমকালীন কবি-বান্ধবদের চর্চিত ব্যঙ্গরসাত্মক পরিহাসপ্রবণ হালকা মেজাজের কবিতাপ্রকল্পে। তিনি লিখছেন প্রচুর এবং এরই মধ্যে তাঁর নিজস্ব একটি কাব্যভঙ্গি সনাক্ত করা যাচ্ছে।
‘আমার গলায় তুমি কে গো কথা কও অহোরাত্র?
কে গো দেখ আমার নয়নে, শোনো শ্রবণে আমার?
এই দেহের ভিতর দিয়ে দ্বিতীয় সে কোন পথ
চলে গেছে কোন্ দিকে , কোন আলোয়, কোন আলেয়ায়?
শত-পিতা-শত-পুত্র-পরম্পরা বংশলতিকায়
দোল খায়, অন্ধকারে সুরভি ছড়ায়! ধমনিতে..’
(জাগরণপালা: সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ)
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ যদিও ফেব্র“য়ারি ১৯৮৮ সংখ্যা থেকে লিখছেন তবু কবিতার ভাষা ও চিন্তাপ্রক্রিয়ার স্বভাবে তিনি নব্বইয়ের দশকের প্রতিনিধি। ব্যক্তি-অভিজ্ঞতাকে রূপকের ই¤েপ্রশনে চিত্রিত করা তার কবিতাকর্ম। ছন্দ ও ভাষার ব্যাঞ্জনা নিয়ে তেমন চর্চা নেই তার কবিতায়। অব্যাহতভাবে একবিংশ-এ কবিতা প্রকাশ করছেন প্রথমাবধি। প্রথম গ্রন্থ 'শীতমৃত্যু ও জলতরঙ্গ’, এরপর 'বাল্মিকীর মৌনকথন’, 'পলাশি ও পানিপথ’ এবং এবছর প্রকাশিত 'গানের বাহিরে কবিতাগুচ্ছ’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ তাকে কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।
'শব্দে শব্দে পাথর সভ্যতা আমাদের পাঠ্য
স্কুল ব্যাগে পুষ্ট রাস্তাগুলো মাংসের আড়ালে।’
(শৈশব ও রাস্তা: আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ)
শরীফ শাহরিয়ার-এর কবিতা ১৯৯০ সালে প্রথম ছাপা হয় এবং এখনও পর্যন্ত অন্যান্য ছোট কাগজের পাশাপশি তিনি অনিয়মিতভাবে একবিংশ-এ সংশ্লিষ্ট আছেন। শরীফ কবিতা নির্মানে ও বিষয়ের মেজাজে যদিও আশির দশকের প্রতিনিধিত্ব করেন তথাপি নব্বইয়ের দশকে তিনি কবিতা লেখা ও প্রকাশে অক্লান্তভাবে ধারাবাহিক। স্বনির্দিষ্ট জীবনবোধকে অনাড়ম্বর বাক্যপ্রবাহে ফুটিয়ে তোলা সাধনা তাঁর।
'
এই শহরের শোকগাথা ঠোঁটে তুলে দাঁড়িয়ে আছি ব্যথিত নাগর
আর তুমি কোন জানালায় চোখ রেখে খুঁজতে থাকো সুদূর সাগর।’
(নগর প্রতিমা: শরীফ শাহরিয়ার)
দাউদ আল হাফিজ ডিসেম্বর ১৯৯০ সংখ্যায় দুর্দান্ত তিনটি কবিতা নিয়ে হাজির হন বাংলা কবিতার সবুজ মাঠে। তাঁর ‘পাতাঝরার গান এবং ঝরাপাতার সঙ্গীত’, ‘আলো, আরো আলো’ ও ‘জেরুজালেমে একদিন তিনহাজার বছর আগে’ কবিতাত্রয় দুই দশক পর আজও সমান আলো ছড়াচেছ। পরবর্তীতে প্রকাশিত তাঁর ‘আনাবাস’ কবিতাটি আধ্যাত্মিক চেতনাপ্রবাহে সত্তার শূন্যভ্রমণের এক ভাষিক চক্রাবর্ত। তিনি স্বল্পপ্রজ; কোন কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি তাঁর।
‘এইসব নাজুক শব্দাবলী ভীষণ ভালোবেসে পোশাক প্রকাশে অনীহা
প্রবল
যতখানি লোকালয়ে প্রকাশ, যতখানি মূর্ত - তারো অধিক বিমূর্ত
লীলা।
এইসব শব্দাবলী, অভিধান ছেড়ে ছুঁড়ে আমি নিঃসীম আঁধারে ডুবি
ডুবে যায়
সংসার সময় ভুত ভবিষ্যত বর্তমান।....’
(আলো, আরো আলো: দাউদ আল হাফিজ)
বায়তুল্লাহ কাদেরী মূলত একবিংশ’রই কবি। সেপ্টেম্বর ১৯৯১ সংখ্যা থেকে লিখলেও ১৯৯৩-এ শীতাভ সনেটগুচ্ছ প্রকাশের মাধ্যমে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ‘শীত’ কে জ্ঞান ও বোধির প্রতীক রূপে আবর্তমান একটি রূপকের প্রবাহে তেরটি চতুর্দশপদী নির্মান করেন। পরে বর্ষালি চতুর্দশী নামে আরও একটি সনেটগুচ্ছের মাধ্যমে সা¤প্রতিক সময়ে সনেট চর্চায় তার পারদর্শিতার স্বাক্ষর রাখেন। সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে বায়তুল্লাহ পঠিত কবিতার ইতিহাসের ধারায় প্রভাবিত। শব্দপ্রতীকের প্রবাহে ইতিহাস, মিথ ও লোকজীবনের বিভিন্ন চিহ্নায়ক ব্যবহার করেন কবিতায়।
‘শব্দে শব্দে খেলি আমি শীত নিয়ে, শীতের প্রয়াত
বন্ধু, যাকে মাঝে মধ্যে চিঠি লিখে বিরক্ত করার
প্রবণতা জাগে, উঠাই প্রসঙ্গ তার, গর্ভজাত
বৃষ্টিকে লালন করি সত্তাময়, যেনোবা মরার
আগে একবার শীত হবো; তবে আত্মপ্রবঞ্চনা
আমাকে শাসন করে রোদের মতোন, শাহরিক..’
(শীতাভ সনেটগুচ্ছ: বায়তুল্লাহ কাদেরী)
কামরুল হাসান নব্বইয়ের দশকের প্রথম থেকেই নিয়মিত লিখছেন একবিংশ-এ। তিনি বহুপ্রজ লেখক। বিভিন্ন ছোট কাগজ ও দৈনিকের সাহিত্যপাতায় তার উপস্থিতি অবিরল। হৃদয়াবেগকে ইন্দ্রিয়-সংবেদনে উপলব্ধি করতে চান তিনি। কবিতা নির্মান প্রকৌশলে তিনি বাকসংযমী, স্কেচধর্মী, ইঙ্গিতবাহী এবং প্রচল ধারার প্রতিনিধি।
'আমাদের উদ্ভট পাঠশালে তোমরা কে কে বলে নতুন
বসেছে ভুল এলামেলো বেঞ্চিতে, রোল নাম্বারহীন
তোমাদের নেই বুঝি ক্রমিক পতন?’
(আমাদের উদ্ভট পাঠশালে: কামরুল হাসান)
শাহনাজ মুন্নী’র কবি পরিচয়বাহী দু’টি কবিতা ‘ক্ষমঃ গো শ্বেত দুগ্ধ’ ও ‘চাষী বউ এর সাথে যখন বদলায় কবির জীবন’ একবিংশ-৮ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। একই সংখ্যায় সরকার আমিনও উপস্থিত হন। তাদের উদ্যোগে পরিচালিত ও প্রকাশিত ‘মঙ্গলসন্ধ্যা’ নব্বইয়ের কবিতার আলোচনায় অনিবার্য একটি অধ্যায়।
হাফিজ রশিদ খান আশির দশকের কবি। কিন্তু তাঁর আদিবাসী কবিতাগুচ্ছ নব্বইয়ের দশকের শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলোর অন্যতম। অবশ্য তাঁর কবিতা বৈশিষ্ট্যের দিক থেকেও নব্বইয়ের সমধর্মী।
‘হৃদয় সলতে পাপড়ি মেলো
এখন আলো আসবে অমল হাতের ছোঁয়ায়
লুসাই-পাড়ার তন্বী উঠোনে
মাদুর পাতো
আজকে শীতের
হালকা আমেজ হাওয়ায়’
(আদিবাসী কবিতাগুচ্ছ: হাফিজ রশিদ খান)
তুষার গায়েন নব্বইয়ের কবিদের তালিকার পুরোভাগের একজন। প্রথমত একবিংশ’র মাধ্যমেই তাঁর কবিতা পরিচিতি লাভ করে। সত্তার আন্তর্প্রবাহ তাঁর কবিতার প্রধান উপজীব্য। প্রতœস্মৃতি, দর্শন ও বিজ্ঞানের সমন্বিত বোধনে তাঁর কবিতা বিশিষ্ট। পদার্থ ও প্রাণের মধ্যকার সম্পর্কের মহাজাগতিক ঐকতান ভাষায় ফুঁটিয়ে তোলার অভিপ্রায় আছে তাঁর। টোটেম ও তন্দ্রা, নীলভবহ্রদ, আদিদর্শন, ফুরামন পাহাড়ের গান, উড়ে যাই একবিংশকালে প্রভৃতি সময়ের উল্লেখযোগ্য কবিতা হিসেবে চিহ্নিত।
‘গতকাল স্নায়ুযুদ্ধ না কি শেষ হয়ে গেছে
একটি সমষ্টিবাদ বুঝি ডুবে গেল অতল গহ্বরে
একটি কফিন মাটি থেকে তুলে নিলে
না কি সোনা এসে ভরে যাবে দেশে
একটি দেয়াল ভেঙে ফেলে দুটো দেশ
এক হয়ে যায়, একদেশ ভেঙে গিয়ে বহু
বহুদেশ এক হবে আরো কোন বাণিজ্য আশায়’
(উড়ে যাই একবিংশকালে: তুষার গায়েন)
মুজিব মেহদী অন্যান্য কাগজে হামেশা প্রকাশিত হতে থাকলেও একবিংশ-১৪ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘নারী মাছের বিবিধ কানকো অন্যান্য আনাজ ও উচ্ছিষ্টভোগীরা’ শিরোনামের পরিহাসপ্রবণ কবিতাটি তাঁকে পাঠকমহলে আলোচিত করে। প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতাকে অভিনব ইমেজে রূপান্তর করা তাঁর বিশিষ্টতা।
'আরোগ্য থেকে দুই মাত্রা দূরে বেড়ে ওঠি
যেখানের জল সেখানে থাকে যেখানের হাওয়া সেখানে
বিষাক্ত ধোঁয়ার কুন্ডুলিতে নাসিকা কুঞ্চিত করি
আর ধেয়ে আসি পর্বতে ঘাসে’
(তার নামে স¥ৃতিঘর: মুজিব মেহদী)
টোকন ঠাকুরও ১৯৯৫ সালে ১৫তম সংখ্যায় প্রকাশিত ‘শত সপ্তাহের পদাবলী’ শিরোনামে শেক্সপিয়রীয় রীতির সাতটি সনেটের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেন। পরবর্তীতে অব্যাহতভাবে কবিতা প্রকাশ করে বাক্যবিন্যাসের ব্যাপক নিরীক্ষা ও ছন্দ প্রয়োগে স্বাচ্ছন্দ্য তাঁকে পাঠকপ্রিয় করে তোলে।
‘অধিরূঢ় এমন রোদ্দুর! কতো মেঘ জমে ওঠে!
আজ পূর্ণদৈর্ঘ্য দিন! ক্রুশকল্প...ঘন্টাধ্বনি-আর
বিসদৃশে কিছু কথা... কথাগুলো নির্লিপ্ত... প্রস্ফুটে
তবু যা উদ্ভূত-অতিক্রান্ত অর্থে আসে রবিবার!’
(শত সপ্তাহের পদাবলী: টোকন ঠাকুর)
একই সংখ্যায় ‘ধানসত্য’ শিরোনামে আমারও সাতটি কবিতার একটি সিরিজ ছাপা হয় যা পাঠকদের প্রশ্রয় পায়। আগে পরে প্রকাশিত আরো কিছু কবিতা যেমন- নিদালি, প্রিয় সর্পিনী, একটি আলবাট্্রস-তার গান প্রভৃতি একবিংশের মাধ্যমে পাঠকদের নজরে আসে। এবং এখনও শিহরিত হই ছাত্রাবস্থার সেই সময়ের অনুভূতি স্মরণ করে যে একেকটি কবিতা প্রকাশের পর আমাকে ক্যাম্পাসে ও শাহবাগে পরিচিতজনেরা কবিতার নাম ধরে ডাকতো। যেমন পালকাপ্য প্রকাশের পর এখনও পর্যন্ত কেউ কেউ আমাকে ‘পালকাপ্য’ বলে ডাকে।
নভেম্বর ১৯৯৬ সংখ্যায় একসাথে যোগ দেন মোশতাক আহমাদ দীন ও কামরুজ্জামান কামু। রূপকধমী নিরাভরণ ভাষার মাধ্যমে মোশতাক ইতোমধ্যে একটি নিজস্ব কাব্যজগৎ সৃষ্টি করতে পেরেছেন বলে মনে হয়। কামু পরবর্তীতে নিজের কাব্যভাষায় নিষ্ঠাবান থাকেননি। তিনিও, অসাবধানতার বশেই হয়তো, ব্যঙ্গকবিতার চোরাবালিতে পড়ে গেছেন। কিন্তু তাঁর প্রথমগ্রন্থ ‘কবি মুখপত্রহীন’ পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
‘কায় ভাসিলো পথের ধূলায়
আমি ভুলে থাকি আজ গৃহে ফিরিবার দিন
কে গো ভাসালে বোলো
উড়ো মন্তরের ছায়া ঘোরের বয়ার’
(ধূলোপাঠ: মোশতাক আহমাদ দীন)
‘আজ স্মৃতি-বিধুরতা জেগে ওঠে, আজ মধ্যরাতে
বন্ধুর বোনের কাছে বলে ফেলি: রাজনীতি মানে
হলো পরাজয়
আজ মাতৃক্রোড়ে মুখ রেখে
অনন্ত ক্ষমার জন্য অশ্র“পাত করি’
(স্ত্রীলোকের জন্য উঠে আসে গান: কামরুজ্জামান কামু)
নব্বইয়ের অন্যান্য অনেক কবি যেমন- রহমান হেনরী, শামীম সিদ্দিকী, রণক মুহম্মদ রফিক, আকমল হোসেন নিপু, পাবলো শাহী, শোয়াইব জিবরান, কুমার চক্রবর্তী, পাঁশু প্রাপণ, জহির হাসান, রায়হান রাইন, তাপস গায়েন, আশরাফ রোকন, মিহির মুসাকী, শাহীন শওকত, শামসুল আরেফিন প্রমুখের কবিতা একবিংশ-এ পত্রস্থ হয়।
‘এখন নি:শব্দে অন্তর্গত, এখন মুদ্রিত আছি মেঘে
তোমাদের বাড়ির উঠোনে ছিলাম বর্ষার জল
শরতের মেঘ ছিন্ন করেছে সকল গ্রন্থি
তার শুভ্র ডানা আমাকে উড়িয়ে নেয় দূরে
তুমি কি ভুলে গেছ ঘন বাদলের দিন’
(বর্ষামগ্ন: শাহীন শওকত)
‘শাহরিক শূন্যতা বেশ্যার মতো পড়ে থাকে
একদিন যে শরীর তার ছুঁয়েছে মখমল।
সে শরীর ক্ষত হয়, বিক্ষত উত্তাপে
লালসায়। এই নারী
বহু ভোগ্যা লোলচর্মা হয়ে ওঠে।’
(সেই ঘুমঘুম ভিখারি আপেলগুলো: পাবলো শাহী)
‘ভেজানো দুয়ারখান খিলছাড়া কাঁপিতেছি আমি,
আমার অন্তরে থাকো টলোমলো সুবর্ণের খাটে।
কৃত্রিম অনন্ত শব্দে দু’হাতে মেলাতে কাব্যখানি,
বাহিরে দূত-পাখি শুক এসে শক্ত মোরে আঁটে।’
(কৃত্রিম, কৃত্রিম: রণক মুহম্মদ রফিক)
‘জয়তু বন্দনা করি, সমূহ সমীহ হতে প্রমুখ আমাকে
যে-আমি প্রবহ অহে সহ থেকে সহযোজী সকল আভাকে-
এইভাবে বা ও-ভাবে অংশ কেলাসন রূপে করেছি কেলাস;
এজন্যই আতশীর পদার্থবিজ্ঞান বোঝে কাঁচের গেলাস।’
( অহম্: পাঁশু প্রাপণ )
‘শালিখের ডানায় উঠেছে নেচে রোদ... আমি এইদৃশ্যটুকু
লিখে রেখে প্রচ্ছন্ন হওয়ায়, বাংলা কবিতাকে বলি, ও জননী,
আমি তোরে প্রেয়সীর আদরে সাজাবো... আহা’
(সাঁতারের স্বরলিপি: রহমান হেনরী)
‘আমাদের মৃত নদী ঘিরে আজ হাহাকার ওঠে। আরো কতো কৃশ,
ধবল মেঘের দী -র্ঘ নদী ছিলো, কবে তারা বাতাসের ঘর ভেঙে
গোলকের খোঁজে ঢুকে গেছে। ক্রমাগত উড্ডয়নে ক্লান্ত ডরিমার
ন্যুব্জ ডানায় ভর করে সময়ের চক্রে পড়ে, আহা!..’
(সময়: বাতাসের ভেতর উড়ে আসা বিবর্ণ ধূলো: রায়হান রাইন)
‘মহাগুরু বাষ্পীকরণ বন্ধ রেখেছেন। পত্ররন্ধ্রগুলি হাওয়ায় আবৃত,
উত্তপ্ত বালুর মর্মে মর্মে মর্মর হাওয়ায় প্লাবন, শীতল চামরে।’
(হাওয়া: কুমার চক্রবর্তী)
একবিংশ-এ লেখেননি এমন যারা নব্বইয়ের দশকের কবি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তাদের মধ্যে শিবলী মোক্তাদীর (বগুড়ার নিসর্গ’র মাধ্যমে); চঞ্চল আশরাফ, কবির হুমায়ূন, মুজিব ইরম (মঙ্গলসন্ধ্যা’র আড্ডা থেকে); শামীম কবীর ও মজনু শাহ (দ্রষ্টব্য’র মাধ্যমে); জিল্লুর রহমান, আহমেদ রায়হান, পুলক পাল (চট্টগ্রামের লিরিক’র আড্ডা থেকে); ওবায়েদ আকাশ (শালুক-এর সম্পাদক), শামীম রেজা (দৈনিক আজকের কাগজের সাহিত্যপাতা সুবর্ণরেখা’র সম্পাদক), বদরে মুনির, সাখাওয়াত টিপু (নাটোরের উটপাখির সংশ্লিষ্টতায়); ব্রাত্য রাইসু, হেনরী স্বপন, আলফ্রেড খোকন, আয়শা ঝর্না, জাফর আহমেদ রাশেদ প্রমুখ উল্লেখযোগ্যতা অর্জন করেছেন। চঞ্চল আশরাফ বিভিন্ন ছোট কাগজ ও দৈনিকের সাহিত্য পাতায় নিয়মিত লিখেও কেন যে একবিংশ-এ অনুপস্থিত থাকলেন তা বোধগম্য নয়। ব্যক্তিক সম্পর্ক ও শিল্পচেতনায় তাঁর সাথে একবিংশ’র বিরোধ আছে বলে মনে হয় না।
এছাড়া কেউ কেউ এমন আছেন যারা নব্বইয়ের দশকে তেমন উল্লেখযোগ্যতা অর্জন না করলেও পরবর্তী শূন্যের দশকে নিয়মিত কবিতা প্রকাশ করে আলোচনায় এসেছেন তাদের অনেকেই একবিংশ-এ স্থান পেয়েছেন।
নব্বইয়ের দশকে আশির কয়েকজন কবি নিয়মিত ছিলেন একবিংশ-এ। খোন্দকার আশরাফ হোসেন, মঈন চৌধুরী, সরকার মাসুদ, মাসুদ খান ও সুহিতা সুলতানা নব্বইয়ের নতুন কবিদের পাশে সমানুপাতে নতুনভঙ্গিতে তাদের কবিতা অব্যাহত রাখেন।
এছাড়া একবিংশ-এ নিয়মিতভাবে প্রকাশিত কবিতা ও শিল্পতত্ত্ব বিষয়ক সমসাময়িক প্রবন্ধ, উত্তর-আধুনিকতা নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক এবং অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার কবিতা ও সাহিত্যভাবনা তরুণ কবিতাকর্মীদের কাব্যচর্চায় দিক নির্দেশনা দিয়েছে। বিশেষ করে তপোধীর ভট্টাচার্যের প্রবন্ধসমূহ, খোন্দকার আশরাফ হোসেনের সাহিত্যতত্ত্ব ও আন্দোলন বিষয়ক প্রবন্ধাদি, দাউদ আল হাফিজ অনুদিত টিএস এলিয়টের 'ঐতিহ্য ও ব্যক্তিপ্রতিভা’ এবং অক্টাভিও পাজ’র 'কবিতা ও মুক্তবাজার’ প্রবন্ধ দুটির প্রভাব অস্বীকার করা যায় না।
একবিংশ : প্রকাশিত সংখ্যার পরিচিতি ও পূর্ণাঙ্গ বিষয়সূচী
একবিংশ
প্রকাশিত সংখ্যার পরিচিতি ও পূর্ণাঙ্গ বিষয়সূচী
একবিংশ-১/ নভেম্বর ১৯৮৫
সহকারী সম্পাদক : বদরুল হায়দার/প্রচ্ছদ : মাহফুজ শাহীন/নামলিপি : সিদ্ধার্থ তালুকদার/মুদ্রণ প্যাপিরাস প্রেস, ১৫৯ আরামবাগ, ঢাকা/মূল্য ৮ টাকা, ভারতে ৫ রূপী। লেখক কাগজে মুদ্রিত। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৯২।
প্রবন্ধ
শিল্পের প্রকাশ ও তার ভাষা/সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম; ভিন্ন শিল্পের প্রয়োগসূত্রে কবিতা/সাজ্জাদ শরীফ; ‘দুই বিঘা জমি’ : ঈদিপাস গূঢ়ৈষা/সৈয়দ তারিক
দীর্ঘ কবিতা
খোন্দকার আশরাফ হোসেন/নোটনের জন্যে শোক; ইকবাল আজিজ/ভবিষ্যৎ; রেজাউদ্দিন স্টালিন/চিরঞ্জীব চিঠি
এই প্রজন্মের চোখ
শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ সম্পর্কে আলোচনা : সৈয়দ তারিক, আহমদ মাযহার, আব্দুল্লাহ সাদী
কবিতা
তুষার দাশ (খনন), রানু ইসলাম (চলেছে ত্রিকাল রেল), শান্তনু চৌধুরী (তিনটে ছায়ার নীচে জীবন) মোহাম্মদ কামাল (সূর্য কি ফেরে না), মোহাম্মদ সাদিক (শ্মশানে হরিশচন্দ্র), ফরিদ কবির (জীবন যাপন), বদরুল হায়দার (অতৃপ্ত শব্দাবলী) ফখরে আলম (জন্মঋণ), বদরুজ্জামান নির্জন (কাঠের পাখি মানুষের)
একবিংশ-২/আগষ্ট ১৯৮৬
সহকারী সম্পাদক : বদরুল হায়দার/মুদ্রণ ভূঁইয়া গ্র“প অব পাবলিকেশন্স ১৯২ ফকিরাপুল, ঢাকা-২/ মূল্য ১০ টাকা ভারতে ৫ রূপী। লেখক কাগজে মুদ্রিত। পৃষ্ঠা সংখ্যা-১১০।
প্রবন্ধ
আধুনিক সাহিত্য ও লোক ঐতিহ্য/সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
শামসুর রাহমান ঃ প্রতিনায়কের পদশব্দ/রাশেদ মিনহাজ
এই প্রজন্মের চোখ
রফিক আজাদের ‘ভাত দে হারামজাদা’ সম্পর্কে আলোচনাÑ শহিদুল আলম, আহমাদ মাযহার, রাশেদ মিনহাজ
কবিতা
গৌরাঙ্গ মোহান্ত (ঋত্বিক ঘোটক), বদরুল হায়দার (নদী ও নারী), রানু ইসলাম (মোমবাতী) আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ (ভিক্ষুক এসেছি ভিক্ষুক), মাসুদ খান (হাইবারনেশন), সিরাজুল ইসলাম (জলের পাথর), আহমাদ মাযহার (কোনো এক আত্মপ্রেমিকের প্রতি), রেজাউদ্দিন স্টালিন (রৌরব থেকে), নাসিমা সুলতানা (যে কবিতা লিখিনি; তুমি নার্সিসাস)
ব্যাকুল পার্থিবা
হুমায়ন আজাদের প্রবন্ধ ‘শিল্পকলার বিমানবিকীকরণ’ সম্পর্কে প্রশ্নচিহ্নিত আলোচনা- - গাসেৎ- আজাদ: বিলম্বিত বিকীরণ/সৈয়দ তারিক।
রবীন্দ্র-কবিতার প্রায়োগিক তাৎপর্য বিষয়ে গ্রন্থানুচিন্তনÑ রাষ্ট্রনৈতিক চিন্তায় রবীন্দ্রনাথ: দ্বন্দ্ব ও দ্বন্দ্বনিরসনের সূত্র/আল্ আজাদ নোমান
গুচ্ছ কবিতা
জাহিদ হায়দার (তার নাম পবিত্র অন্যায়; সর্বগ্রাসী গোলাপ; প্রতিবেশীর সমস্যা) ইকবাল আজিজ (মনোজমি ওড়ে আর পড়ে; সিঁড়িতে অন্ধকার; কেনো তুমি বলো বারবার; পড়ে থাকলো রাজ্য) খোন্দকার আশরাফ হোসেন (আমার ঘাতক; হনন; জলের সোনাটা)
বিদেশ বৈভব
লোরকার কবিতা, অনু: খোন্দকার আশরাফ হোসেন (ওয়েল্ট হুইটম্যানের প্রতি)/ হাইনরিশ হাইনের কবিতা, অনু: সৈয়দ তারিক (সাইকী; বৃক্ষ; ধীবর যুবতীকে; রূপক; বিপর্যন্ত আবহাওয়া, সূর্য; তরঙ্গ; গাথা; প্রসূন; শতদল)/গাব্রিয়েলা মিস্ত্রাÍে কবিতা, অনু: সলিম উল্লাহ খান (ঈশ্বরের অভিপ্রায়)।
অনঘ এন্টেনা
(পশ্চিমবাংলার তরুণ-কবিতা বিষয়ক বিভাগ)
অপ্রতিরোধ্য আট : অসন্দিগ্ধ পূর্বাভাষ/অজিত রায়;
সংযম পালের গুচ্ছ কবিতা (শামুকের দিন; দাঁড়ানো পাখি; রাত; খরা)
একবিংশ-৩/ মে, ১৯৮৭
সহকারী সম্পাদক, বদরুল হায়দার/প্রচ্ছদ মাহফুজ শাহীন/নামলিপি সিদ্ধার্থ তালকুদার/মুদ্রণ প্যাপিরাস প্রেস, ১৫৯ আরামবাগ, ঢাকা। মূল্য ১০ টাকা ভারতে ৫ রূপী। লেখক কাগজে মুদ্রিত। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৫২।
প্রবন্ধ
মার্কসবাদী নন্দনতত্ত্ব ও সাহিত্য বিচার/সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
শিল্পকলা: শ্লীল-অশ্লীলের ভেদরেখা/জিয়াউল করিম
এই প্রজন্মের চোখ
নির্মলেন্দু গুণের ‘হুলিয়া’ সম্পর্কে আলোচনাÑ গৌরাঙ্গ মোহান্ত/আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ/হেলাল মহিউদ্দীন/সরকার মাসুদ
কালের চৌকাঠ
আল মাহমুদ: একজন অশ্বারোহীর পতন; মধুকবির উত্তরসূরীর যৌথগ্রন্থ; আলোচনা দুটো লিখেছেন, আলম খোরশেদ। কবিতায় ‘নব্য জসীমিজম’Ñরাশেদ মিনহাজের কলমে সা¤প্রতিক কবিতার ব্যবচ্ছেদ।
দীর্ঘ কবিতা
রাজভাগ্য!/মোহাম্মদ সাদিক
কবিতা
দারা মাহমুদ (আর্যসত্য), সরকার মাসুদ (ভালুক), বিজয় রায় (স্বরিত স্বপ্নের মুখোমুখি), রেহমান সিদ্দিক (আমার জন্মান্ধ ঢাকা), বাহার রহমান (বেশ্যা অথবা লালা), হেলাল মহিউদ্দীন (তুলে নাও আপেল, ডিস্কার্ডিয়া), মারুফ রায়হান (টেলিপ্যাথি), তুষার দাশ (আশীর্বাদ নয়, বরাভয়), আহমেদ নকীব (কবিতার ঘরদোর), রেজাউদ্দিন স্টালিন (ঘরে ফেরার কাল এলো), ইকবাল আজিজ (যে মেয়েটি বিতৃষ্ণায় মরে গেছে), মাহবুব বারী (সন্ন্যাস)
গুচ্ছ কবিতা
বদরুল হায়দার (সুরাপাত্রে ধ্বংসলীলা ১,২,৩) সুনীল শর্মাচার্য (পুনরায় তৃষ্ণা জাগে; ফাজেলপুর; পুনরায় অ্যামিবা হতে পারো; যাপন; হেমতাবাদ; রাজকর্ষণ; শূদ্র পূর্ণিমার রাত) আযাদ নোমান (অধিবর্ষ; মহাকর্ষ; স্থাপত্য; প্রয়াণ; ভারবাহী) খোন্দকার আশরাফ হোসেন (একজন মৃতের উক্তি; কৌন্ হ্যায়! বাতাস; শ্রাবণ-যাপন)
বিদেশ বৈভব
হানস মাগনুস এনৎসেন্সবার্গার-এর কবিতা/শামসুল ইসলাম খান (শান্তি সম্মেলন); টেড হিউয়েজের কবিতা/খোন্দকার আশরাফ হোসেন (প্রেমের গান, বেয়নেট চার্জ, ছেলেখেলা, দুঃখের গান); আফ্রিকার কবিতা/শামসুল ফয়েজ (জাকস র্যাবেমনজোরা, ফ্লাভিয়া রাভো) সা¤প্রতিক ধারার প্যালেষ্টাইনী কবিতা/নূরুল করিম নাসিম (মোহাম্মদ দারবিশ; ফাদওয়া তাকওয়ান; ইউসুফ হামদান; সালিম জাবরান)
অনঘ এন্টেনা
জয় গোস্বামী: সুতোর দু’ধারে কবি ও উন্মাদ/রাশেদ মিনহাজ; একজন রণজিৎ দাশ ও পরাজয়ের কবিতা/ইকবাল আজিজ; সংযম পাল: নীল নগ্ন নারীদের গান/রাশেদ মিনহাজ; সোফিওর রহমানের কবিতা (কবিতাযুগ; শ্যামের জন্য; আর্তচিহ্ন; নির্জন অগ্নিস্রোত; জেগে উঠলো আমিষ শিরাগুলি); নিতাই জানার কবিতা (দর্পণ; ভেলা; বন্দনা; সাতভাই পাখি)
একবিংশ-৪ / ফেব্র“য়ারী ১৯৮৮
সহকারী সম্পাদক: বদরুল হায়দার/সৈয়দ তারিক; প্রচ্ছদ আসাদুল আসগার, নামলিপি সিদ্ধার্থ তালুকদার। মুদ্রণ, বরেন্দ্র প্রিন্টিং প্রেস, ৮৫-২ আরামবাগ, ঢাকা। মূল্য-১০ টাকা ভারতে ৫ রূপী। লেখক কাগজে মুদ্রিত। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৫২।
প্রবন্ধ
পশ্চিমের জানালা/খোন্দকার আশরাফ হোসেন; ‘বিদ্রোহী’ ও শিল্পের শৃঙ্খলা/সৈয়দ তারিক
এই প্রজন্মের চোখ
আল মাহমুদের ‘সোনালী কাবিন’ সনেটগুচ্ছ : মুক্ত আলোচনা; কালের অক্ষর ও সোনালী কাবিন সনেটগুচ্ছ/শান্তনু কায়সার; সোনালী কাবিন; আল মাহমুদের কৃতি ও বিশ্বাস/শাহীন সৈয়দ; দ্রোহ, যৌনতা ও সোনালী কাবিনের অলংকার ও বিবিধ/রাশেদ মিনহাজ
যুগল কবিতা
সুহিতা সুলতানা (সঙ্গীহীন জনপদে নিদ্রাহীন আমি সারাক্ষণ; গোপন কাউন্টারে রমণীর ঠোঁটে শকুনের ঠোঁট) মাসুদ খান (বৈশ্যদের কাল; লব্ধি) হেলাল মহিউদ্দিন (একটি কবরের ইতিহাস; প্ল্যানচেট) আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ (লীয়রের দুঃখগুলো; কাক এবং মৃত প্রেমিকেরা) রেজাউদ্দিন স্টালিন (খোলের বোলের অনুপাত; অনাদৃত কবিতার জন্য)
কবিতা
আসাদুল্লাহ শেখর (বি-বিশেষণ আকাশ), মারুফ রায়হান (চৈতন্য প্রবাহ), ভূঁইয়া রেজা (প্রতিশ্র“তি) শাহীন শওকত (উপকূলে একা), আশিক আকবর (মানদণ্ড)
গুচ্ছ কবিতা
ফরিদ কবির (প্রশ্ন; দ্বিধা; সময়; কম্পোজিশান; ধ্বংস বিষয়ক) কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার (রূপালী পিচ্ছিল; জন্মমৃত্যুহীন; এক প্রতিকৃতি; অভিন্নতা) বদরুল হায়দার (বিন্দুবাদী কবিতাগুচ্ছ) খোন্দকার আশরাফ হোসেন (কোকিলস্বভাবা; ঝাপুইখেলা; এস্ত্রাগণ ও পলায়িত উট; বাহুল্য হে বল্লভ; নৈশভোজ)
বিদেশ বৈভব
ভ্লাদিমির মায়াকোভেস্কির কবিতা/অনু : আলম খোরশেদ (কমরেড লেনিনের সাথে কথোপকথন) ইঙ্গ-মার্কিন কবিতা/অনু : সৈয়দ তারিক (ড্যাফোডিল : উইলিয়ম ওয়ার্ডসওয়ার্থ; ফসল- কাটিয়ে একাকিনী মেয়ে : উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ; অতিবেল : আলফ্রেড লর্ড টেনিসন; ডোভার সৈকত: ম্যাথ্যু আর্নল্ড; শর ও সঙ্গীত: হেনরি ওয়াডসওয়ার্থ লঙফেলো; বলার শুধু এই: উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়ামস; হেমন্ত: টি.ই. হিউম্; ডকের উপর: টি.ই. হিউম; মেট্রোর এক ষ্টেশনে: এজরা পাউন্ড; বিচ্ছেদ: ডব্লু. এস. মেরউইন) আমেরিকান নিগ্রো কবিতা: হ্যারিং কুনি/অনু: জিয়াউল করিম (মৃত্যু: প্রতিবিম্ব) ডিলান টমাসের সঙ্গে কথোপকথন/শাহীন সৈয়দ।
অনঘ এন্টেনা
হাংরী নায়কের প্রত্যাবর্তন/আলম খোরশেদ।
বীতশোক ভট্টাচার্যের কবিতা (খরা; দর্শন; শরণ; এই গান; নিদালী) নির্মল হালদারের কবিতা (নুন; মৃত্যুঞ্জয়) সলিল চট্টোপাধ্যায় (নামহীন তিন) তপন কুমার মাইতি (নষ্ট হৃদয়ের কবিতামালা) দেবাশিস প্রধান (রাত্রির ভাষা; পাথর)
কালের চৌকাঠ
আমাদের বিস্মৃত ইতিহাসের একটি পৃষ্ঠা: বিভ্রান্ত পদাবলি, সম্ভ্রান্ত কবিকুল/সৈয়দ তারিক।
গ্রন্থানুচিন্তন
কবিতায় অলংকার ও অলংকৃত কবিতা/আহমদ আজিজ; স্মৃতিমগ্ন ধূসর দিনের পথিক/আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ; জীবনের বিবিধ আগুন/মিনহাজ পারভেজ; স্বপ্নময় সুন্দরের কবিতা/মিনহাজ পারভেজ। ভিন্নমত ‘নব্যজসীমিজম, ও বহমান লোককাব্য ধারা/রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
একবিংশ-৫/ ফেব্র“য়ারী ১৯৮৯
সহকারী সম্পাদক: বদরুল হায়দার/সৈয়দ তারিক। প্রচ্ছদ আসাদুল আসগার, নামলিপি সিদ্ধার্থ তালুকদার/ মুদ্রণ বরেন্দ্র প্রিন্টিং প্রেস, ৮৫/২, আরামবাগ, ঢাকা-১০০০। মূল্য দশ টাকা ভারতে ৫ রূপী। নিউজপ্রিন্টে মুদ্রিত। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৪৪।
প্রবন্ধ
শিল্পতত্ত্বের আধুনিক সমস্যা: কতিপয় সূত্র/আফজালুল বাসার: উত্তর কথন : শিল্পতত্ত্বের আধুনিক সমস্যা/সৈয়দ তারিক।
এই প্রজন্মের চোখ
হুমায়ুন আজাদের বিতর্ক-সৃষ্টিকারী প্রবন্ধ ‘কবিতা ও রাজনীতি’ এবং এর উপর তিনটি আলোচনা-
‘নেকড়ের মুখে আফ্রোদিতি’/সাজ্জাদ শরিফ; ‘তবুও গোলাপ ফোটে’/হুমায়ুন কবির; ‘কবিতা ও রাজনীতি: সঙ্গম-দ্বৈরথ’/সৈয়দ তারিক।
গুচ্ছ কবিতা
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (বারবার আপনার চোখ; এইজল এই দুঃসময়; ভেসে যাও অনন্ত অবধি) মঈন চৌধুরী (অভ্রংলিহ; ভাইরাস; সৃষ্টি-দৃশ্য-হত্যা-সংলাপ) সরকার মাসুদ (জেলিমাছ; সমুদ্রমানব, শিল্পী রিফাত চৌধুরী ও সরকার মাসুদ; পোটকা মাছ; সৈকতে ছেলেখেলা; হ্নীলা) সুব্রত আগষ্টিন গোমেজ (রাম; আকাশে যত হাঁটো; লালাবাই) খোন্দকার আশরাফ হোসেন (বেহুলা বাংলাদেশ; বর্ষা ১৩৯৫; আমার পুত্রকে) আব্দুল হাই শিকদার (তিনটন শীত; আর্ট অব লাভিং; গদাধরের মাকে ডাকা)
কবিতা
রেজাউদ্দিন ষ্টালিন (নবজাতক) তসলিমা নাসরিন (তুমি; যে যাবার সেতো যাবেই); বদরুল হায়দার (জেব্রাক্রস); শামসুল আরেফিন (ফেরা); রেহমান সিদ্দিক (একা আর ক্ষত বিক্ষত) শাহীন শওকত (দণ্ড); মারুফ রায়হান (প্রেতিনী)।
বিদেশ বৈভব
বৃটিশ পপ কবিতা/খোন্দকার আশরাফ হোসেন (রজার ম্যাকগাফের ‘তুমি কী’, আড্রিয়ান হেনরীর ‘তুমিহীন ক্রিসমাস’, ‘আমি’, ব্রায়ান প্যাটেনের ‘মড ১৯৬৫’ ও ‘সমুদ্র দৃশ্য’)
শ্রীকান্ত বর্মার কবিতা/দেবী রায়; আর্জেন্টিনা প্রগতির রথ টানে/সৈয়দ তারিক (কনরাডো নালে রক্সলো; হুয়ান হোসেন হারনান্দেজ, আলেহান্দ্রা পিজারনিক, হর্হে ভোকোস লেসকানো)।
কালের চৌকাঠ/গ্রন্থানুচিন্তন
রফিক আজাদ: অতৃপ্ত কৃষকের বাণিজ্যযাত্রা/রাশেদ মিনহাজ
অনঘ এন্টেনা
পশ্চিম বাংলার কবিতা
সাংস্কৃতিক বয়ান ঃ উত্তর আধুনিকতা/অঞ্জন সেন।
কবিতাগুচ্ছ
অমিতাভ গুপ্ত (তারল্যে, স্তব্ধতায়; খণ্ডপ্রলয়,) রামচন্দ্র প্রামাণিক (সে ওই জঙ্গলে গেছে; পরিত্যক্ত বেশ্যালয়; সাগরসঙ্গমে; ঠিক জানি) অশোক মহান্তী (শান্তিতে ঘুমোই; হেলেন)
একবিংশ-৬/ ফেব্র“য়ারী ১৯৯০
সহযোগী সম্পাদক : সৈয়দ তারিক/বদরুল হায়দার। প্রচ্ছদ আসাদুল আসগার, নামলিপি ফরিদ কবির/মুদ্রক : মোতাহার হোসেন, প্যাপিরাস প্রেস, ১৪২, আরামবাগ, ঢাকা। মূল্য : পনের টাকা ভারতে দশ রূপী। নিউজপ্রিন্টে মুদ্রিত। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৮৮।
প্রবন্ধ
রোমান্টিক কবিতা ও রোমান্টিক আন্দোলন/খোন্দকার আশরাফ হোসেন
কবিতাগুচ্ছ
সুব্রত অগাষ্টিন গোমেজ (বিম্ববতী; এই প্রজনন; জয় তথাগত; পীচ; ঘুমের ওপারে; আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ (ঘুমপুত্র; সৌন্দর্যদর্শন এক বয়সের); শাহীন শওকত (শেষ উত্তরাধিকার; সাঁকো বিষয়ক; এই শীত এই কুয়াশার রাতে; শ্যাওলা জলের কাব্য); শামসুল আরেফিন (অনাড়ষ্ট উচ্চারণ; দৃশ্যপট; কুশপুত্তলিকা; প্রোফাইল; আগুন বৃষ্টি); শরীফ শাহরিয়ার (সংবৃতা তোমার শরীর ভাঙে; দ্বিধার সাপ গিলে আছে সকল গন্তব্য; কি এক শব্দের উত্থান)
হাইকু গুচ্ছ/সৈয়দ তারিক
কালের চৌকাঠ/গ্রন্থানুচিন্তন
যৌনতা ও সার্টিফিকেট: আবিদ আজাদের সা¤প্রতিক কবিতা/শাহীন শওকত; দ্বিধার মাস্তুলে পাখি/রশেদ মিনহাজ; আশির দশকের কবিতা/ঐতিহ্যসূত্র ও নব নির্মিতি/খোন্দকার আশরাফ হোসেন
বিদেশ বৈভব
ক্যারিবীয় কবি ডেভিড ডেবিডীন : সাক্ষাতকার (রাশেদ মিনহাজ ও আলমগীর ফরিদুল হক) ‘কুলি অডিসি’ থেকে ছয়টি কবিতা ঃ অনুবাদ খোন্দকার আশরাফ হোসেন (অদৃশ্য; এল দোরাদো; দিনের শেষ; কুলি মা; রোহান বাবুলাল কানহাই-এর জন্য; মিরান্দা)
অনঘ এন্টেনা ঃ পশ্চিম বাংলার কবিতা
নাসের হোসেন (উট; পাঁউরুটি সংক্রান্ত; এক্কা; অপেক্ষা; মমি) প্রীতি চক্রবর্তী (কুসুম সংকাশ, ভিখিরি বেহালাবাদক, উপক্রমণিকা); শিবাশিস দত্ত (সুদেঞ্চার প্রতি; ফেরা); অমল চক্রবর্তী (গর্ভমঙ্গল; কুলো); সৌমেন্দু সামন্ত (যুদ্ধযাত্রা); বিপুল চক্রবর্তী (শিকড়)
ক্রোড়পত্র
অনিরুদ্ধ আশি ঃ এক দশকের কবিতা/সৈয়দ তারিক সম্পাদিত
খোন্দকার আশরাফ হোসেন (প্রার্থনায় নম্র হও পাবে; তিন রমণীর কাসিদা-২; রঙ্গিনীর কতো রঙ্গ; বাউসী ব্রিজ’৭১; নীল সাবানের প্রেম; কালো বাক্সের গল্প; শিকারী ও কোড়াপাখি; নকটার্নগুচ্ছ; মানুষ; কসাই); রেজাউদ্দিন স্টালিন (সূচনাপর্ব; দেয়াল ও দিগন্ত; স্বপ্নময় সুন্দরের দিকে; সোনামুখী ধানশীষ পূর্ণ প্রাণ যাবো; সমকালে কালবেলা; দূর্যোগ থেকে দূর্যোগে রাখি পা; এলিজি; শেষ দৃশ্য; ক্ষুদে কাগজের ছোট শ্যামা পাখি); মোহাম্মদ সাদিক (অনন্ত কসাই; হিরালী; ছায়া; উদ্বাস্তু; শ্মশানে হরিশচন্দ্র; বসিয়া বিজনে কাজ করো মনে; কার্ল মার্কস; মগজের কোষে কতিপয় পাখি); ফরিদ কবির (আত্মহননের পক্ষে; রাস্তা; কে হাঁটে বারান্দায়; ধ্বংস-বিষয়ক; কম্পোজিশন, বাড়ী) আব্দুল হাই শিকদার (সিরাজদ্দৌলা; সন্ধ্যার ছাদ); মঈন চৌধুরী (অভ্রংলিহ; ভাইরাস, সৃষ্টির দৃশ্য, হত্যা-সংলাপ); সরকার মাসুদ (জেলিমাছ; সৈকতে ছেলেখেলা; নীলসাপ); দারা মাহমুদ (খুলে যাচ্ছে দ্বিতীয় দরোজা; আর্যসত্য); বিশ্বজিত চৌধুরী (কৃষ্ণপক্ষে, যুবতীর øান); কাজল শাহনেওয়াজ (দাঁত; আমরা কজন শীত ও বর্ষাকালীন শাকসব্জী; হেরোয়িন); বদরুল হায়দার (সুরা পাত্রে ধ্বংসলীলা); মোহাম্মদ কামাল (অভয় পৃথিবী দেবে কে দেবেনা; শোয়েব শাদাব (স্বগতোক্তি; আবহমান); শান্তনু চৌধুরী (রূপান্তর; ফিনিক্স পাখির জন্ম; হাড়; অভয় মিত্রের ঘাট); রিফাত চৌধুরী (অগ্নিতে পেতেছি শয্যা; তরমুজ); মারুফ রায়হান (পরাধীন পাখির এলিজি; কেন আবেগ আত্মহনন); সুহিতা সুলতানা (নিঃশব্দে নরক যন্ত্রণা); বৃত্তাংশ নয়, বৃত্ত হতে পেরেছে ধনুক); কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার (এক প্রতিকৃতি; অভিন্নতা); মাসুদ খান (বৈশ্যদের কাল); সৈয়দ তারিক (ধ্বনিমা, জীবনানন্দ; অনুষঙ্গ; রুমু)
একবিংশ-৭/ ডিসেম্বর, ১৯৯০
মুদ্রক মোতাহার হোসেন/প্যাপিরাস প্রেস, ১৪২ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০। প্রচ্ছদ আসাদুল আসগার/নামলিপি ফরিদ কবির। মূল্য পনের টাকা ভারতে দশ রূপী। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৫২।
পত্র-প্রতিক্রিয়া
কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার/সরকার আমিন/রণক মুহাম্মদ রফিক।
প্রবন্ধ
আফজালুল বাসার/শিল্পের সংতত্ত্বের অবতারণা
কুয়াশার হ্রেষা : আবদুল মান্নান সৈয়দের কবিতা/খোন্দকার আশরাফ হোসেন
কবিতা
রোকনুজ্জামান রবার্ট (জল, জীবন এবং জীবন-জিজ্ঞাসা; একটি গমদানার পতন; সত্তা ও শূন্যতা; নামহীন অনুভূতিহীন); দাউদ আল হাফিজ (পাতাঝরার গান এবং ঝরাপাতার সঙ্গীত; আলো আরো আলো; জেরুজালেমে একদিন তিন হাজারবছর আগে); সুনীল শর্মাচার্য (কঞ্চুকী; ঘোর; মাঠ-খসড়া; হরপ্পা-তিল); শরীফ শাহরিয়ার (দুই হাত খুঁজে আনে; অসঙ্গতির হোমাগ্নি জ্বেলে; নগর প্রতিমা); মোফাজ্জল হুসেন (অনৃদিত কোলরিজ; আমাদের পাতে লবণ যাচ্ছে কমে); সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ (“একটু দাড়াও! তুমি কি সুন্দর!” লুব্ধক); শামসুল আরেফিন (আবহমান; তৈলপায়িকা); সাজেদুল ইসলাম (হুদ; জাতক; শেষপত্র); মঈন চৌধুরী (বৃষ্টি; ছোটন ও ভাতের কণা; পাখির ছবি); শাহীন শওকত (পাঠ; ভুল; জলের বিকল্প-৩; বৃষ্টি; অনাত্মীয়) বদরুল হায়দার (অপরাজিত); সৈয়দ তারিক (অর্ধনারীশ্বর; অরণ্যে; উৎসব; বাউল; ইতিহাস); খোন্দকার আশরাফ হোসেন (স্মৃতিচিত্র কবিতা কোলাজ: অদ্ভুত; রমণী ও সর্পরাজ; রঙ্গ; ওয়াটারলু; জঙ্গনামা; বাঘবন্দী; পদাবলি; ধানরমণী; তুলারাশি); রেজাউদ্দিন স্টালিন (কেউ আমাকে গ্রহণ করেনি)।
বিদেশ বৈভব
ছড়ানো মার্কিনী/অনুবাদ:সুরেশ রঞ্জন বসাক। (লুসি লী ক্লিনটন; ব্যারী স্প্যাক্স; এ্যান্থনী হেক্ট; এমিলি ডিকিসন; ডব্লু এইচ অডেন; এ্যালেন গীনসবার্গ; অজ্ঞাতনামা)
কালের চৌকাঠ
সা¤প্রতিক কবিতা বিচার পর্বে শামসুল আরেফিনের প্রবন্ধÑ কবিতা, হুমায়ুন আজাদ এবং নিরুদ্দিষ্ট ইষ্টিমার। মৌলিক মুখোশ: অন্তরালে আগুন, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সা¤প্রতিক গ্রন্থের আলোচনা/শাহীন শওকত।
অনঘ এন্টেনা
পশ্চিম বাংলার ষাট-সত্তর-আশি এই তিন দশকের লিটলম্যাগাজিন-ভিত্তিক কবিতা আন্দোলনের সমীক্ষা। তিন দশকের কবিতা আন্দোলন/সন্দীপ দত্ত।
একবিংশ-৮/ সেপ্টেম্বর, ১৯৯১
মুদ্রক মোতাহার হোসেন, প্যাপিরাস প্রেস ১৪২, আরামবাগ। ঢাকা-১০০০। প্রচ্ছদ উইলিয়াম ব্লেক অঙ্কিত ‘নিউটন’ অনুসরণে রাশেদ মিনহাজ। মূল্য পনের টাকা। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১২৬।
প্রবন্ধ
দেরিদার ডিকন্সটাকশন ঃ তাত্ত্বিক বিচার ও সাহিত্য আলোচনায় প্রয়োগ/মঈন চৌধুরী ক্যাভেফির কাব্যজগত/রাজু আলাউদ্দিন; অনিরুদ্ধ আশি ঃ মগ্নস্রোত ও নতুন উপলব্দির কবিতা/শাহীন শওকত
কালের চৌকাঠ
‘মানুষের মানচিত্র’ ঃ শোষিত মানুষের ভাষাচিত্র/হেলাল আহমেদ
বিদেশ বৈভব
ডি.জে এনরাইটের কবিতা/অনুবাদ ঃ সুরেশরঞ্জন বসাক (একটি ভাষান্তরিত পদাবলী; ক্রমবিকাশ; সচিত্র স্বর্গ ঃ একাদশ; সচিত্রস্বর্গ ঃ দ্বাদশ; সচিত্রস্বর্গ ঃ পনেরো; সচিত্রস্বর্গ ঃ সাতাশ; সচিত্রস্বর্গ ঃ একত্রি); রবার্ট ক্রিলির কবিতা/অনুবাদ ঃ দেবী রায় (ন্যুইয়র্ক শহরে রাত্রি; কিন্তু; ব্লু; চিন্তা; ন্যু-ইয়র্ক)
কবিতা
বায়তুল্লাহ কাদেরী (ঈশ্বরের দীর্ঘশ্বাস; কফিন; অন্ধকার শিল্পী; রুটির কিনারে; তন্তুময়; চেয়ারে তোমার); কামরুল হাসান (স্বপ্নতাড়িত যাবে একা; তোমার অকূল জলে ঈশ্বর; সহজ কান্তি বিঁধেছে চোখের মূলে; বিন্যাস; শিরোনামহীন-৬); শাহনাজ মুন্নী (ক্ষমঃ গো শ্বেতদুগ্ধ; চাষী বউ এর সাথে যখন বদলায় কবির জীবন; আমি কি সে মানুষ); সরকার আমিন (ঘোড়া হেঁটে যায়; স্বপ্নখোর); আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ (জীবাশ্ম; সূঁচ); খোন্দকার আশরাফ হোসেন (বৌমাছ; যাত্রা; নামহীনা); মঈন চৌধুরী (ডায়ালেক্টিকস্; আলেয়া প্রতিধ্বনি; স্ক্রু; আশ্চর্য ভোর); সরকার আমিন (উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত); মাসুদ খান (মানুষ; ধর্ম); শামসুল আরেফিন (নক্ষত্রে গঙ্গা ফুঁ)।
পত্র-প্রতিক্রিয়া
আবদুল মান্নান সৈয়দ। জাকির তালুকদার।
একবিংশ-৯/ মার্চ, ১৯৯২
মুদ্রক মোতাহার হোসেন প্যাপিরাস প্রেস ১৪২, আরামবাগ, ঢাকা। প্রচ্ছদ পরিকল্পনা রাশেদ মিনহাজ। মূল্য পনোরো টাকা। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১১২।
প্রবন্ধ
আশির কবিতা, ‘গৃহে ফেরে ভ্রামণিক চোখ/অঞ্জন সেন; লেখকের মৃত্যু পাঠকের জন্ম/আফজালুল বাসার। শহীদ কাদরীর কবিতাঃ পরাবাস্তব চেতনা প্রসঙ্গে/আবু হেনা আব্দুল আউয়াল।
কবিতা বিশ্ব
শাস্ত্রবিরোধী কবিতা ঝড়ঁহফ ঋড়ঁহফ ঈড়হপৎবঃব/ খোন্দকার আশরাফ হোসেন; এক গোছা ইঙ্গ-মার্কিন/সুরেশ রঞ্জন বসাক অনুদিত (ডব্লু.বি.ইয়েটস্; ফিলিপ লারকিন; ষ্টিফেন ক্রেন; ডি.জে এনরাইট; জেন কেনিয়ন; হাওয়ার্ড মস।
কালের চৌকাঠ
রিফাত চৌধুরী ও সরকার মাসুদের কাব্যগ্রন্থের ওপর বায়তুল্লাহ কাদেরী।
কবিতা
আকমল হোসেন নিপু (খোলস; জানালা; দেয়াল; নুন; জখম; নির্জন øান); মহসীন বখ্ত (গাংকোরের নিমতলা; জলরঙ); জাকির তালুকদার (মধ্যমায় পড়ে আছি অসুখ অঙ্গুরী); বায়তুল্লাহ কাদেরী (অন্ধকার; শীতবিষয়ক কবিতা; প্রস্তরের গান; ভবিষ্যত); শাহীন শওকত (চিহ্নমৃত্যু; পরিচয়; জন্ম); জহির হাসান (মৃত হাত; সাইরেন, কোরাস, এতিম বালিকাদের); শামসুল আরেফিন (সমূহ বিলাস); সুহিতা সুলতানা (নিষিদ্ধ হলো যাওয়া; অপেক্ষার উদার জমিন); রেজাউদ্দিন স্টালিন (সন্তানের হাত; বিশাল বিদায়; রক্তিম ধূসর)।
অনঘ এন্টেনা
হাংরী-খ্যাত দেবী রায়ের কবিতা-সরকার মাসুদ।
কবিতা: ব্রতী মুখোপাধ্যায় (চোখের কোণে কলঙ্ক তারং মানুষের কাছে); মানস ভাণ্ডারী (মাকরানায় প্রতিটি বিকেল; ব্যাংকোয়েট); রণজিৎ হালদার (পাপ-পূণ্য; বিশ্বরূপ দর্শন; ফুল মালা); দেবাশিস প্রধান (স্বপ্নের মায়া আছে স্বপ্নটুকু নেই...)
একবিংশ-১০ সেপ্টেম্বর ১৯৯২
মুদ্রক মোতাহার হোসেন, প্যাপিরাস প্রেস ১৪২, আরামবাগ, ঢাকা-১০০০। প্রচ্ছদ জাঁ কক্তো অঙ্কিত ‘প্রেমিক যুগল’ অবলম্বনে রাশেদ মিনহাজ। মূল্য ঃ পনের টাকা ভারতে দশ রুপী। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১২০।
প্রবন্ধ
তরুণ রচনার অগ্নি/তপোধীর ভট্টাচার্য; গুণের কবিতার দোষগুণ ঃ একপর্ব/খোন্দকার আশরাফ হোসেন; কবিতা ও যুক্তির ভাষা/মঈন চৌধুরী
কবিতা
কামরুল হাসান (বিনিদ্র রাতের এ্যান্টেনা); রণক মুহম্মদ রফিক (ভেতর বাহিরে নদী ও পাথর; স্বপ্ন পঙ্ক্তি); বায়তুল্লাহ্ কাদেরী (বয়ঃসন্ধি; তৃতীয় রাস্তার গল্প); সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ (সনেট সপ্তক; ঘাতক; অনিরাম; কাহিনী; অঘ্রান; সুত্রপাত; মুন; রামগরুড়ের ছানা); সরকার মাসুদ (আমি); মোশতাক আহমদ (চড়–ইকে নিবেদিত পংক্তিমালা; কোন অভ্যর্থনা ছিল না; বয়ঃসন্ধি; অলস আবেগেÑ; মঈন চৌধুরী (উপপাদ্য-১; মানুষ বাড়ীর বউ; মৃত্যু-মাধবী); খোন্দকার আশরাফ হোসেন (ঘোড়সওয়ার); আকমল হোসেন নিপু (স্নানঘর); সমীর মজুমদার (এর বেশী এই জন্ম; আমাদের তাপ উত্তাপ; বারম্বার ইচ্ছে হয় বলে বলি; হাড়ে রঙ)
কবিতাবিশ্ব
শীমাস্ হীনির প্রবন্ধÑ অক্লান্ত ক্ষুরধ্বনি : সিলভিয়া প্লাথের কবিতা/রাশেদ মিনহাজ অনুদিত। নাজিম হিকমতের কবিতা/দাউদ আল হাফিজ অনুদিত (বার্লিনের চিঠি; নবম বার্ষিকী চিরকুট কামাল তাহিরকে); ওক্তাবিয়ো পাসের কবিতা/দাউদ আল হাফিজ অনূদিত (কবিকীর্তি, পাথার কৃষ্ণ এবং শ্বেত; কবির সমাধি); এমিলি ডিকিনসনের কবিতা/অনুবাদ ঃ সুব্রত অগাষ্টিন গোমেজ।
কালের চৌকাঠ
‘সুন্দরী ও ঘৃণার ও ঘুঙুর’ সম্পর্কে বায়তুল্লাহ কাদেরীর গ্রন্থানুচিন্তন।
একবিংশ-১১/ মে ১৯৯৩
প্রচ্ছদ রাশেদ মিনহাজ। মুদ্রণ প্যাপিরাস, আরামবাগ, ঢাকা-১০০০। মূল্য বিশ টাকা।
প্রবন্ধ
ঐতিহ্য ও ব্যক্তি প্রতিভা/টি এস এলিঅট (দাউদ আল হাফিজ অনূদিত); জীবনানন্দ দাশ ও ইউরোপের আধুনিক কবিতা/মঞ্জুভাষ মিত্র; আধুনিকতা ও উত্তরাধুনিকতা/ সালাহউদ্দিন আইয়ুব।
কালের চৌকাঠ/গ্রন্থানুচিন্তন
সিলিকন চিপসের কবি/রাশেদ মিনহাজ; স্বপ্নের ছাই থেকে জীবন নির্মাণ/মাসরুর আরেফিন
কবিতাবিশ্ব
পাউল সেলানের কবিতা। আলোচনা ও অনুবাদ খোন্দকার আশরাফ হোসেন (মৃত্যু সঙ্গীত; একটি মোমবাতির সামনে; টেনেব্রেই; ছায়াসুন্দরীর গান; পল এলুয়ার স্মরণে; সংকীর্ণকরণ)
কবিতা
বায়তুল্লাহ কাদেরী (শীতাভ সনেটগুচ্ছ); পাবলো শাহী (সেই ঘুমঘুম ভিখারী আপেলগুলি); কামাল হোসেন (আত্মার আমি ও ঋতুগণ); আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ (ভিক্ষুকের প্রেম; পরবর্তী দুঃখ); রেহমান সিদ্দিক (তিন কণা-চোখ, পাথর; আগুন); শোয়াইব জিবরান (মাংশ রাত; কাঠ চেরাইয়ের শব্দ); কামরুল হাসান (ভুল অঙ্কের বৈঠক; সমিতি সীতার; ভোর); খোন্দকার আশরাফ হোসেন (জিও জিও; বৈশাখ ১৪০০; ট্রিগার হ্যাপি; কবিতেশ্বরী; অনন্তনাগের গল্প); সরকার মাসুদ (সমুদ্র সুলতান; গালাপগাস; ওয়ালরাস; ঘোড়া মাছ; অক্টোবরে শীল মাছের স্বগতোক্তি)।
মুদ্রিত সেমিনার : কবিদের কবিতা ভাবনা
ডোরাকাটা জামা ধর্মানারায়ণ দাশগুপ্ত ও আমাদের কবিতা/সরকার মাসুদ; রূপ স্বরূপ- তৎসহ কবি/জহর সেন মজুমদার; কবিতা বিষয়কঃ ব্যক্তিগত/পার্থ প্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়
একবিংশ-১২/ ডিসেম্বর, ১৯৯৩
প্রচ্ছদ রাশেদ মিনহাজ। মুদ্রণ প্যাপিরাস প্রেস, আরামবাগ, ঢাকা। মূল্য বিশ টাকা। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৪৪
প্রবন্ধ
তোমার সৃষ্টির পথ/আহমদ মিনহাজ; রফিক আজাদের কবিতা/খোন্দকার আশরাফ হোসেন
কবিতা
নান্নু মাহবুব (জেগে থাকে পাথরে ও প্রবালে; পালক বৃত্তান্ত); খলিল মজিদ (নিদালি); হাফিজ রশিদ খান (নদীকেন্দ্রিক) শিমুল আজাদ (বুঝি পল্লবতা নেই; কিভাবে ঘুমিয়ে যাব নিজেকে বিস্মৃত করে); শশী হক (বানানো সম্ভাবনার মৃত্যু); এজাজ ইউসুফী (প্রতœস্মৃতি); কুমার চক্রবর্তী (হাওয়া); পবিত্র বন্দোপাধ্যায় (হিরোসিমা); সরকার মাসুদ (আদা; রসুন; পেঁয়াজ); শাহীন শওকত (প্রতœঅন্ধকার; ভয়; অপেক্ষা; অস্তিত্ব বিলাস; মেঘপর্ব); জহির হাসান (সেই সব অন্ধ বিড়ালিনী; গেঁড়ি); দাউদ আল হাফিজ (বিষ; বৈরী সময়; তীর্থযাত্রী); সৌভিক রেজা (দুটি কবিতা) বায়তুল্লাহ্ কাদেরী (শহরে পাঁচটি রোগ); আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ (শৈশব এবং রাস্তা; অমরতা; মুদ্রাযুগ); রেজাউদ্দিন স্টালিন (বিচার)
কবিতাবিশ্ব
এ্যান সেক্সটনের একগুচ্ছ কবিতা/অনুবাদ: রাজু আলাউদ্দিন (গৃহিনী; আমরা দু’জন; তরুণী; তারাভরা রাত; একটি পুরুষ যখন একটি নারীতে প্রবেশ করে; জেসাসের স্তন্যপান) এ্যান সেক্সটনের কবিতা পৃথিবী/সরকার মাসুদ। এ্যান সেক্সটনের কবিতা/অনুবাদ: খোন্দকার আশরাফ হোসেন (ফেরেশতাদের সাথে সহবাস; তুমি ডাক্তার মার্টিন; আমার জরায়ুর উদযাপন; জেসাস মারা যায়; নীরবতা।
কালের চৌকাঠ/গ্রস্থানুচিন্তন
হাসান হাফিজুর রহমান : জীবন ও সাহিত্য/মিহির মুসাকী
মুদ্রিত সেমিনার/তরুণ কবিদের কবিতা ভাবনা
কবিতা শব্দ ঝড়, মাথা তোলবার শিল্প/শাহীন শওকত; ভূতের উৎকেন্দ্রিক পা, উত্তর আধুনিকতা ও অনুজের কবিতা ভাবনা/মোশতাক আহমদ; শুদ্ধ কবিতার সপক্ষে/কামাল হোসেন।
পত্র-প্রতিক্রিয়া
মোশতাক আহমদ/সরকার মাসুদ/ হাফিজ রশিদ খান/ ফজলুর রহমান বাবুল।
একবিংশ-১৩/ আগষ্ট ১৯৯৪
প্রচ্ছদ রাশেদ মিনহাজ। মুদ্রক প্যাপিরাস প্রেস আরামবাগ, ঢাকা-১০০০। বর্ণ বিন্যাস বার্ণিক ৮/১-২, নীলক্ষেত বাবুপুরা, ঢাকা-১২০৫। মূল্য বিশ টাকা ভারতে পনের রূপী।
প্রবন্ধ
সাহিত্য কি? / টেরি ঈগলটন
কবিতার ভাষা/ অঞ্জন সেন।
কবিতা
কামরুল হাসান (টিয়ানা; প্রতিনায়ক; মুখরতাপ্রিয় মুখমণ্ডলি); খলিল মজিদ (কালের মান্দাস); তুষার গায়েন (পুনর্জন্ম; সৃজন জঙ্গম জলে০; জহির হাসান (রেনু; কুকুর); বায়তুল্লাহ কাদেরী (শাড়ি, তমোহার শাড়ি); আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ্ (ভিক্ষুক চতুর্থ রাতে; শীতে খোলা বাড়ী; মিশ্র রেখা); পাঁশু প্রাপণ (উন্মার্গ; তিতির; প্রতিলিপি); সুহিতা সুলতানা (যাকে দেখবো না বলে; আরব্য রমণীর নিপুণ মুখোশ); কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার (আরেক অভয়ারণ্য; বিজ্ঞাপন); রশীদ হারুন (ঘোর গাথা); রণক মুহম্মদ রফিক (জননী জন্মদাতা উপাখ্যান); রায়হান রাইন (পাখি পার্বণ; গুহাবাস ঃ চিহ্নগুলো); খোন্দকার আশরাফ হোসেন (প্রশ্নের নদী উত্তরবাহিনী; ষ্টিল লাইফ: ক্যাম্পাসে শ্রাবণ; ট্রেডমার্ক অহংকার; চাদরের স্বৈরাচার); মঈন চৌধুরী (মৌরি; জাইগোট এপিটাফ; সমুদ্রকথা); সরকার মাসুদ (গ্রহগুলির মধ্যে; পাখির আত্মকথা; হলুদ আয়তক্ষেত; খেলা; ঝর্ণা মেয়ে) শামসুল আরেফিন (অন্ধকার ঝুল বারান্দায় বিকলাঙ্গ দাঁড়িয়ে থাকা এক খণ্ড ডানা); শাহীন শওকত (উদ্গম; স্বপ্নবধ; অনন্ত জন্মের আগে; দাহ)।
মুদ্রিত সেমিনার
দরোজা খোলার স্থাপত্য/আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ, কবিতার দুর্বোধ্যতা/সরকার মাসুদ
কবিতাবিশ্ব
পাউল সেলানের কবিতা/অনুবাদÑ খোন্দকার আশরাফ হোসেন (প্রার্থনা গান; প্রহরভর্তি তোমার হাত; চিনার গাছ; মানডোরলা; সার্কাস এবং দূর্গের সাথে অপরাহ্ন; লোহার জুতোর মচমচ আওয়াজ; সূর্যবলয়; রাতের রাশ্মি; অ্যাসিসি; তুমি ছিলে)
কালের চৌকাঠ
পশ্চিমের পোষ্টমডানিজম ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তর আধুনিকতা/সালাহউদ্দীন আইয়ুব; ‘বাংলাদেশের কবিতা’: ভেতরে বদলে যাওয়া শিলা/শাহীন শওকত; একটি মতলবী সংকল, হুমায়ুন আজাদ, এবং তস্যতস্য/ইমরান প্রামাণিক: প্রভাহীন দীপ্তি ত্রিপাঠী এবং বাংলাদেশের কবিতা/রাশেদ মিনহাজ; রণজিৎ দাশের কবিতা/সমরেশ দেবনাথ; দ্যূতক্রীড়া, কবিতার সাথে/বায়তুল্লাহ কাদেরী।
একবিংশ-১৪/ ফেব্র“য়ারী ১৯৯৫
প্রচ্ছদ ‘প্রেমিক প্রেমিকা ও খলনায়ক’, রাশেদ মিনহাজ। মুদ্রক প্যাপিরাস প্রেস, আরামবাগ, ঢাকা। মূল্য বিশ টাকা। ভারতে পনের টাকা। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৭৬
পত্র-প্রতিক্রিয়া
শাওন পাথার/মোশতাক আহমদ/তপোধীর ভট্টাচার্য/বালার্ক দাঁ/আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ।
প্রবন্ধ
কবিতায় শহর/খোন্দকার আশরাফ হোসেন
দুই ভিন্ন শিল্পের সাধনসূত্র; স্থাপত্য ও কবিতা/ সফিউল আজম মঞ্জু।
কালের চৌকাঠ/গ্রন্থানুচিন্তন
স্বদেশের মর্ম থেকে উঠে আসা কবি/তুষার গায়েন; হিয়ার ইজ গড্স্ প্রেন্টি! বিচিত্র ক্রীড় (ক)বিসস্বাদÑআসাদ আদ-দ্বীন;
উত্তর-আধুনিকতা বিতর্ক/প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় সাংস্কৃতিক কাঠামোর আধুনিকতা ও আমাদের চিন্তার মেরুদণ্ডহীনতা/ সাজিদুল হক।
কালের চৌকাঠ/প্রতিক্রিয়া
হুমায়ুন আজাদ তস্য তস্য/সালাহউদ্দীন আইয়ুব; হুমায়ুন আজাদের ‘আধুনিক বাঙলা কবিতা (১৯৯৪)’, আহমেদ স্বপন মাহমুদ; ইমরান প্রমাণিকের বক্তব্য।
কবিতা
মুজিব মেহদী (নারী মাছের বিবিধ কানকো অন্যান্য সব্জী আনাজ ও উচ্ছিষ্টভোগীরা); হামিদ রায়হান (হনন হে অন্তর্গত); এবরার হোসেন (হও; স্বচিত্র সনেট; পতঙ্গ); সাজ্জাদ আহমেদ (এলার্ম); তুষার গায়েন (টোটেম ও তন্দ্রা); বায়তুল্লাহ কাদরী (ধানকৃমি; কিছুই সুন্দর নয়; গাড়ি, রেল গাড়ী-সন্ধ্যা); সুহিতা সুলতানা (নির্জন পথের আয়না); রণক মুহম্মদ রফিক (চিরুণীর ছায়াগীরণ; ত্রিনীল মানুষ) জহির হাসান (পিপে); কামরুল হাসান (বিপ্লবী মৃত্যু); শাহীন শওকত (অভিষেক; বন্ধু; পালক; ফেরা); খলিল মজিদ (জল; বন্ধু হেলেনকে); কাজী রব (জোনাকির ভাউচার; মুদ্রার সালোয়ার কামিজ); কুমার চক্রবর্তী (গ্রাম-পরিক্রমা; সময় রেখার মত); সমরেশ দেবনাথ (জল ও নারীধর্ম); আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ) আমার মেয়েকে দেখলো চারটে পৃথিবী; জননী জনয়িত্রী); সৌভিক রেজা (দুটি কবিতা); সরকার মাসুদ (ব্রিজ আর শিরিষ গাছ; পিলার; মানুষের মুখ; মিনার; শিকারের খোঁজে; তাপস গায়েন (তিনটি পদ্য); খোন্দকার আশরাফ হোসেন (নুরজাহানকে নিবেদিত কবিতা); দাউদ আল হাফিজ (রমা দে-র জন্য শোক); রোকনুজ্জামান রবার্ট (জেনেসিস); মঈন চৌধুরী (ভোমর; করম্চা গাছ); শামসুল আরেফিন (মাটির ধারণা)।
রঙিন আয়োজন
সদানন্দের পদাবলী/রাশেদ মিনহাজ
গ্রন্থ পরিচিতি
এক নৌকা ধানশীষ, কবিতার চাষাবাদ/খলিল মজিদ
অনঘ এন্টেনা
পশ্চিম বাংলার কবিতা- ধ্বংসকালীন কবিতা আন্দোলন/ইস্তাহার; পবিত্র মুখোপাধ্যায় ইব্লিসের আত্মদর্শন; প্রভাত চৌধুরী (আমি মেফিসটোফেলিস শয়তানের দূত); কানন কুমার ভৌমিক (প্রজাপতি বনাম খলিলুল্লার সৃজনবাদ)।
একবিংশ-১৫/ নভেম্বর ১৯৯৫
প্রচ্ছদ জে এইচ মর্টিমার অঙ্কিত স্কেচ (১৭৮৫)ঃ শেক্সপীয়রের মুখচ্ছবি। বর্ণ বিন্যাস বার্ণিক, মুদ্রণ প্যাপিরাস প্রেস আরামবাগ, ঢাকা। মুল্যঃ বাংলাদেশ ২৫ টাকা ভারতে ২০ রূপী।
স্মরণ
জন কীট্স, সের্গেই ইয়েসেনিন, ষ্টিফেন স্পেন্ডার, শক্তি চট্টোপাধ্যায়
প্রবন্ধ
এডওয়ার্ড সাইদ ও উত্তর-ঔপনিবেশিক কাউন্টার ডিস্কোর্স/ফকরুল আলম; রোমান্টিক কবিতার স্বরূপ/খোন্দকার আশরাফ হোসেন; চেতনার ক্ষুরধ্বনি অথবা পথে-পাওয়া আলো/আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ।
কবিতা সপ্তপর্ণা
টোকন ঠাকুর (শত সপ্তাহের পদাবলী); হাফিজ রশিদ খান (আদিবাসী কবিতাগুচ্ছ); খলিল মজিদ (ধানসত্য আবু); সাঈদ ওবায়দুল্লাহ (ঘরের এক কণা); মিহির মুসাকী (নগর কীর্তন)
কবিতা/গুচ্ছ কবিতা
শামসুল আরেফিন (বৃত্ত; মেলা; অবমুক্তি; ধর্ম); শশী হক (সবুজের পরিচয়; পটপরিবর্তন; চোখ কান বন্ধ); তুষার গায়েন (কুয়াডাঙ্গা ছেড়ে যায় বাস; নীলভব হ্রদ); সুহিতা সুলতানা (আলো ছায়ার যুগলবন্দী); কামরুল হাসান (নিবিড় সম্পাদ্য; অতিপ্রিয় অতিথি পাখিরা; কাঠস্তুপে আর কোন দেবীকে); পাঁশু প্রাপণ (আমি আছি তৃণ-মন্ত্রে, আমি আছি শরে; আমি এক উপগ্রহ, গ্রহ নেই যার); সৌভিক রেজা (দুটি কবিতা); মুজিব মেহদী (অবৈতনিক কবিতাগুচ্ছ); খোন্দকার আশরাফ হোসেন (আগুন পানি মাটি হাওয়া); সরকার মাসুদ (এক গুচ্ছ ভালোবাসার কবিতা); জাহাঙ্গীর কবির (অকথিত কবিতা); মেহেদী মাহমুদ (অনন্ত শরীরবিহীনতায়); মইনুল আবেদীন (মধুকরী; সন্দর্শন; ছায়াপুরাণ); আশরাফ রোকন (বিন্দু বিন্দু পরিতাপ);।
সনেট সাইকেল
বর্ষালি চতুর্দশী/বায়তুল্লাহ কাদেরী
ধারাবাহিক অনুবাদ
টেলি ঈগলটন/সাহিত্যতত্ত্ব : পরিচয়Ñ ইংরেজির উত্থান।
কবিতাবিশ্ব
স্বীকারোক্তিমূলক কবিতার সাহসী সর্বনাম/মাহবুব মাসুম; সিলভিয়া প্লাথের কবিতা/ভাষান্তরঃ মাহবুব মাসুম (ঝুলন্ত মানুষ; রানার; উলম্ব আমি; মৃত-ভুমিষ্ঠ; আরশি); শেমাস হীনির কবিতা বুখের ভেতর গোপন স্বদেশ/খোন্দকার আশরাফ হোসেন (দ্য টলান্ড ম্যঅন; দ্য গ্রাউবল ম্যান; শান্তি)।
কালের চৌকাঠ
পত্রিকা আলোচনা/দুই হাতে কালের মন্দিরাঃ ছোট কাগজের পৃথিবী/তুষার গায়েন (আলোচিত কাগজÑ লিরিক; দ্রষ্টব্য; নিসর্গ)
গ্রন্থানুচিন্তন
কাঠের ঘোড়ার ডুব সাঁতার/খলিল মজিদ।
একবিংশ ১৬/ নভেম্বর ১৯৯৬ (দশবছরপূর্তি সংখ্যা)
প্রচ্ছদ রাশেদ মিনহাজ, বর্ণবিন্যাস বার্নিক, মূল্য তিরিশ টাকা
প্রবন্ধ
পাঠকপ্রতিক্রিয়াবাদ, তপোধীর ভট্টাচার্য, বাংলাদেশের সা¤প্রতিক কবিতা, তুষার গায়েন
কবিতা
খলিল মজিদ, টোকন ঠাকুর
একবিংশ নবাগত
লিটন ওয়ারেস, কামরুজ্জামান কামু, মোশতাক আহমাদ দীন, মামুন নেসার য়াহমাদ
ধারাবাহিক অনুবাদ
টেরি ঈগলটন/সাহিত্যতত্ত্ব : পরিচয়, ইংরেজির উত্থান
আসমানী কবিতাগুচ্ছ
মাসুদ খান/ বহুদিন পর আবার প্রেমের কবিতা, রণক মুহম্মদ রফিক/ প্রতিবিশ্ব, তুষার গায়েন/আদি দর্শন
তরুণ কবিদের কবিতাভাবনা
হামিদ রায়হান/কবিতার বাঁকবদল : আজকের প্রেক্ষিত
গুচ্ছকবিতা
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ/গানের বাহিরে কবিতাগুচ্ছ
কামরুল হাসান, হাফিজ রশিদ খান, মুজিব মেহেদী, বায়তুল্লাহ কাদেরী, হামিদ রায়হান, খোন্দকার আশরাফ হোসেন
অনঘ এন্টেনা
ভ্রামণিক চোখ/রাশেদ মিনহাজ, ক. যে ‘ওয়েস্টল্যান্ড’ টি এস এলিয়ট লিখেননি, খ. উপদ্রুত বাংলাদেশ ও ইংরেজ কবি
ক্রোড়পত্র
বাঙালির দ্বিতীয় ভাষা আন্দোলন এবং বরাক উপত্যকার কবিতা, বাংলা সাহিত্যের তৃতীয় ভুবন/ বিজিত কুমার ভট্টাচার্য, বাঙালির আরেক ভাষা আন্দোলন ১৯শে মে ১৯৬১/ ডাঃ সুজিত চৌধুরী, ১৯মে ১৯৬১, সেদিন যা ঘটেছিল/ পরিতোষ পাল চৌধুরী, বরাক উপত্যকার কবিতা: ‘অতন্দ্র’ গোষ্ঠি/ তপোধীর ভট্টাচার্য
কবিতা
বিজিত কুমার ভট্টাচার্য/দিলীপকান্তি লস্কর/শক্তিপদ ব্রক্ষ্মচারী/করুণাসিন্ধু দে/উদয়ন ঘোষ/ বিমল চৌধুরী/ তপোধীর ভট্টাচার্য/রুচিরা শ্যাম/রণজিৎ দাশ
একবিংশ ১৭/ জুলাই ১৯৯৭
প্রবন্ধ
অতৃপ্ত এক নির্মাতা/ আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ, চেতনার নবধ্বনি/ তপোধীর ভট্টাচার্য, অরিয়েন্টালিজম এবং অতঃপর/ খোন্দকার আশরাফ হোসেন, ফুকোর মানব/ মঈন চৌধুরী
কবিতা
টোকন ঠাকুর, বায়তুল্লাহ কাদেরী, খলিল মজিদ, আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ, আশরাফ রোকন
ধারাবাহিক অনুবাদ
টেরি ঈগলটন, সাহিত্যতত্ত্ব : পরিচয়, অবভাসবাদ, ভাষ্যবিদ্যা ও পরিগ্রহণতত্ত্ব (চযবহড়সবহড়ষড়মু, ঐবৎসবহবঁঃরপং ধহফ জবপবঢ়ঃরড়হ ঃযবড়ৎু)
কবিতা
মাসুদ খান, শাহীন শওকত, মাহবুব মাসুম, মুজিব মেহদী, নান্নু মাহবুব
কবিতা
সৈয়দ হাসমত জালাল, সরকার মাসুদ, অভিজিৎ পাল চৌধুরী, মাঈন উদ্দিন জাহেদ, শামীম সিদ্দীকী
এই প্রজন্মের চোখ
জীবনানন্দ দাশের ‘হায় চিল’/ খলিল মজিদ
কবিতা
হাফিজ রশিদ খান, তুষার গায়েন, কামরুল হাসান, মেহেদী মাহমুদ চৌধুরী, রায়হান রাইন, হামিদ রায়হান
তরুণ কবিদের কবিতাভাবনা
কবিতার ভাষা : আজকের প্রেক্ষিত/ হামিদ রায়হান, উত্তর-ঔপনিবেশিক সাংস্কৃতিক চেতনা ও আজকের বাঙলা কবিতা/ হাফিজ রশিদ খান
কালের চৌকাঠ
গ্রন্থানুচিন্তন, রাশেদ মিনহাজ: সেলাই কলরর শব্দে চিত্রিত রোদন, খোন্দকার আশরাফ হোসেন: এলিয়ট-ভাবুকদের জন্য নতুন উস্কানি, সালমা আজিজ: তুষার গায়েনের কবিতা: রৌদ্রবেগরতিকল্পযোগ, রাশেদ মিনহাজ: একটি কালোপযোগী প্রকাশনা : সৃষ্টির সিঁড়ি, সালমা আজিজ: প্রান্তবাসীদের নিয়ে কবিতা
অনঘ এন্টেনা
আগরতলার কবিতা, শঙ্খপল্লব আদিত্য; সমরজিৎ সিংহ; প্রবুদ্ধসুন্দর কর; অশোক দেব; সুবিনয় দাশ
একবিংশ ১৮/ মার্চ ১৯৯৯
প্রবন্ধ
কবিতা ও চিত্রকলা/ দেওয়ান মিজান, বিনির্মাণের তত্ত্বরূপ/ তপোধীর ভট্টাচার্য, ইউরো- মার্কিন মানস ও শিল্পীর সত্তার সংকট/ ওলে সোয়িংকা
ধারাবাহিক অনুবাদ
টেরি ইগলটন-সাহিত্যতত্ত্ব পরিচয়
কবিতা
সরকার মাসুদ, রহমান হেনরী, রায়হান রাইন, তোফায়েল তফাজ্জল, মৃধা আলাউদ্দিন
কবিতা
মাসুদ খান, দাউদ আল হাফিজ, শামীম পারভেজ, শাহরিয়ার ইমতিয়াজ, মুক্তি মণ্ডল, শৈলজানন্দ রায়
অনঘ এন্টেনা
জয় গোস্বামীর সাথে সাক্ষাৎকার; মাথার নিচে বসুন্ধরা, দু-পায়ে কৈলাস
কবিতাবিশ্ব
কবি বাশো/ দাউদ আল হাফিজ, ইয়র্কশায়ার রিপারের ব্যালাড/ খোন্দকার আশরাফ হোসেন
কবিতা
কামরুল হাসান, মুজিব মেহদী, আশরাফ রোকন, আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
কবিতা
জাহিদ হায়দার, খোন্দকার আশরাফ হোসেন, খলিল মজিদ
ক্রোড়পত্র ঃ আবুল হাসান বিশ্বজিৎ ঘোষÑ আবুল হাসান : জীবনবোধ ও কাব্যসাধনা, আবুল হাসানের অপ্রকাশিত নাটকÑ পরিস্থিতি
একবিংশ ১৯/ আগষ্ট ২০০০ (নজরুল-জীবনানন্দ সংখ্যা)
মোহাম্মদ রফিকÑ একই সিঁড়ির দুই পৈঠা; রাজিয়া খানÑ দুই কবি; মুসতাফা সায়ীদÑ কবি ও কবিকৃতি: নজরুল ও জীবনানন্দ; সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীÑ দূরের আবার কাছেরও, কাজী নজরুল ইসলাম ও জীবনানন্দ দাশ; নজরুল: জীবনপঞ্জি; জীবনানন্দ জীবনপঞ্জি, অমিতাভ চক্রবর্তিÑ নজরুলের কৈফিয়ত: উচ্চসাহিত্যবাদের কাউন্টারÑ ডিসকোর্স; আবু হেনা আব্দুল আওয়ালÑ নজরুলের কাব্যচিন্তা; মাহমুদ রশীদÑ বিদ্রোহী : একটি পাঠ; সৌমিত্র শেখরÑ চিঠিপত্রে নজরুলের ভাবনা ও তাঁর ব্যক্তিমানস; সুব্রত কুমার দাসÑ নজরুল রচনায় ইউরোপীয় সাহিত্যের উল্লেখ; তপোধীর ভট্টাচার্যÑ জীবনানন্দ ও আদিকল্প : শত জলঝর্ণার ধ্বনি; ফকরুল আলমÑ চড়বসং ড়ভ ঔরনধহধহধহফধ উধং; অঞ্জন সেনÑ চেতনার অন্তঃশীল আলো: মহাজিজ্ঞাসা, সঞ্জীব দেবলস্করÑ ধানসিড়ি থেকে জাটিঙ্গা: একটি ব্যক্তিগত প্রতিবেদন; কুয়াত ইল ইসলামÑ এ পৃথিবী একবার পায় তারে; গালিব আহসান খানÑ জীবনানন্দ কাব্যে অস্তিত্ববাদ প্রসঙ্গে; তুষার গায়েনÑ কে এই শক্তি: প্রোষিতভর্তৃকা; শিশির ভট্টাচার্য্যÑ অনূদিত বনলতা: একটি অর্থতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, রামবহাল তেওয়ারীÑ কাজী নজরুল ইসলাম ও জীবনানন্দ দাশের ছন্দ ও ছন্দভাবনা
একবিংশ ২০/ মার্চ ২০০১
প্রবন্ধ
ওক্তাবিয়ো পাসÑ কবিতা ও মুক্তবাজার, কুয়াত ইল ইসলামÑ নোতুন কবিতা
কবিতাগুচ্ছ
তুষার গায়েন/সৌভিক রেজা/বায়তুল্লাহ কাদেরী/জাহিদ হায়দার/সুনীল আচার্য/কামরুল হাসান/দাউদ আল হাফিজÑ মোস্তাক আহমাদ দীন/রাজেন্দ্র ভাণ্ডারী
ধারাবাহিক অনুবাদ
টেরি ঈগলটন-সাহিত্যতত্ত্ব: পরিচয়, কাঠামোবাদ ও চিহ্নবিদ্যা (ঝঃৎঁপঃঁৎধষরংস ধহফ ঝবসরড়ঃরপং)
একবিংশে নবাগত কবিকুল
আনন্দ রোজারিও/রাসেল আশেকী/সেঁজুতি বড়–য়া/আর্যনীল মুখোপাধ্যায়/সৈয়দ শরীফ/আহাম্মেদ কবীর/নকীব হুদা/সারোয়ার সবুজ
ব্যাকুল পার্থিবা
খোন্দকার আশরাফ হোসেনÑ কোরিয়ার কবিতা ‘সিজো’
রঙিন আয়োজনÑ রশিদ হারুন/ডিমবন্দনা
কবিতাগুচ্ছ
মঈন চৌধুরী/আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ/রণক মুহম্মদ রফিক/দেওয়ান মিজান
অনুবাদ
টেড হিউয়েজের কাকÑ খোন্দকার আশরাফ হোসেন
কালের চৌকাঠ
বুদ্ধদেব বসু : সুন্দরের ধেয়ান না বিবরপ্রয়াণ? Ñইমরান প্রামাণিক
গ্রন্থানুচিন্তন
পাঠকের অপেক্ষায় তিনজন কবিÑ রাশেদ মিনহাজ
ক্রোড়পত্র
অমিয় চক্রবর্তী : শতবর্ষস্মরণ
বেগম আকতার কামাল-অমিয় চক্রবর্তীর কবিতার প্রাসঙ্গিকতা সৌভিক রেজা-অমিয় চক্রবর্তী : একটি অভিতপ্ত আর্তি; অমিয় চক্রবর্তী : জীবনপঞ্জি;
অমিয় চক্রবর্তী-কেন লিখি; অমিয় চক্রবর্তী সম্পর্কে চূর্ণ মন্তব্য; অঞ্জন সেনÑ অমিয় চক্রবর্তী : শতবর্ষের স্মরণ; অমিয় চক্রবর্তীর কবিতা : পুর্নপাঠ; অঞ্জন সেনকে অমিয় চক্রবর্তীর পত্র লেখা অমিয় চক্রবর্তীর সাক্ষাৎকার; আব্দুল মান্নান সৈয়দÑ অমিয় চক্রবর্তী : ঈশ্বরিত মানুষের কথা।
একবিংশ ২১/ মে ২০০২
প্রবন্ধ
খোন্দকার আশরাফ হোসেনÑ প্র“ফ্রকের পুত্রগণ অথবা বাংলা কবিতার নির্বিণœ পুরুষ; এম.এম.আকাশÑ উত্তর-আধুনিকতাবাদ ও মার্কসবাদ; মাসুদ খানÑ কবিতার বাইরে এসে দাঁড়িয়ে
ধারাবাহিক অনুবাদ
টেরি ঈগলটনÑ সাহিত্যতত্ত্ব : পরিচয়, উত্তর-কাঠামোবাদ (চড়ংঃ-ঝঃৎঁপঃঁৎধষরংস)
কবিতা
বায়তুল্লাহ কাদেরী/খোন্দকার নিপন/সন্তর্পণ ভৌমিক/আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ/কামরুল হাসান/মোস্তাক আহমাদ দীন/সুনীল আচার্য/সরকার মাসুদ/ফেরদৌস নাহার/তুষার গায়েন/কামরুল ইসলাম/রাসেল আশেকী
কবিতাবিশ্ব
সরকার মাসুদÑ ওয়েষ্ট-ইণ্ডিয়ান সংস্কৃতি ও ডেরেক ওয়ালকটের ‘শব্দসফলতা’
কালে চৌকাঠ
নাজমা আক্তার-আন্তঃমহাদেশীয় চারুকলা প্রদর্শনী : নান্দনিকতার উৎস, ইমরান প্রামাণিকÑ স্মৃতির জলযান : সায়ীদের সফরনামা
কবিতা
খোন্দকার আশরাফ হোসেন/সৌভিক রেজা, সেঁজুতি বড়–য়া/পাঁশু প্রাপণ/জওয়াহের হোসেন মৃধা আলাউদ্দিন/জুনান নাশিত/ফারহান ইশরাক
ক্রোড়পত্র : সুধীন্দ্রনাথ জন্মশতবর্ষ
বেগম আকতার কামালÑ সুধীন্দ্রনাথের সন্ধানে; সুধীন্দ্রনাথ দত্তÑ আত্মজীবনীর খসড়া, সুরজিৎ দাশগুপ্তÑ আমার স্মৃতিতে সুধীন্দ্রনাথ; মুসতাফা সায়ীদÑ সুধীন্দ্রনাথ দত্তের গদ্যচর্চা: ক্ষয়ক্ষতি ও উপার্জন; সিদ্দিকা মাহমুদাÑ শব্দধানুকী সুধীন্দ্রনাথ; তপনজ্যোতি বড়–য়াÑ স্থপতি সুধীন্দ্রনাথ: লিরিকের আবেগমনন: প্রভাতকুমার দাসÑ সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: জীবনীপঞ্জি ও গ্রন্থপঞ্জি; সৌমিত্র শেখরÑ অর্কেস্ট্রা: ‘এখনও সুন্দরা’
সংযোজন
সুব্রত অগাষ্টিন গোমেজের সনেট-পরম্পরা ‘পুলিপোলাও’
একবিংশ ২২, নভেম্বর ২০০৩
প্রবন্ধ
মুসতাফা সায়ীদÑ শিল্পসাহিত্যে আধুনিকতার তত্ত্ব; তপোধীর ভট্টাচার্যÑ জীবনানন্দ, আধুনিকতা পেরিয়ে; শিশির ভট্টাচার্য্যÑ সেমিওলজি ও ঈশ্বর; সৌমিত্র শেখরÑ কবিতায় স্বাধীনতা; ‘কি কহিলি, বাসন্তি?’ খোন্দকার আশরাফ হোসেনÑ পোস্টমর্ডার্ন লীলালাস্য ও বাংলা কবিতা
কবিতা : একবিংশে নবাগত কবিকুল
অনিদ্য রহমান, খালেদ রাজ্জাক, আহমদ সায়েম, জাকির জাফরান, পলাশ দত্ত, গৌতম দাশগুপ্ত, ফেরদৌস মাহমুদ, কাজী জহিরুল ইসলাম
ধারাবাহিক অনুবাদ
টেরি ঈগলটন/সাহিত্যতত্ত্ব : পরিচয়, মনোসমীক্ষণ
কবিতা
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ/ফারহান ইশরাক/বায়তুল্লাহ কাদেরী/মোস্তাক আহমাদ দীন/মঈন চৌধুরী
কবিতাবিশ্ব
কুমার চক্রবর্তীÑ হার্ট ক্রেন : ‘বাক্কাসের মতো আছে জয় করবার অধিকার’
হার্ট ক্রেনের কবিতাÑ অনুবাদ : খোন্দকার আশরাফ হোসেন
কবিতা
কামরুল হাসান/ খোন্দকার আশরাফ হোসেন
কালের চৌকাঠ
মুসতাফা সায়ীদÑ জসীম উদ্দীন ও বাংলায় সাহিত্যচর্চার সমস্যা
গ্রন্থানুচিন্তন
সুব্রত অগাস্টিন গোমেজÑ হাড়িতে সাপের চক্র দেখেও স্বপ্ন মানে না মানা;
নিতাই জানা, ইদংপ্রত্যয়Ñ রাশেদ মিনহাজÑ নদীবর্তী দুই কবি, কতটা দূরের; রাশেদ মিনহাজÑ কমলায় নৃত্য করঙ
একবিংশ ২৩, ফেব্র“য়ারী ২০০৮
প্রবন্ধ
তপোধীর ভট্টাচার্যÑ কবিতা, প্রচ্ছন্ন গভীরতম, মোহাম্মদ আজমÑ কবি ও কবিতার সন্ধানে ‘নিতাইপুর’, শিশির ভট্টাচার্য্যÑ গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদ: অক্সফোর্ড গাড়ি ও বেয়াড়া এক ঘোড়ার কাহিনী, খোন্দকার আশরাফ হোসেনÑ এই যে সোনার ধান : ২০০০-এর কবিতা
কবিতা
কামরুল হাসান, মোস্তাক আহমদ দীন, সিদ্ধার্থ শংকর ধর, রণক রফিক
ধারাবাহিক অনুবাদ
টেরি ঈগলটনÑ পবিত্র সন্ত্রাস
কবিতা
খোন্দকার আশরাফ হোসেন, ঝর্না রহমান, রাজু আহমেদ মামুন, বায়তুল্লাহ কাদেরী
তত্ত্বতালাশ
ফ্রেডরিক জেমসনÑ তত্ত্বের রাজনীতি : উত্তরাধুনিকবাদ বিতর্কে আদর্শিক অবস্থান
কবিতাবিশ্ব
কাজল বন্দোপাধ্যায়Ñক্রিস্টোফার ওকিবো : বাংলাদেশে, পৃথিবীতে আলো ক্রিস্টোফার ওকিবোর কবিতাÑ অনুবাদ কাজল বন্দোপাধ্যায়
কবিতা
কাশীনাথ রায়, শরীফ শাহরিয়ার, মঈন চৌধুরী
উত্তর আধুনিক চাতালে
অমিতাভ চক্রবর্তীÑ উত্তর আধুনিকতা: সহজপাঠ; খোন্দকার আশরাফ হোসেনÑ উত্তর আধুনিক চাতালে; উৎপল বসাকÑ অঞ্জন সেন-এর কাব্যভাষা সন্ধানে
একবিংশ ২৪/ ফেব্র“য়ারী ২০০৯ (বুদ্ধদেব বসু জন্মশতবর্ষ)
কবিতা
কামরুল ইসলাম, সিদ্ধার্থশংকর ধর, রাজু আহমেদ, হাসানআল আব্দুল্লাহ, কামরুল হাসান, রেহমান সিদ্দিক, শরীফ শাহরিয়ার, সজল সমুদ্র, মাদল হাসান, অনন্ত সুজন, সোহেল হাসান গালিব, রুদ্র শায়ক
প্রবন্ধ
খোন্দকার আশরাফ হোসেনÑ আধুনিকবাদ, জি এম হাইডÑ আধুনিকবাদ ও গীতিকবিতা: নগর-কাব্য-ভাষান্তর: জাকির মজুমদার
বুদ্ধদেব বসু-জন্মশতবর্ষ, আব্দুল মান্নান সৈয়দÑ‘মুখবন্ধে মৃত্যু, পরিণামে পুনরুজ্জীবন’; খোন্দকার আশরাফ হোসেনÑ আত্মতার বন্দীই মূলত; আইনুল মাজেদীনÑ আমার বুদ্ধদেব বসু; কামরুল ইসলামÑ বুদ্ধদেব বসু : বিশুদ্ধ শিল্পের উপাসক; মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়Ñ চেনাছকের বাইরে: বুদ্ধদেব বসুর ‘রূপকথার মতো’ গল্প ও কবিতা; মাহবুব সাদিকÑ বুদ্ধদেব বসুর সংক্রান্তি: কালের রূপক; প্রভাতকুমার দাসÑ বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত প্রগতি ও কবিতা; প্রভাতকুমার দাস-বুদ্ধদেব বসু : জীবন ও গ্রন্থপঞ্জি; কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়-একটি সমালোচনার সমালোচনা : বুদ্ধদেব বসুর ‘প্রগতি’-সংযোগ; মুসতাফা সায়ীদÑ বুদ্ধদেব বসুর সাথে বামপন্থীদের ঝগড়া; বিশ্বজিৎ ঘোষÑ বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাসে ঢাকা শহর।
কবিতা বিশ্ব
মার্কিন কবিতাসন্ধ্যা : ছোটো কবিতার উৎসবÑ হাসানআল আব্দুল্লাহ
তত্ত্ববিশ্ব
হাসান আল যায়েদÑ ফুকো, সাইদ এবং ক্ষমতা/প্রতিরোধ-অনুবাদ : আহমেদ জায়েদ চৌধুরী রনি।
প্রকাশিত সংখ্যার পরিচিতি ও পূর্ণাঙ্গ বিষয়সূচী
একবিংশ-১/ নভেম্বর ১৯৮৫
সহকারী সম্পাদক : বদরুল হায়দার/প্রচ্ছদ : মাহফুজ শাহীন/নামলিপি : সিদ্ধার্থ তালুকদার/মুদ্রণ প্যাপিরাস প্রেস, ১৫৯ আরামবাগ, ঢাকা/মূল্য ৮ টাকা, ভারতে ৫ রূপী। লেখক কাগজে মুদ্রিত। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৯২।
প্রবন্ধ
শিল্পের প্রকাশ ও তার ভাষা/সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম; ভিন্ন শিল্পের প্রয়োগসূত্রে কবিতা/সাজ্জাদ শরীফ; ‘দুই বিঘা জমি’ : ঈদিপাস গূঢ়ৈষা/সৈয়দ তারিক
দীর্ঘ কবিতা
খোন্দকার আশরাফ হোসেন/নোটনের জন্যে শোক; ইকবাল আজিজ/ভবিষ্যৎ; রেজাউদ্দিন স্টালিন/চিরঞ্জীব চিঠি
এই প্রজন্মের চোখ
শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ সম্পর্কে আলোচনা : সৈয়দ তারিক, আহমদ মাযহার, আব্দুল্লাহ সাদী
কবিতা
তুষার দাশ (খনন), রানু ইসলাম (চলেছে ত্রিকাল রেল), শান্তনু চৌধুরী (তিনটে ছায়ার নীচে জীবন) মোহাম্মদ কামাল (সূর্য কি ফেরে না), মোহাম্মদ সাদিক (শ্মশানে হরিশচন্দ্র), ফরিদ কবির (জীবন যাপন), বদরুল হায়দার (অতৃপ্ত শব্দাবলী) ফখরে আলম (জন্মঋণ), বদরুজ্জামান নির্জন (কাঠের পাখি মানুষের)
একবিংশ-২/আগষ্ট ১৯৮৬
সহকারী সম্পাদক : বদরুল হায়দার/মুদ্রণ ভূঁইয়া গ্র“প অব পাবলিকেশন্স ১৯২ ফকিরাপুল, ঢাকা-২/ মূল্য ১০ টাকা ভারতে ৫ রূপী। লেখক কাগজে মুদ্রিত। পৃষ্ঠা সংখ্যা-১১০।
প্রবন্ধ
আধুনিক সাহিত্য ও লোক ঐতিহ্য/সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
শামসুর রাহমান ঃ প্রতিনায়কের পদশব্দ/রাশেদ মিনহাজ
এই প্রজন্মের চোখ
রফিক আজাদের ‘ভাত দে হারামজাদা’ সম্পর্কে আলোচনাÑ শহিদুল আলম, আহমাদ মাযহার, রাশেদ মিনহাজ
কবিতা
গৌরাঙ্গ মোহান্ত (ঋত্বিক ঘোটক), বদরুল হায়দার (নদী ও নারী), রানু ইসলাম (মোমবাতী) আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ (ভিক্ষুক এসেছি ভিক্ষুক), মাসুদ খান (হাইবারনেশন), সিরাজুল ইসলাম (জলের পাথর), আহমাদ মাযহার (কোনো এক আত্মপ্রেমিকের প্রতি), রেজাউদ্দিন স্টালিন (রৌরব থেকে), নাসিমা সুলতানা (যে কবিতা লিখিনি; তুমি নার্সিসাস)
ব্যাকুল পার্থিবা
হুমায়ন আজাদের প্রবন্ধ ‘শিল্পকলার বিমানবিকীকরণ’ সম্পর্কে প্রশ্নচিহ্নিত আলোচনা- - গাসেৎ- আজাদ: বিলম্বিত বিকীরণ/সৈয়দ তারিক।
রবীন্দ্র-কবিতার প্রায়োগিক তাৎপর্য বিষয়ে গ্রন্থানুচিন্তনÑ রাষ্ট্রনৈতিক চিন্তায় রবীন্দ্রনাথ: দ্বন্দ্ব ও দ্বন্দ্বনিরসনের সূত্র/আল্ আজাদ নোমান
গুচ্ছ কবিতা
জাহিদ হায়দার (তার নাম পবিত্র অন্যায়; সর্বগ্রাসী গোলাপ; প্রতিবেশীর সমস্যা) ইকবাল আজিজ (মনোজমি ওড়ে আর পড়ে; সিঁড়িতে অন্ধকার; কেনো তুমি বলো বারবার; পড়ে থাকলো রাজ্য) খোন্দকার আশরাফ হোসেন (আমার ঘাতক; হনন; জলের সোনাটা)
বিদেশ বৈভব
লোরকার কবিতা, অনু: খোন্দকার আশরাফ হোসেন (ওয়েল্ট হুইটম্যানের প্রতি)/ হাইনরিশ হাইনের কবিতা, অনু: সৈয়দ তারিক (সাইকী; বৃক্ষ; ধীবর যুবতীকে; রূপক; বিপর্যন্ত আবহাওয়া, সূর্য; তরঙ্গ; গাথা; প্রসূন; শতদল)/গাব্রিয়েলা মিস্ত্রাÍে কবিতা, অনু: সলিম উল্লাহ খান (ঈশ্বরের অভিপ্রায়)।
অনঘ এন্টেনা
(পশ্চিমবাংলার তরুণ-কবিতা বিষয়ক বিভাগ)
অপ্রতিরোধ্য আট : অসন্দিগ্ধ পূর্বাভাষ/অজিত রায়;
সংযম পালের গুচ্ছ কবিতা (শামুকের দিন; দাঁড়ানো পাখি; রাত; খরা)
একবিংশ-৩/ মে, ১৯৮৭
সহকারী সম্পাদক, বদরুল হায়দার/প্রচ্ছদ মাহফুজ শাহীন/নামলিপি সিদ্ধার্থ তালকুদার/মুদ্রণ প্যাপিরাস প্রেস, ১৫৯ আরামবাগ, ঢাকা। মূল্য ১০ টাকা ভারতে ৫ রূপী। লেখক কাগজে মুদ্রিত। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৫২।
প্রবন্ধ
মার্কসবাদী নন্দনতত্ত্ব ও সাহিত্য বিচার/সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
শিল্পকলা: শ্লীল-অশ্লীলের ভেদরেখা/জিয়াউল করিম
এই প্রজন্মের চোখ
নির্মলেন্দু গুণের ‘হুলিয়া’ সম্পর্কে আলোচনাÑ গৌরাঙ্গ মোহান্ত/আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ/হেলাল মহিউদ্দীন/সরকার মাসুদ
কালের চৌকাঠ
আল মাহমুদ: একজন অশ্বারোহীর পতন; মধুকবির উত্তরসূরীর যৌথগ্রন্থ; আলোচনা দুটো লিখেছেন, আলম খোরশেদ। কবিতায় ‘নব্য জসীমিজম’Ñরাশেদ মিনহাজের কলমে সা¤প্রতিক কবিতার ব্যবচ্ছেদ।
দীর্ঘ কবিতা
রাজভাগ্য!/মোহাম্মদ সাদিক
কবিতা
দারা মাহমুদ (আর্যসত্য), সরকার মাসুদ (ভালুক), বিজয় রায় (স্বরিত স্বপ্নের মুখোমুখি), রেহমান সিদ্দিক (আমার জন্মান্ধ ঢাকা), বাহার রহমান (বেশ্যা অথবা লালা), হেলাল মহিউদ্দীন (তুলে নাও আপেল, ডিস্কার্ডিয়া), মারুফ রায়হান (টেলিপ্যাথি), তুষার দাশ (আশীর্বাদ নয়, বরাভয়), আহমেদ নকীব (কবিতার ঘরদোর), রেজাউদ্দিন স্টালিন (ঘরে ফেরার কাল এলো), ইকবাল আজিজ (যে মেয়েটি বিতৃষ্ণায় মরে গেছে), মাহবুব বারী (সন্ন্যাস)
গুচ্ছ কবিতা
বদরুল হায়দার (সুরাপাত্রে ধ্বংসলীলা ১,২,৩) সুনীল শর্মাচার্য (পুনরায় তৃষ্ণা জাগে; ফাজেলপুর; পুনরায় অ্যামিবা হতে পারো; যাপন; হেমতাবাদ; রাজকর্ষণ; শূদ্র পূর্ণিমার রাত) আযাদ নোমান (অধিবর্ষ; মহাকর্ষ; স্থাপত্য; প্রয়াণ; ভারবাহী) খোন্দকার আশরাফ হোসেন (একজন মৃতের উক্তি; কৌন্ হ্যায়! বাতাস; শ্রাবণ-যাপন)
বিদেশ বৈভব
হানস মাগনুস এনৎসেন্সবার্গার-এর কবিতা/শামসুল ইসলাম খান (শান্তি সম্মেলন); টেড হিউয়েজের কবিতা/খোন্দকার আশরাফ হোসেন (প্রেমের গান, বেয়নেট চার্জ, ছেলেখেলা, দুঃখের গান); আফ্রিকার কবিতা/শামসুল ফয়েজ (জাকস র্যাবেমনজোরা, ফ্লাভিয়া রাভো) সা¤প্রতিক ধারার প্যালেষ্টাইনী কবিতা/নূরুল করিম নাসিম (মোহাম্মদ দারবিশ; ফাদওয়া তাকওয়ান; ইউসুফ হামদান; সালিম জাবরান)
অনঘ এন্টেনা
জয় গোস্বামী: সুতোর দু’ধারে কবি ও উন্মাদ/রাশেদ মিনহাজ; একজন রণজিৎ দাশ ও পরাজয়ের কবিতা/ইকবাল আজিজ; সংযম পাল: নীল নগ্ন নারীদের গান/রাশেদ মিনহাজ; সোফিওর রহমানের কবিতা (কবিতাযুগ; শ্যামের জন্য; আর্তচিহ্ন; নির্জন অগ্নিস্রোত; জেগে উঠলো আমিষ শিরাগুলি); নিতাই জানার কবিতা (দর্পণ; ভেলা; বন্দনা; সাতভাই পাখি)
একবিংশ-৪ / ফেব্র“য়ারী ১৯৮৮
সহকারী সম্পাদক: বদরুল হায়দার/সৈয়দ তারিক; প্রচ্ছদ আসাদুল আসগার, নামলিপি সিদ্ধার্থ তালুকদার। মুদ্রণ, বরেন্দ্র প্রিন্টিং প্রেস, ৮৫-২ আরামবাগ, ঢাকা। মূল্য-১০ টাকা ভারতে ৫ রূপী। লেখক কাগজে মুদ্রিত। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৫২।
প্রবন্ধ
পশ্চিমের জানালা/খোন্দকার আশরাফ হোসেন; ‘বিদ্রোহী’ ও শিল্পের শৃঙ্খলা/সৈয়দ তারিক
এই প্রজন্মের চোখ
আল মাহমুদের ‘সোনালী কাবিন’ সনেটগুচ্ছ : মুক্ত আলোচনা; কালের অক্ষর ও সোনালী কাবিন সনেটগুচ্ছ/শান্তনু কায়সার; সোনালী কাবিন; আল মাহমুদের কৃতি ও বিশ্বাস/শাহীন সৈয়দ; দ্রোহ, যৌনতা ও সোনালী কাবিনের অলংকার ও বিবিধ/রাশেদ মিনহাজ
যুগল কবিতা
সুহিতা সুলতানা (সঙ্গীহীন জনপদে নিদ্রাহীন আমি সারাক্ষণ; গোপন কাউন্টারে রমণীর ঠোঁটে শকুনের ঠোঁট) মাসুদ খান (বৈশ্যদের কাল; লব্ধি) হেলাল মহিউদ্দিন (একটি কবরের ইতিহাস; প্ল্যানচেট) আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ (লীয়রের দুঃখগুলো; কাক এবং মৃত প্রেমিকেরা) রেজাউদ্দিন স্টালিন (খোলের বোলের অনুপাত; অনাদৃত কবিতার জন্য)
কবিতা
আসাদুল্লাহ শেখর (বি-বিশেষণ আকাশ), মারুফ রায়হান (চৈতন্য প্রবাহ), ভূঁইয়া রেজা (প্রতিশ্র“তি) শাহীন শওকত (উপকূলে একা), আশিক আকবর (মানদণ্ড)
গুচ্ছ কবিতা
ফরিদ কবির (প্রশ্ন; দ্বিধা; সময়; কম্পোজিশান; ধ্বংস বিষয়ক) কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার (রূপালী পিচ্ছিল; জন্মমৃত্যুহীন; এক প্রতিকৃতি; অভিন্নতা) বদরুল হায়দার (বিন্দুবাদী কবিতাগুচ্ছ) খোন্দকার আশরাফ হোসেন (কোকিলস্বভাবা; ঝাপুইখেলা; এস্ত্রাগণ ও পলায়িত উট; বাহুল্য হে বল্লভ; নৈশভোজ)
বিদেশ বৈভব
ভ্লাদিমির মায়াকোভেস্কির কবিতা/অনু : আলম খোরশেদ (কমরেড লেনিনের সাথে কথোপকথন) ইঙ্গ-মার্কিন কবিতা/অনু : সৈয়দ তারিক (ড্যাফোডিল : উইলিয়ম ওয়ার্ডসওয়ার্থ; ফসল- কাটিয়ে একাকিনী মেয়ে : উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ; অতিবেল : আলফ্রেড লর্ড টেনিসন; ডোভার সৈকত: ম্যাথ্যু আর্নল্ড; শর ও সঙ্গীত: হেনরি ওয়াডসওয়ার্থ লঙফেলো; বলার শুধু এই: উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়ামস; হেমন্ত: টি.ই. হিউম্; ডকের উপর: টি.ই. হিউম; মেট্রোর এক ষ্টেশনে: এজরা পাউন্ড; বিচ্ছেদ: ডব্লু. এস. মেরউইন) আমেরিকান নিগ্রো কবিতা: হ্যারিং কুনি/অনু: জিয়াউল করিম (মৃত্যু: প্রতিবিম্ব) ডিলান টমাসের সঙ্গে কথোপকথন/শাহীন সৈয়দ।
অনঘ এন্টেনা
হাংরী নায়কের প্রত্যাবর্তন/আলম খোরশেদ।
বীতশোক ভট্টাচার্যের কবিতা (খরা; দর্শন; শরণ; এই গান; নিদালী) নির্মল হালদারের কবিতা (নুন; মৃত্যুঞ্জয়) সলিল চট্টোপাধ্যায় (নামহীন তিন) তপন কুমার মাইতি (নষ্ট হৃদয়ের কবিতামালা) দেবাশিস প্রধান (রাত্রির ভাষা; পাথর)
কালের চৌকাঠ
আমাদের বিস্মৃত ইতিহাসের একটি পৃষ্ঠা: বিভ্রান্ত পদাবলি, সম্ভ্রান্ত কবিকুল/সৈয়দ তারিক।
গ্রন্থানুচিন্তন
কবিতায় অলংকার ও অলংকৃত কবিতা/আহমদ আজিজ; স্মৃতিমগ্ন ধূসর দিনের পথিক/আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ; জীবনের বিবিধ আগুন/মিনহাজ পারভেজ; স্বপ্নময় সুন্দরের কবিতা/মিনহাজ পারভেজ। ভিন্নমত ‘নব্যজসীমিজম, ও বহমান লোককাব্য ধারা/রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
একবিংশ-৫/ ফেব্র“য়ারী ১৯৮৯
সহকারী সম্পাদক: বদরুল হায়দার/সৈয়দ তারিক। প্রচ্ছদ আসাদুল আসগার, নামলিপি সিদ্ধার্থ তালুকদার/ মুদ্রণ বরেন্দ্র প্রিন্টিং প্রেস, ৮৫/২, আরামবাগ, ঢাকা-১০০০। মূল্য দশ টাকা ভারতে ৫ রূপী। নিউজপ্রিন্টে মুদ্রিত। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৪৪।
প্রবন্ধ
শিল্পতত্ত্বের আধুনিক সমস্যা: কতিপয় সূত্র/আফজালুল বাসার: উত্তর কথন : শিল্পতত্ত্বের আধুনিক সমস্যা/সৈয়দ তারিক।
এই প্রজন্মের চোখ
হুমায়ুন আজাদের বিতর্ক-সৃষ্টিকারী প্রবন্ধ ‘কবিতা ও রাজনীতি’ এবং এর উপর তিনটি আলোচনা-
‘নেকড়ের মুখে আফ্রোদিতি’/সাজ্জাদ শরিফ; ‘তবুও গোলাপ ফোটে’/হুমায়ুন কবির; ‘কবিতা ও রাজনীতি: সঙ্গম-দ্বৈরথ’/সৈয়দ তারিক।
গুচ্ছ কবিতা
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (বারবার আপনার চোখ; এইজল এই দুঃসময়; ভেসে যাও অনন্ত অবধি) মঈন চৌধুরী (অভ্রংলিহ; ভাইরাস; সৃষ্টি-দৃশ্য-হত্যা-সংলাপ) সরকার মাসুদ (জেলিমাছ; সমুদ্রমানব, শিল্পী রিফাত চৌধুরী ও সরকার মাসুদ; পোটকা মাছ; সৈকতে ছেলেখেলা; হ্নীলা) সুব্রত আগষ্টিন গোমেজ (রাম; আকাশে যত হাঁটো; লালাবাই) খোন্দকার আশরাফ হোসেন (বেহুলা বাংলাদেশ; বর্ষা ১৩৯৫; আমার পুত্রকে) আব্দুল হাই শিকদার (তিনটন শীত; আর্ট অব লাভিং; গদাধরের মাকে ডাকা)
কবিতা
রেজাউদ্দিন ষ্টালিন (নবজাতক) তসলিমা নাসরিন (তুমি; যে যাবার সেতো যাবেই); বদরুল হায়দার (জেব্রাক্রস); শামসুল আরেফিন (ফেরা); রেহমান সিদ্দিক (একা আর ক্ষত বিক্ষত) শাহীন শওকত (দণ্ড); মারুফ রায়হান (প্রেতিনী)।
বিদেশ বৈভব
বৃটিশ পপ কবিতা/খোন্দকার আশরাফ হোসেন (রজার ম্যাকগাফের ‘তুমি কী’, আড্রিয়ান হেনরীর ‘তুমিহীন ক্রিসমাস’, ‘আমি’, ব্রায়ান প্যাটেনের ‘মড ১৯৬৫’ ও ‘সমুদ্র দৃশ্য’)
শ্রীকান্ত বর্মার কবিতা/দেবী রায়; আর্জেন্টিনা প্রগতির রথ টানে/সৈয়দ তারিক (কনরাডো নালে রক্সলো; হুয়ান হোসেন হারনান্দেজ, আলেহান্দ্রা পিজারনিক, হর্হে ভোকোস লেসকানো)।
কালের চৌকাঠ/গ্রন্থানুচিন্তন
রফিক আজাদ: অতৃপ্ত কৃষকের বাণিজ্যযাত্রা/রাশেদ মিনহাজ
অনঘ এন্টেনা
পশ্চিম বাংলার কবিতা
সাংস্কৃতিক বয়ান ঃ উত্তর আধুনিকতা/অঞ্জন সেন।
কবিতাগুচ্ছ
অমিতাভ গুপ্ত (তারল্যে, স্তব্ধতায়; খণ্ডপ্রলয়,) রামচন্দ্র প্রামাণিক (সে ওই জঙ্গলে গেছে; পরিত্যক্ত বেশ্যালয়; সাগরসঙ্গমে; ঠিক জানি) অশোক মহান্তী (শান্তিতে ঘুমোই; হেলেন)
একবিংশ-৬/ ফেব্র“য়ারী ১৯৯০
সহযোগী সম্পাদক : সৈয়দ তারিক/বদরুল হায়দার। প্রচ্ছদ আসাদুল আসগার, নামলিপি ফরিদ কবির/মুদ্রক : মোতাহার হোসেন, প্যাপিরাস প্রেস, ১৪২, আরামবাগ, ঢাকা। মূল্য : পনের টাকা ভারতে দশ রূপী। নিউজপ্রিন্টে মুদ্রিত। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৮৮।
প্রবন্ধ
রোমান্টিক কবিতা ও রোমান্টিক আন্দোলন/খোন্দকার আশরাফ হোসেন
কবিতাগুচ্ছ
সুব্রত অগাষ্টিন গোমেজ (বিম্ববতী; এই প্রজনন; জয় তথাগত; পীচ; ঘুমের ওপারে; আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ (ঘুমপুত্র; সৌন্দর্যদর্শন এক বয়সের); শাহীন শওকত (শেষ উত্তরাধিকার; সাঁকো বিষয়ক; এই শীত এই কুয়াশার রাতে; শ্যাওলা জলের কাব্য); শামসুল আরেফিন (অনাড়ষ্ট উচ্চারণ; দৃশ্যপট; কুশপুত্তলিকা; প্রোফাইল; আগুন বৃষ্টি); শরীফ শাহরিয়ার (সংবৃতা তোমার শরীর ভাঙে; দ্বিধার সাপ গিলে আছে সকল গন্তব্য; কি এক শব্দের উত্থান)
হাইকু গুচ্ছ/সৈয়দ তারিক
কালের চৌকাঠ/গ্রন্থানুচিন্তন
যৌনতা ও সার্টিফিকেট: আবিদ আজাদের সা¤প্রতিক কবিতা/শাহীন শওকত; দ্বিধার মাস্তুলে পাখি/রশেদ মিনহাজ; আশির দশকের কবিতা/ঐতিহ্যসূত্র ও নব নির্মিতি/খোন্দকার আশরাফ হোসেন
বিদেশ বৈভব
ক্যারিবীয় কবি ডেভিড ডেবিডীন : সাক্ষাতকার (রাশেদ মিনহাজ ও আলমগীর ফরিদুল হক) ‘কুলি অডিসি’ থেকে ছয়টি কবিতা ঃ অনুবাদ খোন্দকার আশরাফ হোসেন (অদৃশ্য; এল দোরাদো; দিনের শেষ; কুলি মা; রোহান বাবুলাল কানহাই-এর জন্য; মিরান্দা)
অনঘ এন্টেনা ঃ পশ্চিম বাংলার কবিতা
নাসের হোসেন (উট; পাঁউরুটি সংক্রান্ত; এক্কা; অপেক্ষা; মমি) প্রীতি চক্রবর্তী (কুসুম সংকাশ, ভিখিরি বেহালাবাদক, উপক্রমণিকা); শিবাশিস দত্ত (সুদেঞ্চার প্রতি; ফেরা); অমল চক্রবর্তী (গর্ভমঙ্গল; কুলো); সৌমেন্দু সামন্ত (যুদ্ধযাত্রা); বিপুল চক্রবর্তী (শিকড়)
ক্রোড়পত্র
অনিরুদ্ধ আশি ঃ এক দশকের কবিতা/সৈয়দ তারিক সম্পাদিত
খোন্দকার আশরাফ হোসেন (প্রার্থনায় নম্র হও পাবে; তিন রমণীর কাসিদা-২; রঙ্গিনীর কতো রঙ্গ; বাউসী ব্রিজ’৭১; নীল সাবানের প্রেম; কালো বাক্সের গল্প; শিকারী ও কোড়াপাখি; নকটার্নগুচ্ছ; মানুষ; কসাই); রেজাউদ্দিন স্টালিন (সূচনাপর্ব; দেয়াল ও দিগন্ত; স্বপ্নময় সুন্দরের দিকে; সোনামুখী ধানশীষ পূর্ণ প্রাণ যাবো; সমকালে কালবেলা; দূর্যোগ থেকে দূর্যোগে রাখি পা; এলিজি; শেষ দৃশ্য; ক্ষুদে কাগজের ছোট শ্যামা পাখি); মোহাম্মদ সাদিক (অনন্ত কসাই; হিরালী; ছায়া; উদ্বাস্তু; শ্মশানে হরিশচন্দ্র; বসিয়া বিজনে কাজ করো মনে; কার্ল মার্কস; মগজের কোষে কতিপয় পাখি); ফরিদ কবির (আত্মহননের পক্ষে; রাস্তা; কে হাঁটে বারান্দায়; ধ্বংস-বিষয়ক; কম্পোজিশন, বাড়ী) আব্দুল হাই শিকদার (সিরাজদ্দৌলা; সন্ধ্যার ছাদ); মঈন চৌধুরী (অভ্রংলিহ; ভাইরাস, সৃষ্টির দৃশ্য, হত্যা-সংলাপ); সরকার মাসুদ (জেলিমাছ; সৈকতে ছেলেখেলা; নীলসাপ); দারা মাহমুদ (খুলে যাচ্ছে দ্বিতীয় দরোজা; আর্যসত্য); বিশ্বজিত চৌধুরী (কৃষ্ণপক্ষে, যুবতীর øান); কাজল শাহনেওয়াজ (দাঁত; আমরা কজন শীত ও বর্ষাকালীন শাকসব্জী; হেরোয়িন); বদরুল হায়দার (সুরা পাত্রে ধ্বংসলীলা); মোহাম্মদ কামাল (অভয় পৃথিবী দেবে কে দেবেনা; শোয়েব শাদাব (স্বগতোক্তি; আবহমান); শান্তনু চৌধুরী (রূপান্তর; ফিনিক্স পাখির জন্ম; হাড়; অভয় মিত্রের ঘাট); রিফাত চৌধুরী (অগ্নিতে পেতেছি শয্যা; তরমুজ); মারুফ রায়হান (পরাধীন পাখির এলিজি; কেন আবেগ আত্মহনন); সুহিতা সুলতানা (নিঃশব্দে নরক যন্ত্রণা); বৃত্তাংশ নয়, বৃত্ত হতে পেরেছে ধনুক); কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার (এক প্রতিকৃতি; অভিন্নতা); মাসুদ খান (বৈশ্যদের কাল); সৈয়দ তারিক (ধ্বনিমা, জীবনানন্দ; অনুষঙ্গ; রুমু)
একবিংশ-৭/ ডিসেম্বর, ১৯৯০
মুদ্রক মোতাহার হোসেন/প্যাপিরাস প্রেস, ১৪২ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০। প্রচ্ছদ আসাদুল আসগার/নামলিপি ফরিদ কবির। মূল্য পনের টাকা ভারতে দশ রূপী। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৫২।
পত্র-প্রতিক্রিয়া
কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার/সরকার আমিন/রণক মুহাম্মদ রফিক।
প্রবন্ধ
আফজালুল বাসার/শিল্পের সংতত্ত্বের অবতারণা
কুয়াশার হ্রেষা : আবদুল মান্নান সৈয়দের কবিতা/খোন্দকার আশরাফ হোসেন
কবিতা
রোকনুজ্জামান রবার্ট (জল, জীবন এবং জীবন-জিজ্ঞাসা; একটি গমদানার পতন; সত্তা ও শূন্যতা; নামহীন অনুভূতিহীন); দাউদ আল হাফিজ (পাতাঝরার গান এবং ঝরাপাতার সঙ্গীত; আলো আরো আলো; জেরুজালেমে একদিন তিন হাজারবছর আগে); সুনীল শর্মাচার্য (কঞ্চুকী; ঘোর; মাঠ-খসড়া; হরপ্পা-তিল); শরীফ শাহরিয়ার (দুই হাত খুঁজে আনে; অসঙ্গতির হোমাগ্নি জ্বেলে; নগর প্রতিমা); মোফাজ্জল হুসেন (অনৃদিত কোলরিজ; আমাদের পাতে লবণ যাচ্ছে কমে); সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ (“একটু দাড়াও! তুমি কি সুন্দর!” লুব্ধক); শামসুল আরেফিন (আবহমান; তৈলপায়িকা); সাজেদুল ইসলাম (হুদ; জাতক; শেষপত্র); মঈন চৌধুরী (বৃষ্টি; ছোটন ও ভাতের কণা; পাখির ছবি); শাহীন শওকত (পাঠ; ভুল; জলের বিকল্প-৩; বৃষ্টি; অনাত্মীয়) বদরুল হায়দার (অপরাজিত); সৈয়দ তারিক (অর্ধনারীশ্বর; অরণ্যে; উৎসব; বাউল; ইতিহাস); খোন্দকার আশরাফ হোসেন (স্মৃতিচিত্র কবিতা কোলাজ: অদ্ভুত; রমণী ও সর্পরাজ; রঙ্গ; ওয়াটারলু; জঙ্গনামা; বাঘবন্দী; পদাবলি; ধানরমণী; তুলারাশি); রেজাউদ্দিন স্টালিন (কেউ আমাকে গ্রহণ করেনি)।
বিদেশ বৈভব
ছড়ানো মার্কিনী/অনুবাদ:সুরেশ রঞ্জন বসাক। (লুসি লী ক্লিনটন; ব্যারী স্প্যাক্স; এ্যান্থনী হেক্ট; এমিলি ডিকিসন; ডব্লু এইচ অডেন; এ্যালেন গীনসবার্গ; অজ্ঞাতনামা)
কালের চৌকাঠ
সা¤প্রতিক কবিতা বিচার পর্বে শামসুল আরেফিনের প্রবন্ধÑ কবিতা, হুমায়ুন আজাদ এবং নিরুদ্দিষ্ট ইষ্টিমার। মৌলিক মুখোশ: অন্তরালে আগুন, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সা¤প্রতিক গ্রন্থের আলোচনা/শাহীন শওকত।
অনঘ এন্টেনা
পশ্চিম বাংলার ষাট-সত্তর-আশি এই তিন দশকের লিটলম্যাগাজিন-ভিত্তিক কবিতা আন্দোলনের সমীক্ষা। তিন দশকের কবিতা আন্দোলন/সন্দীপ দত্ত।
একবিংশ-৮/ সেপ্টেম্বর, ১৯৯১
মুদ্রক মোতাহার হোসেন, প্যাপিরাস প্রেস ১৪২, আরামবাগ। ঢাকা-১০০০। প্রচ্ছদ উইলিয়াম ব্লেক অঙ্কিত ‘নিউটন’ অনুসরণে রাশেদ মিনহাজ। মূল্য পনের টাকা। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১২৬।
প্রবন্ধ
দেরিদার ডিকন্সটাকশন ঃ তাত্ত্বিক বিচার ও সাহিত্য আলোচনায় প্রয়োগ/মঈন চৌধুরী ক্যাভেফির কাব্যজগত/রাজু আলাউদ্দিন; অনিরুদ্ধ আশি ঃ মগ্নস্রোত ও নতুন উপলব্দির কবিতা/শাহীন শওকত
কালের চৌকাঠ
‘মানুষের মানচিত্র’ ঃ শোষিত মানুষের ভাষাচিত্র/হেলাল আহমেদ
বিদেশ বৈভব
ডি.জে এনরাইটের কবিতা/অনুবাদ ঃ সুরেশরঞ্জন বসাক (একটি ভাষান্তরিত পদাবলী; ক্রমবিকাশ; সচিত্র স্বর্গ ঃ একাদশ; সচিত্রস্বর্গ ঃ দ্বাদশ; সচিত্রস্বর্গ ঃ পনেরো; সচিত্রস্বর্গ ঃ সাতাশ; সচিত্রস্বর্গ ঃ একত্রি); রবার্ট ক্রিলির কবিতা/অনুবাদ ঃ দেবী রায় (ন্যুইয়র্ক শহরে রাত্রি; কিন্তু; ব্লু; চিন্তা; ন্যু-ইয়র্ক)
কবিতা
বায়তুল্লাহ কাদেরী (ঈশ্বরের দীর্ঘশ্বাস; কফিন; অন্ধকার শিল্পী; রুটির কিনারে; তন্তুময়; চেয়ারে তোমার); কামরুল হাসান (স্বপ্নতাড়িত যাবে একা; তোমার অকূল জলে ঈশ্বর; সহজ কান্তি বিঁধেছে চোখের মূলে; বিন্যাস; শিরোনামহীন-৬); শাহনাজ মুন্নী (ক্ষমঃ গো শ্বেতদুগ্ধ; চাষী বউ এর সাথে যখন বদলায় কবির জীবন; আমি কি সে মানুষ); সরকার আমিন (ঘোড়া হেঁটে যায়; স্বপ্নখোর); আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ (জীবাশ্ম; সূঁচ); খোন্দকার আশরাফ হোসেন (বৌমাছ; যাত্রা; নামহীনা); মঈন চৌধুরী (ডায়ালেক্টিকস্; আলেয়া প্রতিধ্বনি; স্ক্রু; আশ্চর্য ভোর); সরকার আমিন (উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত); মাসুদ খান (মানুষ; ধর্ম); শামসুল আরেফিন (নক্ষত্রে গঙ্গা ফুঁ)।
পত্র-প্রতিক্রিয়া
আবদুল মান্নান সৈয়দ। জাকির তালুকদার।
একবিংশ-৯/ মার্চ, ১৯৯২
মুদ্রক মোতাহার হোসেন প্যাপিরাস প্রেস ১৪২, আরামবাগ, ঢাকা। প্রচ্ছদ পরিকল্পনা রাশেদ মিনহাজ। মূল্য পনোরো টাকা। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১১২।
প্রবন্ধ
আশির কবিতা, ‘গৃহে ফেরে ভ্রামণিক চোখ/অঞ্জন সেন; লেখকের মৃত্যু পাঠকের জন্ম/আফজালুল বাসার। শহীদ কাদরীর কবিতাঃ পরাবাস্তব চেতনা প্রসঙ্গে/আবু হেনা আব্দুল আউয়াল।
কবিতা বিশ্ব
শাস্ত্রবিরোধী কবিতা ঝড়ঁহফ ঋড়ঁহফ ঈড়হপৎবঃব/ খোন্দকার আশরাফ হোসেন; এক গোছা ইঙ্গ-মার্কিন/সুরেশ রঞ্জন বসাক অনুদিত (ডব্লু.বি.ইয়েটস্; ফিলিপ লারকিন; ষ্টিফেন ক্রেন; ডি.জে এনরাইট; জেন কেনিয়ন; হাওয়ার্ড মস।
কালের চৌকাঠ
রিফাত চৌধুরী ও সরকার মাসুদের কাব্যগ্রন্থের ওপর বায়তুল্লাহ কাদেরী।
কবিতা
আকমল হোসেন নিপু (খোলস; জানালা; দেয়াল; নুন; জখম; নির্জন øান); মহসীন বখ্ত (গাংকোরের নিমতলা; জলরঙ); জাকির তালুকদার (মধ্যমায় পড়ে আছি অসুখ অঙ্গুরী); বায়তুল্লাহ কাদেরী (অন্ধকার; শীতবিষয়ক কবিতা; প্রস্তরের গান; ভবিষ্যত); শাহীন শওকত (চিহ্নমৃত্যু; পরিচয়; জন্ম); জহির হাসান (মৃত হাত; সাইরেন, কোরাস, এতিম বালিকাদের); শামসুল আরেফিন (সমূহ বিলাস); সুহিতা সুলতানা (নিষিদ্ধ হলো যাওয়া; অপেক্ষার উদার জমিন); রেজাউদ্দিন স্টালিন (সন্তানের হাত; বিশাল বিদায়; রক্তিম ধূসর)।
অনঘ এন্টেনা
হাংরী-খ্যাত দেবী রায়ের কবিতা-সরকার মাসুদ।
কবিতা: ব্রতী মুখোপাধ্যায় (চোখের কোণে কলঙ্ক তারং মানুষের কাছে); মানস ভাণ্ডারী (মাকরানায় প্রতিটি বিকেল; ব্যাংকোয়েট); রণজিৎ হালদার (পাপ-পূণ্য; বিশ্বরূপ দর্শন; ফুল মালা); দেবাশিস প্রধান (স্বপ্নের মায়া আছে স্বপ্নটুকু নেই...)
একবিংশ-১০ সেপ্টেম্বর ১৯৯২
মুদ্রক মোতাহার হোসেন, প্যাপিরাস প্রেস ১৪২, আরামবাগ, ঢাকা-১০০০। প্রচ্ছদ জাঁ কক্তো অঙ্কিত ‘প্রেমিক যুগল’ অবলম্বনে রাশেদ মিনহাজ। মূল্য ঃ পনের টাকা ভারতে দশ রুপী। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১২০।
প্রবন্ধ
তরুণ রচনার অগ্নি/তপোধীর ভট্টাচার্য; গুণের কবিতার দোষগুণ ঃ একপর্ব/খোন্দকার আশরাফ হোসেন; কবিতা ও যুক্তির ভাষা/মঈন চৌধুরী
কবিতা
কামরুল হাসান (বিনিদ্র রাতের এ্যান্টেনা); রণক মুহম্মদ রফিক (ভেতর বাহিরে নদী ও পাথর; স্বপ্ন পঙ্ক্তি); বায়তুল্লাহ্ কাদেরী (বয়ঃসন্ধি; তৃতীয় রাস্তার গল্প); সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ (সনেট সপ্তক; ঘাতক; অনিরাম; কাহিনী; অঘ্রান; সুত্রপাত; মুন; রামগরুড়ের ছানা); সরকার মাসুদ (আমি); মোশতাক আহমদ (চড়–ইকে নিবেদিত পংক্তিমালা; কোন অভ্যর্থনা ছিল না; বয়ঃসন্ধি; অলস আবেগেÑ; মঈন চৌধুরী (উপপাদ্য-১; মানুষ বাড়ীর বউ; মৃত্যু-মাধবী); খোন্দকার আশরাফ হোসেন (ঘোড়সওয়ার); আকমল হোসেন নিপু (স্নানঘর); সমীর মজুমদার (এর বেশী এই জন্ম; আমাদের তাপ উত্তাপ; বারম্বার ইচ্ছে হয় বলে বলি; হাড়ে রঙ)
কবিতাবিশ্ব
শীমাস্ হীনির প্রবন্ধÑ অক্লান্ত ক্ষুরধ্বনি : সিলভিয়া প্লাথের কবিতা/রাশেদ মিনহাজ অনুদিত। নাজিম হিকমতের কবিতা/দাউদ আল হাফিজ অনুদিত (বার্লিনের চিঠি; নবম বার্ষিকী চিরকুট কামাল তাহিরকে); ওক্তাবিয়ো পাসের কবিতা/দাউদ আল হাফিজ অনূদিত (কবিকীর্তি, পাথার কৃষ্ণ এবং শ্বেত; কবির সমাধি); এমিলি ডিকিনসনের কবিতা/অনুবাদ ঃ সুব্রত অগাষ্টিন গোমেজ।
কালের চৌকাঠ
‘সুন্দরী ও ঘৃণার ও ঘুঙুর’ সম্পর্কে বায়তুল্লাহ কাদেরীর গ্রন্থানুচিন্তন।
একবিংশ-১১/ মে ১৯৯৩
প্রচ্ছদ রাশেদ মিনহাজ। মুদ্রণ প্যাপিরাস, আরামবাগ, ঢাকা-১০০০। মূল্য বিশ টাকা।
প্রবন্ধ
ঐতিহ্য ও ব্যক্তি প্রতিভা/টি এস এলিঅট (দাউদ আল হাফিজ অনূদিত); জীবনানন্দ দাশ ও ইউরোপের আধুনিক কবিতা/মঞ্জুভাষ মিত্র; আধুনিকতা ও উত্তরাধুনিকতা/ সালাহউদ্দিন আইয়ুব।
কালের চৌকাঠ/গ্রন্থানুচিন্তন
সিলিকন চিপসের কবি/রাশেদ মিনহাজ; স্বপ্নের ছাই থেকে জীবন নির্মাণ/মাসরুর আরেফিন
কবিতাবিশ্ব
পাউল সেলানের কবিতা। আলোচনা ও অনুবাদ খোন্দকার আশরাফ হোসেন (মৃত্যু সঙ্গীত; একটি মোমবাতির সামনে; টেনেব্রেই; ছায়াসুন্দরীর গান; পল এলুয়ার স্মরণে; সংকীর্ণকরণ)
কবিতা
বায়তুল্লাহ কাদেরী (শীতাভ সনেটগুচ্ছ); পাবলো শাহী (সেই ঘুমঘুম ভিখারী আপেলগুলি); কামাল হোসেন (আত্মার আমি ও ঋতুগণ); আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ (ভিক্ষুকের প্রেম; পরবর্তী দুঃখ); রেহমান সিদ্দিক (তিন কণা-চোখ, পাথর; আগুন); শোয়াইব জিবরান (মাংশ রাত; কাঠ চেরাইয়ের শব্দ); কামরুল হাসান (ভুল অঙ্কের বৈঠক; সমিতি সীতার; ভোর); খোন্দকার আশরাফ হোসেন (জিও জিও; বৈশাখ ১৪০০; ট্রিগার হ্যাপি; কবিতেশ্বরী; অনন্তনাগের গল্প); সরকার মাসুদ (সমুদ্র সুলতান; গালাপগাস; ওয়ালরাস; ঘোড়া মাছ; অক্টোবরে শীল মাছের স্বগতোক্তি)।
মুদ্রিত সেমিনার : কবিদের কবিতা ভাবনা
ডোরাকাটা জামা ধর্মানারায়ণ দাশগুপ্ত ও আমাদের কবিতা/সরকার মাসুদ; রূপ স্বরূপ- তৎসহ কবি/জহর সেন মজুমদার; কবিতা বিষয়কঃ ব্যক্তিগত/পার্থ প্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়
একবিংশ-১২/ ডিসেম্বর, ১৯৯৩
প্রচ্ছদ রাশেদ মিনহাজ। মুদ্রণ প্যাপিরাস প্রেস, আরামবাগ, ঢাকা। মূল্য বিশ টাকা। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৪৪
প্রবন্ধ
তোমার সৃষ্টির পথ/আহমদ মিনহাজ; রফিক আজাদের কবিতা/খোন্দকার আশরাফ হোসেন
কবিতা
নান্নু মাহবুব (জেগে থাকে পাথরে ও প্রবালে; পালক বৃত্তান্ত); খলিল মজিদ (নিদালি); হাফিজ রশিদ খান (নদীকেন্দ্রিক) শিমুল আজাদ (বুঝি পল্লবতা নেই; কিভাবে ঘুমিয়ে যাব নিজেকে বিস্মৃত করে); শশী হক (বানানো সম্ভাবনার মৃত্যু); এজাজ ইউসুফী (প্রতœস্মৃতি); কুমার চক্রবর্তী (হাওয়া); পবিত্র বন্দোপাধ্যায় (হিরোসিমা); সরকার মাসুদ (আদা; রসুন; পেঁয়াজ); শাহীন শওকত (প্রতœঅন্ধকার; ভয়; অপেক্ষা; অস্তিত্ব বিলাস; মেঘপর্ব); জহির হাসান (সেই সব অন্ধ বিড়ালিনী; গেঁড়ি); দাউদ আল হাফিজ (বিষ; বৈরী সময়; তীর্থযাত্রী); সৌভিক রেজা (দুটি কবিতা) বায়তুল্লাহ্ কাদেরী (শহরে পাঁচটি রোগ); আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ (শৈশব এবং রাস্তা; অমরতা; মুদ্রাযুগ); রেজাউদ্দিন স্টালিন (বিচার)
কবিতাবিশ্ব
এ্যান সেক্সটনের একগুচ্ছ কবিতা/অনুবাদ: রাজু আলাউদ্দিন (গৃহিনী; আমরা দু’জন; তরুণী; তারাভরা রাত; একটি পুরুষ যখন একটি নারীতে প্রবেশ করে; জেসাসের স্তন্যপান) এ্যান সেক্সটনের কবিতা পৃথিবী/সরকার মাসুদ। এ্যান সেক্সটনের কবিতা/অনুবাদ: খোন্দকার আশরাফ হোসেন (ফেরেশতাদের সাথে সহবাস; তুমি ডাক্তার মার্টিন; আমার জরায়ুর উদযাপন; জেসাস মারা যায়; নীরবতা।
কালের চৌকাঠ/গ্রস্থানুচিন্তন
হাসান হাফিজুর রহমান : জীবন ও সাহিত্য/মিহির মুসাকী
মুদ্রিত সেমিনার/তরুণ কবিদের কবিতা ভাবনা
কবিতা শব্দ ঝড়, মাথা তোলবার শিল্প/শাহীন শওকত; ভূতের উৎকেন্দ্রিক পা, উত্তর আধুনিকতা ও অনুজের কবিতা ভাবনা/মোশতাক আহমদ; শুদ্ধ কবিতার সপক্ষে/কামাল হোসেন।
পত্র-প্রতিক্রিয়া
মোশতাক আহমদ/সরকার মাসুদ/ হাফিজ রশিদ খান/ ফজলুর রহমান বাবুল।
একবিংশ-১৩/ আগষ্ট ১৯৯৪
প্রচ্ছদ রাশেদ মিনহাজ। মুদ্রক প্যাপিরাস প্রেস আরামবাগ, ঢাকা-১০০০। বর্ণ বিন্যাস বার্ণিক ৮/১-২, নীলক্ষেত বাবুপুরা, ঢাকা-১২০৫। মূল্য বিশ টাকা ভারতে পনের রূপী।
প্রবন্ধ
সাহিত্য কি? / টেরি ঈগলটন
কবিতার ভাষা/ অঞ্জন সেন।
কবিতা
কামরুল হাসান (টিয়ানা; প্রতিনায়ক; মুখরতাপ্রিয় মুখমণ্ডলি); খলিল মজিদ (কালের মান্দাস); তুষার গায়েন (পুনর্জন্ম; সৃজন জঙ্গম জলে০; জহির হাসান (রেনু; কুকুর); বায়তুল্লাহ কাদেরী (শাড়ি, তমোহার শাড়ি); আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ্ (ভিক্ষুক চতুর্থ রাতে; শীতে খোলা বাড়ী; মিশ্র রেখা); পাঁশু প্রাপণ (উন্মার্গ; তিতির; প্রতিলিপি); সুহিতা সুলতানা (যাকে দেখবো না বলে; আরব্য রমণীর নিপুণ মুখোশ); কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার (আরেক অভয়ারণ্য; বিজ্ঞাপন); রশীদ হারুন (ঘোর গাথা); রণক মুহম্মদ রফিক (জননী জন্মদাতা উপাখ্যান); রায়হান রাইন (পাখি পার্বণ; গুহাবাস ঃ চিহ্নগুলো); খোন্দকার আশরাফ হোসেন (প্রশ্নের নদী উত্তরবাহিনী; ষ্টিল লাইফ: ক্যাম্পাসে শ্রাবণ; ট্রেডমার্ক অহংকার; চাদরের স্বৈরাচার); মঈন চৌধুরী (মৌরি; জাইগোট এপিটাফ; সমুদ্রকথা); সরকার মাসুদ (গ্রহগুলির মধ্যে; পাখির আত্মকথা; হলুদ আয়তক্ষেত; খেলা; ঝর্ণা মেয়ে) শামসুল আরেফিন (অন্ধকার ঝুল বারান্দায় বিকলাঙ্গ দাঁড়িয়ে থাকা এক খণ্ড ডানা); শাহীন শওকত (উদ্গম; স্বপ্নবধ; অনন্ত জন্মের আগে; দাহ)।
মুদ্রিত সেমিনার
দরোজা খোলার স্থাপত্য/আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ, কবিতার দুর্বোধ্যতা/সরকার মাসুদ
কবিতাবিশ্ব
পাউল সেলানের কবিতা/অনুবাদÑ খোন্দকার আশরাফ হোসেন (প্রার্থনা গান; প্রহরভর্তি তোমার হাত; চিনার গাছ; মানডোরলা; সার্কাস এবং দূর্গের সাথে অপরাহ্ন; লোহার জুতোর মচমচ আওয়াজ; সূর্যবলয়; রাতের রাশ্মি; অ্যাসিসি; তুমি ছিলে)
কালের চৌকাঠ
পশ্চিমের পোষ্টমডানিজম ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তর আধুনিকতা/সালাহউদ্দীন আইয়ুব; ‘বাংলাদেশের কবিতা’: ভেতরে বদলে যাওয়া শিলা/শাহীন শওকত; একটি মতলবী সংকল, হুমায়ুন আজাদ, এবং তস্যতস্য/ইমরান প্রামাণিক: প্রভাহীন দীপ্তি ত্রিপাঠী এবং বাংলাদেশের কবিতা/রাশেদ মিনহাজ; রণজিৎ দাশের কবিতা/সমরেশ দেবনাথ; দ্যূতক্রীড়া, কবিতার সাথে/বায়তুল্লাহ কাদেরী।
একবিংশ-১৪/ ফেব্র“য়ারী ১৯৯৫
প্রচ্ছদ ‘প্রেমিক প্রেমিকা ও খলনায়ক’, রাশেদ মিনহাজ। মুদ্রক প্যাপিরাস প্রেস, আরামবাগ, ঢাকা। মূল্য বিশ টাকা। ভারতে পনের টাকা। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৭৬
পত্র-প্রতিক্রিয়া
শাওন পাথার/মোশতাক আহমদ/তপোধীর ভট্টাচার্য/বালার্ক দাঁ/আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ।
প্রবন্ধ
কবিতায় শহর/খোন্দকার আশরাফ হোসেন
দুই ভিন্ন শিল্পের সাধনসূত্র; স্থাপত্য ও কবিতা/ সফিউল আজম মঞ্জু।
কালের চৌকাঠ/গ্রন্থানুচিন্তন
স্বদেশের মর্ম থেকে উঠে আসা কবি/তুষার গায়েন; হিয়ার ইজ গড্স্ প্রেন্টি! বিচিত্র ক্রীড় (ক)বিসস্বাদÑআসাদ আদ-দ্বীন;
উত্তর-আধুনিকতা বিতর্ক/প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় সাংস্কৃতিক কাঠামোর আধুনিকতা ও আমাদের চিন্তার মেরুদণ্ডহীনতা/ সাজিদুল হক।
কালের চৌকাঠ/প্রতিক্রিয়া
হুমায়ুন আজাদ তস্য তস্য/সালাহউদ্দীন আইয়ুব; হুমায়ুন আজাদের ‘আধুনিক বাঙলা কবিতা (১৯৯৪)’, আহমেদ স্বপন মাহমুদ; ইমরান প্রমাণিকের বক্তব্য।
কবিতা
মুজিব মেহদী (নারী মাছের বিবিধ কানকো অন্যান্য সব্জী আনাজ ও উচ্ছিষ্টভোগীরা); হামিদ রায়হান (হনন হে অন্তর্গত); এবরার হোসেন (হও; স্বচিত্র সনেট; পতঙ্গ); সাজ্জাদ আহমেদ (এলার্ম); তুষার গায়েন (টোটেম ও তন্দ্রা); বায়তুল্লাহ কাদরী (ধানকৃমি; কিছুই সুন্দর নয়; গাড়ি, রেল গাড়ী-সন্ধ্যা); সুহিতা সুলতানা (নির্জন পথের আয়না); রণক মুহম্মদ রফিক (চিরুণীর ছায়াগীরণ; ত্রিনীল মানুষ) জহির হাসান (পিপে); কামরুল হাসান (বিপ্লবী মৃত্যু); শাহীন শওকত (অভিষেক; বন্ধু; পালক; ফেরা); খলিল মজিদ (জল; বন্ধু হেলেনকে); কাজী রব (জোনাকির ভাউচার; মুদ্রার সালোয়ার কামিজ); কুমার চক্রবর্তী (গ্রাম-পরিক্রমা; সময় রেখার মত); সমরেশ দেবনাথ (জল ও নারীধর্ম); আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ) আমার মেয়েকে দেখলো চারটে পৃথিবী; জননী জনয়িত্রী); সৌভিক রেজা (দুটি কবিতা); সরকার মাসুদ (ব্রিজ আর শিরিষ গাছ; পিলার; মানুষের মুখ; মিনার; শিকারের খোঁজে; তাপস গায়েন (তিনটি পদ্য); খোন্দকার আশরাফ হোসেন (নুরজাহানকে নিবেদিত কবিতা); দাউদ আল হাফিজ (রমা দে-র জন্য শোক); রোকনুজ্জামান রবার্ট (জেনেসিস); মঈন চৌধুরী (ভোমর; করম্চা গাছ); শামসুল আরেফিন (মাটির ধারণা)।
রঙিন আয়োজন
সদানন্দের পদাবলী/রাশেদ মিনহাজ
গ্রন্থ পরিচিতি
এক নৌকা ধানশীষ, কবিতার চাষাবাদ/খলিল মজিদ
অনঘ এন্টেনা
পশ্চিম বাংলার কবিতা- ধ্বংসকালীন কবিতা আন্দোলন/ইস্তাহার; পবিত্র মুখোপাধ্যায় ইব্লিসের আত্মদর্শন; প্রভাত চৌধুরী (আমি মেফিসটোফেলিস শয়তানের দূত); কানন কুমার ভৌমিক (প্রজাপতি বনাম খলিলুল্লার সৃজনবাদ)।
একবিংশ-১৫/ নভেম্বর ১৯৯৫
প্রচ্ছদ জে এইচ মর্টিমার অঙ্কিত স্কেচ (১৭৮৫)ঃ শেক্সপীয়রের মুখচ্ছবি। বর্ণ বিন্যাস বার্ণিক, মুদ্রণ প্যাপিরাস প্রেস আরামবাগ, ঢাকা। মুল্যঃ বাংলাদেশ ২৫ টাকা ভারতে ২০ রূপী।
স্মরণ
জন কীট্স, সের্গেই ইয়েসেনিন, ষ্টিফেন স্পেন্ডার, শক্তি চট্টোপাধ্যায়
প্রবন্ধ
এডওয়ার্ড সাইদ ও উত্তর-ঔপনিবেশিক কাউন্টার ডিস্কোর্স/ফকরুল আলম; রোমান্টিক কবিতার স্বরূপ/খোন্দকার আশরাফ হোসেন; চেতনার ক্ষুরধ্বনি অথবা পথে-পাওয়া আলো/আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ।
কবিতা সপ্তপর্ণা
টোকন ঠাকুর (শত সপ্তাহের পদাবলী); হাফিজ রশিদ খান (আদিবাসী কবিতাগুচ্ছ); খলিল মজিদ (ধানসত্য আবু); সাঈদ ওবায়দুল্লাহ (ঘরের এক কণা); মিহির মুসাকী (নগর কীর্তন)
কবিতা/গুচ্ছ কবিতা
শামসুল আরেফিন (বৃত্ত; মেলা; অবমুক্তি; ধর্ম); শশী হক (সবুজের পরিচয়; পটপরিবর্তন; চোখ কান বন্ধ); তুষার গায়েন (কুয়াডাঙ্গা ছেড়ে যায় বাস; নীলভব হ্রদ); সুহিতা সুলতানা (আলো ছায়ার যুগলবন্দী); কামরুল হাসান (নিবিড় সম্পাদ্য; অতিপ্রিয় অতিথি পাখিরা; কাঠস্তুপে আর কোন দেবীকে); পাঁশু প্রাপণ (আমি আছি তৃণ-মন্ত্রে, আমি আছি শরে; আমি এক উপগ্রহ, গ্রহ নেই যার); সৌভিক রেজা (দুটি কবিতা); মুজিব মেহদী (অবৈতনিক কবিতাগুচ্ছ); খোন্দকার আশরাফ হোসেন (আগুন পানি মাটি হাওয়া); সরকার মাসুদ (এক গুচ্ছ ভালোবাসার কবিতা); জাহাঙ্গীর কবির (অকথিত কবিতা); মেহেদী মাহমুদ (অনন্ত শরীরবিহীনতায়); মইনুল আবেদীন (মধুকরী; সন্দর্শন; ছায়াপুরাণ); আশরাফ রোকন (বিন্দু বিন্দু পরিতাপ);।
সনেট সাইকেল
বর্ষালি চতুর্দশী/বায়তুল্লাহ কাদেরী
ধারাবাহিক অনুবাদ
টেলি ঈগলটন/সাহিত্যতত্ত্ব : পরিচয়Ñ ইংরেজির উত্থান।
কবিতাবিশ্ব
স্বীকারোক্তিমূলক কবিতার সাহসী সর্বনাম/মাহবুব মাসুম; সিলভিয়া প্লাথের কবিতা/ভাষান্তরঃ মাহবুব মাসুম (ঝুলন্ত মানুষ; রানার; উলম্ব আমি; মৃত-ভুমিষ্ঠ; আরশি); শেমাস হীনির কবিতা বুখের ভেতর গোপন স্বদেশ/খোন্দকার আশরাফ হোসেন (দ্য টলান্ড ম্যঅন; দ্য গ্রাউবল ম্যান; শান্তি)।
কালের চৌকাঠ
পত্রিকা আলোচনা/দুই হাতে কালের মন্দিরাঃ ছোট কাগজের পৃথিবী/তুষার গায়েন (আলোচিত কাগজÑ লিরিক; দ্রষ্টব্য; নিসর্গ)
গ্রন্থানুচিন্তন
কাঠের ঘোড়ার ডুব সাঁতার/খলিল মজিদ।
একবিংশ ১৬/ নভেম্বর ১৯৯৬ (দশবছরপূর্তি সংখ্যা)
প্রচ্ছদ রাশেদ মিনহাজ, বর্ণবিন্যাস বার্নিক, মূল্য তিরিশ টাকা
প্রবন্ধ
পাঠকপ্রতিক্রিয়াবাদ, তপোধীর ভট্টাচার্য, বাংলাদেশের সা¤প্রতিক কবিতা, তুষার গায়েন
কবিতা
খলিল মজিদ, টোকন ঠাকুর
একবিংশ নবাগত
লিটন ওয়ারেস, কামরুজ্জামান কামু, মোশতাক আহমাদ দীন, মামুন নেসার য়াহমাদ
ধারাবাহিক অনুবাদ
টেরি ঈগলটন/সাহিত্যতত্ত্ব : পরিচয়, ইংরেজির উত্থান
আসমানী কবিতাগুচ্ছ
মাসুদ খান/ বহুদিন পর আবার প্রেমের কবিতা, রণক মুহম্মদ রফিক/ প্রতিবিশ্ব, তুষার গায়েন/আদি দর্শন
তরুণ কবিদের কবিতাভাবনা
হামিদ রায়হান/কবিতার বাঁকবদল : আজকের প্রেক্ষিত
গুচ্ছকবিতা
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ/গানের বাহিরে কবিতাগুচ্ছ
কামরুল হাসান, হাফিজ রশিদ খান, মুজিব মেহেদী, বায়তুল্লাহ কাদেরী, হামিদ রায়হান, খোন্দকার আশরাফ হোসেন
অনঘ এন্টেনা
ভ্রামণিক চোখ/রাশেদ মিনহাজ, ক. যে ‘ওয়েস্টল্যান্ড’ টি এস এলিয়ট লিখেননি, খ. উপদ্রুত বাংলাদেশ ও ইংরেজ কবি
ক্রোড়পত্র
বাঙালির দ্বিতীয় ভাষা আন্দোলন এবং বরাক উপত্যকার কবিতা, বাংলা সাহিত্যের তৃতীয় ভুবন/ বিজিত কুমার ভট্টাচার্য, বাঙালির আরেক ভাষা আন্দোলন ১৯শে মে ১৯৬১/ ডাঃ সুজিত চৌধুরী, ১৯মে ১৯৬১, সেদিন যা ঘটেছিল/ পরিতোষ পাল চৌধুরী, বরাক উপত্যকার কবিতা: ‘অতন্দ্র’ গোষ্ঠি/ তপোধীর ভট্টাচার্য
কবিতা
বিজিত কুমার ভট্টাচার্য/দিলীপকান্তি লস্কর/শক্তিপদ ব্রক্ষ্মচারী/করুণাসিন্ধু দে/উদয়ন ঘোষ/ বিমল চৌধুরী/ তপোধীর ভট্টাচার্য/রুচিরা শ্যাম/রণজিৎ দাশ
একবিংশ ১৭/ জুলাই ১৯৯৭
প্রবন্ধ
অতৃপ্ত এক নির্মাতা/ আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ, চেতনার নবধ্বনি/ তপোধীর ভট্টাচার্য, অরিয়েন্টালিজম এবং অতঃপর/ খোন্দকার আশরাফ হোসেন, ফুকোর মানব/ মঈন চৌধুরী
কবিতা
টোকন ঠাকুর, বায়তুল্লাহ কাদেরী, খলিল মজিদ, আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ, আশরাফ রোকন
ধারাবাহিক অনুবাদ
টেরি ঈগলটন, সাহিত্যতত্ত্ব : পরিচয়, অবভাসবাদ, ভাষ্যবিদ্যা ও পরিগ্রহণতত্ত্ব (চযবহড়সবহড়ষড়মু, ঐবৎসবহবঁঃরপং ধহফ জবপবঢ়ঃরড়হ ঃযবড়ৎু)
কবিতা
মাসুদ খান, শাহীন শওকত, মাহবুব মাসুম, মুজিব মেহদী, নান্নু মাহবুব
কবিতা
সৈয়দ হাসমত জালাল, সরকার মাসুদ, অভিজিৎ পাল চৌধুরী, মাঈন উদ্দিন জাহেদ, শামীম সিদ্দীকী
এই প্রজন্মের চোখ
জীবনানন্দ দাশের ‘হায় চিল’/ খলিল মজিদ
কবিতা
হাফিজ রশিদ খান, তুষার গায়েন, কামরুল হাসান, মেহেদী মাহমুদ চৌধুরী, রায়হান রাইন, হামিদ রায়হান
তরুণ কবিদের কবিতাভাবনা
কবিতার ভাষা : আজকের প্রেক্ষিত/ হামিদ রায়হান, উত্তর-ঔপনিবেশিক সাংস্কৃতিক চেতনা ও আজকের বাঙলা কবিতা/ হাফিজ রশিদ খান
কালের চৌকাঠ
গ্রন্থানুচিন্তন, রাশেদ মিনহাজ: সেলাই কলরর শব্দে চিত্রিত রোদন, খোন্দকার আশরাফ হোসেন: এলিয়ট-ভাবুকদের জন্য নতুন উস্কানি, সালমা আজিজ: তুষার গায়েনের কবিতা: রৌদ্রবেগরতিকল্পযোগ, রাশেদ মিনহাজ: একটি কালোপযোগী প্রকাশনা : সৃষ্টির সিঁড়ি, সালমা আজিজ: প্রান্তবাসীদের নিয়ে কবিতা
অনঘ এন্টেনা
আগরতলার কবিতা, শঙ্খপল্লব আদিত্য; সমরজিৎ সিংহ; প্রবুদ্ধসুন্দর কর; অশোক দেব; সুবিনয় দাশ
একবিংশ ১৮/ মার্চ ১৯৯৯
প্রবন্ধ
কবিতা ও চিত্রকলা/ দেওয়ান মিজান, বিনির্মাণের তত্ত্বরূপ/ তপোধীর ভট্টাচার্য, ইউরো- মার্কিন মানস ও শিল্পীর সত্তার সংকট/ ওলে সোয়িংকা
ধারাবাহিক অনুবাদ
টেরি ইগলটন-সাহিত্যতত্ত্ব পরিচয়
কবিতা
সরকার মাসুদ, রহমান হেনরী, রায়হান রাইন, তোফায়েল তফাজ্জল, মৃধা আলাউদ্দিন
কবিতা
মাসুদ খান, দাউদ আল হাফিজ, শামীম পারভেজ, শাহরিয়ার ইমতিয়াজ, মুক্তি মণ্ডল, শৈলজানন্দ রায়
অনঘ এন্টেনা
জয় গোস্বামীর সাথে সাক্ষাৎকার; মাথার নিচে বসুন্ধরা, দু-পায়ে কৈলাস
কবিতাবিশ্ব
কবি বাশো/ দাউদ আল হাফিজ, ইয়র্কশায়ার রিপারের ব্যালাড/ খোন্দকার আশরাফ হোসেন
কবিতা
কামরুল হাসান, মুজিব মেহদী, আশরাফ রোকন, আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
কবিতা
জাহিদ হায়দার, খোন্দকার আশরাফ হোসেন, খলিল মজিদ
ক্রোড়পত্র ঃ আবুল হাসান বিশ্বজিৎ ঘোষÑ আবুল হাসান : জীবনবোধ ও কাব্যসাধনা, আবুল হাসানের অপ্রকাশিত নাটকÑ পরিস্থিতি
একবিংশ ১৯/ আগষ্ট ২০০০ (নজরুল-জীবনানন্দ সংখ্যা)
মোহাম্মদ রফিকÑ একই সিঁড়ির দুই পৈঠা; রাজিয়া খানÑ দুই কবি; মুসতাফা সায়ীদÑ কবি ও কবিকৃতি: নজরুল ও জীবনানন্দ; সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীÑ দূরের আবার কাছেরও, কাজী নজরুল ইসলাম ও জীবনানন্দ দাশ; নজরুল: জীবনপঞ্জি; জীবনানন্দ জীবনপঞ্জি, অমিতাভ চক্রবর্তিÑ নজরুলের কৈফিয়ত: উচ্চসাহিত্যবাদের কাউন্টারÑ ডিসকোর্স; আবু হেনা আব্দুল আওয়ালÑ নজরুলের কাব্যচিন্তা; মাহমুদ রশীদÑ বিদ্রোহী : একটি পাঠ; সৌমিত্র শেখরÑ চিঠিপত্রে নজরুলের ভাবনা ও তাঁর ব্যক্তিমানস; সুব্রত কুমার দাসÑ নজরুল রচনায় ইউরোপীয় সাহিত্যের উল্লেখ; তপোধীর ভট্টাচার্যÑ জীবনানন্দ ও আদিকল্প : শত জলঝর্ণার ধ্বনি; ফকরুল আলমÑ চড়বসং ড়ভ ঔরনধহধহধহফধ উধং; অঞ্জন সেনÑ চেতনার অন্তঃশীল আলো: মহাজিজ্ঞাসা, সঞ্জীব দেবলস্করÑ ধানসিড়ি থেকে জাটিঙ্গা: একটি ব্যক্তিগত প্রতিবেদন; কুয়াত ইল ইসলামÑ এ পৃথিবী একবার পায় তারে; গালিব আহসান খানÑ জীবনানন্দ কাব্যে অস্তিত্ববাদ প্রসঙ্গে; তুষার গায়েনÑ কে এই শক্তি: প্রোষিতভর্তৃকা; শিশির ভট্টাচার্য্যÑ অনূদিত বনলতা: একটি অর্থতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, রামবহাল তেওয়ারীÑ কাজী নজরুল ইসলাম ও জীবনানন্দ দাশের ছন্দ ও ছন্দভাবনা
একবিংশ ২০/ মার্চ ২০০১
প্রবন্ধ
ওক্তাবিয়ো পাসÑ কবিতা ও মুক্তবাজার, কুয়াত ইল ইসলামÑ নোতুন কবিতা
কবিতাগুচ্ছ
তুষার গায়েন/সৌভিক রেজা/বায়তুল্লাহ কাদেরী/জাহিদ হায়দার/সুনীল আচার্য/কামরুল হাসান/দাউদ আল হাফিজÑ মোস্তাক আহমাদ দীন/রাজেন্দ্র ভাণ্ডারী
ধারাবাহিক অনুবাদ
টেরি ঈগলটন-সাহিত্যতত্ত্ব: পরিচয়, কাঠামোবাদ ও চিহ্নবিদ্যা (ঝঃৎঁপঃঁৎধষরংস ধহফ ঝবসরড়ঃরপং)
একবিংশে নবাগত কবিকুল
আনন্দ রোজারিও/রাসেল আশেকী/সেঁজুতি বড়–য়া/আর্যনীল মুখোপাধ্যায়/সৈয়দ শরীফ/আহাম্মেদ কবীর/নকীব হুদা/সারোয়ার সবুজ
ব্যাকুল পার্থিবা
খোন্দকার আশরাফ হোসেনÑ কোরিয়ার কবিতা ‘সিজো’
রঙিন আয়োজনÑ রশিদ হারুন/ডিমবন্দনা
কবিতাগুচ্ছ
মঈন চৌধুরী/আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ/রণক মুহম্মদ রফিক/দেওয়ান মিজান
অনুবাদ
টেড হিউয়েজের কাকÑ খোন্দকার আশরাফ হোসেন
কালের চৌকাঠ
বুদ্ধদেব বসু : সুন্দরের ধেয়ান না বিবরপ্রয়াণ? Ñইমরান প্রামাণিক
গ্রন্থানুচিন্তন
পাঠকের অপেক্ষায় তিনজন কবিÑ রাশেদ মিনহাজ
ক্রোড়পত্র
অমিয় চক্রবর্তী : শতবর্ষস্মরণ
বেগম আকতার কামাল-অমিয় চক্রবর্তীর কবিতার প্রাসঙ্গিকতা সৌভিক রেজা-অমিয় চক্রবর্তী : একটি অভিতপ্ত আর্তি; অমিয় চক্রবর্তী : জীবনপঞ্জি;
অমিয় চক্রবর্তী-কেন লিখি; অমিয় চক্রবর্তী সম্পর্কে চূর্ণ মন্তব্য; অঞ্জন সেনÑ অমিয় চক্রবর্তী : শতবর্ষের স্মরণ; অমিয় চক্রবর্তীর কবিতা : পুর্নপাঠ; অঞ্জন সেনকে অমিয় চক্রবর্তীর পত্র লেখা অমিয় চক্রবর্তীর সাক্ষাৎকার; আব্দুল মান্নান সৈয়দÑ অমিয় চক্রবর্তী : ঈশ্বরিত মানুষের কথা।
একবিংশ ২১/ মে ২০০২
প্রবন্ধ
খোন্দকার আশরাফ হোসেনÑ প্র“ফ্রকের পুত্রগণ অথবা বাংলা কবিতার নির্বিণœ পুরুষ; এম.এম.আকাশÑ উত্তর-আধুনিকতাবাদ ও মার্কসবাদ; মাসুদ খানÑ কবিতার বাইরে এসে দাঁড়িয়ে
ধারাবাহিক অনুবাদ
টেরি ঈগলটনÑ সাহিত্যতত্ত্ব : পরিচয়, উত্তর-কাঠামোবাদ (চড়ংঃ-ঝঃৎঁপঃঁৎধষরংস)
কবিতা
বায়তুল্লাহ কাদেরী/খোন্দকার নিপন/সন্তর্পণ ভৌমিক/আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ/কামরুল হাসান/মোস্তাক আহমাদ দীন/সুনীল আচার্য/সরকার মাসুদ/ফেরদৌস নাহার/তুষার গায়েন/কামরুল ইসলাম/রাসেল আশেকী
কবিতাবিশ্ব
সরকার মাসুদÑ ওয়েষ্ট-ইণ্ডিয়ান সংস্কৃতি ও ডেরেক ওয়ালকটের ‘শব্দসফলতা’
কালে চৌকাঠ
নাজমা আক্তার-আন্তঃমহাদেশীয় চারুকলা প্রদর্শনী : নান্দনিকতার উৎস, ইমরান প্রামাণিকÑ স্মৃতির জলযান : সায়ীদের সফরনামা
কবিতা
খোন্দকার আশরাফ হোসেন/সৌভিক রেজা, সেঁজুতি বড়–য়া/পাঁশু প্রাপণ/জওয়াহের হোসেন মৃধা আলাউদ্দিন/জুনান নাশিত/ফারহান ইশরাক
ক্রোড়পত্র : সুধীন্দ্রনাথ জন্মশতবর্ষ
বেগম আকতার কামালÑ সুধীন্দ্রনাথের সন্ধানে; সুধীন্দ্রনাথ দত্তÑ আত্মজীবনীর খসড়া, সুরজিৎ দাশগুপ্তÑ আমার স্মৃতিতে সুধীন্দ্রনাথ; মুসতাফা সায়ীদÑ সুধীন্দ্রনাথ দত্তের গদ্যচর্চা: ক্ষয়ক্ষতি ও উপার্জন; সিদ্দিকা মাহমুদাÑ শব্দধানুকী সুধীন্দ্রনাথ; তপনজ্যোতি বড়–য়াÑ স্থপতি সুধীন্দ্রনাথ: লিরিকের আবেগমনন: প্রভাতকুমার দাসÑ সুধীন্দ্রনাথ দত্ত: জীবনীপঞ্জি ও গ্রন্থপঞ্জি; সৌমিত্র শেখরÑ অর্কেস্ট্রা: ‘এখনও সুন্দরা’
সংযোজন
সুব্রত অগাষ্টিন গোমেজের সনেট-পরম্পরা ‘পুলিপোলাও’
একবিংশ ২২, নভেম্বর ২০০৩
প্রবন্ধ
মুসতাফা সায়ীদÑ শিল্পসাহিত্যে আধুনিকতার তত্ত্ব; তপোধীর ভট্টাচার্যÑ জীবনানন্দ, আধুনিকতা পেরিয়ে; শিশির ভট্টাচার্য্যÑ সেমিওলজি ও ঈশ্বর; সৌমিত্র শেখরÑ কবিতায় স্বাধীনতা; ‘কি কহিলি, বাসন্তি?’ খোন্দকার আশরাফ হোসেনÑ পোস্টমর্ডার্ন লীলালাস্য ও বাংলা কবিতা
কবিতা : একবিংশে নবাগত কবিকুল
অনিদ্য রহমান, খালেদ রাজ্জাক, আহমদ সায়েম, জাকির জাফরান, পলাশ দত্ত, গৌতম দাশগুপ্ত, ফেরদৌস মাহমুদ, কাজী জহিরুল ইসলাম
ধারাবাহিক অনুবাদ
টেরি ঈগলটন/সাহিত্যতত্ত্ব : পরিচয়, মনোসমীক্ষণ
কবিতা
আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ/ফারহান ইশরাক/বায়তুল্লাহ কাদেরী/মোস্তাক আহমাদ দীন/মঈন চৌধুরী
কবিতাবিশ্ব
কুমার চক্রবর্তীÑ হার্ট ক্রেন : ‘বাক্কাসের মতো আছে জয় করবার অধিকার’
হার্ট ক্রেনের কবিতাÑ অনুবাদ : খোন্দকার আশরাফ হোসেন
কবিতা
কামরুল হাসান/ খোন্দকার আশরাফ হোসেন
কালের চৌকাঠ
মুসতাফা সায়ীদÑ জসীম উদ্দীন ও বাংলায় সাহিত্যচর্চার সমস্যা
গ্রন্থানুচিন্তন
সুব্রত অগাস্টিন গোমেজÑ হাড়িতে সাপের চক্র দেখেও স্বপ্ন মানে না মানা;
নিতাই জানা, ইদংপ্রত্যয়Ñ রাশেদ মিনহাজÑ নদীবর্তী দুই কবি, কতটা দূরের; রাশেদ মিনহাজÑ কমলায় নৃত্য করঙ
একবিংশ ২৩, ফেব্র“য়ারী ২০০৮
প্রবন্ধ
তপোধীর ভট্টাচার্যÑ কবিতা, প্রচ্ছন্ন গভীরতম, মোহাম্মদ আজমÑ কবি ও কবিতার সন্ধানে ‘নিতাইপুর’, শিশির ভট্টাচার্য্যÑ গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদ: অক্সফোর্ড গাড়ি ও বেয়াড়া এক ঘোড়ার কাহিনী, খোন্দকার আশরাফ হোসেনÑ এই যে সোনার ধান : ২০০০-এর কবিতা
কবিতা
কামরুল হাসান, মোস্তাক আহমদ দীন, সিদ্ধার্থ শংকর ধর, রণক রফিক
ধারাবাহিক অনুবাদ
টেরি ঈগলটনÑ পবিত্র সন্ত্রাস
কবিতা
খোন্দকার আশরাফ হোসেন, ঝর্না রহমান, রাজু আহমেদ মামুন, বায়তুল্লাহ কাদেরী
তত্ত্বতালাশ
ফ্রেডরিক জেমসনÑ তত্ত্বের রাজনীতি : উত্তরাধুনিকবাদ বিতর্কে আদর্শিক অবস্থান
কবিতাবিশ্ব
কাজল বন্দোপাধ্যায়Ñক্রিস্টোফার ওকিবো : বাংলাদেশে, পৃথিবীতে আলো ক্রিস্টোফার ওকিবোর কবিতাÑ অনুবাদ কাজল বন্দোপাধ্যায়
কবিতা
কাশীনাথ রায়, শরীফ শাহরিয়ার, মঈন চৌধুরী
উত্তর আধুনিক চাতালে
অমিতাভ চক্রবর্তীÑ উত্তর আধুনিকতা: সহজপাঠ; খোন্দকার আশরাফ হোসেনÑ উত্তর আধুনিক চাতালে; উৎপল বসাকÑ অঞ্জন সেন-এর কাব্যভাষা সন্ধানে
একবিংশ ২৪/ ফেব্র“য়ারী ২০০৯ (বুদ্ধদেব বসু জন্মশতবর্ষ)
কবিতা
কামরুল ইসলাম, সিদ্ধার্থশংকর ধর, রাজু আহমেদ, হাসানআল আব্দুল্লাহ, কামরুল হাসান, রেহমান সিদ্দিক, শরীফ শাহরিয়ার, সজল সমুদ্র, মাদল হাসান, অনন্ত সুজন, সোহেল হাসান গালিব, রুদ্র শায়ক
প্রবন্ধ
খোন্দকার আশরাফ হোসেনÑ আধুনিকবাদ, জি এম হাইডÑ আধুনিকবাদ ও গীতিকবিতা: নগর-কাব্য-ভাষান্তর: জাকির মজুমদার
বুদ্ধদেব বসু-জন্মশতবর্ষ, আব্দুল মান্নান সৈয়দÑ‘মুখবন্ধে মৃত্যু, পরিণামে পুনরুজ্জীবন’; খোন্দকার আশরাফ হোসেনÑ আত্মতার বন্দীই মূলত; আইনুল মাজেদীনÑ আমার বুদ্ধদেব বসু; কামরুল ইসলামÑ বুদ্ধদেব বসু : বিশুদ্ধ শিল্পের উপাসক; মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়Ñ চেনাছকের বাইরে: বুদ্ধদেব বসুর ‘রূপকথার মতো’ গল্প ও কবিতা; মাহবুব সাদিকÑ বুদ্ধদেব বসুর সংক্রান্তি: কালের রূপক; প্রভাতকুমার দাসÑ বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত প্রগতি ও কবিতা; প্রভাতকুমার দাস-বুদ্ধদেব বসু : জীবন ও গ্রন্থপঞ্জি; কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়-একটি সমালোচনার সমালোচনা : বুদ্ধদেব বসুর ‘প্রগতি’-সংযোগ; মুসতাফা সায়ীদÑ বুদ্ধদেব বসুর সাথে বামপন্থীদের ঝগড়া; বিশ্বজিৎ ঘোষÑ বুদ্ধদেব বসুর উপন্যাসে ঢাকা শহর।
কবিতা বিশ্ব
মার্কিন কবিতাসন্ধ্যা : ছোটো কবিতার উৎসবÑ হাসানআল আব্দুল্লাহ
তত্ত্ববিশ্ব
হাসান আল যায়েদÑ ফুকো, সাইদ এবং ক্ষমতা/প্রতিরোধ-অনুবাদ : আহমেদ জায়েদ চৌধুরী রনি।
দুই ভিন্ন শিল্পের সাধনসূত্র : স্থাপত্য ও কবিতা
সফিউল আজম মঞ্জু
দুই ভিন্ন শিল্পের সাধনসূত্র : স্থাপত্য ও কবিতা
১. প্রারম্ভ
আদি পিতা কি রোদ-বৃষ্টির উন্মথিত প্রান্তরে পথ খুঁজেই জীবনের ইতি টেনেছিলেন, নাকি বৃক্ষ-কোটরে, গুহার কন্দরে, পাথরের শরীরে শরীর এলিয়ে, পাথরের বেদনার আথে আপন বেদনার সংগতি খুঁজেছিলেন, সে কথা বলা কঠিন। তবু জন্মাদি-জন্ম পুরুষ-পরমপরায় সৃষ্টি হয়েছে-মহেঞ্জোদারো, বেবিলন, টায়ার, এথেন্স, ইলিয়াড, ওডিসি, মহাভারত কিম্বা আরব্যরজনীর জমকালো জীবনবিন্যাস। এই সৃষ্টিপ্রক্রিয়ায় কারা ছিল? কে আগে, কে পরে? না কবি, না স্থপতি, এরা কেউ নয়, ছিল শুধু চেতনার বিস্ময়কর দর্শন সে হোক কবিতা অথবা স্থাপত্য।
২. কবিতা ও স্থাপত্য
কবিতা শিল্পের আদিমতম, বিশুদ্ধ ও সুন্দরতম রূপ হিসেবে গণ্য। পাশাপাশি স্থাপত্য প্রযুক্তিনির্ভর হলেও, এ আরও প্রাচীন বলে দাবি করা যেতে পারে। কারণ মানুষ তার শুরু থেকেই চেষ্টা করছিল অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের প্রাথমিক চাহিদা নিশ্চিত করতে। স্থাপত্য তার কর্ম-পরিধি বাড়ালেও মানুষের আদিম বাসস্থান থেকেই যে তারা যাত্রা শুরু হয়েছিল, সে কথা মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা যায়। তাই মানব জাতির আত্মিক ও মৌলিক চাহিদা পুরণের দুইটি ভিন্ন মাধ্যম হলেও উভয়ের যাত্রাকাল প্রায় সমসাময়িক এবং এদের উৎসরণ এক জায়গা থেকেই। আমাদের মেধায়-চেতনায়। সেখানেই শুরু হয় এদের আত্মীয়তার, এদের সৌন্দর্যের বোধন, এদের মিলনের সাধনসূত্র।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-“আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ”। আসলে সব বোধের শীর্ষ আমাদের চেতনায় এক হয়ে গেলেও বস্তুজগৎ গড়ে উঠেছে ভিন্ন ভিন্ন বস্তুগত স্বাতন্ত্র্য নিয়ে। সেখানে স্থাপত্য আর কবিতার ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হয়। কবিরা কবিতা লেখেন, স্থপতিরা স্থাপত্য করেন আপন স্বকীয়তায় কিন্তু সেখানেও ব্যক্তি, সমাজ, মানবতার দায়বদ্ধতায় কবি ও স্থপতিকে একই পৃথিবীর মানুষ হতে হয়; তাদের হৃদয়কে উজ্জীবিত করতে হয় সত্যের সুমহান বারিধারায়।
যদিও চার হাত-পায়ে কবি স্থপতি সাদা-কালো মানুষ, তাদের হৃদয়ের, মননের, বুদ্ধির গতি আছে, আছে দুর্গতি। তাঁরা বেঁচে থাকেন কবিতা ও স্থাপত্যের জন্য। তাঁরা যোগানদারের কাজ করে যান। কারণ কবিতা ও স্থাপত্য স্বয়ম্ভূ। তারা আপন সময় থেকে জন্ম নেয়, আপন গতিতেই এগিয়ে যায়। ধন্য কবি ও স্থপতির হৃদয়Ñ সেখানে দেবীর মত তারা উদ্ভাসিত হয়। কবি ও স্থপতির নশ্বর হাত যন্ত্রের মত সে উদ্ভাসের শরীর গড়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। কবির ভাষায় বলতে হয়Ñ
মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব-
থেকে যায়.....
আজকের আগের যেই জীবনের ভিড় জমেছিলো।
তারা মরে গেছে;
প্রতিটি মানুষ তার নিজের স্বতন্ত্র সত্তা নিয়ে অন্ধকারে হারায়েছে;
তবুও তারা আজকের আলোর ভিতরে
সঞ্চারিত হয়ে উঠে আজকের মানুষের সুরে
যখন প্রেমের কথা বলে
অথবা জ্ঞানের কথা বলে
(জীবনান্দ দাশ, ‘মানুষের মৃত্যু হলে’)১
এই সত্যদর্শন মূলত আবেগ, মনন-এর পতাকাবাহী। বুদ্ধিকে বুদ্ধি, বিত্তকে বিত্ত পর্যদুস্ত করবার জন্য সদাব্যস্ত। কিন্তু আবেগের কোন প্রতিযোগী নেই; তাই আবেগের অরুদ্ধ গতি মানুষকে নিয়ত মানবিক করে তোলে আর মনন মানবকে করে তোলে পরিশীলিত দ্রষ্টা। যে প্রকৃতির ভাষা বোঝে, সৈকতে একটি ধুলিকণা অথবা নভমণ্ডলের মৃতনক্ষত্রটিও যার কাছে অর্থবহ, তিনিই মানুষের নেতা, তাঁর বাক্যই কবিতা; তাঁর নির্মাণই স্থাপত্য! তিনি দেখেন এবং রেখে যান তাঁর দৃষ্টির অনুকৃতি। তিনি গড়ে তোলেন সময় ও স্থানের সম্পর্ক। এই সম্পর্ক প্রকৃতিকে অনুকরণের ফসল। কিন্তু শুধুই কি অনুকরণ? ঠিক তা নয়, তাহলে প্লেটোর কর্মকার আর দ্রষ্টা এক হয়ে যাবে।
তবুও অনুকরণ শিল্পের সামান্য ধর্ম, বোধের প্রকাশ। এরিস্টটল বলেছেন “অৎঃ রসরঃধঃবং হধঃঁৎব”২ কিন্তু এই প্রকৃতি হচ্ছে সৃজনীশক্তি সৃষ্টির নিয়মতন্ত্র। সৃষ্টি তার আপন নিয়মেই স্বাধীনতার দাবিদার, সেজন্য কাউকে অধীন বা বিনাশ করা সৃষ্টির উদ্দেশ্য নয়। পারস্পরিক সহমর্মিতা, পাশাপাশি দাঁড়ানোর জন্যই থাকে সৃষ্টি প্রচেষ্টা, এর জন্য চাই সৃষ্টির আপন অধীনতা। কবিতা ও স্থাপত্যের শরীর এই আপন অধীনতায় নত হয়ে বেড়ে ওঠে। এই আপন অধীনতার সংকেতন হচ্ছে-স্থান, কাল, রূপ, সুর, ছন্দ ইত্যাদি, যা সমস্ত বিশ্ব-প্রকৃতি মেনে চলছে। কিন্তু প্রকৃতির এই নিয়মানুবর্তিতা যন্ত্রের অনুরূপ নয়। যন্ত্র সামগ্রিকভাবে একটি সম্পন্ন বিষয়ে অথবা সমাপ্ত বিষয়Ñ যতক্ষণ না সে সমাপ্ত হচ্ছে ততক্ষণ সে যন্ত্র নয়। সুতরাং প্রকৃতি যন্ত্র নয়; প্রত্যেক মুহূর্তে প্রকৃতি রূপ পাল্টাচ্ছেÑ সকালে সে এক ভাষায় কথা বলে, বিকালে অন্য ভাষায়। নিয়ত তার পরিবর্তন হচ্ছে, তার গতি সময়ের সমান্তরাল, আর সময় হচ্ছে এক মহাচক্র, যার কোন কেন্দ্র নেই, আদি বা অন্ত নেই, আছে অভিঘাত, যে অভিঘাত থেকে জন্ম নেয় নীহারিকা, ছায়াপথ, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, মানব-মহামানব, সভ্যতা। সভ্যতার প্রাঞ্জল-দলিল কবিতা ও স্থাপত্য সময়ের চক্রলতায় ফোটা ফুল; তারা সময়ের সৌরভ, বর্ণ নিয়ে ফুটে থাকে। যাঁরা দ্রষ্টা, গতিমান, তাঁরা সময়ের চাহিদা মোতাবেক প্রকৃতির মূর্তি এনে হাজির করেন মানুষে চত্বরে। তখন আমরা বলে উঠি, এই তো সেই কবিতা বা সৌধ, যা আমাদের হৃদয়ের সমান।
৩. কবিতা ও স্থাপত্য- পারস্পরিক সম্পর্ক
কবিতা ও স্থাপত্যের পারস্পরিক সম্পর্ক তাদের পাদপিঠ, স্থাপন, কাল, রূপ (ঋড়ৎস), সুর, ছন্দ ইত্যাদির ভেতর। আদি বাক্য-ধারা সময়ের সাথে সাথে যেমন রূপ পাল্টিয়েছে, আধুনিক থেকে অতি-আধুনিক হয়ে উঠেছে, ঠিক একই রকম অগ্রযাত্রা ঘটেছে স্থাপত্যেওÑ গুহা কিংম্বা স্টোন-হেঞ্জের যুগ পার হয়ে, কালে-কালে ক্লাসিক, মডার্ন, পোস্ট-মডার্ন ও বিনির্মাণের যুগে এসে উপনীত হয়েছে। যদিও একটি কবিতা সামান্য দ্বিমাত্রিক ক্ষেত্রে তৈরী হয়, কিন্তু এর প্রেক্ষাপট স্থাপত্যের মত ত্রিমাত্রিক। কখনো সময়কে আয়ত্ত করে তা চতুর্মাত্রিকতাও পেয়ে যায়। তাই সময়ের পরম্পরায় স্থান (ংঢ়ধপব) কবিতা ও স্থাপত্যে রূপনির্ধারক হয়ে এসেছে। এক অর্থে ব্যবহার
উপযোগী স্থান বা পরিসর (ংঢ়ধপব) নকশা করাই স্থাপত্যের উদ্দেশ্য। কিন্তু স্থানের সংজ্ঞা কি? আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন যে শক্তির ঘনীভূত রূপ হচ্ছে বস্তুনিচয়, আর মহাশূন্য হলো শক্তির দুর্বল গ্রন্থি। কিন্তু বস্তুনিচয় আর মহাশূন্যের পার্থক্য গুণগত দিকের চেয়ে পরিমাণগত ভাবে বেশি প্রকাশিত।৪
বোঝাই যাচ্ছে আমাদের ভাব জগৎ এখানে গাণিতিকভাবে পরিমিত। কিন্তু এটা হচ্ছে একটা দিক। অন্য দিকে প্লেটো বলেছেন যে ‘ংঢ়ধপব’ হচ্ছে বিশ্ব-প্রকৃতি, যে সমস্ত বস্তুনিচয় ধারণ করেও একই রূপে থাকে, বস্তুনিচয় ধারণ কালে সে নিজে রূপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় না; এবং কখনো গ্রহণ করে না তার ভিতরে ঢুকে-পরা বস্তুনিচয়ের রূপ; সে সকল বিষয়ের সহজাত ধারক এবং এই সকল বিষয় দ্বারাই সে সঞ্জীবিত এবং এদের কারণেই কালে-কালে এর রূপ ভেদ ঘটে।৫
প্লেটোর মহাশূন্য যেন ডিমের অন্তর্লোকে এলবুমিনসহ ভাসমান কুসুম। কুসুম হচ্ছে বস্তু-নিচয়ের উপমা। আমরা সেই কোন এক বস্তুনিচয় পৃথিবীর বাসিন্দা। মহাকর্ষে আটকে-থাকা দেহ ছেড়ে আমাদের মন উড়ে বেড়ায় দূর-ছায়াপথে। তারপর অজানার রহস্য এনে, কোন চিরশান্তির সম্ভাবনা নিয়ে পৃথিবীর মাটিতে কবিতার শেকড় গাড়ি; অথবা ছায়াপথের কোন নীল নক্ষত্রের দিকে চেয়ে অসীমকে আত্মীয় করে পিরামিড গড়ি।
৪. স্থাপত্য ও কবিতা: তুলনামূলক বিশ্লেষণ
কবিতা ও স্থাপত্যের পারস্পরিক তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে যাওয়ার আগেই জেনে নেয়া দরকার কবিতা ও স্থাপত্য কি? স্থাপত্য সম্পর্কে এর উত্তর যতটা সহজ কবিতা সম্বন্ধে ঠিক ততটা নয়। কবিতার বৈধ অর্থের সংখ্যা এত বেশি যে এর স্বভাব কিম্বা সুস্পষ্ট কোন সংজ্ঞা নির্ধারণ করা প্রায় অসম্ভব। যেমন ওয়ার্ডসওয়ার্থ বলেছেন “চড়বঃৎু রং ঃযব ংঢ়ড়হঃধহবড়ঁং ড়াবৎভষড়ি ড়ভ ঢ়ড়বিৎভঁষ ভববষরহমং” যখন কোলরিজ বলেছেন কবিতা হচ্ছে-“ইবংঃ ড়িৎফং রহ ঃযব নবংঃ ড়ৎফবৎ.” আবার কেউ কেউ বলেছেন কবিতা হচ্ছে শব্দ এবং শব্দই কবিতা।৬
কবিতা সম্পর্কে এই বিভ্রম প্রাচ্য কাব্যতাত্ত্বিকদের মধ্যেও বিদ্যমান, তবু তাঁরা স্বীকার করেন, যে কথায় রস থাকে, তাই কাব্য বা কবিতা, আর এখানেই কবিতা ও স্থাপত্যের সবচেয়ে বড় সম্পর্কটি সৃষ্টি হয়েছে।
৫. কবিতা ও স্থাপত্য : কয়েকটি সাধারণ বিষয়-এর আলোচনা
কবিতা বা স্থাপত্যে অভিজ্ঞতাকে সংহত ভাবে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ইমেজের জন্ম হয়েছে। ইংরেজি ইমেজ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত কৃত বাংলারূপ চিত্রকল্প, প্রকৃত অর্থে এক ধরনের চিত্রোপমা; ফরাসী সমালোচক দিদেরো একে বলেছেন “যবরৎড়মষুঢ়যরপ ঢ়ধরহঃরহম” অর্থাৎ “চধরহঃরহম হড়ঃ ঃড় ঃযব বুব নঁঃ ঃড় ঃযব রসধমরহধঃরড়হ.” আর শেলির কাছে ওসধমরহধঃরড়হ অমর ঈশ্বর, আর তিনি নিজে তাঁর প্রেরিত পুরুষ।৭ তাই ইমেজ কবি বা স্থপতির আত্মার গভীর সংকেত বহন করে। ইমেজ অন্তর্দৃষ্টির বা ইন্দ্রিয়বেদ্য অনুভূতির প্রকাশ। চিত্রকল্প তাই সাধারণ চিত্র নয় তারও অধিক। রবীন্দ্রনাথের চিত্রোপমার বিশ্লেষণ প্রসংগে বুদ্ধদেব বসুর উক্তিÑ “উপমা, উপেক্ষা, চিত্রকল্প এমন কি প্রতীকÑ এই সব গুলোই উপমার অভিজ্ঞানের মধ্যে ধরে নিতে হবে। শুধু মতো থাকলেই উপমা হলো তা নয়। ভাব যেখানে ছবি হয়ে উঠেছে, কিন্তু সেখানে স্পর্শসহরূপ নিল সেখানেই কোন না কোন, সূক্ষ্ম চতুর লুক্কায়িত উপায়ে উপমার ব্যবহার অনিবার্য।”৮ কিন্তু সাধারণ চিত্রগুলোকে ধরেই চিত্রকল্পের জন্ম, অনেকটা মাটিতে পা রেখেই আকাশ ছোঁয়ার সুযোগ করে দেয় চিত্রকল্প। আবুল হাসানের মিসট্রেসঃ ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ‘কবিতার চিত্রোপমা’Ñ
প্রতিদিনই এরকম প্রতিটি পাখিকে,
যেন ক্লিপের মতোন
অই বনভূমি গেঁথে নেয় তার
স্নিগ্ধ সবুজ খোঁপায়, ভোর বেলা
ময়ূর পেখমের মতো খোলা রোদে বসে।৯
কবি পাখি আর প্রকৃতির সমম্বয় ঘটিয়েছেন ক্লিপের বন্ধনে, যে ক্লিপ কবির দয়িতার কাঁকন-কর্ষিত চুলে রূপের আরাধ্য, অথবা তিনি দয়িতার কেশচর্চার দৃশ্য হৃদয়ে প্রশস্ত করেছেন, প্রকৃতি দর্শনের উপমায়। এভাবে তিনি আমাদেরকে কয়েকটি দৃশ্যের ভিতর নিয়ে ছেড়ে দেন। তারপর আমরা নিজেরাই দৃশ্যের অর্থসঞ্চার করি, যার যে-রকম ইচ্ছে, যে যে-রকম ভাবে দেখতে ভালবাসি। তখনই সাধারণ দৃশ্যগুলো আরও বিশাল অর্থময়তা লাভ করে।
ইমেজ বা চিত্রকল্প দৃষ্টির কাজে কবি বা স্থপতি তাঁর কর্মে দৃশ্য (ংড়ষরফ) ও অদৃশ্য (াড়রফ) কে পাশাপাশি সাজিয়ে অভিনব দৃশ্যপাত ঘটান। যে দৃশ্য অবশ্যই সজীব, প্রাণময়-মহানের দিকে ধাবিত, সময় যার অনুষঙ্গ। বিশেষত স্থাপত্যের ক্ষেত্রে একথা বিশেষভাবে প্রযোজ্য।
একটি স্থাপত্যকর্ম প্রকৃতির প্রেক্ষাপটে নিজেকে ফুটিয়ে তোলে। দৃশ্যে ও অদৃশ্যে স্থাপত্যের প্রাথমিক শারীরিক প্রকাশ। দৃশ্য ও অদৃশ্যের সার্থক সমন্বয়ে স্থাপত্যের ইমেজে’র জন্ম। প্রাসংগিকভাবে লুই কানের সংসদ ভবন, ঢাকার কথাই বলা যেতে পারে। এই স্থাপত্যকর্মে ভবনের বলিষ্ঠ দেয়ালগুলোর শরীর যে বিরাট জামিতিক ছিদ্রগুলো করা হয়েছে তার প্রতিটির পিছনেই আছে ভিতর দেয়ালের অসংখ্য জানালা, যারা বহির্দৃশ্যের বিরাট ছিদ্রগুলো সমন্বিত করে সামগ্রিকভাবে এক বিশালত্বের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এইগুলো হচ্ছে ভবনের চোখ, যায় ভিতর দিয়ে ভবন ও প্রকৃতি নিকটবর্তী হয়েছে।
স্থাপত্য কবিতার মত শুধু ভাবের ত্রিমাত্রায় সীমাবদ্ধ নয়, তার প্রত্যক্ষ বাস্তবতা আছে। স্থাপত্যের ভিতর-বাহির প্রায়শই সমান গুরুত্ববাহী; তার বহিরাংশের মত ভিতরাংশও এক প্রকার কল্পনার বাস্তবতা। যে বাস্তবতার ভিতর আমরা ঘুমাই; ঘুরি, বসবাস করি।
জরপযধৎফ গবরবৎ বলেছেন. “অৎপযরঃবপঃঁৎব রং ারঃধষ ধহফ বহফঁৎরহম, নবপধঁংব রঃ পড়হঃধরহং ঁং, রঃ ংঁনংঃধহঃরধঃবং ঃযব ংঢ়ধপব বি ষরাব রহ, সড়াব ঃযৎড়ঁময ধহফ ঁংব”১০ সারকথা হচ্ছে আমাদের চেতনায় এর রয়েছে সার্বক্ষণিক প্রভাব। তাই স্থপতিকে এখানেও ভাবতে হয়, এখানেও তাকে দৃশ্যের অবতারণা করতে হয়। কারণ দর্শনেই জীবন শুরু। বহিরঙ্গে স্থাপত্য বিশ্বব্যাপি, সেখানে স্থাপত্য দিন ও রাত্রির ভুবন জোড়া আলো-অন্ধকারের ভিতর ব্যাপ্ত। কিন্তু ভিতরাঙ্গে সে সন্তরমান আলো-অন্ধকারের ধারক। লুই কান বলেছেন যে, স্থপতিরা অতিশয় শক্তিধর, তাঁরা দিনকে রাত এবং রাতকে দিন করতে পারেন। এখানে তিনি এই ভিতরঙ্গের কথাই নির্দেশ করেছেন। প্রায়শই ভিতরঙ্গের পরিসর নক্সা, দৃশ্য পাতন বহিরঙ্গের বিপরীত। বহিরঙ্গের বোধকে শরীর দিয়ে উজ্জীবিত করার চেষ্টা, চলে, ব্যবহারিক তলগুলো আনুভূমিক, উল্লম্ব তলগুলো আনুভূমিক তলগুলোকে সীমাবদ্ধ করে। ভিতর বাহির সৃষ্টি করে। আবার কোথাও কোথাও উল্লম্ব তল নাই হয়ে ভিতরকে অধিক উপযোগী করে তোলে, বাহিরের সাতে আত্মীয়তা ঘটিয়ে। আনুভূমিক, উলম্ব, কৌণিক ইত্যকার তল হচ্ছে স্থপতির কাঁচামাল, তাকে তিনি বস্তুগত চাহিদায় সাজান কল্পনার মাধুর্যে। এই জন্য যে-কোন স্থাপত্য কর্মই শুরুতে চেতনার জগতে থাকে, তারপর বাস্তবতা পায়। পরিশেষে সে নিজেই চেতনার নতুন জগৎ তৈরী করে অসীম হয়ে ওঠে। লুই কানের স্থাপত্য সম্বন্ধে এরকম ধারণকেই প্রকারান্তরে স্থাপত্যের চিত্রকল্পনির্ভরতা বলা যায়। জীবনানন্দ দাশ লিখেছেনÑ
ফাল্গুনের অন্ধকার নিয়ে আসে সেই সমুদ্র পারের কাহিনী,
অপরূপ খিলান ও গম্বুজের বেদনাময় রেখা.....
রামধনু রঙের কাচের জানালা,
ময়ূরের পেখমের মতো রঙিন পর্দায় পর্দায়
কক্ষ ও কক্ষান্তর থেকে আরো দুর কক্ষ ও কক্ষান্তরের
ক্ষণিক আভাসÑ
আয়ুহীন স্তব্ধতা ও বিস্ময়।
(নগ্ন নির্জন হাত, বনলতা সেন)১১
সার্থক স্থপতির চিত্রকল্প সৃষ্টি, খিলান ও গম্বুজের সাধারণ জ্যামিতিক পরিমিতি লয় হয়ে যখন জন্ম দিচ্ছে বেদনার, ভালাবাসার, সভ্যতার গভীর সংকেত।
স্থাপত্য ও কবিতার তুলনামূলক বিচারে নিদেনপক্ষে আরো একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। তা হচ্ছে প্রতীক কোন বিশেষ অর্থ নিয়ে যাত্রা শুরু করে, পরিশেষে তা বহু অর্থের ধ্বনি তোলে। এটাই প্রতীকের সার্থকতা।
উইলিয়াম গোল্ডিং তাঁর ‘স্পায়ার’ গল্পে পুরোহিতকে দিয়ে চার্চের উপর একটা স্পায়ার টাওয়ার বসাচ্ছেন। পুরোহিতের বিশ্বাস ঐ টাওয়ার ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করছে। কিন্তু এই স্থাপত্যকর্মটি প্রধান নির্মাতার কাছে ঈশ্বরের প্রতি উচ্ছ্রিত শিশ্ন। এ হচ্ছে স্থাপত্যের অতিপ্রতীকধর্মিতার এক রূপক-সাহিত্যিক প্রকাশ। যেমনটা উইলিয়াম গোল্ডিং তার ‘পিরামিড’ গল্পেও দেখিয়েছেন, যেখানে পিরামিড সামাজিক স্তরবিন্যাসের প্রতীক। প্রকৃতপক্ষে যে-কোন কবিতার মত স্থাপত্যের প্রতীকীকরণ যুগপৎভাবেই ঘটে যায়। এর ফলে, আবাসগৃহ, প্রাসাদ, ধর্মমন্দির বিবিধভাবে অলঙ্করণের পরেও আপন পরিচয় বিধৃত করে।
৫. কংক্রিট কবিতা : কবিতার স্থাপত্যের ব্যবহার
কবিতায় স্থাপত্যের নির্মাণশৈলী বিবিধভাবে ব্যবহৃত হয়েছে যুগে যুগে। কবিতায় স্তবকবিন্যাস, মুদ্রিত পৃষ্ঠায় ছোটবড় পঙক্তির অবস্থিতি কবিতাকে দৃশ্যগ্রাহ্য রূপ দেয়। অনেক সময় এই দৃশ্যগ্রাহ্যতাকে কবিতার বক্তব্যের চেয়েও মূল্যবান হিসাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা হয়েছে। কংক্রিট কবিতা (ঈড়হপৎবঃব চড়বঃৎু) এমন একটি প্রয়াস। খোন্দকার আশরাফ হোসেন একবিংশ-র একটি সংখ্যায় কংক্রিট কবিতা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছিলেন।১২ সপ্তদশ শতকের কবি জর্জ হার্বার্ট তাঁর কবিতায় পঙক্তিবিন্যাসকে একধরনের স্থাপত্যিক নির্মিতি দিতে চেষ্টা করেছেন; তাঁর কালে অবশ্য এর নাম ছিল ঊসনষবস চড়বঃৎু. এখানে হেরিকের ঞযব চরষষধৎ কবিতাটি এবং বর্তমান কালের একটি কংক্রিট কবিতার উদাহারণ দেওয়া হচ্ছে।
৬. কবিতা, স্থাপত্য ও তাদের দর্শন
দর্শনের উদ্দেশ্য দৃষ্টিপাত করা। রহস্যের ঘোমটা খুলে সত্যে উপনীত হওয়াই দর্শনের কাজ। সত্যকে সে ব্যক্ত করে সহজ, সরল সাবলীল ভাষায়। কিন্তু এখানেই শিল্পময় শাখাগুলোর সাথে অন্যদের তফাৎ রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ স্পষ্টতই বলেছেন, “মানুষের বুদ্ধিসাধনার ভাষা আপন পূর্ণতা দেখিয়েছে দর্শনে বিজ্ঞানে, হৃদয়বৃত্তির চূড়ান্ত প্রকাশ কাব্যে। দুইয়ের ভাষায় অনেক তফাৎ: জ্ঞানের ভাষা যতদুর সম্ভব পরিষ্কার হওয়া চাই তাতে ঠিক কথার ঠিক মানে থাকা দরকার। সাজসজ্জার বাহুল্যে সে যেন আচ্ছন্ন না হয়।”১৩
একথা মেনে নিয়েও বলা চলে যে কাব্যে হৃদয়বৃত্তির চুড়ান্ত প্রকাশ ঘটলেও দর্শন-বিজ্ঞানও কবিতার বিষয়ীভূত, এবং যেহেতু কবিতার বিষয় বলে কোন স্বতন্ত্র বিষয় নেই সে কারণে দর্শন-বিজ্ঞানেরও কবিতার বিষয় হতে কোন বাধা নেই, কেননা জগৎ চরাচরে সবকিছুই কবিতার উপজীব্য হতে পারে, যদি কাব্য রচয়িতার কবিতাজননের শক্তি থাকে। কিন্তু স্থাপত্যে বিজ্ঞানের বিষয় যেভাবে ধরা দেয় ঠিক সেভাবে নয়। স্থাপত্যের কাজ শুধু আনন্দ দেয়া নয়, ব্যবহারিক প্রয়োজনকে অনুপুঙ্খ সহজ সরল ভাবে বিন্যস্ত করাই স্থাপত্যের কাজ।
স্থাপত্যের মূল লক্ষ্য কোন বিশেষ প্রয়োজনকে সাধন করা এবং এর উদ্দেশ্য প্রকাশ করা হলেও, কবিতার পক্ষে এমন উদ্দেশ্য প্রবল হয়ে ওঠা বিচিত্র কিছু নয়। তাহলে এদের মধ্যে মূলগত পার্থক্য কোথায়? এ প্রশ্নের বহুবিধ উত্তর হতে পারে, তবে সহজ কথায় বলা যায় স্থাপত্য বরাবরই কোন বিশেষ উদ্দেশ্য পুরণের জন্য যাত্রা শুরু করে যেখানে কবিতা প্রায় ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞতাসঞ্জাত আবেগ ও অনুভূতির দৈবাৎ স্ফুরণ। যুক্তি ও শৃঙ্খলাবোধ এক্ষেত্রে কোন অপরিহার্য আবশ্যিক শর্ত নয়। কিন্তু স্থাপত্যের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অনেকটা বিপরীত। স্বপ্ন কল্পনা, আবেগ অনুপ্রেরণার পথ ধরে আসা স্থাপত্যের জন্য অপরিহার্য নয়, যদিও এ পথে এলে স্থাপত্য অনেক সময় প্রাণবান এবং শিল্পরূপময় হয়ে ওঠে। প্রধানত যুক্তি-শৃংখলা মেনে অগ্রসর হওয়াই স্থাপত্যে আবশ্যিক। কবিতা জীবন ও সমাজের প্রতিচ্ছবি। কারণ কবিতা শুধুই আদি শিল্পরূপ নয়, এ চিরকালই অন্যান্য মাধ্যমের চেয়ে গভীরভাবে জীবন ও সমাজের কথা বলেছে। কিন্তু স্থাপত্য চিরকাল সবার জন্য ছিল না। এ কেবল সমাজের বিত্তশালী, রাজা, মহারাজা, সম্রাটদের আওতাধীন ছিল। কালক্রমে ‘গণমানুষের স্থাপত্য’ ‘সবার জন্য স্থাপত্য’ ইত্যাদি সার্বজনীন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে তার সার্থকতা মোটেও তর্কাতীত নয়।
কবিতা যদিও কবির ব্যক্তিমানসের উপর নির্ভর করেই প্রকাশিত হয় এবং কবিতার জন্মমুহূর্তে যদিও কবি একান্তভাবে নিঃসঙ্গ ও আপনজগতের বাসিন্দা, সামাজিক পরিবেশেই তার চেতনার ভিত স্থিত। যার ফলে তাদের কাব্যে বৃহত্তর প্রাকৃতিক, সামাজিক ও মানবিক দিক প্রতিফলিত হয়েছে। এই সামাজিক জীবনের প্রতিফলন নির্ভর করে কবি ও তার সমাজের পারস্পরিক সম্পর্কের ব্যাপ্তি ও গাঢ়ত্বের উপর।
এদিক দিয়ে স্থপতিকে সব সময় সমাজ সচেতন থাকতে হয়। কারণ একটি স্থাপত্য কর্মকে ঘিরেই মানুষের জীবন যাপন। বলা যায় আরও বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে একটি শহরই নির্ধারণ করে তার নাগরিক জীবনব্যবস্থা। যদিও শহরের জন্ম হয় এর বিপরীত ক্রমে, অর্থাৎ নাগরিকগণই প্রথমে নগর গড়ে তোলেন। তাই গতিশীল স্থাপত্য সমাজের প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার দ্বারা প্রভাবিত হয়। এরই ফলে স্থাপত্যে ক্যাম্প, নন ক্যাম্প, পপ, নন পপ, আন্দোলনগুলো স্থান করে নিয়েছিল।
কবিতা ও স্থাপত্য ধর্মতত্ত্ব, সামাজিক বিশ্বাস, ঐতিহ্য বিবিধ আঞ্চলিক প্রভাবকে আত্মস্থ করে এক উজ্জ্বল বর্তমান ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের নির্দেশনা দেয়। তাদের উদ্দেশ্য অভিন্ন বলে, তারা ভিন্ন মাধ্যমেও একই কথা বলে। জরপযধৎফ গবরবৎ তাঁর অৎপযরঃবপঃ গ্রন্থের মুখবন্ধে বলেছেন, তার পুত্র সবুজ রং পছন্দ করে কারণ বিশ্বপ্রকৃতি সবুজে অবগুণ্ঠিত। তাঁর কন্যার পছন্দ আকাশের নীল রং। কিন্তু তিনি স্থাপত্যকর্মে সাদাকে প্রাধান্য দিয়েছেন, যেহেতু সাদার প্রেক্ষাপটেই সব রং প্রকৃত ভাবে ফুটে ওঠে। এমনকি রংধনুও। সাধা স্বয়ম্ভর, শান্তি ও ঐতিহ্যময়।১৪ দেখা যাচ্ছে তিনি সাদার বিশ্বজনীন আবেদনকে গভীরভাবে মূল্যায়ন করে স্থাপত্যের সার্বজনীন বিশ্বাস ও ঐতিহ্যকে বেগবান করেছেন। আমাদের বাংলার যে ইতিহাস সামাজিক বিশ্বাস, ধর্মবোধ ইত্যাদি কালে-কালে বিদ্যাপতি, মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের লেখার প্রেক্ষাপট যুগিয়েছে সেই প্রেক্ষাপটেই গড়ে উঠেছে পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়, গৌড়, কিংবা কান্তজীর মন্দির ও জোড় বাংলাঘরের মত অজস্র মৃত্তিকার স্থাপত্য।
কবিতা হচ্ছে মুখের ভাষা আর স্থাপত্য হচ্ছে দৃষ্টির ভাষা। কিন্তু এর দু’জনেই একই সাথে ভাবের ভাষা। স্থাপত্যের ভাষা কবিতার ভাষার চেয়ে অনেক বেশি ইঙ্গিগতময় এবং প্রতীকাশ্রিত। কবিতায় জানালা, আলো, সূর্য, জীবন ইত্যাদি অনেকগুলি শব্দ যে বক্তব্য পেশ করে, সেখানে স্থাপত্যকর্মের কোন একটি উপযুক্ত পাঞ্চ (ঢ়ঁহপয)-ই যথেষ্ট।
কবিতায় ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে শব্দচেতনার কথা আসে। উল্লেখনীয় যে, শব্দ কথাটিও বলতে গেলে ধ্বনিরই অন্য নাম। এই ধ্বনিকে আশ্রয় করেই কবিতাকে চলতে হয়, তার শারীরিক অস্তিত্বে রং, সুর, প্রকৃতি, দৃশ্য, অদৃশ্য ইত্যাকার সবকিছুকেই ছন্দোবদ্ধভাবে ধ্বনিত হওয়া ব্যতিরেকে দ্বিতীয় কোন প্রকাশ অসম্ভব। তদুপরি কবিতার ভাষা কোন জাতিগোষ্ঠির ভাষা। স্থাপত্যের ভাষা আন্তর্জাতিক, অনেকটা হাসি-কান্নার মত, ফুলের সৌন্দর্য্যরে মত, নৈঃশব্দের শব্দ।
কাব্যের উৎকর্ষ যেমন একটি বিশিষ্ট সমাজ বা জাতির আবেগের গভীরতা, চৈতন্যের তীক্ষ্মধার অনুভূতি এবং আকৃতির ব্যাপ্তিকেই সপ্রমাণ করে, তেমনি স্থাপত্যের বিকাশ, সমৃদ্ধি ও উৎকর্ষে রূপ পায় তার মনীষার পরিচয়।
দর্শনেই স্থাপত্যের শুরু। মহাজাগতিক চেতনা কিম্বা মানবিক চাহিদা অথবা নিত্যদিনের ব্যবহারিক চাহিদার ধরনই স্থাপত্যের রূপ (ভড়ৎস) দেয়। গড়ে উঠে ঘর-বাড়ি, শহর, দুর্গ অথবা তাজমহলের মত হিমায়িত সংগীতÑ যার গম্বুজগুলো অবতল আকাশের সমান্তরাল হয়ে উঠা এক আকাক্সক্ষা; যে আকাশের নীচে থাকে রৌদ্র-জোৎস্না। মানুষের চিরায়ত সুখ-দুঃখের কাহিনীময় জীবন। কিম্বা যে আকাশের গায়ে পেরেকবিদ্ধ জোনাকির মত জ্বলছে স্বাতি, ধ্র“ব, লুব্ধক, আর লাবণ্যময়ী চাঁদ, তাদের কাছে কিংবা তাদেরকে ফেলে আরো দুর ছায়াপথে উড়ে যাবে মিনারগুলো।
৭. উপসংহার
সূর্যের সাত রঙ এক হয়ে যে জীবনদায়িনী শুভালোক সৃষ্টি করেছে স্থাপত্য ও কবিতার সৃষ্টিশীল কল্যাণমুখী ব্যাপ্তি সেই আলোকের উচ্চকিত প্রতিধ্বনি। এরা উভয়ে সময়ে সাক্ষ্যবাহী। ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনের উত্থান-পতনের রূপময় স্মৃতি। তাই কবিতাও স্থাপত্য তাদের ব্যাপ্তির সমস্ত পথে লতার মত জড়িয়ে আছে। কোন ফুল যেমন তার, রূপ, রং, মধু, সৌরভ দিয়ে শুধু নিজেকেই গৌরী করে তোলে না, তার পারিপার্শ্বকেও মহিমান্বিত করে তোলে। স্থাপত্য ও কবিতাও অনুরূপ। তারা আমাদের মেধা ও মননের সুমহান পরিচায়। স্থপতি সারেনিন এর মত সকল স্থপতির কাম্য হোক শিল্পের চূড়ান্ত শীর্ষ। যেকানে স্থাপত্য হয়ে উঠবে কাব্যময় আর কবিতা হবে সভ্যতার নির্মাণের স্বাক্ষর।
তথ্যসূত্র :
১. জীবনানন্দ দাশ কাব্য সমগ্র, আবদুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদিত, অবসর, ঢাকা, ১৯৯৪
২. ডঃ সাধন কুমার ভট্টাচার্য, এরিস্টটলের পোয়েটিক্স ও সাহিত্যতত্ত্ব, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা।
৩. ঔড়ৎমবং খড়ঁরং ইড়ৎমবং, ‘ঈরৎপঁষধৎ জঁরহ’
৪. জ.এ.ঈড়ষষরহম ডড়ড়ফ, ঞয ওফবধ ড়ভ ঘধঃঁৎব
৫. ঐ
৬. হেলাল আহমেদ, সাম্প্র্রতিক বাংলা কবিতায় অলঙ্কার জিজ্ঞাসা, রূপম প্রকাশনী, ঢাকা।
৭. ঐ
৮. ঐ
৯. ঐ
১০. জরপযধৎফ গবরবৎ. অৎপযরঃবপঃ
১১. জীবনানন্দ দাশ কাব্য সমগ্র, পূর্বোক্ত।
১২. খোন্দকার আশরাফ হোসেন, ‘শাস্ত্রবিরোধী কবিতা, ঝড়ঁহফ, ঋড়ঁহফ, ঈড়হপৎবঃব’ একবিংশ, মার্চ-১৯৯২, পৃ. ৫২-৭২
১৩. মোহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ, কবিতা ও প্রসঙ্গ কথা
১৪. জরপযধৎফ গবরবৎ, অৎপযরঃবপঃ.
(একবিংশ ১৪/ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ সংখ্যা থেকে পুনর্মুদ্রিত)
দুই ভিন্ন শিল্পের সাধনসূত্র : স্থাপত্য ও কবিতা
১. প্রারম্ভ
আদি পিতা কি রোদ-বৃষ্টির উন্মথিত প্রান্তরে পথ খুঁজেই জীবনের ইতি টেনেছিলেন, নাকি বৃক্ষ-কোটরে, গুহার কন্দরে, পাথরের শরীরে শরীর এলিয়ে, পাথরের বেদনার আথে আপন বেদনার সংগতি খুঁজেছিলেন, সে কথা বলা কঠিন। তবু জন্মাদি-জন্ম পুরুষ-পরমপরায় সৃষ্টি হয়েছে-মহেঞ্জোদারো, বেবিলন, টায়ার, এথেন্স, ইলিয়াড, ওডিসি, মহাভারত কিম্বা আরব্যরজনীর জমকালো জীবনবিন্যাস। এই সৃষ্টিপ্রক্রিয়ায় কারা ছিল? কে আগে, কে পরে? না কবি, না স্থপতি, এরা কেউ নয়, ছিল শুধু চেতনার বিস্ময়কর দর্শন সে হোক কবিতা অথবা স্থাপত্য।
২. কবিতা ও স্থাপত্য
কবিতা শিল্পের আদিমতম, বিশুদ্ধ ও সুন্দরতম রূপ হিসেবে গণ্য। পাশাপাশি স্থাপত্য প্রযুক্তিনির্ভর হলেও, এ আরও প্রাচীন বলে দাবি করা যেতে পারে। কারণ মানুষ তার শুরু থেকেই চেষ্টা করছিল অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের প্রাথমিক চাহিদা নিশ্চিত করতে। স্থাপত্য তার কর্ম-পরিধি বাড়ালেও মানুষের আদিম বাসস্থান থেকেই যে তারা যাত্রা শুরু হয়েছিল, সে কথা মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা যায়। তাই মানব জাতির আত্মিক ও মৌলিক চাহিদা পুরণের দুইটি ভিন্ন মাধ্যম হলেও উভয়ের যাত্রাকাল প্রায় সমসাময়িক এবং এদের উৎসরণ এক জায়গা থেকেই। আমাদের মেধায়-চেতনায়। সেখানেই শুরু হয় এদের আত্মীয়তার, এদের সৌন্দর্যের বোধন, এদের মিলনের সাধনসূত্র।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-“আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ”। আসলে সব বোধের শীর্ষ আমাদের চেতনায় এক হয়ে গেলেও বস্তুজগৎ গড়ে উঠেছে ভিন্ন ভিন্ন বস্তুগত স্বাতন্ত্র্য নিয়ে। সেখানে স্থাপত্য আর কবিতার ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হয়। কবিরা কবিতা লেখেন, স্থপতিরা স্থাপত্য করেন আপন স্বকীয়তায় কিন্তু সেখানেও ব্যক্তি, সমাজ, মানবতার দায়বদ্ধতায় কবি ও স্থপতিকে একই পৃথিবীর মানুষ হতে হয়; তাদের হৃদয়কে উজ্জীবিত করতে হয় সত্যের সুমহান বারিধারায়।
যদিও চার হাত-পায়ে কবি স্থপতি সাদা-কালো মানুষ, তাদের হৃদয়ের, মননের, বুদ্ধির গতি আছে, আছে দুর্গতি। তাঁরা বেঁচে থাকেন কবিতা ও স্থাপত্যের জন্য। তাঁরা যোগানদারের কাজ করে যান। কারণ কবিতা ও স্থাপত্য স্বয়ম্ভূ। তারা আপন সময় থেকে জন্ম নেয়, আপন গতিতেই এগিয়ে যায়। ধন্য কবি ও স্থপতির হৃদয়Ñ সেখানে দেবীর মত তারা উদ্ভাসিত হয়। কবি ও স্থপতির নশ্বর হাত যন্ত্রের মত সে উদ্ভাসের শরীর গড়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। কবির ভাষায় বলতে হয়Ñ
মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব-
থেকে যায়.....
আজকের আগের যেই জীবনের ভিড় জমেছিলো।
তারা মরে গেছে;
প্রতিটি মানুষ তার নিজের স্বতন্ত্র সত্তা নিয়ে অন্ধকারে হারায়েছে;
তবুও তারা আজকের আলোর ভিতরে
সঞ্চারিত হয়ে উঠে আজকের মানুষের সুরে
যখন প্রেমের কথা বলে
অথবা জ্ঞানের কথা বলে
(জীবনান্দ দাশ, ‘মানুষের মৃত্যু হলে’)১
এই সত্যদর্শন মূলত আবেগ, মনন-এর পতাকাবাহী। বুদ্ধিকে বুদ্ধি, বিত্তকে বিত্ত পর্যদুস্ত করবার জন্য সদাব্যস্ত। কিন্তু আবেগের কোন প্রতিযোগী নেই; তাই আবেগের অরুদ্ধ গতি মানুষকে নিয়ত মানবিক করে তোলে আর মনন মানবকে করে তোলে পরিশীলিত দ্রষ্টা। যে প্রকৃতির ভাষা বোঝে, সৈকতে একটি ধুলিকণা অথবা নভমণ্ডলের মৃতনক্ষত্রটিও যার কাছে অর্থবহ, তিনিই মানুষের নেতা, তাঁর বাক্যই কবিতা; তাঁর নির্মাণই স্থাপত্য! তিনি দেখেন এবং রেখে যান তাঁর দৃষ্টির অনুকৃতি। তিনি গড়ে তোলেন সময় ও স্থানের সম্পর্ক। এই সম্পর্ক প্রকৃতিকে অনুকরণের ফসল। কিন্তু শুধুই কি অনুকরণ? ঠিক তা নয়, তাহলে প্লেটোর কর্মকার আর দ্রষ্টা এক হয়ে যাবে।
তবুও অনুকরণ শিল্পের সামান্য ধর্ম, বোধের প্রকাশ। এরিস্টটল বলেছেন “অৎঃ রসরঃধঃবং হধঃঁৎব”২ কিন্তু এই প্রকৃতি হচ্ছে সৃজনীশক্তি সৃষ্টির নিয়মতন্ত্র। সৃষ্টি তার আপন নিয়মেই স্বাধীনতার দাবিদার, সেজন্য কাউকে অধীন বা বিনাশ করা সৃষ্টির উদ্দেশ্য নয়। পারস্পরিক সহমর্মিতা, পাশাপাশি দাঁড়ানোর জন্যই থাকে সৃষ্টি প্রচেষ্টা, এর জন্য চাই সৃষ্টির আপন অধীনতা। কবিতা ও স্থাপত্যের শরীর এই আপন অধীনতায় নত হয়ে বেড়ে ওঠে। এই আপন অধীনতার সংকেতন হচ্ছে-স্থান, কাল, রূপ, সুর, ছন্দ ইত্যাদি, যা সমস্ত বিশ্ব-প্রকৃতি মেনে চলছে। কিন্তু প্রকৃতির এই নিয়মানুবর্তিতা যন্ত্রের অনুরূপ নয়। যন্ত্র সামগ্রিকভাবে একটি সম্পন্ন বিষয়ে অথবা সমাপ্ত বিষয়Ñ যতক্ষণ না সে সমাপ্ত হচ্ছে ততক্ষণ সে যন্ত্র নয়। সুতরাং প্রকৃতি যন্ত্র নয়; প্রত্যেক মুহূর্তে প্রকৃতি রূপ পাল্টাচ্ছেÑ সকালে সে এক ভাষায় কথা বলে, বিকালে অন্য ভাষায়। নিয়ত তার পরিবর্তন হচ্ছে, তার গতি সময়ের সমান্তরাল, আর সময় হচ্ছে এক মহাচক্র, যার কোন কেন্দ্র নেই, আদি বা অন্ত নেই, আছে অভিঘাত, যে অভিঘাত থেকে জন্ম নেয় নীহারিকা, ছায়াপথ, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, মানব-মহামানব, সভ্যতা। সভ্যতার প্রাঞ্জল-দলিল কবিতা ও স্থাপত্য সময়ের চক্রলতায় ফোটা ফুল; তারা সময়ের সৌরভ, বর্ণ নিয়ে ফুটে থাকে। যাঁরা দ্রষ্টা, গতিমান, তাঁরা সময়ের চাহিদা মোতাবেক প্রকৃতির মূর্তি এনে হাজির করেন মানুষে চত্বরে। তখন আমরা বলে উঠি, এই তো সেই কবিতা বা সৌধ, যা আমাদের হৃদয়ের সমান।
৩. কবিতা ও স্থাপত্য- পারস্পরিক সম্পর্ক
কবিতা ও স্থাপত্যের পারস্পরিক সম্পর্ক তাদের পাদপিঠ, স্থাপন, কাল, রূপ (ঋড়ৎস), সুর, ছন্দ ইত্যাদির ভেতর। আদি বাক্য-ধারা সময়ের সাথে সাথে যেমন রূপ পাল্টিয়েছে, আধুনিক থেকে অতি-আধুনিক হয়ে উঠেছে, ঠিক একই রকম অগ্রযাত্রা ঘটেছে স্থাপত্যেওÑ গুহা কিংম্বা স্টোন-হেঞ্জের যুগ পার হয়ে, কালে-কালে ক্লাসিক, মডার্ন, পোস্ট-মডার্ন ও বিনির্মাণের যুগে এসে উপনীত হয়েছে। যদিও একটি কবিতা সামান্য দ্বিমাত্রিক ক্ষেত্রে তৈরী হয়, কিন্তু এর প্রেক্ষাপট স্থাপত্যের মত ত্রিমাত্রিক। কখনো সময়কে আয়ত্ত করে তা চতুর্মাত্রিকতাও পেয়ে যায়। তাই সময়ের পরম্পরায় স্থান (ংঢ়ধপব) কবিতা ও স্থাপত্যে রূপনির্ধারক হয়ে এসেছে। এক অর্থে ব্যবহার
উপযোগী স্থান বা পরিসর (ংঢ়ধপব) নকশা করাই স্থাপত্যের উদ্দেশ্য। কিন্তু স্থানের সংজ্ঞা কি? আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন যে শক্তির ঘনীভূত রূপ হচ্ছে বস্তুনিচয়, আর মহাশূন্য হলো শক্তির দুর্বল গ্রন্থি। কিন্তু বস্তুনিচয় আর মহাশূন্যের পার্থক্য গুণগত দিকের চেয়ে পরিমাণগত ভাবে বেশি প্রকাশিত।৪
বোঝাই যাচ্ছে আমাদের ভাব জগৎ এখানে গাণিতিকভাবে পরিমিত। কিন্তু এটা হচ্ছে একটা দিক। অন্য দিকে প্লেটো বলেছেন যে ‘ংঢ়ধপব’ হচ্ছে বিশ্ব-প্রকৃতি, যে সমস্ত বস্তুনিচয় ধারণ করেও একই রূপে থাকে, বস্তুনিচয় ধারণ কালে সে নিজে রূপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় না; এবং কখনো গ্রহণ করে না তার ভিতরে ঢুকে-পরা বস্তুনিচয়ের রূপ; সে সকল বিষয়ের সহজাত ধারক এবং এই সকল বিষয় দ্বারাই সে সঞ্জীবিত এবং এদের কারণেই কালে-কালে এর রূপ ভেদ ঘটে।৫
প্লেটোর মহাশূন্য যেন ডিমের অন্তর্লোকে এলবুমিনসহ ভাসমান কুসুম। কুসুম হচ্ছে বস্তু-নিচয়ের উপমা। আমরা সেই কোন এক বস্তুনিচয় পৃথিবীর বাসিন্দা। মহাকর্ষে আটকে-থাকা দেহ ছেড়ে আমাদের মন উড়ে বেড়ায় দূর-ছায়াপথে। তারপর অজানার রহস্য এনে, কোন চিরশান্তির সম্ভাবনা নিয়ে পৃথিবীর মাটিতে কবিতার শেকড় গাড়ি; অথবা ছায়াপথের কোন নীল নক্ষত্রের দিকে চেয়ে অসীমকে আত্মীয় করে পিরামিড গড়ি।
৪. স্থাপত্য ও কবিতা: তুলনামূলক বিশ্লেষণ
কবিতা ও স্থাপত্যের পারস্পরিক তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে যাওয়ার আগেই জেনে নেয়া দরকার কবিতা ও স্থাপত্য কি? স্থাপত্য সম্পর্কে এর উত্তর যতটা সহজ কবিতা সম্বন্ধে ঠিক ততটা নয়। কবিতার বৈধ অর্থের সংখ্যা এত বেশি যে এর স্বভাব কিম্বা সুস্পষ্ট কোন সংজ্ঞা নির্ধারণ করা প্রায় অসম্ভব। যেমন ওয়ার্ডসওয়ার্থ বলেছেন “চড়বঃৎু রং ঃযব ংঢ়ড়হঃধহবড়ঁং ড়াবৎভষড়ি ড়ভ ঢ়ড়বিৎভঁষ ভববষরহমং” যখন কোলরিজ বলেছেন কবিতা হচ্ছে-“ইবংঃ ড়িৎফং রহ ঃযব নবংঃ ড়ৎফবৎ.” আবার কেউ কেউ বলেছেন কবিতা হচ্ছে শব্দ এবং শব্দই কবিতা।৬
কবিতা সম্পর্কে এই বিভ্রম প্রাচ্য কাব্যতাত্ত্বিকদের মধ্যেও বিদ্যমান, তবু তাঁরা স্বীকার করেন, যে কথায় রস থাকে, তাই কাব্য বা কবিতা, আর এখানেই কবিতা ও স্থাপত্যের সবচেয়ে বড় সম্পর্কটি সৃষ্টি হয়েছে।
৫. কবিতা ও স্থাপত্য : কয়েকটি সাধারণ বিষয়-এর আলোচনা
কবিতা বা স্থাপত্যে অভিজ্ঞতাকে সংহত ভাবে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ইমেজের জন্ম হয়েছে। ইংরেজি ইমেজ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত কৃত বাংলারূপ চিত্রকল্প, প্রকৃত অর্থে এক ধরনের চিত্রোপমা; ফরাসী সমালোচক দিদেরো একে বলেছেন “যবরৎড়মষুঢ়যরপ ঢ়ধরহঃরহম” অর্থাৎ “চধরহঃরহম হড়ঃ ঃড় ঃযব বুব নঁঃ ঃড় ঃযব রসধমরহধঃরড়হ.” আর শেলির কাছে ওসধমরহধঃরড়হ অমর ঈশ্বর, আর তিনি নিজে তাঁর প্রেরিত পুরুষ।৭ তাই ইমেজ কবি বা স্থপতির আত্মার গভীর সংকেত বহন করে। ইমেজ অন্তর্দৃষ্টির বা ইন্দ্রিয়বেদ্য অনুভূতির প্রকাশ। চিত্রকল্প তাই সাধারণ চিত্র নয় তারও অধিক। রবীন্দ্রনাথের চিত্রোপমার বিশ্লেষণ প্রসংগে বুদ্ধদেব বসুর উক্তিÑ “উপমা, উপেক্ষা, চিত্রকল্প এমন কি প্রতীকÑ এই সব গুলোই উপমার অভিজ্ঞানের মধ্যে ধরে নিতে হবে। শুধু মতো থাকলেই উপমা হলো তা নয়। ভাব যেখানে ছবি হয়ে উঠেছে, কিন্তু সেখানে স্পর্শসহরূপ নিল সেখানেই কোন না কোন, সূক্ষ্ম চতুর লুক্কায়িত উপায়ে উপমার ব্যবহার অনিবার্য।”৮ কিন্তু সাধারণ চিত্রগুলোকে ধরেই চিত্রকল্পের জন্ম, অনেকটা মাটিতে পা রেখেই আকাশ ছোঁয়ার সুযোগ করে দেয় চিত্রকল্প। আবুল হাসানের মিসট্রেসঃ ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ‘কবিতার চিত্রোপমা’Ñ
প্রতিদিনই এরকম প্রতিটি পাখিকে,
যেন ক্লিপের মতোন
অই বনভূমি গেঁথে নেয় তার
স্নিগ্ধ সবুজ খোঁপায়, ভোর বেলা
ময়ূর পেখমের মতো খোলা রোদে বসে।৯
কবি পাখি আর প্রকৃতির সমম্বয় ঘটিয়েছেন ক্লিপের বন্ধনে, যে ক্লিপ কবির দয়িতার কাঁকন-কর্ষিত চুলে রূপের আরাধ্য, অথবা তিনি দয়িতার কেশচর্চার দৃশ্য হৃদয়ে প্রশস্ত করেছেন, প্রকৃতি দর্শনের উপমায়। এভাবে তিনি আমাদেরকে কয়েকটি দৃশ্যের ভিতর নিয়ে ছেড়ে দেন। তারপর আমরা নিজেরাই দৃশ্যের অর্থসঞ্চার করি, যার যে-রকম ইচ্ছে, যে যে-রকম ভাবে দেখতে ভালবাসি। তখনই সাধারণ দৃশ্যগুলো আরও বিশাল অর্থময়তা লাভ করে।
ইমেজ বা চিত্রকল্প দৃষ্টির কাজে কবি বা স্থপতি তাঁর কর্মে দৃশ্য (ংড়ষরফ) ও অদৃশ্য (াড়রফ) কে পাশাপাশি সাজিয়ে অভিনব দৃশ্যপাত ঘটান। যে দৃশ্য অবশ্যই সজীব, প্রাণময়-মহানের দিকে ধাবিত, সময় যার অনুষঙ্গ। বিশেষত স্থাপত্যের ক্ষেত্রে একথা বিশেষভাবে প্রযোজ্য।
একটি স্থাপত্যকর্ম প্রকৃতির প্রেক্ষাপটে নিজেকে ফুটিয়ে তোলে। দৃশ্যে ও অদৃশ্যে স্থাপত্যের প্রাথমিক শারীরিক প্রকাশ। দৃশ্য ও অদৃশ্যের সার্থক সমন্বয়ে স্থাপত্যের ইমেজে’র জন্ম। প্রাসংগিকভাবে লুই কানের সংসদ ভবন, ঢাকার কথাই বলা যেতে পারে। এই স্থাপত্যকর্মে ভবনের বলিষ্ঠ দেয়ালগুলোর শরীর যে বিরাট জামিতিক ছিদ্রগুলো করা হয়েছে তার প্রতিটির পিছনেই আছে ভিতর দেয়ালের অসংখ্য জানালা, যারা বহির্দৃশ্যের বিরাট ছিদ্রগুলো সমন্বিত করে সামগ্রিকভাবে এক বিশালত্বের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এইগুলো হচ্ছে ভবনের চোখ, যায় ভিতর দিয়ে ভবন ও প্রকৃতি নিকটবর্তী হয়েছে।
স্থাপত্য কবিতার মত শুধু ভাবের ত্রিমাত্রায় সীমাবদ্ধ নয়, তার প্রত্যক্ষ বাস্তবতা আছে। স্থাপত্যের ভিতর-বাহির প্রায়শই সমান গুরুত্ববাহী; তার বহিরাংশের মত ভিতরাংশও এক প্রকার কল্পনার বাস্তবতা। যে বাস্তবতার ভিতর আমরা ঘুমাই; ঘুরি, বসবাস করি।
জরপযধৎফ গবরবৎ বলেছেন. “অৎপযরঃবপঃঁৎব রং ারঃধষ ধহফ বহফঁৎরহম, নবপধঁংব রঃ পড়হঃধরহং ঁং, রঃ ংঁনংঃধহঃরধঃবং ঃযব ংঢ়ধপব বি ষরাব রহ, সড়াব ঃযৎড়ঁময ধহফ ঁংব”১০ সারকথা হচ্ছে আমাদের চেতনায় এর রয়েছে সার্বক্ষণিক প্রভাব। তাই স্থপতিকে এখানেও ভাবতে হয়, এখানেও তাকে দৃশ্যের অবতারণা করতে হয়। কারণ দর্শনেই জীবন শুরু। বহিরঙ্গে স্থাপত্য বিশ্বব্যাপি, সেখানে স্থাপত্য দিন ও রাত্রির ভুবন জোড়া আলো-অন্ধকারের ভিতর ব্যাপ্ত। কিন্তু ভিতরাঙ্গে সে সন্তরমান আলো-অন্ধকারের ধারক। লুই কান বলেছেন যে, স্থপতিরা অতিশয় শক্তিধর, তাঁরা দিনকে রাত এবং রাতকে দিন করতে পারেন। এখানে তিনি এই ভিতরঙ্গের কথাই নির্দেশ করেছেন। প্রায়শই ভিতরঙ্গের পরিসর নক্সা, দৃশ্য পাতন বহিরঙ্গের বিপরীত। বহিরঙ্গের বোধকে শরীর দিয়ে উজ্জীবিত করার চেষ্টা, চলে, ব্যবহারিক তলগুলো আনুভূমিক, উল্লম্ব তলগুলো আনুভূমিক তলগুলোকে সীমাবদ্ধ করে। ভিতর বাহির সৃষ্টি করে। আবার কোথাও কোথাও উল্লম্ব তল নাই হয়ে ভিতরকে অধিক উপযোগী করে তোলে, বাহিরের সাতে আত্মীয়তা ঘটিয়ে। আনুভূমিক, উলম্ব, কৌণিক ইত্যকার তল হচ্ছে স্থপতির কাঁচামাল, তাকে তিনি বস্তুগত চাহিদায় সাজান কল্পনার মাধুর্যে। এই জন্য যে-কোন স্থাপত্য কর্মই শুরুতে চেতনার জগতে থাকে, তারপর বাস্তবতা পায়। পরিশেষে সে নিজেই চেতনার নতুন জগৎ তৈরী করে অসীম হয়ে ওঠে। লুই কানের স্থাপত্য সম্বন্ধে এরকম ধারণকেই প্রকারান্তরে স্থাপত্যের চিত্রকল্পনির্ভরতা বলা যায়। জীবনানন্দ দাশ লিখেছেনÑ
ফাল্গুনের অন্ধকার নিয়ে আসে সেই সমুদ্র পারের কাহিনী,
অপরূপ খিলান ও গম্বুজের বেদনাময় রেখা.....
রামধনু রঙের কাচের জানালা,
ময়ূরের পেখমের মতো রঙিন পর্দায় পর্দায়
কক্ষ ও কক্ষান্তর থেকে আরো দুর কক্ষ ও কক্ষান্তরের
ক্ষণিক আভাসÑ
আয়ুহীন স্তব্ধতা ও বিস্ময়।
(নগ্ন নির্জন হাত, বনলতা সেন)১১
সার্থক স্থপতির চিত্রকল্প সৃষ্টি, খিলান ও গম্বুজের সাধারণ জ্যামিতিক পরিমিতি লয় হয়ে যখন জন্ম দিচ্ছে বেদনার, ভালাবাসার, সভ্যতার গভীর সংকেত।
স্থাপত্য ও কবিতার তুলনামূলক বিচারে নিদেনপক্ষে আরো একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। তা হচ্ছে প্রতীক কোন বিশেষ অর্থ নিয়ে যাত্রা শুরু করে, পরিশেষে তা বহু অর্থের ধ্বনি তোলে। এটাই প্রতীকের সার্থকতা।
উইলিয়াম গোল্ডিং তাঁর ‘স্পায়ার’ গল্পে পুরোহিতকে দিয়ে চার্চের উপর একটা স্পায়ার টাওয়ার বসাচ্ছেন। পুরোহিতের বিশ্বাস ঐ টাওয়ার ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করছে। কিন্তু এই স্থাপত্যকর্মটি প্রধান নির্মাতার কাছে ঈশ্বরের প্রতি উচ্ছ্রিত শিশ্ন। এ হচ্ছে স্থাপত্যের অতিপ্রতীকধর্মিতার এক রূপক-সাহিত্যিক প্রকাশ। যেমনটা উইলিয়াম গোল্ডিং তার ‘পিরামিড’ গল্পেও দেখিয়েছেন, যেখানে পিরামিড সামাজিক স্তরবিন্যাসের প্রতীক। প্রকৃতপক্ষে যে-কোন কবিতার মত স্থাপত্যের প্রতীকীকরণ যুগপৎভাবেই ঘটে যায়। এর ফলে, আবাসগৃহ, প্রাসাদ, ধর্মমন্দির বিবিধভাবে অলঙ্করণের পরেও আপন পরিচয় বিধৃত করে।
৫. কংক্রিট কবিতা : কবিতার স্থাপত্যের ব্যবহার
কবিতায় স্থাপত্যের নির্মাণশৈলী বিবিধভাবে ব্যবহৃত হয়েছে যুগে যুগে। কবিতায় স্তবকবিন্যাস, মুদ্রিত পৃষ্ঠায় ছোটবড় পঙক্তির অবস্থিতি কবিতাকে দৃশ্যগ্রাহ্য রূপ দেয়। অনেক সময় এই দৃশ্যগ্রাহ্যতাকে কবিতার বক্তব্যের চেয়েও মূল্যবান হিসাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা হয়েছে। কংক্রিট কবিতা (ঈড়হপৎবঃব চড়বঃৎু) এমন একটি প্রয়াস। খোন্দকার আশরাফ হোসেন একবিংশ-র একটি সংখ্যায় কংক্রিট কবিতা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছিলেন।১২ সপ্তদশ শতকের কবি জর্জ হার্বার্ট তাঁর কবিতায় পঙক্তিবিন্যাসকে একধরনের স্থাপত্যিক নির্মিতি দিতে চেষ্টা করেছেন; তাঁর কালে অবশ্য এর নাম ছিল ঊসনষবস চড়বঃৎু. এখানে হেরিকের ঞযব চরষষধৎ কবিতাটি এবং বর্তমান কালের একটি কংক্রিট কবিতার উদাহারণ দেওয়া হচ্ছে।
৬. কবিতা, স্থাপত্য ও তাদের দর্শন
দর্শনের উদ্দেশ্য দৃষ্টিপাত করা। রহস্যের ঘোমটা খুলে সত্যে উপনীত হওয়াই দর্শনের কাজ। সত্যকে সে ব্যক্ত করে সহজ, সরল সাবলীল ভাষায়। কিন্তু এখানেই শিল্পময় শাখাগুলোর সাথে অন্যদের তফাৎ রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ স্পষ্টতই বলেছেন, “মানুষের বুদ্ধিসাধনার ভাষা আপন পূর্ণতা দেখিয়েছে দর্শনে বিজ্ঞানে, হৃদয়বৃত্তির চূড়ান্ত প্রকাশ কাব্যে। দুইয়ের ভাষায় অনেক তফাৎ: জ্ঞানের ভাষা যতদুর সম্ভব পরিষ্কার হওয়া চাই তাতে ঠিক কথার ঠিক মানে থাকা দরকার। সাজসজ্জার বাহুল্যে সে যেন আচ্ছন্ন না হয়।”১৩
একথা মেনে নিয়েও বলা চলে যে কাব্যে হৃদয়বৃত্তির চুড়ান্ত প্রকাশ ঘটলেও দর্শন-বিজ্ঞানও কবিতার বিষয়ীভূত, এবং যেহেতু কবিতার বিষয় বলে কোন স্বতন্ত্র বিষয় নেই সে কারণে দর্শন-বিজ্ঞানেরও কবিতার বিষয় হতে কোন বাধা নেই, কেননা জগৎ চরাচরে সবকিছুই কবিতার উপজীব্য হতে পারে, যদি কাব্য রচয়িতার কবিতাজননের শক্তি থাকে। কিন্তু স্থাপত্যে বিজ্ঞানের বিষয় যেভাবে ধরা দেয় ঠিক সেভাবে নয়। স্থাপত্যের কাজ শুধু আনন্দ দেয়া নয়, ব্যবহারিক প্রয়োজনকে অনুপুঙ্খ সহজ সরল ভাবে বিন্যস্ত করাই স্থাপত্যের কাজ।
স্থাপত্যের মূল লক্ষ্য কোন বিশেষ প্রয়োজনকে সাধন করা এবং এর উদ্দেশ্য প্রকাশ করা হলেও, কবিতার পক্ষে এমন উদ্দেশ্য প্রবল হয়ে ওঠা বিচিত্র কিছু নয়। তাহলে এদের মধ্যে মূলগত পার্থক্য কোথায়? এ প্রশ্নের বহুবিধ উত্তর হতে পারে, তবে সহজ কথায় বলা যায় স্থাপত্য বরাবরই কোন বিশেষ উদ্দেশ্য পুরণের জন্য যাত্রা শুরু করে যেখানে কবিতা প্রায় ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞতাসঞ্জাত আবেগ ও অনুভূতির দৈবাৎ স্ফুরণ। যুক্তি ও শৃঙ্খলাবোধ এক্ষেত্রে কোন অপরিহার্য আবশ্যিক শর্ত নয়। কিন্তু স্থাপত্যের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অনেকটা বিপরীত। স্বপ্ন কল্পনা, আবেগ অনুপ্রেরণার পথ ধরে আসা স্থাপত্যের জন্য অপরিহার্য নয়, যদিও এ পথে এলে স্থাপত্য অনেক সময় প্রাণবান এবং শিল্পরূপময় হয়ে ওঠে। প্রধানত যুক্তি-শৃংখলা মেনে অগ্রসর হওয়াই স্থাপত্যে আবশ্যিক। কবিতা জীবন ও সমাজের প্রতিচ্ছবি। কারণ কবিতা শুধুই আদি শিল্পরূপ নয়, এ চিরকালই অন্যান্য মাধ্যমের চেয়ে গভীরভাবে জীবন ও সমাজের কথা বলেছে। কিন্তু স্থাপত্য চিরকাল সবার জন্য ছিল না। এ কেবল সমাজের বিত্তশালী, রাজা, মহারাজা, সম্রাটদের আওতাধীন ছিল। কালক্রমে ‘গণমানুষের স্থাপত্য’ ‘সবার জন্য স্থাপত্য’ ইত্যাদি সার্বজনীন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে তার সার্থকতা মোটেও তর্কাতীত নয়।
কবিতা যদিও কবির ব্যক্তিমানসের উপর নির্ভর করেই প্রকাশিত হয় এবং কবিতার জন্মমুহূর্তে যদিও কবি একান্তভাবে নিঃসঙ্গ ও আপনজগতের বাসিন্দা, সামাজিক পরিবেশেই তার চেতনার ভিত স্থিত। যার ফলে তাদের কাব্যে বৃহত্তর প্রাকৃতিক, সামাজিক ও মানবিক দিক প্রতিফলিত হয়েছে। এই সামাজিক জীবনের প্রতিফলন নির্ভর করে কবি ও তার সমাজের পারস্পরিক সম্পর্কের ব্যাপ্তি ও গাঢ়ত্বের উপর।
এদিক দিয়ে স্থপতিকে সব সময় সমাজ সচেতন থাকতে হয়। কারণ একটি স্থাপত্য কর্মকে ঘিরেই মানুষের জীবন যাপন। বলা যায় আরও বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে একটি শহরই নির্ধারণ করে তার নাগরিক জীবনব্যবস্থা। যদিও শহরের জন্ম হয় এর বিপরীত ক্রমে, অর্থাৎ নাগরিকগণই প্রথমে নগর গড়ে তোলেন। তাই গতিশীল স্থাপত্য সমাজের প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার দ্বারা প্রভাবিত হয়। এরই ফলে স্থাপত্যে ক্যাম্প, নন ক্যাম্প, পপ, নন পপ, আন্দোলনগুলো স্থান করে নিয়েছিল।
কবিতা ও স্থাপত্য ধর্মতত্ত্ব, সামাজিক বিশ্বাস, ঐতিহ্য বিবিধ আঞ্চলিক প্রভাবকে আত্মস্থ করে এক উজ্জ্বল বর্তমান ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের নির্দেশনা দেয়। তাদের উদ্দেশ্য অভিন্ন বলে, তারা ভিন্ন মাধ্যমেও একই কথা বলে। জরপযধৎফ গবরবৎ তাঁর অৎপযরঃবপঃ গ্রন্থের মুখবন্ধে বলেছেন, তার পুত্র সবুজ রং পছন্দ করে কারণ বিশ্বপ্রকৃতি সবুজে অবগুণ্ঠিত। তাঁর কন্যার পছন্দ আকাশের নীল রং। কিন্তু তিনি স্থাপত্যকর্মে সাদাকে প্রাধান্য দিয়েছেন, যেহেতু সাদার প্রেক্ষাপটেই সব রং প্রকৃত ভাবে ফুটে ওঠে। এমনকি রংধনুও। সাধা স্বয়ম্ভর, শান্তি ও ঐতিহ্যময়।১৪ দেখা যাচ্ছে তিনি সাদার বিশ্বজনীন আবেদনকে গভীরভাবে মূল্যায়ন করে স্থাপত্যের সার্বজনীন বিশ্বাস ও ঐতিহ্যকে বেগবান করেছেন। আমাদের বাংলার যে ইতিহাস সামাজিক বিশ্বাস, ধর্মবোধ ইত্যাদি কালে-কালে বিদ্যাপতি, মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের লেখার প্রেক্ষাপট যুগিয়েছে সেই প্রেক্ষাপটেই গড়ে উঠেছে পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়, গৌড়, কিংবা কান্তজীর মন্দির ও জোড় বাংলাঘরের মত অজস্র মৃত্তিকার স্থাপত্য।
কবিতা হচ্ছে মুখের ভাষা আর স্থাপত্য হচ্ছে দৃষ্টির ভাষা। কিন্তু এর দু’জনেই একই সাথে ভাবের ভাষা। স্থাপত্যের ভাষা কবিতার ভাষার চেয়ে অনেক বেশি ইঙ্গিগতময় এবং প্রতীকাশ্রিত। কবিতায় জানালা, আলো, সূর্য, জীবন ইত্যাদি অনেকগুলি শব্দ যে বক্তব্য পেশ করে, সেখানে স্থাপত্যকর্মের কোন একটি উপযুক্ত পাঞ্চ (ঢ়ঁহপয)-ই যথেষ্ট।
কবিতায় ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে শব্দচেতনার কথা আসে। উল্লেখনীয় যে, শব্দ কথাটিও বলতে গেলে ধ্বনিরই অন্য নাম। এই ধ্বনিকে আশ্রয় করেই কবিতাকে চলতে হয়, তার শারীরিক অস্তিত্বে রং, সুর, প্রকৃতি, দৃশ্য, অদৃশ্য ইত্যাকার সবকিছুকেই ছন্দোবদ্ধভাবে ধ্বনিত হওয়া ব্যতিরেকে দ্বিতীয় কোন প্রকাশ অসম্ভব। তদুপরি কবিতার ভাষা কোন জাতিগোষ্ঠির ভাষা। স্থাপত্যের ভাষা আন্তর্জাতিক, অনেকটা হাসি-কান্নার মত, ফুলের সৌন্দর্য্যরে মত, নৈঃশব্দের শব্দ।
কাব্যের উৎকর্ষ যেমন একটি বিশিষ্ট সমাজ বা জাতির আবেগের গভীরতা, চৈতন্যের তীক্ষ্মধার অনুভূতি এবং আকৃতির ব্যাপ্তিকেই সপ্রমাণ করে, তেমনি স্থাপত্যের বিকাশ, সমৃদ্ধি ও উৎকর্ষে রূপ পায় তার মনীষার পরিচয়।
দর্শনেই স্থাপত্যের শুরু। মহাজাগতিক চেতনা কিম্বা মানবিক চাহিদা অথবা নিত্যদিনের ব্যবহারিক চাহিদার ধরনই স্থাপত্যের রূপ (ভড়ৎস) দেয়। গড়ে উঠে ঘর-বাড়ি, শহর, দুর্গ অথবা তাজমহলের মত হিমায়িত সংগীতÑ যার গম্বুজগুলো অবতল আকাশের সমান্তরাল হয়ে উঠা এক আকাক্সক্ষা; যে আকাশের নীচে থাকে রৌদ্র-জোৎস্না। মানুষের চিরায়ত সুখ-দুঃখের কাহিনীময় জীবন। কিম্বা যে আকাশের গায়ে পেরেকবিদ্ধ জোনাকির মত জ্বলছে স্বাতি, ধ্র“ব, লুব্ধক, আর লাবণ্যময়ী চাঁদ, তাদের কাছে কিংবা তাদেরকে ফেলে আরো দুর ছায়াপথে উড়ে যাবে মিনারগুলো।
৭. উপসংহার
সূর্যের সাত রঙ এক হয়ে যে জীবনদায়িনী শুভালোক সৃষ্টি করেছে স্থাপত্য ও কবিতার সৃষ্টিশীল কল্যাণমুখী ব্যাপ্তি সেই আলোকের উচ্চকিত প্রতিধ্বনি। এরা উভয়ে সময়ে সাক্ষ্যবাহী। ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনের উত্থান-পতনের রূপময় স্মৃতি। তাই কবিতাও স্থাপত্য তাদের ব্যাপ্তির সমস্ত পথে লতার মত জড়িয়ে আছে। কোন ফুল যেমন তার, রূপ, রং, মধু, সৌরভ দিয়ে শুধু নিজেকেই গৌরী করে তোলে না, তার পারিপার্শ্বকেও মহিমান্বিত করে তোলে। স্থাপত্য ও কবিতাও অনুরূপ। তারা আমাদের মেধা ও মননের সুমহান পরিচায়। স্থপতি সারেনিন এর মত সকল স্থপতির কাম্য হোক শিল্পের চূড়ান্ত শীর্ষ। যেকানে স্থাপত্য হয়ে উঠবে কাব্যময় আর কবিতা হবে সভ্যতার নির্মাণের স্বাক্ষর।
তথ্যসূত্র :
১. জীবনানন্দ দাশ কাব্য সমগ্র, আবদুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদিত, অবসর, ঢাকা, ১৯৯৪
২. ডঃ সাধন কুমার ভট্টাচার্য, এরিস্টটলের পোয়েটিক্স ও সাহিত্যতত্ত্ব, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা।
৩. ঔড়ৎমবং খড়ঁরং ইড়ৎমবং, ‘ঈরৎপঁষধৎ জঁরহ’
৪. জ.এ.ঈড়ষষরহম ডড়ড়ফ, ঞয ওফবধ ড়ভ ঘধঃঁৎব
৫. ঐ
৬. হেলাল আহমেদ, সাম্প্র্রতিক বাংলা কবিতায় অলঙ্কার জিজ্ঞাসা, রূপম প্রকাশনী, ঢাকা।
৭. ঐ
৮. ঐ
৯. ঐ
১০. জরপযধৎফ গবরবৎ. অৎপযরঃবপঃ
১১. জীবনানন্দ দাশ কাব্য সমগ্র, পূর্বোক্ত।
১২. খোন্দকার আশরাফ হোসেন, ‘শাস্ত্রবিরোধী কবিতা, ঝড়ঁহফ, ঋড়ঁহফ, ঈড়হপৎবঃব’ একবিংশ, মার্চ-১৯৯২, পৃ. ৫২-৭২
১৩. মোহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ, কবিতা ও প্রসঙ্গ কথা
১৪. জরপযধৎফ গবরবৎ, অৎপযরঃবপঃ.
(একবিংশ ১৪/ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ সংখ্যা থেকে পুনর্মুদ্রিত)
লেবেলসমূহ:
২৫ বছর পূর্তি সংখ্যা,
পূনর্পাঠ,
প্রবন্ধ,
সফিউল আজম মঞ্জু
এডওয়ার্ড সাইদ ও উত্তর-ঔপনিবেশিক কাউন্টার-ডিস্কোর্স
ফকরুল আলম
এডওয়ার্ড সাইদ ও উত্তর-ঔপনিবেশিক কাউন্টার-ডিস্কোর্স
১.
ঔপনিবেশিকতার যে কোন ছাত্রের কাছে ঙৎরবহঃধষরংস গ্রন্থটির প্রাসঙ্গিকতা স্পষ্ট। এ বইতে সাইদ তত্ত্ব উপস্থাপন করেন যে, পশ্চিমা পণ্ডিতরা বহুকাল ধরে তাঁদের জ্ঞানকে ভাড়া খাটাচ্ছেন শক্তিধর পাশ্চাত্যপ্রভুদের কাছে; তারা এমন একটি ডিসকোর্সে নিয়োজিত যার উদ্দেশ্য ‘ফড়সরহধঃরহম, ৎবংঃৎঁপঃঁৎরহম, ধহফ যধারহম ধঁঃযড়ৎরঃু ড়াবৎ ঃযব ঙৎরবহঃ’ (ঙৎরবহঃধষরংস, ৩) পাণ্ডিত্য প্রাচ্যের, ঔপনিবেশিকরণের হাতিয়ার হয়েছে, আর ডিফো থেকে ডিসরেলি-তক সকল পাশ্চাত্য শিল্পী-বুদ্ধিজীবী স্বেচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক, শোষণ-সংদমনের প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। তদুপরি তারা এমন একটি প্রাচ্যের ধারণা গড়ে তুলেছেন যা হচ্ছে ‘ড়ঃযবৎ’, এবং এভাবে প্রাচ্যের মানুষ সম্পর্কে কিছু আপ্ত বিরূপ ধারণার স্থায়ীকরণের সহায়তা করেছেন। সাহিত্যতত্ত্বে সাইদের সাম্প্রতিক কাজ থেকে বোঝা যায় যে, তাঁর মতে প্রাচ্যবিদদের অধীত এবং নিয়োজিত জ্ঞান ছিল আধিপত্যবাদী (যবমবসড়হরপ) এবং তাঁরা যেসব সত্য (ঃৎঁঃযং) ফেরী করে বেড়িয়েছেন তা তাঁদের ইচ্ছাপূরণের বাগাড়ম্বর ছাড়া বেশি কিছু নয়।
সাইদের বিখ্যাত বই ঙৎরবহঃধষরংস প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে। সাইদ পাশ্চাত্য অরিয়েন্টালিস্টদের প্রাচ্যবিদ্যাচর্চার ইতিহাস, তাঁদের উদ্ভাবনকৃত ‘প্রাচ্য’’ সম্পর্কিত ধারণা, বিভিন্ন প্রতীচ্য পণ্ডিত ও সাহিত্যিকের রচনায় প্রাচ্যসম্পর্কিত ধারণাÑ যাদের ভিতর দান্তে থেকে ফ্লবেয়ার রয়েছেনÑ ইত্যাদি নিয়ে সবিস্তার আলোচনা করেছেন। তিন অধ্যায়ে ্িবভক্ত বইটির প্রথম দুই অ্যধায়ের নাম : ঞযব ঝপড়ঢ়ব ড়ভ ঙৎরবহঃধষরংস এবং ঙৎরবহঃধষ ঝঃৎঁপঃঁৎবং ধহফ জবংঃৎঁপঃঁৎবং. সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং প্রাসঙ্গিক অংশ তৃতীয় অধ্যায় : ঙৎরবহঃধষরংস ঘড়.ি এর প্রতিপাদ্য হলো, অরিয়েন্টালিজম শুধু অতীতের একটি চিন্তাপ্রপঞ্চ নয়, বরং বিশশতকে এসে প্রাচ্যবিদ্যা একটি প্রভাবশালী ডিসিপ্লিনে পরিণত। এমনকি বর্তমানেও পাশ্চাত্য শক্তিগুলোর নীতি এবং প্রাচ্যদেশ সম্পর্কে তাদের সামগ্রিক মনোভাবকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে চলেছে এই বিদ্যা। আর কিছু না হোক, অন্তত দুই বিশ্বদুদ্ধের মধ্যকালীন সময়ে সাম্রাজ্যবাদকে কল্কে যুগিয়েছে প্রাচ্যবিদ্যা, এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে এ্যাংলো-মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যপ্রাচ্যতত্ত্ব পাঠক্রমের মধ্য দিয়ে পুনরাবির্ভূত হয়েছে। সারা পৃথিবী যখন ঔপনিবেশিক যাঁতাকল থেকে স্বাধীন হচ্ছিল তখনও প্রাচ্যবিদ্যক ডিসকোর্স সাম্রাজ্যবাদী ভাবধারাগুলো প্রচারে ছিল ক্লান্তিহীন। অথবা, সাইদ যেমন বলেছেন তাঁর বইয়ের শেষ দিকে, “সত্য হলো এই যে, অরিয়েন্টালিজম নব্য সাম্রাজ্যবাদের মধ্যে সফলভাবে আত্তীকৃত হয়েছে, যেখানে এর প্রধান প্রপঞ্চগুলো এশিয়াকে পদানত রাখার সাম্রাজ্যবাদী অভিসন্ধি বাধা দেয় না, বরং তাকে নিশ্চিত করে।” (অরিয়েন্টালিজম, ৩২২)
২.
এডওয়ার্ড সাইদ তাঁর অরেয়েন্টালিজম-এর ভূমিকায় বলেছেন যে, তিনি প্রাচ্যবিদ্যাকে বিবেচনা করেছেন একটি ডিসকোর্স হিসাবে। মিশেল ফুকো (গরপযবষ ঋড়ঁপধঁষঃ) তাঁর ঞযব অৎপযবধষড়মু ড়ভ কহড়ষিবফমব এবং উরংপরঢ়ষরহব ধহফ চঁহরংয গ্রন্থে যে-ধরনের ডিসকোর্সের ধারণা ব্যবহার করেছেন তা সাইদের কাছে উপযোগী বলে মনে হয়েছে। সাইদের ভাষায় “গু পড়হঃবহঃরড়হ রং ঃযধঃ রিঃযড়ঁঃ বীধসরহরহম ঙৎরবহঃধষরংস ধং ধ ফরংপড়ঁৎংব ড়হব পড়হহড়ঃ ঢ়ড়ংংরনষু ঁহফবৎংঃধহফ ঃযব বহড়ৎসড়ঁংষু ংুংঃবসধঃরপ ফরংপরঢ়ষরহব নু যিরপয ঊঁৎড়ঢ়বধহ পঁষঃঁৎব ধিং ধনষব ঃড় সধহধমব--ধহফ বাবহ ঃড় ঢ়ৎড়ফঁপব--ঃযব ঙৎরবহঃ ঢ়ড়ষরঃরপধষষু, ংড়পরড়ষড়মরপধষষু, সরষরঃধৎরষু, রফবড়ষড়মরপধষষু, ংপরবহঃরভরপধষষু ধহফ রসধমরহধঃরাবষু ফঁৎরহম ঃযব ঢ়ড়ংঃ-ঊহষরমযঃবহসবহঃ ঢ়বৎরড়ফ.” (ঙৎরবহঃধষরংস, ৩) পাশ্চাত্যের প্রয়োজন ছিল এমন একটি প্রাচ্যের ধারণাকে গড়ে তোলা যা তাদের আধিপত্যবাদী স্বার্থের জন্য অনুকূল হবে। পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদীরা গড়ে তুলেছেন অরিয়েন্টাল স্টাডিজ নামের বিদ্যা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সৃষ্টি হয়েছে প্রাচ্যভাষা যথা আরবী কিংবা সংস্কৃত-র প্রফেসর পদ। সাইদের মতে অরিয়েন্টালিজম হলো “ধ ংঃুষব ড়ভ ঃযড়ঁমযঃ নধংবফ ঁঢ়ড়হ ধহ ড়হঃড়ষড়মরপধষ ধহফ বঢ়রংঃবসড়ষড়মরপষ ফরংঃরহপঃরড়হ সধফব নবঃবিবহ ‘ঞযব ঙৎরবহঃ’ ধহফ (সড়ংঃ ড়ভ ঃযব ঃরসব) ‘ঃযব ড়পপরফবহঃ’. “প্রাচ্য ও প্রতীচ্য-দুটি স্বজ্ঞাগত ও সংজ্ঞাগত ভাবে বিপ্রতীপ ধারণা একটি বিশাল ডিসকোর্স সৃষ্টি করেছে যায় ভেতরে লিখেছেন বহুসংখ্যক লেখক, কবি, দার্শনিক, রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, অর্থনীতিবিদ এবং সাম্রাজ্য পরিচালকবৃন্দ। এই লেখকদের সবাই যে সজ্ঞানে সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থে কলম ধরেছেন তা নয়,তবে অরিয়েন্টালিজম নামক বৃহৎ চিন্তনপ্রকল্পের পুষ্টি সাধিত হয়েছে তাঁদের লেখার কল্যাণে। এই বৃহৎ-চিন্তন প্রকল্প তথা অরিয়েন্টালিজমের চাদরের নীচে ঠাঁই পেয়েছেন যেমন ইস্কিলাস, তেমনি ভিক্টর হুগো কিংবা কার্ল মার্কস-ও। প্রাচ্যবিদ্যার সবটাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল তা বলার উদ্দেশ্যও সম্ভবত সাইদের নয়। কারণ তাঁর বইটির মধ্যেই সাইদ বিখ্যাত ফরাসী প্রাচ্যবিদ লুই মাসিগ্ন (খড়ঁরং গধংংরমড়হ) এর উদাহরণ দিয়েছেন যিনি মানবতাবাদী প্রেষণা দ্বারাই এই বিদ্যাচর্চায় উৎসাহী হয়েছিলেন। এ থেকে বোঝা যায় যে, মানবিক অনুভূতির প্রতি অন্ধ এবং শক্তিমানের সেবা করার উদ্দেশ্যঅলা প্রাচ্যবিদ্যার বিকল্প একটি জ্ঞানশাখার অস্তিত্ব অসম্ভব নয়। সাইদ কি তাহলে তাত্ত্বিক দিক থেকে স্ববিরোধিতার শিকার? এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পরম দাপটের কালেও প্রতিরোধের যেসব ন্যারেটিভ রচিত হচ্ছিল সে সম্পর্কে উদাসীন?
প্রথম প্রশ্নটি নিয়ে সাইদ সরাসরি বলেছেন অরিয়েন্টালিজম প্রকাশের কয়েক বছর পর দেয়া এক সাক্ষাৎকারে। তিনি সেখানে ঘোষণা করেছেন, ঐ বইটি তিনি লিখেছেন ইচ্ছা করেই এমনভাবে যাতে প্রাচ্যবিদ্যক ডিসকোর্সের ফবঃবৎসরহরংঃরপ প্রকৃতিটি স্পষ্ট হয়, যদিও একইসাথে এটাও তিনি ইঙ্গিত করেছেন যে এ-থেকে পালাবার রাস্তাও আছে। “একধরনের জবরদস্তিহীন জ্ঞান” সম্ভব যা ফুকো-ও, সাইদ তাঁর অরিয়েন্টালিজম এর তিন বছর আগে প্রকাশিত ইবমরহহরহমং বইতে দেখিয়েছেন, বুদ্ধিজীবীর ভূমিকাকে “ক্ষমতার বিভিন্নরূপের বিরুদ্ধে” সংগ্রাম বলে বর্ণনা করেছেন এবং “সংগ্রামের ডিসকোর্স” এর সম্ভাবনা ইঙ্গিত করেছেন। (ইবমরহহরহমং, ৩৭৮-৭৯)। যদিও শেষপর্যন্ত এবং অনিবার্যভাবে ফুকো নিজেকে স্মরণযোগ্য করেছেন “আধিপত্যের লিপিকার” (ঞযব ংপৎরনব ড়ভ ফড়সরহধঃরড়হ”) হিসেবেই। (ঝঢ়ৎরহশবৎ, ২৮০)।
অরিয়েন্টালিজম প্রকাশের পরবর্তী বছরগুলোতো সাইদ ফুকোর বিরুদ্ধে তাঁর আক্রমণকে আরো শাণিত করেছেন। তিনি ক্রমাগত অধিকতর প্রত্যয়ের সঙ্গে এ মত ব্যক্ত করেছেন যে প্রতিরোধ সব সময় ছিল এবং সব সময় সম্ভব। উত্তর-সংগঠনবাদের উপর লেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি প্রবন্ধ “ঈৎরঃরপরংস ইবঃবিবহ ঈঁষঃঁৎব ধহফফ’ুংঃবস”-এ সাইদ ফুকোকে সমালোচনা করেছেন এই বলে যে, ফুকো “আধুনিক সমাজের অন্তর্নিহিত বিরুদ্ধশক্তিগুলির কেন্দ্রীয় ডায়ালেকটিককে কমবেশি বিলুপ্ত করে দিয়েছেন।” (ঞযব ডড়ৎষফ, ঃযব ঞবীঃ, ধহফ ঃযব ঈৎরঃরপ, ২২১) আরো একটি বহুলপ্রশংসিত প্রবন্ধে (“ঞৎধাবষষরহম ঃযবড়ৎু”) সাইদ একহাত নিয়েছেন ফুকোকেÑ ফুকো এই আপ্তবাক্যে ঈমান এনেছেন যে, “শক্তি সর্বত্র বিরাজমান” এবং তিনি “তাঁর আলোচ্য সমাজে শ্রেণীর ভূমিকা, অর্থনীতির ভূমিকা, দ্রোহ-বিপ্লবের ভূমিকা”-কে উপেক্ষা করেছেন। (ঞযব ডড়ৎষফ, ২৮৮) ১৯৮৬-তে রচিত “ঋড়ঁপধঁষঃ ধহফ ঃযব ওসধমরহধঃরড়হ ড়ভ চড়বিৎ” প্রবন্ধে সাইদ আরো খাপ্পা হয়েছেন ফুকোর উপর; তুলোধুনা করেছেন এই ফরাসী তাত্ত্বিককে, “শক্তিমত্তার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধের প্রতি তাঁর অনন্য অনাগ্রহের” জন্য (ঋড়ঁপধঁষঃ ধহফ. ১৫১)।
সাইদ ফুকো থেকে সরে গিয়েছেন ফানন, গ্রামসি এবং উইলিয়ামসের মতো বুদ্ধিজীবীদের দিকে, আফ্রিকা এবং এশিয়ার সাম্রাজ্যবাদ প্রতিরোধের ইতিহাসকে গণনায় এনেছেন এবং পৃথিবীর সর্বত্র থেকে প্রকাশিত প্রতিরোধ-সাহিত্যের বন্দনা করেছেন। এসব করার মধ্য দিয়ে সাইদ এমন একটি পথে যাত্রা করেছেন যে পথ তাঁকে শুধু ঔপনিবেশিক-এনকাউন্টারের একজন প্রধান প্রবক্তা করবে না, তাঁকে উত্তর-ঔপনিবেশিক বিদ্বৎসমাজের কাউন্টার-ডিসকোর্সের একজন অগ্রসৈনিকও করে তুলবে। কিন্তু ফুকো থেকে ফাননে যাত্রার পথটি চিহ্নিত করার আগে আমি স্বয়ং সাইদের উপর দৃষ্টিক্ষেপ করতে চাই, যাতে বোঝা যায় কেন তিনি ভাবলেন যে তাঁকে সক্রিয়বাদ ও রাজনৈতিক প্রতিরোধের পথটিই বেছে নিতে হবে, এবং সরে যেতে ফবঃবৎসরহরংঃরপ বিশ্ববীক্ষা থেকে ক্রমশ দূরে।
৩.
এডওয়ার্ড সাইদের জীবনকাহিনীর সারাংশে লেখার প্রয়োজন এখানে নেই, তবু একথা মনে রাখার দরকার যে, তাঁর জন্ম ১৯৩৫ সালে, জেরুজালেমে। ইজরায়েল কর্তৃক প্যালেস্টাইন দখল করে নেয়ার পর সাইদের পরিবার ১৯৪৮ সালে দেশত্যাগে বাধ্য হয়। তাঁরা আসেন কায়রোতে। কিছুদিন পর সাইদ আমেরিকার ম্যাসাচুসেট্সে গড়ঁহঃ ঐবৎসড়হ ংপযড়ড়ষ এ পড়তে যান। পরবর্তীতে, প্রিন্সটন ও হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। হার্ভার্ড থেকে গ্রাজুয়েশনের পর সাইদ কলাম্বিয়ায় শিক্ষকতার চাকুরী নেন। ১৯৬৬ সালে এডওয়ার্ড সাইদের প্রথম এই বেরোয়-ঔড়ংবঢ়য ঈড়হৎধফ ধহফ ঃযব ঋঁহপঃরড়হং ড়ভ অঁঃড়নরড়মৎধঢ়যু এই বই থেকে অবশ্য সাইদের পরবর্তী রচনাসম্ভাবরের তেমন কোন সূত্র পাওয়া যাবে না। শুধু একটি সূত্র ছাড়া। সেটি হলো লেখক হিসাবে জোসেফ কনরাড সম্পর্কে তার বিরতিহীন আগ্রহ। বহির্বাসী বহির্দেশীয় লেখক হিসাবে কনরাডের অবস্থানটি চমৎকার লেগেছে সাইদের কাছেÑতিনি কনরাডের চিঠিপত্র খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন তাঁর উপন্যাসগুলো সংগে সংযোগ খোঁজার জন্যে। তবে কৌতুকজনক ঘটনা হলো, এই বইয়ে সাইদ কনরাডকে ঔপনিবেশিক অভিজ্ঞতার কথাশিল্পী হিসাবে মোটেই দেখেননি।
কনরাডের ওপর লেখা বইটি এবং ইবমরহহরহমং (১৯৭৫) নামে তাঁর দ্বিতীয় বইটির মধ্যে ফারাক নয় বছরের। এর ভেতরে সাইদের জীবন পাল্টে গেছে অনেকটাই। কলাম্বিয়ায় তার আসন পোক্ত এবং কসমোপলিটন নিউইয়র্কেও তিনি খাপ খাইয়ে নিয়েছেন নিজেকে। কিন্তু তা-সত্ত্বেও তিনি তাঁর জন্মভূমি প্যালেস্টাইনের সাথে সম্পর্কে পুনঃস্থাপন করলেন। সাইদের জীবনের মোড় ঘুরলো ১৯৭৬ সালের আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের সময়। ইজরায়েল-এর যুদ্ধে গাজা উপত্যকা, সিনাই উপদ্বীপ এবং পুরোনো জেরুজালেম শহর ও গোলান মালভূমি কব্জা করে নেয়। প্যালেস্টাইনবাসীরা এই বিপুল পরাজয়ের মধ্যেও কিছু একটা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন। সাইদ তাঁর সাম্প্রতিকতম ঞযব চড়ষরঃরপং ড়ভ উরংঢ়ড়ংংবংংরড়হ (১৯৯৪) গ্রন্থের ভূমিকায় লেখেন-“ইবমরহহরহম রহ ১৯৬৮ ও ংঃধৎঃবফ ঃড় ঃযরহশ, ৎিরঃব, ধহফ ঃৎধাবষ ধং ংড়সবড়হব যিড় ভবষঃ যরসংবষভ ঃড় নব ফরৎবপঃষু রহাড়ষাবফ রহ ঃযব ৎবহধরংংধহপব ড়ভ চধষবংঃরহব ষরভব ধহফ ঢ়ড়ষরঃরপং.” প্রবাসী ফিলিস্তিনীদের সাথে যোগাযোগ হলো; সাইদ ১৯৬৯ ও ১৯৭০ সালে আম্মান ভ্রমণে গেলেন এবং ১৯৭২-৭৩ সালে দীর্ঘ অবস্থান করলেন বৈরুতে। সাইদের সম্ভবত সবচেয়ে ব্যক্তিগত কথনের বই, অভঃবৎ ঃযব খধংঃ ঝশু-তে তিনি বলেছেন ঐ বছরব্যপী বৈরুতপ্রবাস কেমন জরুরী পরিবর্তন ঘটিয়েছিল তার মধ্যে। তিনি নিজেকে পুনঃদীক্ষিত করতে পেরেছিলেন আরব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মন্ত্রেÑ
“ধঃ ঃযব ঃরসব ড়ভ চধষবংঃরহরধহ ৎবহধরহংংধহপব রহ ঢ়ড়ষরঃরপং ধহফ পঁষঃঁৎব.” ইবমরহহরহমং গ্রন্থেই বোঝা গেল সাইদ বুদ্ধিবৃত্তিক লেখনীকে রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের মাধ্যমে হিসাবে দেখতে চান, কিন্তু তবু এই বইতে তেমন কিছু নেই যাতে একে একই সাথে একজন প্যালেস্টাইনী আরব ও একজন মার্কিনী সমালোচকের রচনা মনে হতে পারে। তিনি যে একজন হৃতস্বদেশ আরব, এবং তিনি যে তার স্বদেশ-হরণকারী সাম্রাজ্যবাদী কিংবা নব্য-সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে যুঝতে চান, এই বই পড়ে তেমনটা মনে হয় না।
এই গ্রন্থটি প্রকাশের বছরখানেক পরে উরধপৎরঃরপং পত্রিকিাকে দেয়া এই সাক্ষাৎকারে প্রথম বোঝা গেল যে সাইদের মধ্যে একটি দ্বিধাবোধ এসেছে। এই সাক্ষাৎকারে সাইদ নিজের সম্পর্কে বললেন, “ঁহঃরষ ভধরৎষু ৎবপবহঃষু” তিনি একটি দ্বৈত জীবন যাপন করছিলেন : একটি হলো একজন অ্যাকাডেমিক তাত্ত্বিকের জীবনযাপন অন্যটি হলো এমন একজন মানুষের যে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত, এমন একজন যে ক্রমাগত আরো বেশি জড়াচ্ছে “রাজনীতি, ক্ষমতা, আধিপত্য এবং সংগ্রাম”-এর সাথে। এই দ্বিতীয় সত্তাটি তাঁর প্রথম সত্তা অর্থাৎ তার অ্যাকাডেমিক এবং তাত্ত্বিক সাহিত্যসমালোচনার গজদন্তমিনারবাসী সত্তার উপর দখলদারি কায়েম করছে। (উরধপৎরঃরপং পৃ. ৩৫)। এ সাক্ষাৎকারেই সাইদ কবুল করলেন যে তাঁর ব্যক্তিগত ইতিহাস এবং সেই সাথে তাঁর জাতির ইতিহাস “ফবঃধপযবফ ভৎড়স ঃযব রসঢ়বৎরধষরংস” নয় বরং এমন একটি সত্য যা অসহনীয়ভাবে মূর্ত এবং বাস্তব। ঙৎরবহঃধষরংস হলো সেই বই যেখানে সাইদ তাঁর প্যালোস্টাইনী জীবনকে তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত করলেন এবং তাঁর তাত্ত্বিক র্যাডিকালিজমের সাথে মিশিয়ে নিলেন তাঁর রাজনৈতিক কর্মিষ্ঠতাকে। ‘অরিয়েন্টালিজমের’ ভেতরেই সাইদ ব্যাখ্যা করেছেন কেন তিনি এই বই লিখতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তিনি এই বই লিখেছেন কেননা তিনি নিজেকে মনে করেন ঔপনিবেশিক এনকাউন্টারের ফসল। তাঁর নিজের ভাষায় : “রহ সধহু ধিুং সু ংঃঁফু ড়ভ ঙৎরবহঃধষরংস যধং নববহ ধহ ধঃঃবসঢ়ঃ ঃড় রহাবহঃড়ৎু ঃযব ঃৎধপবং ঁঢ়ড়হ সব, ঃযব ঙৎরবহঃধষ ংঁনলবপঃ, ড়ভ ঃযব পঁষঃঁৎব যিড়ংব ফড়সরহধঃরড়হ যধং নববহ ংড় ঢ়ড়বিৎভঁষ ধ ভধপঃড়ৎ রহ ঃযব ষরভব ড়ভ ধষষ ঙৎরবহঃধষং” (পৃ. ২৫) সন্দেহ নেই যে, তিনি প্যালেস্টাইনী প্রতিরোধ আন্দোলনের সংম্পর্শে এসে ‘অরিয়েন্টালিজম’ লিখলেন যার উদ্দেশ্য হলো উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে প্রথম কার্যকর পদক্ষেপটি নেয়া যায় ভিত্তিতে ঔপনিবেশিকতা-পীড়িত মানুষরা বিশ্বনাট্যমঞ্চে তাদের হারানো কণ্ঠস্বরটি আবার ধ্বনিত করতে পারে, আওয়াজ তুলতে পারে প্রতিরোধের।
৪.
এডওয়ার্ড সাইদের উত্তর-ঔপনিবেশিক কাউন্টার-ডিসর্কোর্সের মূলকথা হলো, একজন বুদ্ধিজীবীকে নীচের স্তরগুলোর ভেতর দিয়ে যেতে হবে: (১) নিজের শেকড় এবং ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্তি; (২) ঔপনিবেশিক সংগঠনসমূহ আমাদের চেতনার কী ধরনের ছাপ রেখে গেছে এবং আমাদের চিন্তন-প্রপঞ্চে তাদের ভূমিকা কীরূপ সে সম্পর্কে উচ্চতর সচেতনতা অর্জন; (৩) উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগে বেঁচে থাকা সাম্রাজ্যবাদী যুগের রেশসমূহ সম্পর্কে সচেতনতা; (৪) এ-ধরনের ঐপনিবেশিক-উত্তর ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার আধিপত্য অপ্রতিরোধ্যÑএমন ধারণা পরিহার; (৫) ডৎরঃরহম-ধং-ধপঃরড়হ অর্থাৎ লেখনীকে সংগ্রামের হাতিয়ার হিসাবে ভাবা এবং ক্লাসিক টেক্সটগুলোকে এমনভাবে পুনর্পঠন করা যাতে ঔপনিবেশিক শক্তিসমূহের সাথে তাদের দালাল-সহযোগিতার দিকটি পরিস্ফুট হয়; (৬) উত্তর-ঔপনিবেশিক শোষণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লেখার মাধ্যমে প্রতি-আক্রমণ এবং অরিয়েন্টালিজমের মতো ভণ্ড-দরদী জ্ঞানশাখার অসারতা উন্মোচন।
অরিয়েন্টালিজম-প্রকাশের পরবর্তী সময়ে সাইদ তাঁর কাউন্টার-রীডিং এর তত্ত্ব সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং তত্ত্বালোচনার আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক লিখলেন ধারণাকে আরো স্পষ্ট করেছেন। আগেই অবশ্য সাইদ উরধপৎরঃরপং এর সাক্ষাৎকারে নিজেকে ঘোষণা করেছিলেন “ধং ধহ ঙৎরবহঃধষ ৎিরঃরহম নধপশ ধঃ ঙৎরবহঃধষরংঃং যিড় ভড়ৎ ংড় ষড়হম যধাব ঃযৎড়াবফ ঁঢ়ড়হ ড়ঁৎ ংরষবহপব.” তিনি আরো ঘোষণা করেন: “ও ধস ধষংড় ৎিরঃরহম ঃড় ঃযবস, নু ফরংসধহঃষরহম ঃযব ংঃৎঁপঃঁৎব ড়ভ ঃযবরৎ ফরংপরঢ়ষরহব ংযড়রিহম রঃং সবঃধ-যরংঃড়ৎরপধষ, রহংঃরঃঁঃরড়হধষ, ধহঃরবসঢ়রৎরপধষ, ধহফ রফবড়ষড়মরপধষ নরধংবং.” (পৃ. ৪৭)
উত্তর-ঔপনিবেশিক লেখক কীভাবে এই অরিয়েন্টালিজমের বিরুদ্ধে ‘ৎিরঃব নধপশ’ করবে? সাইদের মত হলো- তথাকথিত ‘অঞ্চল-বিশেষজ্ঞ’দের প্রকল্পগুলোর অন্তসারশূন্যতাকে তুলে ধরতে হবে, খুলে দিতে হবে এই সব প্রাচ্যবিশেষজ্ঞদের মুখোশ। ‘ডৎরঃব নধপশ’ এর আরেকটি অ-নঞর্থক অর্ধ-ঔপনিবেশিক সমাজসমূহে চলমান উপনিবেশ-প্রতিরোধের ঐতিহ্যকে শক্তিশালী করতে হবে। সাইদ মনে করেন যে, ঙৎরবহঃধষরংস লেখার আগ পর্যন্ত তিনি এই দ্বিতীয়োক্ত ব্যাপারটি উপেক্ষা করেছিলেন। বৃটেনের চ্যানেল ফোর টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে (১৯৯২) সাইদ বলেছেন “পড়সঢ়বঃরহম পড়হপবঢ়ঃরড়হ ড়ভ মবড়মৎধঢ়যু” নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত সবসময়ই ছিল, যার প্রমাণ আফ্রিকা, আয়ারল্যাণ্ড, ক্যারিবিয়ান এবং ভারতের জাতীয়তাবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামগুলো। (ঞধষশরহম ষরনবৎঃরবং, ১২) সুতরাং এই ঐপনিবেশিকতা-বিরোধিতার কথা আমাদের বলা দরকার। একারণেই আশির দশক জুড়ে সাইদ বরাবর ঈ.খ.জ ঔধসবং কৃত ইষধপশ লধপড়নরহং দের ইতিহাসের কথা উল্লেখ করেছেন : জেমসের এই কাজটি সাইদকে মনে করিয়ে দেয় পৃথিবীর সর্বত্র প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তার কথা। একই কারণে সাইদ ঝঁনধষঃবৎহ যরংঃড়ৎরড়মৎধঢ়যু-এর অন্যতম প্রধান প্রবক্তা। এর প্রমাণ, গায়ত্রী স্পিভাক-কৃত, ১৯৮৮ সালে আমেরিকার প্রকাশিত, ঝঁনধষঃবৎহ ঝঃঁফরবং সংকলনের ভূমিকাটি লিখেছেন এডওয়ার্ড সাইদ।
ঙৎরবহঃধষরংস গ্রন্থটির পরপর সাইদ আরো কয়েকটি বই লেখেন যার উদ্দেশ্য এমন একটি প্যালেস্টাইনীয় কাউন্টার-ন্যারেটিভ তৈরি করা যা আরবদের জন্মভূমিতে ইজরায়েলী আবাসনের মিথকে প্রতিহতও করবে। এই ধরনের কাউন্টার-ন্যারেটিভের একটি ভালো নমুনা ঞযব ছঁবংঃরড়হ ড়ভ চধষবংঃরহব (১৯৭৯)। সাইদ এই গ্রন্থের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন-“সু ঃধংশ রং ঃড় ঢ়ৎবংবহঃ ঃযব চধষবংঃরহরধহ ংঃড়ৎু; ঃযব তরড়হরংঃ ড়হব রং সঁপয নবঃঃবৎ শহড়হি ধহফ ধঢ়ঢ়ৎবপরধঃবফ” এরকম আরেকটি প্রচেষ্টা অভঃবৎ ঃযব খধংঃ ঝশু। এ বইয়ে ঔবধহ গড়ষবৎ-এর তোলা প্যালেস্টাইনী জীবনের আলোকচিত্রমালা এবং সাইদ-কৃত তাদের ভাষ্য সন্নিবেশিত। এই চিত্র-ভাষ্য থেকে প্যালেষ্টাইনীদের জীবন মূর্ত হয়ে ধরা দেয় পাঠকের কাছে।
ঈঁষঃঁৎব ধহফ ওসঢ়বৎরধষরংস পরবর্তী গ্রন্থ। সাইদ আর এখন শুধু “ধ মবহবৎধষ ড়িৎষফ-রিফব ঢ়ধঃঃবৎহ ড়ভ রসঢ়বৎরধষ পঁষঃঁৎব” কে তিরস্কার করেই তৃপ্ত নন, তিনি এখন চান ঔপনিবেশিকীকরণের প্রতি ঘটনাকে আরেকটি “হধৎৎধঃরাব ড়ভ যরংঃড়ৎরপধষ ৎবংরংঃবহপব ধমধরহংঃ বসঢ়রৎব” দিয়ে প্রতিহত করতে। যদিও নব্য-সাম্রাজ্যবাদী চন্ত্রান্ত আজকেও ক্রিয়াশীল, সাইদ দেখছেন যে, “পৃথিবীর বিভিন্ন উত্তর-ঔপনিবেশিক অঞ্চলে এখন মেট্রপলিটন পৃথিবীর সাথে ভীষণ উদ্দীপ্ত তর্কযুদ্ধে নামবার চেষ্টা চলছে।” একটা কথা সত্য, সাইদ এই যুদ্ধের প্রকৃতিকে মোটেই সরলভাবে দেখছেন না। তিনি জানেন যে যুদ্ধটি হবে সর্বাত্মক, “ধ নধঃঃষব... ভড়ঁমযঃ ড়ঁঃ ড়হ ঃযব ঃবৎৎধরহ ড়ভ রহভড়ৎসধঃরড়হ, াড়পধনঁষধৎু ড়ৎ রসধমবং. “প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য উভয় জায়গাতেই মিডিয়ার পরাক্রমশালী আক্রমণকে ঠেকাতে হবে, যে মিডিয়া ক্রমাগত নব-ঔপনিবেশিকতার তত্ত্বকে শক্তিশালী করছে, প্রাচ্য সম্পর্কে ভুল মিথ ও মিথ্যা ধারণা ছড়াচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী আদর্শের পালে হাওয়া লাগানোর জন্য। সাইদ চইঝ টেলিভিশনে কেনীয় মুসলিম পণ্ডিত আলী মাজরুই’ বক্তৃতা সিরিজ ঞযব অভৎরপধহং সম্পর্কে দারুন উদ্বেল হয়েছেন। “ঐবৎব ধঃষবধংঃ ধিং ধহ অভৎরপধহ ড়হ ঢ়ৎরসব ঃরসব ঃবষবারংরড়হ রহ ঃযব নবংঃ, ফধৎরহম ঃড় ধপপঁংব ঃযব বিংঃ ড়ভ যিধঃ রঃ যধং ফড়হব, ঃযঁং ৎবড়ঢ়বহরহম ধ ভরষব পড়হংরফবৎবফ পষড়ংবফ.” (ঈঁষঃঁৎব ধহফ রসঢ়বৎরধষরংস পৃ, ৩৯)
৫.
সত্তরের দশকের শেষ ভাগে, এবং ইবমরহহরহমং ও ঙৎরবহঃধষরংস এর ব্যাপকজ সাফল্যের পর, সাইদ তাঁর মতামত প্রকাশের প্রচুর সুযোগ পেতে থাকলেন। প্রিন্ট-মিডিয়া এবং প্রাইম-টাইম টেলিভিশনে তিনি প্যালেস্টাইনীদের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের নীতির প্রতিবাদ করতে থাকলেন। সেই সঙ্গে আরব জনগণ ও ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমাজগতের ভুল ধারণা ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে চালাতে লাগলেন তাঁর প্রতিরোধ। মিডিয়াতে অনুপ্রবেশের এই সাফল্য সাহসী করে তুলল সাইদকে। তিনি এরকম ঘোষণাও করলেন একটি সাক্ষাৎকারে : “ঞযবৎব ধৎব বহফষবংং ড়ঢ়ঢ়ড়ৎঃঁহরঃরবং ভড়ৎ রহঃবৎাবহঃরড়হ ... ধহফ ঃৎধহংভড়ৎসধঃরড়হ .... ুড়ঁ পড়ঁষফ ঃধশব ধহফাধহঃধমব ড়ভ ঃযব ড়াবৎফবাবষড়ঢ়সবহঃ ড়ভ ঃযব ফড়সরহধঃবফ ধঢ়ঢ়ধৎধঃঁংবং ধহফ রহঃবৎাবহব ংঃৎধঃবমরপধষষু ধঃ পবৎঃধরহ ঢ়ড়রহঃং” (ঝঢ়ৎরহশবৎ. ২৪১) এই সাক্ষাৎকারে সাইদ আরো বলেছেন যে, তাঁর শিক্ষা, তাঁর এলিটেস্ট যোগাযোগ এবং নিউইয়র্কে অবস্থান, সব কিছু তাঁকে সাহায্য যুগিয়েছে : পশ্চিমা জগতে একজন উত্তর-ঔপনিবেশিক লেখক হিসাবে তাঁর অবস্থিতির পেছনে রয়েছে প্যালেস্টিনিজম এর প্রতি তাঁর প্রশ্নহীন অনুগত্য। এই প্যালেস্টিনিজমের মোদ্দাকথা হলো প্যালেস্টাইনী ভূখণ্ডের সঁষঃরৎধপরধষ এবং সঁষঃরৎবষরমরড়ঁং ইতিহাসের পুনরুদ্ধার। সেই সাথে ভূমির সাথে প্যালেস্টাইনীদের পূর্ণ সংহতি স্থাপন। বোঝাই যাচ্ছে, সাইদের ক্ষেত্রে ‘ৎিরঃরহম নধপশ ঃড় ঃযব বিংঃ’-এর অর্থ হচ্ছে আধিপত্যবাদী বৃদ্ধিবৃত্তিকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং সেই সাথে ঔপনিবেশিকতাবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা, উভয়ই। সাইদের জন্য দু’টো প্রক্রিয়াই একটি বৃহত্তর প্রকল্পের অংশ: প্যালেস্টাইনের মুক্তি। এর অর্থ, উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবীদের কাউন্টার-ডিসকোর্স শুধু একটি তাত্ত্বিক ব্যায়ামমাত্র নয়, বরং এটি একটি চলন্ত রাজনৈতিক সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ। উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবী হিসাবে এডওয়ার্ড সাইদের আবির্ভাবলগ্নটি সম্ভবত ১৯৬৮-এর ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধ। বিশেষত কধৎধসবষ-এর যুদ্ধ যেখানে জায়নবাদী শক্তি সংপ্রথম একটি গেরিলাগ্রাপের প্রস্তরকঠিন প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। এবং এটাও কাকতালীর নয় মোটেই যে, ঙৎরবহঃধষরংস বেরোয় এমন সময় যখন পিএলও প্রতিরোধ সংগ্রামের সংগঠন হিসাবে প্রাথমিক সাফল্য পেতে শুরু করেছে। সাইদ নিজেই বলেছেন, ঙৎরবহঃধষরংস এর পরবর্তী তাঁর সবগুলো কাজের পেছনে রয়েছে এই বোধটি ক্রিয়াশীল, যে তিনি একটি চলমান সংগ্রামের অংশ। একথাটি শুধু তাঁর সরাসরি রাজনৈতিক গ্রন্থাবলি, ঞযব ছঁবংঃরড়হ ড়ভ চধষবংঃরহব, ঈড়াবৎরহম ওংষধস. ইষধসরহম ঃযব ঠরপঃরসং এবং ঞযব চড়ষরঃরপং ড়ভ উরংঢ়ড়ংংবংংরড়হ সম্পর্কে সত্য নয়, তাঁর লিটারারি ক্রিটিকাল টেক্সটগুলো (ঞযব ডড়ৎষফ, ঃযব ঞবীঃ, ধহফ ঃযব ঈৎরঃরপ এবং ঈঁষঃঁৎব ধহফ ওসঢ়বৎরধষরংস) সম্পর্কেও সত্য। ঈঁষঃঁৎব ধহফ ওসঢ়বৎরধষরংস-এ সাইদ জোর দিয়ে ঘোষণা করেছেন যে প্যালেস্টাইনী প্রতিরোধ দৃঢ়তর হবেই যদিও ইসরাইলী দখলদাররা ভাবছে যে তাঁরা অনন্তকালের জন্য প্যালেস্টাইনকে ধরে রাখবে। এ ধরনের প্রেরণা সাইদ সম্ভবত পেয়েছেন ইন্তিফাদাহ সম্পর্কিত একটি বইয়ের উপর কাজ করার সময়, যে-বইয়ে ইসরাইলী প্রভু এবং তাদের মার্কিনী মদদাতাদেরকে বলা হয়েছে-ণড়ঁৎ ষড়মরপ, নু যিরপয ুড়ঁ ভড়ৎবপধংঃ ধহ বহফষবংং ংরবমব, রং ফড়ড়সবফ, ঃযব ধিুং ধষষ পড়ষড়হরধষ ধফাবহঃঁৎবং যধাব নববহ ফড়ড়সবফ”. (ঞযব চড়ষরঃরপং ড়ভ উরংঢ়ড়ংংবংংরড়হ, পৃ. ১৪৩)
৬.
ইতিহাসের যুগে যুগে পাশ্চাত্য আধিপত্যবাদীদের মাননিক প্রভূত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম হয়েছে। এই সংগ্রাম উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবীদের জন্য অনুপ্রেরণার স্থল। আরেকটি অনুপ্রেরণা হচ্ছে কিছু ব্যক্তি-বুদ্ধিজীবীর দৃষ্টান্তমূলক রচনাপঞ্জী। তৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, ডিসকোর্স-পদ্ধতি সম্পর্কে ফুকোর ধারণাগুলোকে প্রশ্ন করতে শুরু করার পরপরই সাইদ অধিকতর মনোযোগী হলেন ফ্রান্ৎস্ ফাননের রচনার দিকে : ফানন এরকম ডিসকোর্স-প্রতিরোধ সম্পর্কে ধারণা ব্যক্ত করেছিলেন। ঈঁষঃঁৎব ধহফ রসঢ়বৎরধষরংস গ্রন্থে সাইদ এই দু’জন বুদ্ধিজীবীর তুলনামূলক আলোচনা করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত বাতিল করেছেন ফুকো-কে, কেননা ফুকো “ংববসং ধপঃঁধষষু ঃড় ৎবঢ়ৎবংবহঃ ধহ রৎৎবংরংঃরনষব পড়ষড়হরুরহম সড়াবসবহঃ ঃযধঃ ঢ়ধৎড়ফড়ীরপধষষু ভড়ৎঃরভরবং ঃযব ঢ়ৎবংঃরমব ড়ভ নড়ঃয ঃযব ষড়হবষু রহফরারফঁধষ ংপযড়ষধৎ ধহফ ঃযব ংুংঃবস ঃযধঃ পড়হঃধরহং যরস.” অন্যদিকে ফানন সাইদকে আকর্ষণ করেছেন কেননা ফাননের গতি “ভৎড়স পড়হভরহবসবহঃ ঃড় ষরনবৎধঃরড়হ.” যদিও ফুকো এবং ফানন-দুজনের উপরই গঠনমূলক প্রভাব পড়েছে ফ্রয়েড, নীট্শে এবং সার্ত্র-র, তবু সাইদের মতে, ফানন হচ্ছেন আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে শক্তিশলী অস্ত্রের ধারক। ফানন আরো একটি কারণে সাইদের কাছে মূল্যবান। ফানন অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বুঝেছেন যে, উপনিবেশ-উত্তর পৃথিবীতেও ঔপনিবেশিক স্বার্থ থেকেই যাবে। ফাননের যে-কথাটি সবচেয়ে সাইদের মনে ধরেছে তা হলো, জাতীয়তাবাদী চেতনা যদি সাফল্যের মুহূর্তে কোনো-না-কোনোভাবে সামাজিক চেতনায় রূপান্তরিত না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে জাতীয় স্বাধীনতা থাকবে না, থাকবে সাম্রাজ্যবাদেরই সম্প্রসারিত অবস্থা। ফানন শেখালেন উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবিদের এই কথাটি : জাতীয়তাবাদী বুর্জোয়াদের সম্পর্কে, বিশেষত এদের টোটাল জাতীয় মুক্তির শ্লোগান সম্পর্কে, সতর্ক হও, কেননা ঐসব চিৎকার মূলত এক ধরনের হধঃরড়হধষরংঃ ভরপঃরড়হ বৈ কিছু নয় এবং তা একধরনের স্বৈরতন্ত্র হটিয়ে অন্যধরনের স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র মাত্র।
ঈঁষঃঁৎব ধহফ ওসঢ়বৎরধষরংস-এর তৃতীয় অধ্যায়ে (“জবংরংঃধহপব ধহফ ঙঢ়ঢ়ড়ংরঃরড়হ”) সাইদ আরো কয়েকজন বুদ্দিজীবীর নাম করেছেন যারা পূর্বতন উপনিবেশিক দেশগুলোতে জন্মেছেন এবং যাঁদের রচনা, ফাননের রচনার মতই, উত্তর-ঔপনিবেশিক লেখকদের উৎসাহ দিতে পারে। এঁরা হলেন, ক্যারিবীয় পণ্ডিত ঈ.খ.জ. ঔধসবং; আরব পণ্ডিত এবড়ৎমব অহঃড়হরঁং, ‘সার্ব-অলটার্ন স্টাডিজ’ গ্র“পের ভারতীয় প্রতিষ্ঠাতা রণজিৎ গুহ এবং মালয়েশীয় ইতিহাসবিদ ঝ.ঐ. অষধঃধং. এই চতুষ্টয় নমুনা দেখিয়েছেন কীভাবে অব্যাহত সাম্রাজ্যবাদী সংগঠনের যুগে আন্তর্জাতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব। জেম্স লিখেছেন ক্যারিবিয়ানে ফরাসি সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের সংগ্রামের কথা; আন্টনিয়াস বিকল্প ইতিহাস লিখেছেন বৃটিশ পতাকার নীচে কীভাবে আরব জাতীয়তাবাদ তৈরী হলো। রণজিৎ গুহ ভারতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রেক্ষিতে ঔপনিবেশিকতার ইতিহাস লিখেন; এবং আলাটাস্ তাঁর লেখায় সাম্রাজ্যবাদীদের তৈরী ষধুু হধঃরাব-এর ধারণার মিথ্যা মিথকে ফাটালেন। চার ভূখণ্ডের চার সময়ের এই বুদ্ধিজীবীচতুষ্টয় একটি ঐক্যসূত্রে বাঁধা। সূত্রটি হলো, তারা সবাই উপনিবেশিত তথা প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ, “যিড় ৎিড়ঃব রহ ধহ রসঢ়বৎরধষ ষধহমঁধমব, যিড় ভবষঃ ঃযবসংবষাবং ড়ৎমধহরপধষষু ৎবষধঃবফ ঃড় ঃযব সধংং ৎবংরংঃধহপব ঃড় বসঢ়রৎব.” তাঁরা সবাই সাম্রাজ্যবাদীদের ভাষায় সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছেন বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিরোধ। অন্যকথায়, এরা হলেন সেইসব পণ্ডিত যাঁরা পাশ্চাত্য পাণ্ডিত্যের হাতিয়ারগুলো দিয়েই “ৎিরঃব নধপশ” করেছেন পাশ্চাত্যের প্রতি। আর সেইজন্যই, উত্তর-উপনিবেশিক বুদ্ধিজীবীদের জন্য এই চারজন দৃষ্টান্তমূলক ব্যক্তিত্ব।
এডওয়ার্ড সাইদ যে-ধরনের উত্তর-ঔপনিবেশিকতার কথা বলছেন সেখানে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্ররোচনা আছে। বস্তু, ফানন-ও “নিষ্কুলষ জাতীয়তা’-র বিপদের কথা জানিয়েছেন। সাইদ বলেছেন, উত্তর-ঔপনিবেশিক ডিসকোর্স হবে জাতীয়তাবাদের নির্দ্দিষ্ট সীমানার বাইরে একটি স্পেস-এ, যদিও এর উৎসমুখ থাকতে পারে জাতীয়তাবাদী কোনো ইস্যু বা ঘটনার মধ্যে। এই বহির্জাতিক স্পেস-এই জন্ম হয়েছে সলমন রুশদীর গরফহরমযঃ’ং ঈযরষফৎবহ-এর মতে সংকর গ্রন্থ। সাইদ ওকালতি করছেন এমন একটি আন্তর্জাতিক কাউন্টার-ডিসকোর্সের যা জাতিগত সীমানাকে পেরিয়ে একটি সাধারণ জায়গায় মিলিত হতে উৎসাহ যোগাবে বুদ্ধিজীবীদের। সাইদের ভাষায়, “ঞযব ভধপঃ রং, বি ধৎব সরীবফ রিঃয ড়হব ধহড়ঃযবৎ রহ ধিুং ঃযধঃ সড়ংঃ ংুংঃবসং ড়ভ বফঁপধঃরড়হ যধাব হড়ঃ ফৎবধসবফ ড়ভ” (পৃ, ৩৩১)। সাইদের মতে, উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবীদের কর্তব্য হলো বৈশ্বিক পরিসরে চিন্তা করা, জাতীয়, বর্ণগত, শ্রেণীগত সীমানাগুলো পেরিয়ে গিয়ে পিছিয়ে-পড়া সংখ্যালঘু এবং প্রতিনিধিত্বহীন জনসমাজ (তা বিশ্বের যেখানকারই হোক) সম্পর্কে সোচ্চার হাওয়া।
সাইদের এই কসমোপলিটানিজম খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক তাঁর চিন্তার। কিনউত এ- সত্ত্বেও ভি.এস. নাইপলের মতো শেকড়হীন লেখককে আবার তিনি থোড়াই মূল্যবান মনে করেন। নাইপল তাঁর জীবনের একপর্বে জাতীয়তাবাদকে ভর্ৎসনা করেছেন কিন্তু কখনও কোথাও কোনো প্রতিরোধ আন্দোলনের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেননি।
পাশ্চাত্যের লেখকদের মধ্যেও দু’ধরনের নমুনা-মডেল লক্ষ্য করেছেন সাইদ। একধরনের লেখকরা সাম্রাজ্যবাদকে পুষ্ট করেছেন অবলীলায়, অন্য কিছু লেখক পাশ্চাত্যের হয়ে দেশকালগণ্ডীর বাইরে গিয়ে স্বাধীনতাকামী উপনিবেশিত-মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন। ঞযব ঙঁঃংরফবৎ গ্রন্থের জন্য আলব্যের কাম্যুর সমালোচনা করেছেন সাইদ, কারণ এ-বইয়ে ক্যামু আলজেরীয়দের প্রতি বন্ধসুলভ আচরণ করেছেন। অন্যদিকে তুলনা করেছেন জাঁ জেনে-র সঙ্গে, যিনি তাঁর ফরাসি পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে তাঁর স্বদেশকর্তৃক পদানত মানৃুষ ও দেশের দুর্দশার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। তবে এডওয়ার্য সাইদ সবচাইতে বেশি নির্ভরতা পেয়েছেন গ্রামসির মধ্যে এবং বন্ধু হিসেবে পেয়েছেন রেমন্ড উইলিয়ামস এবং নোয়াম চমস্কিকে। শেষোক্ত দু’জন অরিয়েন্টালিজম-সিস্টেমের বিরুদ্ধে একটি দুর্দান্ত কাউন্টার ডিসকোর্স চালানোর জন্য সাইদের সমরসঙ্গী। গ্রাম্সি এবং উইলিয়ামস উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ কেননা তাঁরা ধারণ করেন “বসবৎমবহঃ ড়ৎ ংঁনধষঃবৎহ মৎড়ঁঢ়ং রিঃযরহ ঃযব ফড়সরহধহঃ ফরংপঁৎংরাব ংড়পরবঃু” (ঋড়ঁপধঁষঃ ধহফ .... পৃ. ১৫২) অন্যদিকে চম্স্কি হলেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধ ইজরায়েল তোষণনীতির এবং প্যালেস্টাইনীদের উপর ইজরায়েলের নিষ্ঠুর নির্যাতনের তীব্র সমালোচক। এ কারণে চম্স্কি সাইদের কাছে খুব প্রিয়। সাইদের মতে, উত্তর-ঔপনিবেশিক পৃথিবীর নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতে এইসব পাশ্চাত্য বুদ্ধিজীবীর আধিপত্যবিরোধী রচনাপুঞ্জ নতুন মনোযোগ ও নিষ্ঠাবান অনুসরণের দাবি রাখে।
উপনিবেশন বলতে এখন শুধু পাশ্চাত্যদেশকর্তৃক অ-ইউরোপীয় দেশ দখল বোঝায় না। উপনিবেশিতের (পড়ষড়হরুবফ) সংজ্ঞার মধ্যে চলে এসেছে আরো অনেক কিছু: “ঞযব ‘পড়ষড়হরুবফ’ যধং ংরহপব বীঢ়ধহফবফ পড়হংরফবৎধনষু ঃড় রহপষঁফব ড়িসবহ, ংঁনলঁমধঃবফ ধহফ ড়ঢ়ঢ়ৎবংংবফ পষধংংবং, হধঃরড়হধষ সরহড়ৎঃরবং, ধহফ বাবহ সধৎমরহধষরুবফ ড়ৎ রহপড়ৎঢ়ড়ৎধঃবফ ংঁনংঢ়বপরধষরঃবং,” নারী, শোষিত-অবদমিত শ্রেণীসমূহ, জাতিগত সংখ্যালঘু, প্রান্তিক জনগোষ্ঠি, সবাইকে এই নব-ঔপনিবেশিকতার স্তরে গণ্য করা চলে। উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বহু দেশে একটি নব্য ক্ষমতাকারবারী এলিট শ্রেণী গড়ে উঠেছে যারা স্থান দখল করেছে শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের। এই দালাল এলিট শ্রেণী নব্য-সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের সাথে গড়েছে নতুন আঁতাত ও দোস্তি। “জাতীয়তাবাদী শাক্তি”-এ ধরনের দ্বিঘাত সমীকরণের পূর্বতন ধারণা পাল্টে ফেলে। এখন চিনে নিতে হবে রাজনৈতিক সীমানা, জাতিসত্তা ইত্যাদি-পেরিয়ে যাওয়া, নতুন ঔপনিবেশিক শোষণ-সংদমনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা নতুন ঐক্যবোধকে। এই নতুন আন্তর্জাতিক-ঐক্যবোধ, এই “হবি ধষরমহসবহঃং সধফব ধপৎড়ংং নড়ৎফবৎং, ঃুঢ়বং, হধঃরড়হং ধহফ বংংবহপবং” চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে সনাতনী রফবহঃরঃু-এর ধারণাকে, যে ধারণা সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতার যুগে সাংস্কৃতিক চিন্তার মূলবস্তু ছিল। সাইদ যেন বলতে চাইছেন যে, সংকীর্ণ জাতীয় ‘পরিচয়’ উত্তর-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রযন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদী এলিটদের মধ্যে একটি অশুভ আঁতাতের জন্ম দিয়ে চলেছে। সাইদ উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবীর সম্ভাব্য ভূমিকা সম্পর্কে তাই বলছেন- তাঁকে জাতীয়তাবাদী উগ্র চেতনাকে প্রতিহত করতে হবে এবং অবলম্বন করতে হবে “ধ সড়ৎব রহঃবমৎধঃরাব ারবি ড়ভ যঁসধহ পড়সসঁহরঃু ধহফ যঁসধহ ষরনবৎধঃরড়হ,” (ঈঁষঃঁৎব ধহফ ওসঢ়বৎরধষরংস, পৃ. ২১৬)।
উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগের বৃদ্ধিজীবীর কাউন্টার-ডিসকোর্সের অংশ হিসাবে সাইদ গবঃযড়ফড়ষড়মু-এর চেতনাকেও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাবছেন। তিনি এখন আর কোন একরৈখিক থিয়োরি-র পরহেজগার থাকতে চান নাÑ তিনি যা চান তা হলো “ধ ৎবষধঃরাবষু সড়ৎব ঁহনড়ঃঃড়সবফ, ঁহভরীবফ, ধহফ সড়নরষব ধিু ড়ভ ঢ়ৎড়পববফরহম” তাঁর মতে কাউন্টচার-ডিসকোর্সের পদ্ধতি হবে তুলনামূলক এবং আন্ত:ডিসিপ্লিনমূলক। একসময় সাইদ লিটারারি থিয়োরির একনিষ্ঠতায় মগ্ন ছিলেন। এখন তাঁর ইচ্ছা হলো “ঃড় ফড় ংড়সবঃযরহম ভৎড়স ধহ যরংঃড়ৎরপধষ ঢ়ড়রহঃ ড়ভ ারব,ি ধপৎড়ংং ফরংপঁৎংরাব ষরহবং রহ ড়ভঃবহ ঃৎধহংমৎবংংরাব ধিুং, রহ ধিুং ঃযধঃ ঃৎু ঃড় পড়হহবপঃ ঢ়ড়ষরঃরপধষষু ধহফ রহঃবষষবপঃঁধষষু রিঃয ড়ঃযবৎ রহঃবৎাবহঃরড়হং.”(ঝঢ়ৎরহশবৎ, পৃ. ২৪৮). এ ধরনের কাজের একটি উদাহরণ, গৌরী বিশ্বনাথনের বই ঞযব গধংশ ড়ভ ঈড়হয়ঁবংঃ : এই বইয়ে গৌরী উত্তর-ঔপনিবেশিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইংলিশ স্টাডিজের উত্থান এবং সাম্রাজ্যবাদের সাথে এর সম্পর্কে সন্ধান করেছেন। সাইদ আরো প্রশংসা করেছেন অন্যান্য থিয়োরিস্টদের-একবাল আহমেদ, হোমি ভাভা এবং সারা সুলেরি। এবং পোস্ট মডার্নিজম তথা উত্তরাধুনিকতাবাদ দু’চোখের বিষ সাইদের কাছে, যদি চড়ংঃ গড়ফবৎহরংস অর্থ হয় লেখকের নিজেকে রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে ধূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং জীবনের বিচূর্ণীভবন ও হতাশাকে ধ্র“বসত্য বলে মনে নেয়া। চড়ংঃ গড়ফবৎহরংস হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক সংগ্রাম, ক্ষমতার বৈশ্বিক রাজনীতিকে সমালোচনা ইত্যাদি জরুরি কর্ম থেকে পিঠটান দেয়ার গুরুমন্ত্র। সাইদ চান “এইসব চোয়াল-ভেঙ্গে-ফেলা কঠিন সব লধৎমড়হ-এ কন্টকিত উত্তর-আধুনিকতা, যা এখন থিয়োরিটিক্যাল সমালোচনা জগতকে ঘিরে ধরেছে” তাকে বিস্ফারিত করা হোক্, কারণ এই উত্তর-আধুনিকতাবাদগুলোর “অর্থ হচ্ছে ধনফরপধঃরহম ৎবংঢ়ড়হংরনরষরঃু ভড়ৎ ঢ়ড়ষরঃরপধষ ধপঃরড়হ ড়ৎ পৎরঃরয়ঁরহম ঢ়ড়বিৎ” (ঞযব চড়ষরঃরপং ড়ভ উরংঢ়ড়ংংবংংরড়হ পৃ. ৩১৬)।
মৌলবাদ সম্পর্কেও সাইদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার। মুসলিম দেশগুলোতে মৌলবাদীরা এমন প্রচার করে থাকে যে, এমন একগুচ্ছ অপরিবর্তনীয় আচার রয়েছে যা নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি ‘পবিত্র ও পূর্ণাঙ্গ’ জীবনব্যবস্থা। সাইদের মতে, ঐসব দেশের বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব হলো এই মতের বিরোধিতা করা। মৌলবাদী একরৈখিকতার বিপরীতে সাইদ স্মরণ করতে চান ইসলামী জাবনাচরণের “জটিল ও বহুদিকসম্পন্ন ইতিহাস” এবং বুদ্ধিজীবীদের কাছে আবেদন করেন “ঃড় ভধপব ঃযব পযধষষবহমবং ড়ভ হড়হ-ওংষধসরপ সরহড়ৎরঃরবং, ড়িসবহ’ং ৎরমযঃং, ভড়ৎ সড়ফবৎহরঃু রঃংবষভ, রিঃয যঁসধহ ধঃঃবহঃরাবহবংং ধহফ যড়হবংঃ ৎবধঢ়ঢ়ৎরংধষং, হড়ঃ ফড়মসধঃরপ ড়ৎ ঢ়ংবঁফড়- ঢ়ড়ঢ়ঁষরংঃ পযধহঃং.” সাইদ স্মরণ করিয়ে দেন ইসলামের ইতিহাসে ইজহিতাদের ঐতিহ্যের কথা, যখন ধর্মীয় সূত্রগুলির ব্যক্তিগত ব্যাখ্যাকে উৎসাহিত করা হতো।
এডওয়ার্ড সাইদের মতে আদর্শ উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবী তিনিই যিনি ংঃধঃঁং য়ঁড় কে প্রশ্ন করেন, যিনি সংস্কৃতিকে অর্থডক্স চিন্তা, বিচারহীন অন্ধবিশ্বাস এবং যুক্তিনির্ভর প্রথাবিরুদ্ধ চিন্তার দ্বন্দ্ব হিসাবে দেখেন। এমন একজন বিরুদ্ধবাদী বুদ্ধিজীবী হলেন নসর হামিদ আবু জায়েদ (কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবীসাহিত্যের অধ্যাপক) মিশরীয় মৌলবাদীদের ইসলামী ডিসকোর্সের ডগমেটিজম এবং তাদের ধর্মব্যাখ্যার অনৈতিহাসিকতা স্পষ্ট করেছেন তাঁর লেখায়।
৮.
এডওয়ার্ড সাইদ সমসাময়িককালের দৃষ্টান্তমূলক ব্যক্তিত্ব। তিনি তাঁর বাহ্যজীবন এবং লেখায় এমন কিছু নীতি অনুসরণ করেছেন যা উত্তর-ঔপনিবেশিক কাউন্টার- ডিসকোর্সকে করেছে একটি শক্তিমান চিন্তন-মাধ্যম। বহির্বাসী পণ্ডিতের জীবনযাপনে বাধ্য হলেও সাইদ কখনও তাঁর প্যালেস্টাইনী শেকড় ভুলে যাননি; ফিরে গিয়েছেন তাঁর নিজ দেশ এবং দেশবাসীর মধ্যে যখনই সময় পেয়েছেন। আজ তিনি পাশ্চাত্য দুনিয়ায় প্যালেস্টাইনী অধিকারের সবচেয়ে সোচ্চার প্রবক্তা। বহুবার খুনের হুমকি দেয়া হয়েছে তাঁকে, কিন্তু স্তব্ধ করা যায়নি তাঁর কণ্ঠস্বর। কয়েকবছর আগের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় তিনি খোলাখুলিভাবে, আমেরিকায় বসে, ইরাকের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের নীতিকে “ীবহড়ঢ়যড়নরধ ধহফ ংযববৎ নষড়ড়ফু-সরহফবফহবংং” বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন। অপারেশন-ডেজার্ট স্টর্মের বিরুদ্ধে সামান্যতম সমালোচনা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না আমেরিকার জনমত; কিন্তু তবু এডওয়ার্ড সাইদ তাঁর বিরুদ্ধমত প্রকাশের ঝুঁকি নিয়েছিলেন অবলীলায়। প্যালেস্টাইন জাতীয় কাউন্সিলের সদস্য হিসাবে এর কার্যক্রমেও অংশ নিয়েছেন সাইদ। অ্যাকাডেমিক জার্নালে, মার্কিনী মিডিয়ায় তাঁকে গালি দেয়া হয়েছে চৎড়ভবংংড়ৎ ড়ভ ঞবৎৎড়ৎ বলে। অন্য দিকে, একথাও সত্য যে, পিএলও-র উচ্চতম স্তরে গতায়াত এবং ইয়াসের আরফাতের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ থাকা সত্ত্বেও পিএলও-র সকল কার্যক্রম তিনি বিনাপ্রশ্নে সমর্থন করেননি। গত বছর আরাফত যখন নরওয়ের অসলো-তে একটি অন্যায় ও অসম শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, সাইদ তাঁর সমালোচনা করতে দ্বিধা করেননি। সাইদ আরবী ভাষাতেও নিয়মিত লিখেন; ফলে সারা আরব দুনিয়ায় তার লেখনীর প্রভাব পড়ছে বিপুলভাবে।
সংক্ষেপে বলা যায় সাইদের অর্জনগুলো এরকম: (ক) উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগের কাউন্টার-ডিসকোর্স নির্মাণের জন্য যা যা ক’রা প্রয়োজন বলে তিনি লিখেছেন, ব্যক্তি জীবনে সে সব অবলম্বন করেছেন পূর্ণভাবে। (খ) শক্তিপ্রয়োগকারী ক্ষমতাচক্র এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জাগেিয় তুলেছেন; (গ) তাঁর নিজ জাতি-গোষ্ঠি তথা বাস্তুচ্যুত প্যালেস্টাইনীদের সপক্ষে যুদ্ধ চালিয়েছেন পাশ্চাত্য মিডিয়ায়; (ঘ) জাতীয় মুক্তির চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়েছেন, (ঙ) পাণ্ডিত্যপূর্ণ রচনাবলীর মাধ্যমে পশ্চিমা সংস্কৃতি ও সাম্রাজ্যবাদের মধ্যকার আঁতাতকে তুলে ধরেছেন; (চ) এমন একটি জ্ঞানশাখা ও সৃজনমূলকতার পৃষ্ঠপোষণা করছেন যা দৈশিক সীমানাকে অতিক্রম করে এবং জ্ঞানের ক্ষেত্রে বহুবর্ণিল সংকরতা উৎপন্ন করে; এবং সর্বোপরি, (ছ) পূর্বাপর থেকেছেন ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং কসমোপলিটানিজমের নিষ্ঠাবান প্রবক্তা ও প্রচারক।
(অনুবাদ : খোন্দকার আশরাফ হোসেন)
উল্লেখপঞ্জি
ঈযধহহবষ ৪. “ঊফধিৎফ ংধরফ” রহ ঞধষশরহম খরনবৎঃরবং. খড়হফড়হ: অ ঈযধহহবষ ৪ চঁনষরপধঃরড়হং, ১৯৯২: ১০-১৪.
ঈযধঃঃবৎলবব, চধৎঃযধ, “ঞযবরৎ ঙহি ডড়ৎফং? অহ ঊংংধু ভড়ৎ ঊফধিৎফ ঝধরফ.” ঊফধিৎফ ঝধরফ: অ ঈৎরঃরপধষ জবধফবৎ. ঊফ. গরপযধবষ ঝঢ়ৎরশবৎ. ঙীভড়ৎফ টক: ইষধপশবিষষ চঁনষরংযবৎং ১৯৯২: ১৯৪-২২০.
ঝধরফ, ঊফধিৎফ. অভঃবৎ ঃযব খধংঃ ঝশু: চধষবংঃরহরধহ খরাবং. খড়হফড়হ: ঋধনবৎ ধহফ ঋধনবৎ, ১৯৮৬.
....... ইবমরহহরহমং : ওহঃবহঃরড়হ ্ গবঃযড়ফ. ঘবি ণড়ৎশ: ইধংরপ ইড়ড়শং, ১৯৭৫.
..... ঈঁষঃঁৎব ধহফ ওসঢ়বৎরধষরংস. ঘবি ণড়ৎশ: অষভৎবফ অ. কহড়ঢ়ভ, ১৯৯৩.
..... “ঋড়ঁপধঁষঃ ধহফ ঃযব ওসধমরহধঃরড়হ ড়ভ চড়বিৎ.” ঋড়ঁপধঁষঃ: অ ঈৎরপধষ জবধফবৎ. ঊফ. উধারফ ঈড়ুঁবহং ঐড়ু. ঙীভড়ৎফ টক : ইষধপশবিষষ চঁনষরংযবৎং, ১২৯৮৬ : ১৪৯-১৫৬
..... “ওহঃবৎারবি রহ উরধপৎরঃরপং ৬ (১৯৭৬): ৩০-৪৭.
..... “ওহঃবৎারবি রিঃয ঊফধিৎফ ঝধরফ নু ঔবহহরভবৎ ডরপশব ধহফ গরপযধবষ ঝঢ়ৎরহশবৎ.” ঊফধিৎফ ঝধরফ: অ ঈৎরঃরপধষ জবধফবৎ. ঊফ. গরপযধবষ ঝঢ়ৎরহশবৎ. ড়ীভড়ৎফ টক: ইষধপশবিষষ চঁনষরংযবৎ, ১৯৯২:২২১-২৬৪.
...... ঙৎরবহঃধষরংস. ঘবি ণড়ৎশ : চধহঃযবড়হ, ১৯৭৮.
..... ঞযব চড়ষরঃরপং ড়ভ উরংঢ়ড়ংংবংংরড়হ: ঘবি ণড়ৎশ ঞরসবং ইড়ড়শং, ১৯৭৯
..... “জবঢ়ৎবংবহঃরহম ঃযব ঈড়ষড়হরুবফ: অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু’ং ওহঃবৎষড়পঁঃড়ৎং.” ঈৎরঃরপধষ ওহয়ঁরৎু ১৫:২ (১৯৮৯): ২০৫-২৫.
..... ঞযব ডড়ৎষফ, ঞযব ঞবীঃ, ধহফ ঃযব ঈৎরঃরপ. ঈধসনৎরফমব, গধংং : ঐধৎাধৎফ টচ, ১৯৮৩.
ঝধষঁংরহংুশু, ওসৎব. “ঊফধিৎফ ঝধরফ.” ঈৎরঃরপরংস রহ ঝড়পরবঃু : ওহঃবৎারবংি, খড়হফড়হ : গবঃযঁবহ. ১৯৮৭:১২৩-১৪৮.
(একবিংশ ১৫/নভেম্বর ১৯৯৫ সংখ্যা থেকে পুনর্মুদ্রিত)
এডওয়ার্ড সাইদ ও উত্তর-ঔপনিবেশিক কাউন্টার-ডিস্কোর্স
১.
ঔপনিবেশিকতার যে কোন ছাত্রের কাছে ঙৎরবহঃধষরংস গ্রন্থটির প্রাসঙ্গিকতা স্পষ্ট। এ বইতে সাইদ তত্ত্ব উপস্থাপন করেন যে, পশ্চিমা পণ্ডিতরা বহুকাল ধরে তাঁদের জ্ঞানকে ভাড়া খাটাচ্ছেন শক্তিধর পাশ্চাত্যপ্রভুদের কাছে; তারা এমন একটি ডিসকোর্সে নিয়োজিত যার উদ্দেশ্য ‘ফড়সরহধঃরহম, ৎবংঃৎঁপঃঁৎরহম, ধহফ যধারহম ধঁঃযড়ৎরঃু ড়াবৎ ঃযব ঙৎরবহঃ’ (ঙৎরবহঃধষরংস, ৩) পাণ্ডিত্য প্রাচ্যের, ঔপনিবেশিকরণের হাতিয়ার হয়েছে, আর ডিফো থেকে ডিসরেলি-তক সকল পাশ্চাত্য শিল্পী-বুদ্ধিজীবী স্বেচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক, শোষণ-সংদমনের প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। তদুপরি তারা এমন একটি প্রাচ্যের ধারণা গড়ে তুলেছেন যা হচ্ছে ‘ড়ঃযবৎ’, এবং এভাবে প্রাচ্যের মানুষ সম্পর্কে কিছু আপ্ত বিরূপ ধারণার স্থায়ীকরণের সহায়তা করেছেন। সাহিত্যতত্ত্বে সাইদের সাম্প্রতিক কাজ থেকে বোঝা যায় যে, তাঁর মতে প্রাচ্যবিদদের অধীত এবং নিয়োজিত জ্ঞান ছিল আধিপত্যবাদী (যবমবসড়হরপ) এবং তাঁরা যেসব সত্য (ঃৎঁঃযং) ফেরী করে বেড়িয়েছেন তা তাঁদের ইচ্ছাপূরণের বাগাড়ম্বর ছাড়া বেশি কিছু নয়।
সাইদের বিখ্যাত বই ঙৎরবহঃধষরংস প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে। সাইদ পাশ্চাত্য অরিয়েন্টালিস্টদের প্রাচ্যবিদ্যাচর্চার ইতিহাস, তাঁদের উদ্ভাবনকৃত ‘প্রাচ্য’’ সম্পর্কিত ধারণা, বিভিন্ন প্রতীচ্য পণ্ডিত ও সাহিত্যিকের রচনায় প্রাচ্যসম্পর্কিত ধারণাÑ যাদের ভিতর দান্তে থেকে ফ্লবেয়ার রয়েছেনÑ ইত্যাদি নিয়ে সবিস্তার আলোচনা করেছেন। তিন অধ্যায়ে ্িবভক্ত বইটির প্রথম দুই অ্যধায়ের নাম : ঞযব ঝপড়ঢ়ব ড়ভ ঙৎরবহঃধষরংস এবং ঙৎরবহঃধষ ঝঃৎঁপঃঁৎবং ধহফ জবংঃৎঁপঃঁৎবং. সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং প্রাসঙ্গিক অংশ তৃতীয় অধ্যায় : ঙৎরবহঃধষরংস ঘড়.ি এর প্রতিপাদ্য হলো, অরিয়েন্টালিজম শুধু অতীতের একটি চিন্তাপ্রপঞ্চ নয়, বরং বিশশতকে এসে প্রাচ্যবিদ্যা একটি প্রভাবশালী ডিসিপ্লিনে পরিণত। এমনকি বর্তমানেও পাশ্চাত্য শক্তিগুলোর নীতি এবং প্রাচ্যদেশ সম্পর্কে তাদের সামগ্রিক মনোভাবকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে চলেছে এই বিদ্যা। আর কিছু না হোক, অন্তত দুই বিশ্বদুদ্ধের মধ্যকালীন সময়ে সাম্রাজ্যবাদকে কল্কে যুগিয়েছে প্রাচ্যবিদ্যা, এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে এ্যাংলো-মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যপ্রাচ্যতত্ত্ব পাঠক্রমের মধ্য দিয়ে পুনরাবির্ভূত হয়েছে। সারা পৃথিবী যখন ঔপনিবেশিক যাঁতাকল থেকে স্বাধীন হচ্ছিল তখনও প্রাচ্যবিদ্যক ডিসকোর্স সাম্রাজ্যবাদী ভাবধারাগুলো প্রচারে ছিল ক্লান্তিহীন। অথবা, সাইদ যেমন বলেছেন তাঁর বইয়ের শেষ দিকে, “সত্য হলো এই যে, অরিয়েন্টালিজম নব্য সাম্রাজ্যবাদের মধ্যে সফলভাবে আত্তীকৃত হয়েছে, যেখানে এর প্রধান প্রপঞ্চগুলো এশিয়াকে পদানত রাখার সাম্রাজ্যবাদী অভিসন্ধি বাধা দেয় না, বরং তাকে নিশ্চিত করে।” (অরিয়েন্টালিজম, ৩২২)
২.
এডওয়ার্ড সাইদ তাঁর অরেয়েন্টালিজম-এর ভূমিকায় বলেছেন যে, তিনি প্রাচ্যবিদ্যাকে বিবেচনা করেছেন একটি ডিসকোর্স হিসাবে। মিশেল ফুকো (গরপযবষ ঋড়ঁপধঁষঃ) তাঁর ঞযব অৎপযবধষড়মু ড়ভ কহড়ষিবফমব এবং উরংপরঢ়ষরহব ধহফ চঁহরংয গ্রন্থে যে-ধরনের ডিসকোর্সের ধারণা ব্যবহার করেছেন তা সাইদের কাছে উপযোগী বলে মনে হয়েছে। সাইদের ভাষায় “গু পড়হঃবহঃরড়হ রং ঃযধঃ রিঃযড়ঁঃ বীধসরহরহম ঙৎরবহঃধষরংস ধং ধ ফরংপড়ঁৎংব ড়হব পড়হহড়ঃ ঢ়ড়ংংরনষু ঁহফবৎংঃধহফ ঃযব বহড়ৎসড়ঁংষু ংুংঃবসধঃরপ ফরংপরঢ়ষরহব নু যিরপয ঊঁৎড়ঢ়বধহ পঁষঃঁৎব ধিং ধনষব ঃড় সধহধমব--ধহফ বাবহ ঃড় ঢ়ৎড়ফঁপব--ঃযব ঙৎরবহঃ ঢ়ড়ষরঃরপধষষু, ংড়পরড়ষড়মরপধষষু, সরষরঃধৎরষু, রফবড়ষড়মরপধষষু, ংপরবহঃরভরপধষষু ধহফ রসধমরহধঃরাবষু ফঁৎরহম ঃযব ঢ়ড়ংঃ-ঊহষরমযঃবহসবহঃ ঢ়বৎরড়ফ.” (ঙৎরবহঃধষরংস, ৩) পাশ্চাত্যের প্রয়োজন ছিল এমন একটি প্রাচ্যের ধারণাকে গড়ে তোলা যা তাদের আধিপত্যবাদী স্বার্থের জন্য অনুকূল হবে। পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদীরা গড়ে তুলেছেন অরিয়েন্টাল স্টাডিজ নামের বিদ্যা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সৃষ্টি হয়েছে প্রাচ্যভাষা যথা আরবী কিংবা সংস্কৃত-র প্রফেসর পদ। সাইদের মতে অরিয়েন্টালিজম হলো “ধ ংঃুষব ড়ভ ঃযড়ঁমযঃ নধংবফ ঁঢ়ড়হ ধহ ড়হঃড়ষড়মরপধষ ধহফ বঢ়রংঃবসড়ষড়মরপষ ফরংঃরহপঃরড়হ সধফব নবঃবিবহ ‘ঞযব ঙৎরবহঃ’ ধহফ (সড়ংঃ ড়ভ ঃযব ঃরসব) ‘ঃযব ড়পপরফবহঃ’. “প্রাচ্য ও প্রতীচ্য-দুটি স্বজ্ঞাগত ও সংজ্ঞাগত ভাবে বিপ্রতীপ ধারণা একটি বিশাল ডিসকোর্স সৃষ্টি করেছে যায় ভেতরে লিখেছেন বহুসংখ্যক লেখক, কবি, দার্শনিক, রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, অর্থনীতিবিদ এবং সাম্রাজ্য পরিচালকবৃন্দ। এই লেখকদের সবাই যে সজ্ঞানে সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থে কলম ধরেছেন তা নয়,তবে অরিয়েন্টালিজম নামক বৃহৎ চিন্তনপ্রকল্পের পুষ্টি সাধিত হয়েছে তাঁদের লেখার কল্যাণে। এই বৃহৎ-চিন্তন প্রকল্প তথা অরিয়েন্টালিজমের চাদরের নীচে ঠাঁই পেয়েছেন যেমন ইস্কিলাস, তেমনি ভিক্টর হুগো কিংবা কার্ল মার্কস-ও। প্রাচ্যবিদ্যার সবটাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল তা বলার উদ্দেশ্যও সম্ভবত সাইদের নয়। কারণ তাঁর বইটির মধ্যেই সাইদ বিখ্যাত ফরাসী প্রাচ্যবিদ লুই মাসিগ্ন (খড়ঁরং গধংংরমড়হ) এর উদাহরণ দিয়েছেন যিনি মানবতাবাদী প্রেষণা দ্বারাই এই বিদ্যাচর্চায় উৎসাহী হয়েছিলেন। এ থেকে বোঝা যায় যে, মানবিক অনুভূতির প্রতি অন্ধ এবং শক্তিমানের সেবা করার উদ্দেশ্যঅলা প্রাচ্যবিদ্যার বিকল্প একটি জ্ঞানশাখার অস্তিত্ব অসম্ভব নয়। সাইদ কি তাহলে তাত্ত্বিক দিক থেকে স্ববিরোধিতার শিকার? এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পরম দাপটের কালেও প্রতিরোধের যেসব ন্যারেটিভ রচিত হচ্ছিল সে সম্পর্কে উদাসীন?
প্রথম প্রশ্নটি নিয়ে সাইদ সরাসরি বলেছেন অরিয়েন্টালিজম প্রকাশের কয়েক বছর পর দেয়া এক সাক্ষাৎকারে। তিনি সেখানে ঘোষণা করেছেন, ঐ বইটি তিনি লিখেছেন ইচ্ছা করেই এমনভাবে যাতে প্রাচ্যবিদ্যক ডিসকোর্সের ফবঃবৎসরহরংঃরপ প্রকৃতিটি স্পষ্ট হয়, যদিও একইসাথে এটাও তিনি ইঙ্গিত করেছেন যে এ-থেকে পালাবার রাস্তাও আছে। “একধরনের জবরদস্তিহীন জ্ঞান” সম্ভব যা ফুকো-ও, সাইদ তাঁর অরিয়েন্টালিজম এর তিন বছর আগে প্রকাশিত ইবমরহহরহমং বইতে দেখিয়েছেন, বুদ্ধিজীবীর ভূমিকাকে “ক্ষমতার বিভিন্নরূপের বিরুদ্ধে” সংগ্রাম বলে বর্ণনা করেছেন এবং “সংগ্রামের ডিসকোর্স” এর সম্ভাবনা ইঙ্গিত করেছেন। (ইবমরহহরহমং, ৩৭৮-৭৯)। যদিও শেষপর্যন্ত এবং অনিবার্যভাবে ফুকো নিজেকে স্মরণযোগ্য করেছেন “আধিপত্যের লিপিকার” (ঞযব ংপৎরনব ড়ভ ফড়সরহধঃরড়হ”) হিসেবেই। (ঝঢ়ৎরহশবৎ, ২৮০)।
অরিয়েন্টালিজম প্রকাশের পরবর্তী বছরগুলোতো সাইদ ফুকোর বিরুদ্ধে তাঁর আক্রমণকে আরো শাণিত করেছেন। তিনি ক্রমাগত অধিকতর প্রত্যয়ের সঙ্গে এ মত ব্যক্ত করেছেন যে প্রতিরোধ সব সময় ছিল এবং সব সময় সম্ভব। উত্তর-সংগঠনবাদের উপর লেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি প্রবন্ধ “ঈৎরঃরপরংস ইবঃবিবহ ঈঁষঃঁৎব ধহফফ’ুংঃবস”-এ সাইদ ফুকোকে সমালোচনা করেছেন এই বলে যে, ফুকো “আধুনিক সমাজের অন্তর্নিহিত বিরুদ্ধশক্তিগুলির কেন্দ্রীয় ডায়ালেকটিককে কমবেশি বিলুপ্ত করে দিয়েছেন।” (ঞযব ডড়ৎষফ, ঃযব ঞবীঃ, ধহফ ঃযব ঈৎরঃরপ, ২২১) আরো একটি বহুলপ্রশংসিত প্রবন্ধে (“ঞৎধাবষষরহম ঃযবড়ৎু”) সাইদ একহাত নিয়েছেন ফুকোকেÑ ফুকো এই আপ্তবাক্যে ঈমান এনেছেন যে, “শক্তি সর্বত্র বিরাজমান” এবং তিনি “তাঁর আলোচ্য সমাজে শ্রেণীর ভূমিকা, অর্থনীতির ভূমিকা, দ্রোহ-বিপ্লবের ভূমিকা”-কে উপেক্ষা করেছেন। (ঞযব ডড়ৎষফ, ২৮৮) ১৯৮৬-তে রচিত “ঋড়ঁপধঁষঃ ধহফ ঃযব ওসধমরহধঃরড়হ ড়ভ চড়বিৎ” প্রবন্ধে সাইদ আরো খাপ্পা হয়েছেন ফুকোর উপর; তুলোধুনা করেছেন এই ফরাসী তাত্ত্বিককে, “শক্তিমত্তার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধের প্রতি তাঁর অনন্য অনাগ্রহের” জন্য (ঋড়ঁপধঁষঃ ধহফ. ১৫১)।
সাইদ ফুকো থেকে সরে গিয়েছেন ফানন, গ্রামসি এবং উইলিয়ামসের মতো বুদ্ধিজীবীদের দিকে, আফ্রিকা এবং এশিয়ার সাম্রাজ্যবাদ প্রতিরোধের ইতিহাসকে গণনায় এনেছেন এবং পৃথিবীর সর্বত্র থেকে প্রকাশিত প্রতিরোধ-সাহিত্যের বন্দনা করেছেন। এসব করার মধ্য দিয়ে সাইদ এমন একটি পথে যাত্রা করেছেন যে পথ তাঁকে শুধু ঔপনিবেশিক-এনকাউন্টারের একজন প্রধান প্রবক্তা করবে না, তাঁকে উত্তর-ঔপনিবেশিক বিদ্বৎসমাজের কাউন্টার-ডিসকোর্সের একজন অগ্রসৈনিকও করে তুলবে। কিন্তু ফুকো থেকে ফাননে যাত্রার পথটি চিহ্নিত করার আগে আমি স্বয়ং সাইদের উপর দৃষ্টিক্ষেপ করতে চাই, যাতে বোঝা যায় কেন তিনি ভাবলেন যে তাঁকে সক্রিয়বাদ ও রাজনৈতিক প্রতিরোধের পথটিই বেছে নিতে হবে, এবং সরে যেতে ফবঃবৎসরহরংঃরপ বিশ্ববীক্ষা থেকে ক্রমশ দূরে।
৩.
এডওয়ার্ড সাইদের জীবনকাহিনীর সারাংশে লেখার প্রয়োজন এখানে নেই, তবু একথা মনে রাখার দরকার যে, তাঁর জন্ম ১৯৩৫ সালে, জেরুজালেমে। ইজরায়েল কর্তৃক প্যালেস্টাইন দখল করে নেয়ার পর সাইদের পরিবার ১৯৪৮ সালে দেশত্যাগে বাধ্য হয়। তাঁরা আসেন কায়রোতে। কিছুদিন পর সাইদ আমেরিকার ম্যাসাচুসেট্সে গড়ঁহঃ ঐবৎসড়হ ংপযড়ড়ষ এ পড়তে যান। পরবর্তীতে, প্রিন্সটন ও হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। হার্ভার্ড থেকে গ্রাজুয়েশনের পর সাইদ কলাম্বিয়ায় শিক্ষকতার চাকুরী নেন। ১৯৬৬ সালে এডওয়ার্ড সাইদের প্রথম এই বেরোয়-ঔড়ংবঢ়য ঈড়হৎধফ ধহফ ঃযব ঋঁহপঃরড়হং ড়ভ অঁঃড়নরড়মৎধঢ়যু এই বই থেকে অবশ্য সাইদের পরবর্তী রচনাসম্ভাবরের তেমন কোন সূত্র পাওয়া যাবে না। শুধু একটি সূত্র ছাড়া। সেটি হলো লেখক হিসাবে জোসেফ কনরাড সম্পর্কে তার বিরতিহীন আগ্রহ। বহির্বাসী বহির্দেশীয় লেখক হিসাবে কনরাডের অবস্থানটি চমৎকার লেগেছে সাইদের কাছেÑতিনি কনরাডের চিঠিপত্র খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন তাঁর উপন্যাসগুলো সংগে সংযোগ খোঁজার জন্যে। তবে কৌতুকজনক ঘটনা হলো, এই বইয়ে সাইদ কনরাডকে ঔপনিবেশিক অভিজ্ঞতার কথাশিল্পী হিসাবে মোটেই দেখেননি।
কনরাডের ওপর লেখা বইটি এবং ইবমরহহরহমং (১৯৭৫) নামে তাঁর দ্বিতীয় বইটির মধ্যে ফারাক নয় বছরের। এর ভেতরে সাইদের জীবন পাল্টে গেছে অনেকটাই। কলাম্বিয়ায় তার আসন পোক্ত এবং কসমোপলিটন নিউইয়র্কেও তিনি খাপ খাইয়ে নিয়েছেন নিজেকে। কিন্তু তা-সত্ত্বেও তিনি তাঁর জন্মভূমি প্যালেস্টাইনের সাথে সম্পর্কে পুনঃস্থাপন করলেন। সাইদের জীবনের মোড় ঘুরলো ১৯৭৬ সালের আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের সময়। ইজরায়েল-এর যুদ্ধে গাজা উপত্যকা, সিনাই উপদ্বীপ এবং পুরোনো জেরুজালেম শহর ও গোলান মালভূমি কব্জা করে নেয়। প্যালেস্টাইনবাসীরা এই বিপুল পরাজয়ের মধ্যেও কিছু একটা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন। সাইদ তাঁর সাম্প্রতিকতম ঞযব চড়ষরঃরপং ড়ভ উরংঢ়ড়ংংবংংরড়হ (১৯৯৪) গ্রন্থের ভূমিকায় লেখেন-“ইবমরহহরহম রহ ১৯৬৮ ও ংঃধৎঃবফ ঃড় ঃযরহশ, ৎিরঃব, ধহফ ঃৎধাবষ ধং ংড়সবড়হব যিড় ভবষঃ যরসংবষভ ঃড় নব ফরৎবপঃষু রহাড়ষাবফ রহ ঃযব ৎবহধরংংধহপব ড়ভ চধষবংঃরহব ষরভব ধহফ ঢ়ড়ষরঃরপং.” প্রবাসী ফিলিস্তিনীদের সাথে যোগাযোগ হলো; সাইদ ১৯৬৯ ও ১৯৭০ সালে আম্মান ভ্রমণে গেলেন এবং ১৯৭২-৭৩ সালে দীর্ঘ অবস্থান করলেন বৈরুতে। সাইদের সম্ভবত সবচেয়ে ব্যক্তিগত কথনের বই, অভঃবৎ ঃযব খধংঃ ঝশু-তে তিনি বলেছেন ঐ বছরব্যপী বৈরুতপ্রবাস কেমন জরুরী পরিবর্তন ঘটিয়েছিল তার মধ্যে। তিনি নিজেকে পুনঃদীক্ষিত করতে পেরেছিলেন আরব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মন্ত্রেÑ
“ধঃ ঃযব ঃরসব ড়ভ চধষবংঃরহরধহ ৎবহধরহংংধহপব রহ ঢ়ড়ষরঃরপং ধহফ পঁষঃঁৎব.” ইবমরহহরহমং গ্রন্থেই বোঝা গেল সাইদ বুদ্ধিবৃত্তিক লেখনীকে রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের মাধ্যমে হিসাবে দেখতে চান, কিন্তু তবু এই বইতে তেমন কিছু নেই যাতে একে একই সাথে একজন প্যালেস্টাইনী আরব ও একজন মার্কিনী সমালোচকের রচনা মনে হতে পারে। তিনি যে একজন হৃতস্বদেশ আরব, এবং তিনি যে তার স্বদেশ-হরণকারী সাম্রাজ্যবাদী কিংবা নব্য-সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে যুঝতে চান, এই বই পড়ে তেমনটা মনে হয় না।
এই গ্রন্থটি প্রকাশের বছরখানেক পরে উরধপৎরঃরপং পত্রিকিাকে দেয়া এই সাক্ষাৎকারে প্রথম বোঝা গেল যে সাইদের মধ্যে একটি দ্বিধাবোধ এসেছে। এই সাক্ষাৎকারে সাইদ নিজের সম্পর্কে বললেন, “ঁহঃরষ ভধরৎষু ৎবপবহঃষু” তিনি একটি দ্বৈত জীবন যাপন করছিলেন : একটি হলো একজন অ্যাকাডেমিক তাত্ত্বিকের জীবনযাপন অন্যটি হলো এমন একজন মানুষের যে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত, এমন একজন যে ক্রমাগত আরো বেশি জড়াচ্ছে “রাজনীতি, ক্ষমতা, আধিপত্য এবং সংগ্রাম”-এর সাথে। এই দ্বিতীয় সত্তাটি তাঁর প্রথম সত্তা অর্থাৎ তার অ্যাকাডেমিক এবং তাত্ত্বিক সাহিত্যসমালোচনার গজদন্তমিনারবাসী সত্তার উপর দখলদারি কায়েম করছে। (উরধপৎরঃরপং পৃ. ৩৫)। এ সাক্ষাৎকারেই সাইদ কবুল করলেন যে তাঁর ব্যক্তিগত ইতিহাস এবং সেই সাথে তাঁর জাতির ইতিহাস “ফবঃধপযবফ ভৎড়স ঃযব রসঢ়বৎরধষরংস” নয় বরং এমন একটি সত্য যা অসহনীয়ভাবে মূর্ত এবং বাস্তব। ঙৎরবহঃধষরংস হলো সেই বই যেখানে সাইদ তাঁর প্যালোস্টাইনী জীবনকে তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত করলেন এবং তাঁর তাত্ত্বিক র্যাডিকালিজমের সাথে মিশিয়ে নিলেন তাঁর রাজনৈতিক কর্মিষ্ঠতাকে। ‘অরিয়েন্টালিজমের’ ভেতরেই সাইদ ব্যাখ্যা করেছেন কেন তিনি এই বই লিখতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তিনি এই বই লিখেছেন কেননা তিনি নিজেকে মনে করেন ঔপনিবেশিক এনকাউন্টারের ফসল। তাঁর নিজের ভাষায় : “রহ সধহু ধিুং সু ংঃঁফু ড়ভ ঙৎরবহঃধষরংস যধং নববহ ধহ ধঃঃবসঢ়ঃ ঃড় রহাবহঃড়ৎু ঃযব ঃৎধপবং ঁঢ়ড়হ সব, ঃযব ঙৎরবহঃধষ ংঁনলবপঃ, ড়ভ ঃযব পঁষঃঁৎব যিড়ংব ফড়সরহধঃরড়হ যধং নববহ ংড় ঢ়ড়বিৎভঁষ ধ ভধপঃড়ৎ রহ ঃযব ষরভব ড়ভ ধষষ ঙৎরবহঃধষং” (পৃ. ২৫) সন্দেহ নেই যে, তিনি প্যালেস্টাইনী প্রতিরোধ আন্দোলনের সংম্পর্শে এসে ‘অরিয়েন্টালিজম’ লিখলেন যার উদ্দেশ্য হলো উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে প্রথম কার্যকর পদক্ষেপটি নেয়া যায় ভিত্তিতে ঔপনিবেশিকতা-পীড়িত মানুষরা বিশ্বনাট্যমঞ্চে তাদের হারানো কণ্ঠস্বরটি আবার ধ্বনিত করতে পারে, আওয়াজ তুলতে পারে প্রতিরোধের।
৪.
এডওয়ার্ড সাইদের উত্তর-ঔপনিবেশিক কাউন্টার-ডিসর্কোর্সের মূলকথা হলো, একজন বুদ্ধিজীবীকে নীচের স্তরগুলোর ভেতর দিয়ে যেতে হবে: (১) নিজের শেকড় এবং ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্তি; (২) ঔপনিবেশিক সংগঠনসমূহ আমাদের চেতনার কী ধরনের ছাপ রেখে গেছে এবং আমাদের চিন্তন-প্রপঞ্চে তাদের ভূমিকা কীরূপ সে সম্পর্কে উচ্চতর সচেতনতা অর্জন; (৩) উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগে বেঁচে থাকা সাম্রাজ্যবাদী যুগের রেশসমূহ সম্পর্কে সচেতনতা; (৪) এ-ধরনের ঐপনিবেশিক-উত্তর ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার আধিপত্য অপ্রতিরোধ্যÑএমন ধারণা পরিহার; (৫) ডৎরঃরহম-ধং-ধপঃরড়হ অর্থাৎ লেখনীকে সংগ্রামের হাতিয়ার হিসাবে ভাবা এবং ক্লাসিক টেক্সটগুলোকে এমনভাবে পুনর্পঠন করা যাতে ঔপনিবেশিক শক্তিসমূহের সাথে তাদের দালাল-সহযোগিতার দিকটি পরিস্ফুট হয়; (৬) উত্তর-ঔপনিবেশিক শোষণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লেখার মাধ্যমে প্রতি-আক্রমণ এবং অরিয়েন্টালিজমের মতো ভণ্ড-দরদী জ্ঞানশাখার অসারতা উন্মোচন।
অরিয়েন্টালিজম-প্রকাশের পরবর্তী সময়ে সাইদ তাঁর কাউন্টার-রীডিং এর তত্ত্ব সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং তত্ত্বালোচনার আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক লিখলেন ধারণাকে আরো স্পষ্ট করেছেন। আগেই অবশ্য সাইদ উরধপৎরঃরপং এর সাক্ষাৎকারে নিজেকে ঘোষণা করেছিলেন “ধং ধহ ঙৎরবহঃধষ ৎিরঃরহম নধপশ ধঃ ঙৎরবহঃধষরংঃং যিড় ভড়ৎ ংড় ষড়হম যধাব ঃযৎড়াবফ ঁঢ়ড়হ ড়ঁৎ ংরষবহপব.” তিনি আরো ঘোষণা করেন: “ও ধস ধষংড় ৎিরঃরহম ঃড় ঃযবস, নু ফরংসধহঃষরহম ঃযব ংঃৎঁপঃঁৎব ড়ভ ঃযবরৎ ফরংপরঢ়ষরহব ংযড়রিহম রঃং সবঃধ-যরংঃড়ৎরপধষ, রহংঃরঃঁঃরড়হধষ, ধহঃরবসঢ়রৎরপধষ, ধহফ রফবড়ষড়মরপধষ নরধংবং.” (পৃ. ৪৭)
উত্তর-ঔপনিবেশিক লেখক কীভাবে এই অরিয়েন্টালিজমের বিরুদ্ধে ‘ৎিরঃব নধপশ’ করবে? সাইদের মত হলো- তথাকথিত ‘অঞ্চল-বিশেষজ্ঞ’দের প্রকল্পগুলোর অন্তসারশূন্যতাকে তুলে ধরতে হবে, খুলে দিতে হবে এই সব প্রাচ্যবিশেষজ্ঞদের মুখোশ। ‘ডৎরঃব নধপশ’ এর আরেকটি অ-নঞর্থক অর্ধ-ঔপনিবেশিক সমাজসমূহে চলমান উপনিবেশ-প্রতিরোধের ঐতিহ্যকে শক্তিশালী করতে হবে। সাইদ মনে করেন যে, ঙৎরবহঃধষরংস লেখার আগ পর্যন্ত তিনি এই দ্বিতীয়োক্ত ব্যাপারটি উপেক্ষা করেছিলেন। বৃটেনের চ্যানেল ফোর টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে (১৯৯২) সাইদ বলেছেন “পড়সঢ়বঃরহম পড়হপবঢ়ঃরড়হ ড়ভ মবড়মৎধঢ়যু” নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত সবসময়ই ছিল, যার প্রমাণ আফ্রিকা, আয়ারল্যাণ্ড, ক্যারিবিয়ান এবং ভারতের জাতীয়তাবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামগুলো। (ঞধষশরহম ষরনবৎঃরবং, ১২) সুতরাং এই ঐপনিবেশিকতা-বিরোধিতার কথা আমাদের বলা দরকার। একারণেই আশির দশক জুড়ে সাইদ বরাবর ঈ.খ.জ ঔধসবং কৃত ইষধপশ লধপড়নরহং দের ইতিহাসের কথা উল্লেখ করেছেন : জেমসের এই কাজটি সাইদকে মনে করিয়ে দেয় পৃথিবীর সর্বত্র প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তার কথা। একই কারণে সাইদ ঝঁনধষঃবৎহ যরংঃড়ৎরড়মৎধঢ়যু-এর অন্যতম প্রধান প্রবক্তা। এর প্রমাণ, গায়ত্রী স্পিভাক-কৃত, ১৯৮৮ সালে আমেরিকার প্রকাশিত, ঝঁনধষঃবৎহ ঝঃঁফরবং সংকলনের ভূমিকাটি লিখেছেন এডওয়ার্ড সাইদ।
ঙৎরবহঃধষরংস গ্রন্থটির পরপর সাইদ আরো কয়েকটি বই লেখেন যার উদ্দেশ্য এমন একটি প্যালেস্টাইনীয় কাউন্টার-ন্যারেটিভ তৈরি করা যা আরবদের জন্মভূমিতে ইজরায়েলী আবাসনের মিথকে প্রতিহতও করবে। এই ধরনের কাউন্টার-ন্যারেটিভের একটি ভালো নমুনা ঞযব ছঁবংঃরড়হ ড়ভ চধষবংঃরহব (১৯৭৯)। সাইদ এই গ্রন্থের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন-“সু ঃধংশ রং ঃড় ঢ়ৎবংবহঃ ঃযব চধষবংঃরহরধহ ংঃড়ৎু; ঃযব তরড়হরংঃ ড়হব রং সঁপয নবঃঃবৎ শহড়হি ধহফ ধঢ়ঢ়ৎবপরধঃবফ” এরকম আরেকটি প্রচেষ্টা অভঃবৎ ঃযব খধংঃ ঝশু। এ বইয়ে ঔবধহ গড়ষবৎ-এর তোলা প্যালেস্টাইনী জীবনের আলোকচিত্রমালা এবং সাইদ-কৃত তাদের ভাষ্য সন্নিবেশিত। এই চিত্র-ভাষ্য থেকে প্যালেষ্টাইনীদের জীবন মূর্ত হয়ে ধরা দেয় পাঠকের কাছে।
ঈঁষঃঁৎব ধহফ ওসঢ়বৎরধষরংস পরবর্তী গ্রন্থ। সাইদ আর এখন শুধু “ধ মবহবৎধষ ড়িৎষফ-রিফব ঢ়ধঃঃবৎহ ড়ভ রসঢ়বৎরধষ পঁষঃঁৎব” কে তিরস্কার করেই তৃপ্ত নন, তিনি এখন চান ঔপনিবেশিকীকরণের প্রতি ঘটনাকে আরেকটি “হধৎৎধঃরাব ড়ভ যরংঃড়ৎরপধষ ৎবংরংঃবহপব ধমধরহংঃ বসঢ়রৎব” দিয়ে প্রতিহত করতে। যদিও নব্য-সাম্রাজ্যবাদী চন্ত্রান্ত আজকেও ক্রিয়াশীল, সাইদ দেখছেন যে, “পৃথিবীর বিভিন্ন উত্তর-ঔপনিবেশিক অঞ্চলে এখন মেট্রপলিটন পৃথিবীর সাথে ভীষণ উদ্দীপ্ত তর্কযুদ্ধে নামবার চেষ্টা চলছে।” একটা কথা সত্য, সাইদ এই যুদ্ধের প্রকৃতিকে মোটেই সরলভাবে দেখছেন না। তিনি জানেন যে যুদ্ধটি হবে সর্বাত্মক, “ধ নধঃঃষব... ভড়ঁমযঃ ড়ঁঃ ড়হ ঃযব ঃবৎৎধরহ ড়ভ রহভড়ৎসধঃরড়হ, াড়পধনঁষধৎু ড়ৎ রসধমবং. “প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য উভয় জায়গাতেই মিডিয়ার পরাক্রমশালী আক্রমণকে ঠেকাতে হবে, যে মিডিয়া ক্রমাগত নব-ঔপনিবেশিকতার তত্ত্বকে শক্তিশালী করছে, প্রাচ্য সম্পর্কে ভুল মিথ ও মিথ্যা ধারণা ছড়াচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী আদর্শের পালে হাওয়া লাগানোর জন্য। সাইদ চইঝ টেলিভিশনে কেনীয় মুসলিম পণ্ডিত আলী মাজরুই’ বক্তৃতা সিরিজ ঞযব অভৎরপধহং সম্পর্কে দারুন উদ্বেল হয়েছেন। “ঐবৎব ধঃষবধংঃ ধিং ধহ অভৎরপধহ ড়হ ঢ়ৎরসব ঃরসব ঃবষবারংরড়হ রহ ঃযব নবংঃ, ফধৎরহম ঃড় ধপপঁংব ঃযব বিংঃ ড়ভ যিধঃ রঃ যধং ফড়হব, ঃযঁং ৎবড়ঢ়বহরহম ধ ভরষব পড়হংরফবৎবফ পষড়ংবফ.” (ঈঁষঃঁৎব ধহফ রসঢ়বৎরধষরংস পৃ, ৩৯)
৫.
সত্তরের দশকের শেষ ভাগে, এবং ইবমরহহরহমং ও ঙৎরবহঃধষরংস এর ব্যাপকজ সাফল্যের পর, সাইদ তাঁর মতামত প্রকাশের প্রচুর সুযোগ পেতে থাকলেন। প্রিন্ট-মিডিয়া এবং প্রাইম-টাইম টেলিভিশনে তিনি প্যালেস্টাইনীদের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের নীতির প্রতিবাদ করতে থাকলেন। সেই সঙ্গে আরব জনগণ ও ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমাজগতের ভুল ধারণা ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে চালাতে লাগলেন তাঁর প্রতিরোধ। মিডিয়াতে অনুপ্রবেশের এই সাফল্য সাহসী করে তুলল সাইদকে। তিনি এরকম ঘোষণাও করলেন একটি সাক্ষাৎকারে : “ঞযবৎব ধৎব বহফষবংং ড়ঢ়ঢ়ড়ৎঃঁহরঃরবং ভড়ৎ রহঃবৎাবহঃরড়হ ... ধহফ ঃৎধহংভড়ৎসধঃরড়হ .... ুড়ঁ পড়ঁষফ ঃধশব ধহফাধহঃধমব ড়ভ ঃযব ড়াবৎফবাবষড়ঢ়সবহঃ ড়ভ ঃযব ফড়সরহধঃবফ ধঢ়ঢ়ধৎধঃঁংবং ধহফ রহঃবৎাবহব ংঃৎধঃবমরপধষষু ধঃ পবৎঃধরহ ঢ়ড়রহঃং” (ঝঢ়ৎরহশবৎ. ২৪১) এই সাক্ষাৎকারে সাইদ আরো বলেছেন যে, তাঁর শিক্ষা, তাঁর এলিটেস্ট যোগাযোগ এবং নিউইয়র্কে অবস্থান, সব কিছু তাঁকে সাহায্য যুগিয়েছে : পশ্চিমা জগতে একজন উত্তর-ঔপনিবেশিক লেখক হিসাবে তাঁর অবস্থিতির পেছনে রয়েছে প্যালেস্টিনিজম এর প্রতি তাঁর প্রশ্নহীন অনুগত্য। এই প্যালেস্টিনিজমের মোদ্দাকথা হলো প্যালেস্টাইনী ভূখণ্ডের সঁষঃরৎধপরধষ এবং সঁষঃরৎবষরমরড়ঁং ইতিহাসের পুনরুদ্ধার। সেই সাথে ভূমির সাথে প্যালেস্টাইনীদের পূর্ণ সংহতি স্থাপন। বোঝাই যাচ্ছে, সাইদের ক্ষেত্রে ‘ৎিরঃরহম নধপশ ঃড় ঃযব বিংঃ’-এর অর্থ হচ্ছে আধিপত্যবাদী বৃদ্ধিবৃত্তিকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং সেই সাথে ঔপনিবেশিকতাবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা, উভয়ই। সাইদের জন্য দু’টো প্রক্রিয়াই একটি বৃহত্তর প্রকল্পের অংশ: প্যালেস্টাইনের মুক্তি। এর অর্থ, উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবীদের কাউন্টার-ডিসকোর্স শুধু একটি তাত্ত্বিক ব্যায়ামমাত্র নয়, বরং এটি একটি চলন্ত রাজনৈতিক সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ। উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবী হিসাবে এডওয়ার্ড সাইদের আবির্ভাবলগ্নটি সম্ভবত ১৯৬৮-এর ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধ। বিশেষত কধৎধসবষ-এর যুদ্ধ যেখানে জায়নবাদী শক্তি সংপ্রথম একটি গেরিলাগ্রাপের প্রস্তরকঠিন প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। এবং এটাও কাকতালীর নয় মোটেই যে, ঙৎরবহঃধষরংস বেরোয় এমন সময় যখন পিএলও প্রতিরোধ সংগ্রামের সংগঠন হিসাবে প্রাথমিক সাফল্য পেতে শুরু করেছে। সাইদ নিজেই বলেছেন, ঙৎরবহঃধষরংস এর পরবর্তী তাঁর সবগুলো কাজের পেছনে রয়েছে এই বোধটি ক্রিয়াশীল, যে তিনি একটি চলমান সংগ্রামের অংশ। একথাটি শুধু তাঁর সরাসরি রাজনৈতিক গ্রন্থাবলি, ঞযব ছঁবংঃরড়হ ড়ভ চধষবংঃরহব, ঈড়াবৎরহম ওংষধস. ইষধসরহম ঃযব ঠরপঃরসং এবং ঞযব চড়ষরঃরপং ড়ভ উরংঢ়ড়ংংবংংরড়হ সম্পর্কে সত্য নয়, তাঁর লিটারারি ক্রিটিকাল টেক্সটগুলো (ঞযব ডড়ৎষফ, ঃযব ঞবীঃ, ধহফ ঃযব ঈৎরঃরপ এবং ঈঁষঃঁৎব ধহফ ওসঢ়বৎরধষরংস) সম্পর্কেও সত্য। ঈঁষঃঁৎব ধহফ ওসঢ়বৎরধষরংস-এ সাইদ জোর দিয়ে ঘোষণা করেছেন যে প্যালেস্টাইনী প্রতিরোধ দৃঢ়তর হবেই যদিও ইসরাইলী দখলদাররা ভাবছে যে তাঁরা অনন্তকালের জন্য প্যালেস্টাইনকে ধরে রাখবে। এ ধরনের প্রেরণা সাইদ সম্ভবত পেয়েছেন ইন্তিফাদাহ সম্পর্কিত একটি বইয়ের উপর কাজ করার সময়, যে-বইয়ে ইসরাইলী প্রভু এবং তাদের মার্কিনী মদদাতাদেরকে বলা হয়েছে-ণড়ঁৎ ষড়মরপ, নু যিরপয ুড়ঁ ভড়ৎবপধংঃ ধহ বহফষবংং ংরবমব, রং ফড়ড়সবফ, ঃযব ধিুং ধষষ পড়ষড়হরধষ ধফাবহঃঁৎবং যধাব নববহ ফড়ড়সবফ”. (ঞযব চড়ষরঃরপং ড়ভ উরংঢ়ড়ংংবংংরড়হ, পৃ. ১৪৩)
৬.
ইতিহাসের যুগে যুগে পাশ্চাত্য আধিপত্যবাদীদের মাননিক প্রভূত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম হয়েছে। এই সংগ্রাম উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবীদের জন্য অনুপ্রেরণার স্থল। আরেকটি অনুপ্রেরণা হচ্ছে কিছু ব্যক্তি-বুদ্ধিজীবীর দৃষ্টান্তমূলক রচনাপঞ্জী। তৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, ডিসকোর্স-পদ্ধতি সম্পর্কে ফুকোর ধারণাগুলোকে প্রশ্ন করতে শুরু করার পরপরই সাইদ অধিকতর মনোযোগী হলেন ফ্রান্ৎস্ ফাননের রচনার দিকে : ফানন এরকম ডিসকোর্স-প্রতিরোধ সম্পর্কে ধারণা ব্যক্ত করেছিলেন। ঈঁষঃঁৎব ধহফ রসঢ়বৎরধষরংস গ্রন্থে সাইদ এই দু’জন বুদ্ধিজীবীর তুলনামূলক আলোচনা করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত বাতিল করেছেন ফুকো-কে, কেননা ফুকো “ংববসং ধপঃঁধষষু ঃড় ৎবঢ়ৎবংবহঃ ধহ রৎৎবংরংঃরনষব পড়ষড়হরুরহম সড়াবসবহঃ ঃযধঃ ঢ়ধৎড়ফড়ীরপধষষু ভড়ৎঃরভরবং ঃযব ঢ়ৎবংঃরমব ড়ভ নড়ঃয ঃযব ষড়হবষু রহফরারফঁধষ ংপযড়ষধৎ ধহফ ঃযব ংুংঃবস ঃযধঃ পড়হঃধরহং যরস.” অন্যদিকে ফানন সাইদকে আকর্ষণ করেছেন কেননা ফাননের গতি “ভৎড়স পড়হভরহবসবহঃ ঃড় ষরনবৎধঃরড়হ.” যদিও ফুকো এবং ফানন-দুজনের উপরই গঠনমূলক প্রভাব পড়েছে ফ্রয়েড, নীট্শে এবং সার্ত্র-র, তবু সাইদের মতে, ফানন হচ্ছেন আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে শক্তিশলী অস্ত্রের ধারক। ফানন আরো একটি কারণে সাইদের কাছে মূল্যবান। ফানন অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বুঝেছেন যে, উপনিবেশ-উত্তর পৃথিবীতেও ঔপনিবেশিক স্বার্থ থেকেই যাবে। ফাননের যে-কথাটি সবচেয়ে সাইদের মনে ধরেছে তা হলো, জাতীয়তাবাদী চেতনা যদি সাফল্যের মুহূর্তে কোনো-না-কোনোভাবে সামাজিক চেতনায় রূপান্তরিত না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে জাতীয় স্বাধীনতা থাকবে না, থাকবে সাম্রাজ্যবাদেরই সম্প্রসারিত অবস্থা। ফানন শেখালেন উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবিদের এই কথাটি : জাতীয়তাবাদী বুর্জোয়াদের সম্পর্কে, বিশেষত এদের টোটাল জাতীয় মুক্তির শ্লোগান সম্পর্কে, সতর্ক হও, কেননা ঐসব চিৎকার মূলত এক ধরনের হধঃরড়হধষরংঃ ভরপঃরড়হ বৈ কিছু নয় এবং তা একধরনের স্বৈরতন্ত্র হটিয়ে অন্যধরনের স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র মাত্র।
ঈঁষঃঁৎব ধহফ ওসঢ়বৎরধষরংস-এর তৃতীয় অধ্যায়ে (“জবংরংঃধহপব ধহফ ঙঢ়ঢ়ড়ংরঃরড়হ”) সাইদ আরো কয়েকজন বুদ্দিজীবীর নাম করেছেন যারা পূর্বতন উপনিবেশিক দেশগুলোতে জন্মেছেন এবং যাঁদের রচনা, ফাননের রচনার মতই, উত্তর-ঔপনিবেশিক লেখকদের উৎসাহ দিতে পারে। এঁরা হলেন, ক্যারিবীয় পণ্ডিত ঈ.খ.জ. ঔধসবং; আরব পণ্ডিত এবড়ৎমব অহঃড়হরঁং, ‘সার্ব-অলটার্ন স্টাডিজ’ গ্র“পের ভারতীয় প্রতিষ্ঠাতা রণজিৎ গুহ এবং মালয়েশীয় ইতিহাসবিদ ঝ.ঐ. অষধঃধং. এই চতুষ্টয় নমুনা দেখিয়েছেন কীভাবে অব্যাহত সাম্রাজ্যবাদী সংগঠনের যুগে আন্তর্জাতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব। জেম্স লিখেছেন ক্যারিবিয়ানে ফরাসি সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের সংগ্রামের কথা; আন্টনিয়াস বিকল্প ইতিহাস লিখেছেন বৃটিশ পতাকার নীচে কীভাবে আরব জাতীয়তাবাদ তৈরী হলো। রণজিৎ গুহ ভারতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রেক্ষিতে ঔপনিবেশিকতার ইতিহাস লিখেন; এবং আলাটাস্ তাঁর লেখায় সাম্রাজ্যবাদীদের তৈরী ষধুু হধঃরাব-এর ধারণার মিথ্যা মিথকে ফাটালেন। চার ভূখণ্ডের চার সময়ের এই বুদ্ধিজীবীচতুষ্টয় একটি ঐক্যসূত্রে বাঁধা। সূত্রটি হলো, তারা সবাই উপনিবেশিত তথা প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ, “যিড় ৎিড়ঃব রহ ধহ রসঢ়বৎরধষ ষধহমঁধমব, যিড় ভবষঃ ঃযবসংবষাবং ড়ৎমধহরপধষষু ৎবষধঃবফ ঃড় ঃযব সধংং ৎবংরংঃধহপব ঃড় বসঢ়রৎব.” তাঁরা সবাই সাম্রাজ্যবাদীদের ভাষায় সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছেন বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিরোধ। অন্যকথায়, এরা হলেন সেইসব পণ্ডিত যাঁরা পাশ্চাত্য পাণ্ডিত্যের হাতিয়ারগুলো দিয়েই “ৎিরঃব নধপশ” করেছেন পাশ্চাত্যের প্রতি। আর সেইজন্যই, উত্তর-উপনিবেশিক বুদ্ধিজীবীদের জন্য এই চারজন দৃষ্টান্তমূলক ব্যক্তিত্ব।
এডওয়ার্ড সাইদ যে-ধরনের উত্তর-ঔপনিবেশিকতার কথা বলছেন সেখানে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্ররোচনা আছে। বস্তু, ফানন-ও “নিষ্কুলষ জাতীয়তা’-র বিপদের কথা জানিয়েছেন। সাইদ বলেছেন, উত্তর-ঔপনিবেশিক ডিসকোর্স হবে জাতীয়তাবাদের নির্দ্দিষ্ট সীমানার বাইরে একটি স্পেস-এ, যদিও এর উৎসমুখ থাকতে পারে জাতীয়তাবাদী কোনো ইস্যু বা ঘটনার মধ্যে। এই বহির্জাতিক স্পেস-এই জন্ম হয়েছে সলমন রুশদীর গরফহরমযঃ’ং ঈযরষফৎবহ-এর মতে সংকর গ্রন্থ। সাইদ ওকালতি করছেন এমন একটি আন্তর্জাতিক কাউন্টার-ডিসকোর্সের যা জাতিগত সীমানাকে পেরিয়ে একটি সাধারণ জায়গায় মিলিত হতে উৎসাহ যোগাবে বুদ্ধিজীবীদের। সাইদের ভাষায়, “ঞযব ভধপঃ রং, বি ধৎব সরীবফ রিঃয ড়হব ধহড়ঃযবৎ রহ ধিুং ঃযধঃ সড়ংঃ ংুংঃবসং ড়ভ বফঁপধঃরড়হ যধাব হড়ঃ ফৎবধসবফ ড়ভ” (পৃ, ৩৩১)। সাইদের মতে, উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবীদের কর্তব্য হলো বৈশ্বিক পরিসরে চিন্তা করা, জাতীয়, বর্ণগত, শ্রেণীগত সীমানাগুলো পেরিয়ে গিয়ে পিছিয়ে-পড়া সংখ্যালঘু এবং প্রতিনিধিত্বহীন জনসমাজ (তা বিশ্বের যেখানকারই হোক) সম্পর্কে সোচ্চার হাওয়া।
সাইদের এই কসমোপলিটানিজম খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক তাঁর চিন্তার। কিনউত এ- সত্ত্বেও ভি.এস. নাইপলের মতো শেকড়হীন লেখককে আবার তিনি থোড়াই মূল্যবান মনে করেন। নাইপল তাঁর জীবনের একপর্বে জাতীয়তাবাদকে ভর্ৎসনা করেছেন কিন্তু কখনও কোথাও কোনো প্রতিরোধ আন্দোলনের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেননি।
পাশ্চাত্যের লেখকদের মধ্যেও দু’ধরনের নমুনা-মডেল লক্ষ্য করেছেন সাইদ। একধরনের লেখকরা সাম্রাজ্যবাদকে পুষ্ট করেছেন অবলীলায়, অন্য কিছু লেখক পাশ্চাত্যের হয়ে দেশকালগণ্ডীর বাইরে গিয়ে স্বাধীনতাকামী উপনিবেশিত-মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন। ঞযব ঙঁঃংরফবৎ গ্রন্থের জন্য আলব্যের কাম্যুর সমালোচনা করেছেন সাইদ, কারণ এ-বইয়ে ক্যামু আলজেরীয়দের প্রতি বন্ধসুলভ আচরণ করেছেন। অন্যদিকে তুলনা করেছেন জাঁ জেনে-র সঙ্গে, যিনি তাঁর ফরাসি পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে তাঁর স্বদেশকর্তৃক পদানত মানৃুষ ও দেশের দুর্দশার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। তবে এডওয়ার্য সাইদ সবচাইতে বেশি নির্ভরতা পেয়েছেন গ্রামসির মধ্যে এবং বন্ধু হিসেবে পেয়েছেন রেমন্ড উইলিয়ামস এবং নোয়াম চমস্কিকে। শেষোক্ত দু’জন অরিয়েন্টালিজম-সিস্টেমের বিরুদ্ধে একটি দুর্দান্ত কাউন্টার ডিসকোর্স চালানোর জন্য সাইদের সমরসঙ্গী। গ্রাম্সি এবং উইলিয়ামস উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ কেননা তাঁরা ধারণ করেন “বসবৎমবহঃ ড়ৎ ংঁনধষঃবৎহ মৎড়ঁঢ়ং রিঃযরহ ঃযব ফড়সরহধহঃ ফরংপঁৎংরাব ংড়পরবঃু” (ঋড়ঁপধঁষঃ ধহফ .... পৃ. ১৫২) অন্যদিকে চম্স্কি হলেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধ ইজরায়েল তোষণনীতির এবং প্যালেস্টাইনীদের উপর ইজরায়েলের নিষ্ঠুর নির্যাতনের তীব্র সমালোচক। এ কারণে চম্স্কি সাইদের কাছে খুব প্রিয়। সাইদের মতে, উত্তর-ঔপনিবেশিক পৃথিবীর নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতে এইসব পাশ্চাত্য বুদ্ধিজীবীর আধিপত্যবিরোধী রচনাপুঞ্জ নতুন মনোযোগ ও নিষ্ঠাবান অনুসরণের দাবি রাখে।
উপনিবেশন বলতে এখন শুধু পাশ্চাত্যদেশকর্তৃক অ-ইউরোপীয় দেশ দখল বোঝায় না। উপনিবেশিতের (পড়ষড়হরুবফ) সংজ্ঞার মধ্যে চলে এসেছে আরো অনেক কিছু: “ঞযব ‘পড়ষড়হরুবফ’ যধং ংরহপব বীঢ়ধহফবফ পড়হংরফবৎধনষু ঃড় রহপষঁফব ড়িসবহ, ংঁনলঁমধঃবফ ধহফ ড়ঢ়ঢ়ৎবংংবফ পষধংংবং, হধঃরড়হধষ সরহড়ৎঃরবং, ধহফ বাবহ সধৎমরহধষরুবফ ড়ৎ রহপড়ৎঢ়ড়ৎধঃবফ ংঁনংঢ়বপরধষরঃবং,” নারী, শোষিত-অবদমিত শ্রেণীসমূহ, জাতিগত সংখ্যালঘু, প্রান্তিক জনগোষ্ঠি, সবাইকে এই নব-ঔপনিবেশিকতার স্তরে গণ্য করা চলে। উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বহু দেশে একটি নব্য ক্ষমতাকারবারী এলিট শ্রেণী গড়ে উঠেছে যারা স্থান দখল করেছে শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের। এই দালাল এলিট শ্রেণী নব্য-সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের সাথে গড়েছে নতুন আঁতাত ও দোস্তি। “জাতীয়তাবাদী শাক্তি”-এ ধরনের দ্বিঘাত সমীকরণের পূর্বতন ধারণা পাল্টে ফেলে। এখন চিনে নিতে হবে রাজনৈতিক সীমানা, জাতিসত্তা ইত্যাদি-পেরিয়ে যাওয়া, নতুন ঔপনিবেশিক শোষণ-সংদমনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা নতুন ঐক্যবোধকে। এই নতুন আন্তর্জাতিক-ঐক্যবোধ, এই “হবি ধষরমহসবহঃং সধফব ধপৎড়ংং নড়ৎফবৎং, ঃুঢ়বং, হধঃরড়হং ধহফ বংংবহপবং” চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে সনাতনী রফবহঃরঃু-এর ধারণাকে, যে ধারণা সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতার যুগে সাংস্কৃতিক চিন্তার মূলবস্তু ছিল। সাইদ যেন বলতে চাইছেন যে, সংকীর্ণ জাতীয় ‘পরিচয়’ উত্তর-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রযন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদী এলিটদের মধ্যে একটি অশুভ আঁতাতের জন্ম দিয়ে চলেছে। সাইদ উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবীর সম্ভাব্য ভূমিকা সম্পর্কে তাই বলছেন- তাঁকে জাতীয়তাবাদী উগ্র চেতনাকে প্রতিহত করতে হবে এবং অবলম্বন করতে হবে “ধ সড়ৎব রহঃবমৎধঃরাব ারবি ড়ভ যঁসধহ পড়সসঁহরঃু ধহফ যঁসধহ ষরনবৎধঃরড়হ,” (ঈঁষঃঁৎব ধহফ ওসঢ়বৎরধষরংস, পৃ. ২১৬)।
উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগের বৃদ্ধিজীবীর কাউন্টার-ডিসকোর্সের অংশ হিসাবে সাইদ গবঃযড়ফড়ষড়মু-এর চেতনাকেও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাবছেন। তিনি এখন আর কোন একরৈখিক থিয়োরি-র পরহেজগার থাকতে চান নাÑ তিনি যা চান তা হলো “ধ ৎবষধঃরাবষু সড়ৎব ঁহনড়ঃঃড়সবফ, ঁহভরীবফ, ধহফ সড়নরষব ধিু ড়ভ ঢ়ৎড়পববফরহম” তাঁর মতে কাউন্টচার-ডিসকোর্সের পদ্ধতি হবে তুলনামূলক এবং আন্ত:ডিসিপ্লিনমূলক। একসময় সাইদ লিটারারি থিয়োরির একনিষ্ঠতায় মগ্ন ছিলেন। এখন তাঁর ইচ্ছা হলো “ঃড় ফড় ংড়সবঃযরহম ভৎড়স ধহ যরংঃড়ৎরপধষ ঢ়ড়রহঃ ড়ভ ারব,ি ধপৎড়ংং ফরংপঁৎংরাব ষরহবং রহ ড়ভঃবহ ঃৎধহংমৎবংংরাব ধিুং, রহ ধিুং ঃযধঃ ঃৎু ঃড় পড়হহবপঃ ঢ়ড়ষরঃরপধষষু ধহফ রহঃবষষবপঃঁধষষু রিঃয ড়ঃযবৎ রহঃবৎাবহঃরড়হং.”(ঝঢ়ৎরহশবৎ, পৃ. ২৪৮). এ ধরনের কাজের একটি উদাহরণ, গৌরী বিশ্বনাথনের বই ঞযব গধংশ ড়ভ ঈড়হয়ঁবংঃ : এই বইয়ে গৌরী উত্তর-ঔপনিবেশিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইংলিশ স্টাডিজের উত্থান এবং সাম্রাজ্যবাদের সাথে এর সম্পর্কে সন্ধান করেছেন। সাইদ আরো প্রশংসা করেছেন অন্যান্য থিয়োরিস্টদের-একবাল আহমেদ, হোমি ভাভা এবং সারা সুলেরি। এবং পোস্ট মডার্নিজম তথা উত্তরাধুনিকতাবাদ দু’চোখের বিষ সাইদের কাছে, যদি চড়ংঃ গড়ফবৎহরংস অর্থ হয় লেখকের নিজেকে রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে ধূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং জীবনের বিচূর্ণীভবন ও হতাশাকে ধ্র“বসত্য বলে মনে নেয়া। চড়ংঃ গড়ফবৎহরংস হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক সংগ্রাম, ক্ষমতার বৈশ্বিক রাজনীতিকে সমালোচনা ইত্যাদি জরুরি কর্ম থেকে পিঠটান দেয়ার গুরুমন্ত্র। সাইদ চান “এইসব চোয়াল-ভেঙ্গে-ফেলা কঠিন সব লধৎমড়হ-এ কন্টকিত উত্তর-আধুনিকতা, যা এখন থিয়োরিটিক্যাল সমালোচনা জগতকে ঘিরে ধরেছে” তাকে বিস্ফারিত করা হোক্, কারণ এই উত্তর-আধুনিকতাবাদগুলোর “অর্থ হচ্ছে ধনফরপধঃরহম ৎবংঢ়ড়হংরনরষরঃু ভড়ৎ ঢ়ড়ষরঃরপধষ ধপঃরড়হ ড়ৎ পৎরঃরয়ঁরহম ঢ়ড়বিৎ” (ঞযব চড়ষরঃরপং ড়ভ উরংঢ়ড়ংংবংংরড়হ পৃ. ৩১৬)।
মৌলবাদ সম্পর্কেও সাইদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার। মুসলিম দেশগুলোতে মৌলবাদীরা এমন প্রচার করে থাকে যে, এমন একগুচ্ছ অপরিবর্তনীয় আচার রয়েছে যা নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি ‘পবিত্র ও পূর্ণাঙ্গ’ জীবনব্যবস্থা। সাইদের মতে, ঐসব দেশের বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব হলো এই মতের বিরোধিতা করা। মৌলবাদী একরৈখিকতার বিপরীতে সাইদ স্মরণ করতে চান ইসলামী জাবনাচরণের “জটিল ও বহুদিকসম্পন্ন ইতিহাস” এবং বুদ্ধিজীবীদের কাছে আবেদন করেন “ঃড় ভধপব ঃযব পযধষষবহমবং ড়ভ হড়হ-ওংষধসরপ সরহড়ৎরঃরবং, ড়িসবহ’ং ৎরমযঃং, ভড়ৎ সড়ফবৎহরঃু রঃংবষভ, রিঃয যঁসধহ ধঃঃবহঃরাবহবংং ধহফ যড়হবংঃ ৎবধঢ়ঢ়ৎরংধষং, হড়ঃ ফড়মসধঃরপ ড়ৎ ঢ়ংবঁফড়- ঢ়ড়ঢ়ঁষরংঃ পযধহঃং.” সাইদ স্মরণ করিয়ে দেন ইসলামের ইতিহাসে ইজহিতাদের ঐতিহ্যের কথা, যখন ধর্মীয় সূত্রগুলির ব্যক্তিগত ব্যাখ্যাকে উৎসাহিত করা হতো।
এডওয়ার্ড সাইদের মতে আদর্শ উত্তর-ঔপনিবেশিক বুদ্ধিজীবী তিনিই যিনি ংঃধঃঁং য়ঁড় কে প্রশ্ন করেন, যিনি সংস্কৃতিকে অর্থডক্স চিন্তা, বিচারহীন অন্ধবিশ্বাস এবং যুক্তিনির্ভর প্রথাবিরুদ্ধ চিন্তার দ্বন্দ্ব হিসাবে দেখেন। এমন একজন বিরুদ্ধবাদী বুদ্ধিজীবী হলেন নসর হামিদ আবু জায়েদ (কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবীসাহিত্যের অধ্যাপক) মিশরীয় মৌলবাদীদের ইসলামী ডিসকোর্সের ডগমেটিজম এবং তাদের ধর্মব্যাখ্যার অনৈতিহাসিকতা স্পষ্ট করেছেন তাঁর লেখায়।
৮.
এডওয়ার্ড সাইদ সমসাময়িককালের দৃষ্টান্তমূলক ব্যক্তিত্ব। তিনি তাঁর বাহ্যজীবন এবং লেখায় এমন কিছু নীতি অনুসরণ করেছেন যা উত্তর-ঔপনিবেশিক কাউন্টার- ডিসকোর্সকে করেছে একটি শক্তিমান চিন্তন-মাধ্যম। বহির্বাসী পণ্ডিতের জীবনযাপনে বাধ্য হলেও সাইদ কখনও তাঁর প্যালেস্টাইনী শেকড় ভুলে যাননি; ফিরে গিয়েছেন তাঁর নিজ দেশ এবং দেশবাসীর মধ্যে যখনই সময় পেয়েছেন। আজ তিনি পাশ্চাত্য দুনিয়ায় প্যালেস্টাইনী অধিকারের সবচেয়ে সোচ্চার প্রবক্তা। বহুবার খুনের হুমকি দেয়া হয়েছে তাঁকে, কিন্তু স্তব্ধ করা যায়নি তাঁর কণ্ঠস্বর। কয়েকবছর আগের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় তিনি খোলাখুলিভাবে, আমেরিকায় বসে, ইরাকের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের নীতিকে “ীবহড়ঢ়যড়নরধ ধহফ ংযববৎ নষড়ড়ফু-সরহফবফহবংং” বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন। অপারেশন-ডেজার্ট স্টর্মের বিরুদ্ধে সামান্যতম সমালোচনা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না আমেরিকার জনমত; কিন্তু তবু এডওয়ার্ড সাইদ তাঁর বিরুদ্ধমত প্রকাশের ঝুঁকি নিয়েছিলেন অবলীলায়। প্যালেস্টাইন জাতীয় কাউন্সিলের সদস্য হিসাবে এর কার্যক্রমেও অংশ নিয়েছেন সাইদ। অ্যাকাডেমিক জার্নালে, মার্কিনী মিডিয়ায় তাঁকে গালি দেয়া হয়েছে চৎড়ভবংংড়ৎ ড়ভ ঞবৎৎড়ৎ বলে। অন্য দিকে, একথাও সত্য যে, পিএলও-র উচ্চতম স্তরে গতায়াত এবং ইয়াসের আরফাতের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ থাকা সত্ত্বেও পিএলও-র সকল কার্যক্রম তিনি বিনাপ্রশ্নে সমর্থন করেননি। গত বছর আরাফত যখন নরওয়ের অসলো-তে একটি অন্যায় ও অসম শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, সাইদ তাঁর সমালোচনা করতে দ্বিধা করেননি। সাইদ আরবী ভাষাতেও নিয়মিত লিখেন; ফলে সারা আরব দুনিয়ায় তার লেখনীর প্রভাব পড়ছে বিপুলভাবে।
সংক্ষেপে বলা যায় সাইদের অর্জনগুলো এরকম: (ক) উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগের কাউন্টার-ডিসকোর্স নির্মাণের জন্য যা যা ক’রা প্রয়োজন বলে তিনি লিখেছেন, ব্যক্তি জীবনে সে সব অবলম্বন করেছেন পূর্ণভাবে। (খ) শক্তিপ্রয়োগকারী ক্ষমতাচক্র এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জাগেিয় তুলেছেন; (গ) তাঁর নিজ জাতি-গোষ্ঠি তথা বাস্তুচ্যুত প্যালেস্টাইনীদের সপক্ষে যুদ্ধ চালিয়েছেন পাশ্চাত্য মিডিয়ায়; (ঘ) জাতীয় মুক্তির চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়েছেন, (ঙ) পাণ্ডিত্যপূর্ণ রচনাবলীর মাধ্যমে পশ্চিমা সংস্কৃতি ও সাম্রাজ্যবাদের মধ্যকার আঁতাতকে তুলে ধরেছেন; (চ) এমন একটি জ্ঞানশাখা ও সৃজনমূলকতার পৃষ্ঠপোষণা করছেন যা দৈশিক সীমানাকে অতিক্রম করে এবং জ্ঞানের ক্ষেত্রে বহুবর্ণিল সংকরতা উৎপন্ন করে; এবং সর্বোপরি, (ছ) পূর্বাপর থেকেছেন ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং কসমোপলিটানিজমের নিষ্ঠাবান প্রবক্তা ও প্রচারক।
(অনুবাদ : খোন্দকার আশরাফ হোসেন)
উল্লেখপঞ্জি
ঈযধহহবষ ৪. “ঊফধিৎফ ংধরফ” রহ ঞধষশরহম খরনবৎঃরবং. খড়হফড়হ: অ ঈযধহহবষ ৪ চঁনষরপধঃরড়হং, ১৯৯২: ১০-১৪.
ঈযধঃঃবৎলবব, চধৎঃযধ, “ঞযবরৎ ঙহি ডড়ৎফং? অহ ঊংংধু ভড়ৎ ঊফধিৎফ ঝধরফ.” ঊফধিৎফ ঝধরফ: অ ঈৎরঃরপধষ জবধফবৎ. ঊফ. গরপযধবষ ঝঢ়ৎরশবৎ. ঙীভড়ৎফ টক: ইষধপশবিষষ চঁনষরংযবৎং ১৯৯২: ১৯৪-২২০.
ঝধরফ, ঊফধিৎফ. অভঃবৎ ঃযব খধংঃ ঝশু: চধষবংঃরহরধহ খরাবং. খড়হফড়হ: ঋধনবৎ ধহফ ঋধনবৎ, ১৯৮৬.
....... ইবমরহহরহমং : ওহঃবহঃরড়হ ্ গবঃযড়ফ. ঘবি ণড়ৎশ: ইধংরপ ইড়ড়শং, ১৯৭৫.
..... ঈঁষঃঁৎব ধহফ ওসঢ়বৎরধষরংস. ঘবি ণড়ৎশ: অষভৎবফ অ. কহড়ঢ়ভ, ১৯৯৩.
..... “ঋড়ঁপধঁষঃ ধহফ ঃযব ওসধমরহধঃরড়হ ড়ভ চড়বিৎ.” ঋড়ঁপধঁষঃ: অ ঈৎরপধষ জবধফবৎ. ঊফ. উধারফ ঈড়ুঁবহং ঐড়ু. ঙীভড়ৎফ টক : ইষধপশবিষষ চঁনষরংযবৎং, ১২৯৮৬ : ১৪৯-১৫৬
..... “ওহঃবৎারবি রহ উরধপৎরঃরপং ৬ (১৯৭৬): ৩০-৪৭.
..... “ওহঃবৎারবি রিঃয ঊফধিৎফ ঝধরফ নু ঔবহহরভবৎ ডরপশব ধহফ গরপযধবষ ঝঢ়ৎরহশবৎ.” ঊফধিৎফ ঝধরফ: অ ঈৎরঃরপধষ জবধফবৎ. ঊফ. গরপযধবষ ঝঢ়ৎরহশবৎ. ড়ীভড়ৎফ টক: ইষধপশবিষষ চঁনষরংযবৎ, ১৯৯২:২২১-২৬৪.
...... ঙৎরবহঃধষরংস. ঘবি ণড়ৎশ : চধহঃযবড়হ, ১৯৭৮.
..... ঞযব চড়ষরঃরপং ড়ভ উরংঢ়ড়ংংবংংরড়হ: ঘবি ণড়ৎশ ঞরসবং ইড়ড়শং, ১৯৭৯
..... “জবঢ়ৎবংবহঃরহম ঃযব ঈড়ষড়হরুবফ: অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু’ং ওহঃবৎষড়পঁঃড়ৎং.” ঈৎরঃরপধষ ওহয়ঁরৎু ১৫:২ (১৯৮৯): ২০৫-২৫.
..... ঞযব ডড়ৎষফ, ঞযব ঞবীঃ, ধহফ ঃযব ঈৎরঃরপ. ঈধসনৎরফমব, গধংং : ঐধৎাধৎফ টচ, ১৯৮৩.
ঝধষঁংরহংুশু, ওসৎব. “ঊফধিৎফ ঝধরফ.” ঈৎরঃরপরংস রহ ঝড়পরবঃু : ওহঃবৎারবংি, খড়হফড়হ : গবঃযঁবহ. ১৯৮৭:১২৩-১৪৮.
(একবিংশ ১৫/নভেম্বর ১৯৯৫ সংখ্যা থেকে পুনর্মুদ্রিত)
লেবেলসমূহ:
২৫ বছর পূর্তি সংখ্যা,
পূনর্পাঠ,
প্রবন্ধ,
ফকরুল আলম
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)